চিন্তাভাবনা থেকে চেতনার জন্ম হয়। আর চেতনার জ্ঞান বা বোধ বা প্রকৃত অনুভূতিই চৈতন্য। জাগ্রত জীবন আর চেতনার বিবেক সুপ্রসন্ন হোক সকলের। গুণীজনে কহে, ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। চিন্তা ছাড়া শিক্ষা মূল্যহীন আর শিক্ষা ছাড়া চিন্তা ভয়ংকর। মন্দ চিন্তার চেয়ে কুৎসিত কিছু নেই। কিন্তু কবি-সাহিত্যিকেরা অসুন্দরের মধ্যেও সৌন্দর্য তৈরি করতে পারেন কবিতায় কিংবা গল্পে। একটি আপাদমস্তক সুন্দর মানুষও কুৎসিত চিন্তা করতে পারে এবং একজন আপাদমস্তক অসুন্দর মানুষও সুন্দরতম চিন্তা করতে পারে। সৎ চিন্তা করুন, কারণ চিন্তাগুলো একসময় প্রতিজ্ঞায় রূপ নেয়।
চিন্তাশক্তি মেধার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। আমাকে যদি একটা সমস্যা সমাধানের জন্য ১ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়, তবে আমি ৫৫ মিনিট চিন্তা করব, বাকি ৫ মিনিটে সমাধান করব। হ্যাঁ এবং না পৃথিবীর প্রাচীনতম এবং ক্ষুদ্রতম শব্দ। কিন্তু এ দুটি বলতেই আমাদের সবচেয়ে বেশি চিন্তা করতে হয়। একজন ডুবন্ত মানুষের চেতনা থাকে ভাসন্ত। অবসর হলো প্রয়োজনীয় চিন্তা করার উপযুক্ত সময়। তখন মানুষ অপ্রয়োজনীয় চিন্তা থেকে দূরে থাকে।
মনে রেখো, আজকের দিনটিই তোমার সেই ভবিষ্যৎ, যা নিয়ে তুমি গতকাল চিন্তিত ছিলে। মানুষ যখন তার শ্রেষ্ঠ চিন্তাটি করে, তখনই বাস করে শ্রেষ্ঠ সময়ে। বাঙালি সমাজ স্বাধীন চিন্তাকেই সবচেয়ে বেশি ভয় করে। অতীতের চিন্তা করো না। অতীতের দুশ্চিন্তার ভার তাকেই নিতে দাও। এখন চারপাশে ঘোর দুর্ভিক্ষ। একটা স্বাধীন দেশে সুচিন্তার ও সুরুচির দুর্ভিক্ষ চলছে। এর কোনো প্রতিকার সম্ভব নয় সুচিন্তা ছাড়া।
দেখার জন্য চোখের আলোর প্রয়োজন আর কোনো কিছু অর্জনের জন্য আমাদের ভাবনার প্রয়োজন। যে ব্যক্তি বাক্যে, কর্মে ও চিন্তায় সত্য নয়, সে প্রকৃত প্রস্তাবে সত্যনিষ্ঠ নয়। ভিন্নভাবে চিন্তা করার এবং উদ্ভাবনের সাহস থাকতে হবে। অপরিচিত পথে চলার ও অসম্ভব জিনিস আবিষ্কারের সাহস থাকতে হবে এবং সমস্যাকে জয় করে সফল হতে হবে। এসব মহান গুণের দ্বারা তরুণদের চালিত হতে হবে। তরুণ প্রজন্মের প্রতি এই হলো আমার বার্তা।
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তাধারার পরিবর্তন হয়। আগামীকালের দুশ্চিন্তা করো না। একজন মানুষ সারাদিন যা চিন্তা করে, সে হলো তা-ই। আমাদের চিন্তার মধ্যেই আছে আমাদের জীবন। চিন্তা ও জীবন একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আপনি নিজেকে যা ভাববেন, আপনি তা নন। আপনি নিজে যা ভাবেন, আপনি তা-ই। আমরা যদি গঠনমূলক চিন্তা, সাহস আর শান্তির কথা ভাবতে পারি, তাহলে কফিনে বসেও পারিপার্শ্বিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারব। আমার মা ভাবতেন আমি সেরা, আমার মা ভাবতেন বলেই আমি সেরা হয়েছি। চিন্তা স্বর্গকে নরক করে এবং নরককেও স্বর্গ করতে পারে। দুশ্চিন্তা দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ব্যস্ত থাকা। নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, নিজেতে ব্যস্ত থাকুন।
