১৯৬২ সালে গঠিত ছাত্রলীগের গোপন সংগঠন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’-এর আদলে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ’। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত না হলেও ইতিমধ্যে গঠিত হয়েছে তাদের ছাত্রসংগঠন ‘বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ’। বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি আছে। তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি নিয়েও কাজ করছে। ইতিমধ্যে ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে ‘সিপাহী-জনতার ঐক্যে রাষ্ট্র পুনর্গঠন : জাতীয় নিরাপত্তায় নতুন প্রস্তাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভা করেছে। ৭ নভেম্বরের অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্র পুনর্গঠনে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা কাঠামোতে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানানোসহ ছয় দফা প্রস্তাব দেওয়া হয়।
প্রথম দফায় সেনাবাহিনীকে বর্তমান সংবিধান বাতিল করে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতিশাসিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে সর্বাত্মক সহায়তা ও নিরাপত্তা প্রদান করতে বলা হয়। দ্বিতীয় দফায় একটি শক্তিশালী জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করতে বলা হয়, যার চেয়ারম্যান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্রপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভাইস চেয়ারম্যান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান হবেন। প্রস্তাবনা অনুসারে, এই পরিষদে প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান, পুলিশপ্রধান, গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে পুরাতন সংবিধান বাতিল এবং ফ্যাসিবাদী দল ও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করবে। তৃতীয় দফায় নতুন সংবিধান প্রণয়নে দ্রুত গণপরিষদ গঠন ও নির্বাচন পরিচালনা এবং পরবর্তীতে দ্রুত সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা প্রদান তত্ত্বাবধান করার প্রস্তাব রাখা হয়। চতুর্থ দফায় দেশের আর্থিক খাতের নিরাপত্তা তথা ব্যাংক, স্টক এক্সচেঞ্জ, আমদানি ও রপ্তানির লেনদেন সামরিক বাহিনীর মনিটরিং ও তত্ত্বাবধানে হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। পঞ্চম দফায় দেশের সব উপজেলা পর্যন্ত স্থায়ীভাবে সেনা মোতায়েন করে সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গি হামলাসহ জননিরাপত্তা-সংক্রান্ত ইস্যুতে তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানানো হয়। এ ক্ষেত্রে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সহায়তা নিতে সেনাবাহিনীকে পরামর্শ দেওয়া হয়। ষষ্ঠ দফায় সেনাবাহিনী, জনপ্রশাসনসহ রাষ্ট্রের সর্বত্র ফ্যাসিবাদের দোসর, দুর্নীতিবাজ ও দেশবিরোধীদের চিহ্নিত করে তাদের শূন্যপদে সাবেক দেশপ্রেমিক সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রদান করতে প্রস্তাব রাখা হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে এলেও ভেতরে ভেতরে সংগঠিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, আবদুল হান্নান মাসুদ, আবু বাকের মজুমদারসহ একটি পক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসেবে কাজ করছে। আরেকটি পক্ষ ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ করেছে। আর ‘জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ’ নামে রাজনৈতিক দল গঠনে কাজ করছে আরেকটি পক্ষ।
বিপ্লবী পরিষদের নেপথ্যে কারা- তার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জাপান থেকে এক আধ্যাত্মিক তরুণের নেতৃত্বে হচ্ছে সব। ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগের গোপন সংগঠন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’-এর মতোই এগোচ্ছে তারা। সিরাজুল আলম খানের মতো তাদের নেতা খোমেনী ইহসান নামের এক জাপানপ্রবাসী। তিনিই নতুন এই রাজনৈতিক দলের চিন্তক। শরীয়তপুরে জন্ম নেওয়া খোমেনী ইহসান পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন বলে বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে। ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নির্যাতন প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলন’ সংগঠনের আহ্বায়ক ছিলেন। ছাত্রজীবনে তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। ছাত্রজীবন শেষ করে দৈনিক আমার দেশ, যুগান্তরসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে কাজও করেছেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে দেশত্যাগে বাধ্য হন তিনি। জুলাই বিপ্লবে তার অবদান ছিল। যেকোনো সময় তিনি দেশে এসে নতুন দলটির হাল ধরবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ খোমেনীকে ঘিরেই গঠন হচ্ছে। দেশে তার ভাই, ছাত্রজীবনের অনুসারী ও সতীর্থরা সরাসরি কাজ করছেন এই সংগঠনে। মূল সংগঠনে হাসান আরিফ নামের একজন সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাকাউন্টিংয়ে পড়াশোনা করেছেন। ২০০৭-২০০৮ সেশনে স্নাতকে (সম্মান) ভর্তি হওয়া আরিফ ২০১৪ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। তথ্যপ্রযুক্তি ও ই-কমার্স সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। কয়েক মাস আগে চাকরি ছেড়ে আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা শুরু করেছেন।
এদিকে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের ছাত্রসংগঠন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ ও সদস্যসচিব ফজলুর রহমান। সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আহ্বায়ক সানোয়ারা খাতুন। বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ‘৫ আগস্টের বিপ্লবের পর বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ গঠন করা হয়েছে। আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং ইসলামী ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলো ক্রিয়াশীল রয়েছে। ইনশা আল্লাহ, এসব সংগঠনকে ছাপিয়ে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদই হয়ে উঠবে বাংলাদেশের প্রধান ছাত্রসংগঠন এবং মেধাতান্ত্রিক বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রধান ভ্যানগার্ড।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সমন্বয়ক হাসান আরিফ বলেন, ‘আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলাম, নেতৃত্বে ছিলাম না। অর্থ, পরামর্শ ও সমর্থন দিয়ে পাশে ছিলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আমাদের ছোট ভাই-বন্ধু। তবে আমরা আমাদের চিন্তা থেকে রাজনৈতিক দল করছি। আমাদের ছাত্রসংগঠন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ। আমাদের মূল সংগঠন গোছাচ্ছি। এখনো কমিটি হয়নি। তবে ছাত্রসংগঠনের কমিটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন সাংবাদিক জাকির মজুমদার বলেন, ‘নতুন রাষ্ট্রকাঠামো ও রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় নতুন ধারার রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মকে এগিয়ে নেব আমরা, ইনশা আল্লাহ। সমতা, ইনসাফ, মানবিক মর্যাদা নতুন রাজনীতির মূল ভিত্তি। গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের সর্বোচ্চ বিকাশকে আমরা প্রাধান্য দেব। সমাজের প্রতিটি স্তরে সংস্কার, সভ্যতা, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনব। আমাদের রাজনৈতিক দর্শন উপনিবেশপূর্ব বাংলা সালতানাতকে ফিরিয়ে আনা। যে সালতানাত মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধসহ সব জাতিগোষ্ঠীর সম্মিলনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। যেই সালতানাত ছিল সমৃদ্ধ, সভ্য ও শৃঙ্খলাপূর্ণ। মুসলিম জাতীয়তাবাদ হবে বাংলা সালতানাতের প্রেরণার উৎস। বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা সমমর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপন করব, ইনশা আল্লাহ।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের চিন্তক খোমেনী ইহসান বলেন, ‘আমাদের বিপ্লবী পরিষদ ভূরাজনীতি ও ওয়ার্ল্ড অর্ডারের সঙ্গে সংগতি রেখেই বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের রাজনীতি করবে। আমরা যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বিশ্বনেতাদের নেতৃত্বকে সম্মান করি এবং তাদের শিক্ষা ও সহযোগিতা নিয়ে দেশ গড়তে চাই। আমাদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে অস্পষ্টতা নেই। মূলত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে কীভাবে নেতৃত্ব দিতে হবে, এটিই আমাদের নেতাকর্মীরা আত্মস্থ করার চেষ্টা করছে এবং রাজপথ থেকে সংসদে ব্যবহারিকভাবে অর্জিত শিক্ষাকে কাজে লাগাবে। আমাদের মধ্যে বিশ্বব্যবস্থা, রাজনীতি, অর্থনীতি, সিকিউরিটি ও ক্ষমতা প্রশ্নে কোনো ভাববাদিতা, হটকারিতা, সংকীর্ণতা ও নির্বুদ্ধিতা নেই।’