আপনার জীবনের চিন্তাভাবনাকে বদলে দিতে পারে দুই মিনিট সময়। যার কথার চেয়ে কাজের পরিমাণ বেশি, সাফল্য তার কাছেই এসে ধরা দেয়। কারণ, যে নদী যত গভীর, তার বয়ে যাওয়ার শব্দ তত কম। একজন জ্ঞানী জানেন যে তিনি কী জানেন না। আর একজন মূর্খ নিজেকে সব সময় সবজান্তা মনে করে। আজ পর্যন্ত কোনো ভিক্ষুক দাতা বা স্বাবলম্বী হতে পারেনি। যে হাত নিতে অভ্যস্ত, সে হাত কখনো দিতে পারে না।
আমরা খ্যাতিমান হতে চাই। কিন্তু খ্যাতির জন্য নীরব সাধনা ও প্রয়োজনীয় কষ্ট স্বীকার করি না। ফলে সাধনাও হয় না, খ্যাতির শীর্ষেও পৌঁছাতে পারি না। ব্যক্তিগত খেয়াল বা আবেগ আর জীবনের লক্ষ্যকে এক করে ফেলবেন না। লক্ষ্যকে যখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবেন, তখন তা আপনাকে আবেগের ঊর্ধ্বে নিয়ে যাবে। সুযোগের সঙ্গে জড়িত ঝুঁকি গ্রহণে সাহসী হোন। যখনই আপনি অনুভব করবেন, আপনার শরীরের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তখনই আপনি সুস্বাস্থ্যের সুপ্রভাতে উপনীত হবেন।
নিরাময়ের জন্য আপনার প্রথম প্রয়োজন এক প্রশান্ত মন। ‘সমস্যা’ শব্দটির পরিবর্তে ‘সম্ভাবনা’ শব্দটি বেশি ব্যবহার করুন। শৃঙ্খলা জীবনকে সমৃদ্ধ করে। লোহা ও চুম্বকের রাসায়নিক উপাদান এক হলেও সুশৃঙ্খল আণবিক বিন্যাসের কারণে চুম্বকের রয়েছে আকর্ষণী শক্তি, যা লোহার নেই। ব্যর্থরা অবচেতনভাবে ব্যর্থতার সঙ্গে নিজেদের সংযুক্ত করে। সচেতনভাবে সাফল্যের সঙ্গে একাত্ম হলে সাফল্যই আপনার দিকে আকৃষ্ট হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস পানি পানের অভ্যাস করুন। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে, সহজে পেটের কোনো পীড়া হবে না।
সহপাঠী বা প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক আর বন্ধুত্ব এক নয়। চেতনা ও আদর্শের মিল রয়েছে, এমন কারও সঙ্গেই বন্ধুত্ব হতে পারে। কর্মস্থলে প্রতিযোগীকে সব সময় শ্রদ্ধা করুন। শক্তিশালী প্রতিযোগী আপনার মেধার সর্বোত্তম বিকাশে অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে। শোষিতরা শোষিতের হাতেই সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়। যে কখনো সম্মান পায়নি, সে জানে না অন্যকে কীভাবে সম্মান করতে হয়। আপনার সময় নেইÑএ অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সময় কোন কাজে ব্যয় করবেন, তা নির্ধারণের অধিকার আপনার রয়েছে।
আত্মকেন্দ্রিকতা ও ‘আমারটা আগে’ এ দৃষ্টিভঙ্গি জীবনকে এক ক্লান্তিকর বোঝায় পরিণত করে। আর বিনয়, সহানুভূতি ও উপকার যত ক্ষুদ্রই হোক, জীবনকে প্রাণবন্ত ও হাস্যোজ্জ্বল করে তোলে। নিয়ত বা অভিপ্রায় হচ্ছে মনের লাগাম। নিয়ত মনকে নিয়ন্ত্রণ করে, দেহকে সঠিক পথে পরিচালিত করে, দেহ-মনে নতুন বাস্তবতার জন্ম দেয়। মুক্ত বিশ্বাস হচ্ছে সকল সাফল্য, সকল অর্জনের ভিত্তি। বিশ্বাসই রোগ নিরাময় করে, মেধাকে বিকশিত করে, যোগ্যতাকে কাজে লাগায়, দক্ষতা সৃষ্টি করে। ব্যর্থতাকে সাফল্যে আর অশান্তিকে প্রশান্তিতে রূপান্তরিত করে।
সুন্দর প্রত্যাশা ও প্রত্যয় নিয়ে দিন শুরু করুন। ঘুম ভাঙতেই বলুন, শোকর আলহামদুলিল্লাহ/থ্যাঙ্কস গড বা প্রভু ধন্যবাদ, একটি নতুন দিনের জন্য। দিনের সমাপ্তিও ঘটবে এভাবে। যা করতে পারবেন না বা করবেন না, সে ব্যাপারে বিনয়ের সঙ্গে প্রথমেই ‘না’ বলুন। কাউকে অভিনন্দন জানানোর সুযোগ পেলে আন্তরিকভাবে জানান। স্থান-কাল-পাত্র বুঝে হাসিমুখে কথা বলুন। হৃদয়ের আন্তরিকতা মুখের হাসিতে শতগুণে প্রস্ফুটিত হয়। প্রস্তুতি ছাড়া যাত্রাপথের কষ্টকে বাড়িয়ে দেয়। স্বপ্ন ও বিশ্বাস পথচলার সে প্রস্তুতিরই সূচনা করে।
প্রতিটি কাজ করার আগে অন্তত একবার নিজেকে জিজ্ঞেস করুন কাজটি আপনি কেন করবেন। নিজের কাছে নিজ সততা বজায় রাখুন। প্রতিটি কাজে আপনার পক্ষে যা করা সম্ভব, আন্তরিকতার সঙ্গে করুন। বুদ্ধিমান সব সময় কথা বা কাজের আগে চিন্তা করে। আর বোকারা চিন্তা করে (পস্তায়) কাজের পরে। একজন মানুষকে তার নাম ধরে সম্বোধন করুন। আলাপ-আলোচনায় একাধিকবার তার নাম উল্লেখ করুন। কাজ শেষ হলেই পারিশ্রমিক শোধ করবেন। যেকোনো সংকটকে বিপদ না ভেবে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিন।
দেহ হচ্ছে সেরা ওষুধের কারখানা। যখন যতটুকু প্রয়োজন, ঠিক ততটুকু ওষুধই সে তৈরি করে। আর এ ওষুধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে পুরোপুরি মুক্ত। দায়িত্ব নিতে ভয় পাবেন না। তাহলেই নতুন কিছু শিখতে পারবেন। কাজে উদ্যোগী না হলে প্রতিটি কাজই অসম্ভব মনে হয়। ‘আমি এ বিষয়ে জানি না’Ñএ কথাটি বলতে কখনো ভয় পাবেন না। ‘আমি দুঃখিত’ কথাটি সব সময় আন্তরিকতার সঙ্গে উচ্চারণ করুন। দীর্ঘসূত্রতা ও আলস্যকে প্রশ্রয় দেবেন না। যখন যা করা প্রয়োজন, তখনই তা করুন।
প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হোন। প্রকৃতি মন, দেহ ও আত্মার মাঝে সব সময় ভারসাম্য এনে দেয়। নীরব মুহূর্তে প্রতিদিন অন্তত একবার করে বলুন, ‘আমি সাহসী’। একটি কাজ না করার পেছনে হাজারটি অজুহাত দেখানো যায়, কিন্তু কাজটি করার জন্য একটি কারণই যথেষ্ট। জীবনে ব্যর্থতার প্রধান দুটি কারণ হচ্ছে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভাব। সমস্যায় পড়লেই সমাধানের জন্য উৎকণ্ঠিত হবেন না। সমস্যাকে তার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ছেড়ে দিন। প্রতিটি সমস্যার মধ্যেই নতুন সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে। যেকোনো ঘটনাকে সহজভাবে গ্রহণ করাই