প্রথম দফায় সেনাবাহিনীকে বর্তমান সংবিধান বাতিল করে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতিশাসিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে সর্বাত্মক সহায়তা ও নিরাপত্তা প্রদান করতে বলা হয়। দ্বিতীয় দফায় একটি শক্তিশালী জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করতে বলা হয়, যার চেয়ারম্যান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্রপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভাইস চেয়ারম্যান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান হবেন। প্রস্তাবনা অনুসারে, এই পরিষদে প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান, পুলিশপ্রধান, গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে পুরাতন সংবিধান বাতিল এবং ফ্যাসিবাদী দল ও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করবে। তৃতীয় দফায় নতুন সংবিধান প্রণয়নে দ্রুত গণপরিষদ গঠন ও নির্বাচন পরিচালনা এবং পরবর্তীতে দ্রুত সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা প্রদান তত্ত্বাবধান করার প্রস্তাব রাখা হয়। চতুর্থ দফায় দেশের আর্থিক খাতের নিরাপত্তা তথা ব্যাংক, স্টক এক্সচেঞ্জ, আমদানি ও রপ্তানির লেনদেন সামরিক বাহিনীর মনিটরিং ও তত্ত্বাবধানে হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। পঞ্চম দফায় দেশের সব উপজেলা পর্যন্ত স্থায়ীভাবে সেনা মোতায়েন করে সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গি হামলাসহ জননিরাপত্তা-সংক্রান্ত ইস্যুতে তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানানো হয়। এ ক্ষেত্রে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সহায়তা নিতে সেনাবাহিনীকে পরামর্শ দেওয়া হয়। ষষ্ঠ দফায় সেনাবাহিনী, জনপ্রশাসনসহ রাষ্ট্রের সর্বত্র ফ্যাসিবাদের দোসর, দুর্নীতিবাজ ও দেশবিরোধীদের চিহ্নিত করে তাদের শূন্যপদে সাবেক দেশপ্রেমিক সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রদান করতে প্রস্তাব রাখা হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে এলেও ভেতরে ভেতরে সংগঠিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, আবদুল হান্নান মাসুদ, আবু বাকের মজুমদারসহ একটি পক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসেবে কাজ করছে। আরেকটি পক্ষ ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ করেছে। আর ‘জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ’ নামে রাজনৈতিক দল গঠনে কাজ করছে আরেকটি পক্ষ।
বিপ্লবী পরিষদের নেপথ্যে কারা- তার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জাপান থেকে এক আধ্যাত্মিক তরুণের নেতৃত্বে হচ্ছে সব। ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগের গোপন সংগঠন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’-এর মতোই এগোচ্ছে তারা। সিরাজুল আলম খানের মতো তাদের নেতা খোমেনী ইহসান নামের এক জাপানপ্রবাসী। তিনিই নতুন এই রাজনৈতিক দলের চিন্তক। শরীয়তপুরে জন্ম নেওয়া খোমেনী ইহসান পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন বলে বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে। ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নির্যাতন প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলন’ সংগঠনের আহ্বায়ক ছিলেন। ছাত্রজীবনে তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। ছাত্রজীবন শেষ করে দৈনিক আমার দেশ, যুগান্তরসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে কাজও করেছেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে দেশত্যাগে বাধ্য হন তিনি। জুলাই বিপ্লবে তার অবদান ছিল। যেকোনো সময় তিনি দেশে এসে নতুন দলটির হাল ধরবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ খোমেনীকে ঘিরেই গঠন হচ্ছে। দেশে তার ভাই, ছাত্রজীবনের অনুসারী ও সতীর্থরা সরাসরি কাজ করছেন এই সংগঠনে। মূল সংগঠনে হাসান আরিফ নামের একজন সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাকাউন্টিংয়ে পড়াশোনা করেছেন। ২০০৭-২০০৮ সেশনে স্নাতকে (সম্মান) ভর্তি হওয়া আরিফ ২০১৪ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। তথ্যপ্রযুক্তি ও ই-কমার্স সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। কয়েক মাস আগে চাকরি ছেড়ে আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা শুরু করেছেন।
এদিকে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের ছাত্রসংগঠন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ ও সদস্যসচিব ফজলুর রহমান। সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আহ্বায়ক সানোয়ারা খাতুন। বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ‘৫ আগস্টের বিপ্লবের পর বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ গঠন করা হয়েছে। আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং ইসলামী ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলো ক্রিয়াশীল রয়েছে। ইনশা আল্লাহ, এসব সংগঠনকে ছাপিয়ে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদই হয়ে উঠবে বাংলাদেশের প্রধান ছাত্রসংগঠন এবং মেধাতান্ত্রিক বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রধান ভ্যানগার্ড।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সমন্বয়ক হাসান আরিফ বলেন, ‘আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলাম, নেতৃত্বে ছিলাম না। অর্থ, পরামর্শ ও সমর্থন দিয়ে পাশে ছিলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আমাদের ছোট ভাই-বন্ধু। তবে আমরা আমাদের চিন্তা থেকে রাজনৈতিক দল করছি। আমাদের ছাত্রসংগঠন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ। আমাদের মূল সংগঠন গোছাচ্ছি। এখনো কমিটি হয়নি। তবে ছাত্রসংগঠনের কমিটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন সাংবাদিক জাকির মজুমদার বলেন, ‘নতুন রাষ্ট্রকাঠামো ও রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় নতুন ধারার রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মকে এগিয়ে নেব আমরা, ইনশা আল্লাহ। সমতা, ইনসাফ, মানবিক মর্যাদা নতুন রাজনীতির মূল ভিত্তি। গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের সর্বোচ্চ বিকাশকে আমরা প্রাধান্য দেব। সমাজের প্রতিটি স্তরে সংস্কার, সভ্যতা, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনব। আমাদের রাজনৈতিক দর্শন উপনিবেশপূর্ব বাংলা সালতানাতকে ফিরিয়ে আনা। যে সালতানাত মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধসহ সব জাতিগোষ্ঠীর সম্মিলনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। যেই সালতানাত ছিল সমৃদ্ধ, সভ্য ও শৃঙ্খলাপূর্ণ। মুসলিম জাতীয়তাবাদ হবে বাংলা সালতানাতের প্রেরণার উৎস। বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা সমমর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপন করব, ইনশা আল্লাহ।
জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের চিন্তক খোমেনী ইহসান বলেন, ‘আমাদের বিপ্লবী পরিষদ ভূরাজনীতি ও ওয়ার্ল্ড অর্ডারের সঙ্গে সংগতি রেখেই বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের রাজনীতি করবে। আমরা যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বিশ্বনেতাদের নেতৃত্বকে সম্মান করি এবং তাদের শিক্ষা ও সহযোগিতা নিয়ে দেশ গড়তে চাই। আমাদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে অস্পষ্টতা নেই। মূলত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে কীভাবে নেতৃত্ব দিতে হবে, এটিই আমাদের নেতাকর্মীরা আত্মস্থ করার চেষ্টা করছে এবং রাজপথ থেকে সংসদে ব্যবহারিকভাবে অর্জিত শিক্ষাকে কাজে লাগাবে। আমাদের মধ্যে বিশ্বব্যবস্থা, রাজনীতি, অর্থনীতি, সিকিউরিটি ও ক্ষমতা প্রশ্নে কোনো ভাববাদিতা, হটকারিতা, সংকীর্ণতা ও নির্বুদ্ধিতা নেই।’