হচ্ছে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। প্রশান্ত মনই হচ্ছে শক্তির আসল ফল্গুধারা। মন প্রশান্ত হলে অন্তরের শক্তি জাগ্রত হয় এবং আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভবকে সম্ভব করে। প্রো-অ্যাকটিভ হোন। প্রো-অ্যাকটিভ মানুষের প্রতি অন্যরা আকৃষ্ট হয়। রি-অ্যাকটিভ ব্যক্তি সব সময়ই মানুষের বিতৃষ্ণার কারণ হয়। কারও রুমে ঢোকার সময় আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে ঢুকুন। রাগান্বিত অবস্থায় কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, জীবন বদলে যাবে। যার হারানোর কিছু নেই, তার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। সাহস ও ঝুঁকি গ্রহণে উৎসাহী হোন। সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। পেছনের দিকে তাকালে দেখবেন, কাজ করে অনুতপ্ত হওয়ার চেয়ে যে সুযোগ আপনি হাতছাড়া করেছেন, তা নিয়েই অনুতপ্ত হচ্ছেন বেশি। কান পেতে থাকুন। সুযোগ অনেক সময়ই দরজায় খুব আস্তে করে টোকা দেয়। হেসে কথা বলুন। এতে আপনি শুধু নিজেই আনন্দিত হবেন না, অন্যরাও খুশি হবে। দিনে কমপক্ষে ২০ বার বলুন, ‘আমি বেশ ভালো আছি।’ কারও আশাকে নষ্ট করবেন না। হয়তো এই আশাই তার শেষ সম্বল। রাগ, অভিমান ও অভিযোগ বোকা ও দুর্বলরা করে। বুদ্ধিমানরা পরিস্থিতি পরিবর্তনে বুদ্ধি ও কৌশল প্রয়োগ করে।
নিরাময়ের জন্য প্রয়োজন এক প্রশান্ত মন। আপনার মন ভালো তো সব ভালো। কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন না। একটু থামুন। লম্বা দম নিন। মনকে জিজ্ঞেস করুন, এ মুহূর্তে আমার কী করণীয়? প্রতিটি কাজ শুরু হয় শূন্য থেকে। ধাপে ধাপে তা পূর্ণতা পায়। দুঃখবিলাস বা কোনো কিছুই ভালো না লাগা আলস্যের একটি রূপ। যারা কিছু করে না, তাদের আসলে কিছুই ভালো লাগে না। আর যারা ব্যস্ত, তাদের কিছু ভালো না লাগার কোনো সুযোগ থাকে না।
রূপবতীরা বোকা হয়। স্বতঃসিদ্ধভাবে তাদের চিন্তাগুলোও বোকা হয়। এ হলো জগতের অতি পুরোনো নিয়ম। ইতিবাচক কাজের সঙ্গে জড়িত ইতিবাচক চিন্তাভাবনাই সফলতা বয়ে আনে। ইতিবাচক চিন্তাকে গুরুত্ব দিন। প্রতিটি ইতিবাচক চিন্তাই একটি ইতিবাচক কাজের শুরু। আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরে সবাই আমাকে সম্মান দেবে, আমাকে নিয়ে হইচই করবে এবং তখন যদি কোনো নতুন চিন্তা এসে আমাকে মিথ্যা প্রমাণ করে, তাহলে তার শেষ রক্ষা হবে না।
চিন্তাশক্তি মেধার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। আমাকে যদি একটা সমস্যা সমাধানের জন্য ১ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়, তবে আমি ৫৫ মিনিট চিন্তা করব, বাকি ৫ মিনিটে সমাধান করব। হ্যাঁ এবং না পৃথিবীর প্রাচীনতম এবং ক্ষুদ্রতম শব্দ। কিন্তু এ দুটি বলতেই আমাদের সবচেয়ে বেশি চিন্তা করতে হয়। একজন ডুবন্ত মানুষের চেতনা থাকে ভাসন্ত। অবসর হলো প্রয়োজনীয় চিন্তা করার উপযুক্ত সময়। তখন মানুষ অপ্রয়োজনীয় চিন্তা থেকে দূরে থাকে।
মনে রেখো, আজকের দিনটিই তোমার সেই ভবিষ্যৎ, যা নিয়ে তুমি গতকাল চিন্তিত ছিলে। মানুষ যখন তার শ্রেষ্ঠ চিন্তাটি করে, তখনই বাস করে শ্রেষ্ঠ সময়ে। বাঙালি সমাজ স্বাধীন চিন্তাকেই সবচেয়ে বেশি ভয় করে। অতীতের চিন্তা করো না। অতীতের দুশ্চিন্তার ভার তাকেই নিতে দাও। এখন চারপাশে ঘোর দুর্ভিক্ষ। একটা স্বাধীন দেশে সুচিন্তার ও সুরুচির দুর্ভিক্ষ চলছে। এর কোনো প্রতিকার সম্ভব নয় সুচিন্তা ছাড়া।
দেখার জন্য চোখের আলোর প্রয়োজন আর কোনো কিছু অর্জনের জন্য আমাদের ভাবনার প্রয়োজন। যে ব্যক্তি বাক্যে, কর্মে ও চিন্তায় সত্য নয়, সে প্রকৃত প্রস্তাবে সত্যনিষ্ঠ নয়। ভিন্নভাবে চিন্তা করার এবং উদ্ভাবনের সাহস থাকতে হবে। অপরিচিত পথে চলার ও অসম্ভব জিনিস আবিষ্কারের সাহস থাকতে হবে এবং সমস্যাকে জয় করে সফল হতে হবে। এসব মহান গুণের দ্বারা তরুণদের চালিত হতে হবে। তরুণ প্রজন্মের প্রতি এই হলো আমার বার্তা।
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তাধারার পরিবর্তন হয়। আগামীকালের দুশ্চিন্তা করো না। একজন মানুষ সারাদিন যা চিন্তা করে, সে হলো তা-ই। আমাদের চিন্তার মধ্যেই আছে আমাদের জীবন। চিন্তা ও জীবন একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আপনি নিজেকে যা ভাববেন, আপনি তা নন। আপনি নিজে যা ভাবেন, আপনি তা-ই। আমরা যদি গঠনমূলক চিন্তা, সাহস আর শান্তির কথা ভাবতে পারি, তাহলে কফিনে বসেও পারিপার্শ্বিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারব। আমার মা ভাবতেন আমি সেরা, আমার মা ভাবতেন বলেই আমি সেরা হয়েছি। চিন্তা স্বর্গকে নরক করে এবং নরককেও স্বর্গ করতে পারে। দুশ্চিন্তা দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ব্যস্ত থাকা। নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, নিজেতে ব্যস্ত থাকুন।
আপনার জীবনের চিন্তাভাবনাকে বদলে দিতে পারে দুই মিনিট সময়। যার কথার চেয়ে কাজের পরিমাণ বেশি, সাফল্য তার কাছেই এসে ধরা দেয়। কারণ, যে নদী যত গভীর, তার বয়ে যাওয়ার শব্দ তত কম। একজন জ্ঞানী জানেন যে তিনি কী জানেন না। আর একজন মূর্খ নিজেকে সব সময় সবজান্তা মনে করে। আজ পর্যন্ত কোনো ভিক্ষুক দাতা বা স্বাবলম্বী হতে পারেনি। যে হাত নিতে অভ্যস্ত, সে হাত কখনো দিতে পারে না।
আমরা খ্যাতিমান হতে চাই। কিন্তু খ্যাতির জন্য নীরব সাধনা ও প্রয়োজনীয় কষ্ট স্বীকার করি না। ফলে সাধনাও হয় না, খ্যাতির শীর্ষেও পৌঁছাতে পারি না। ব্যক্তিগত খেয়াল বা আবেগ আর জীবনের লক্ষ্যকে এক করে ফেলবেন না। লক্ষ্যকে যখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবেন, তখন তা আপনাকে আবেগের ঊর্ধ্বে নিয়ে যাবে। সুযোগের সঙ্গে জড়িত ঝুঁকি গ্রহণে সাহসী হোন। যখনই আপনি অনুভব করবেন, আপনার শরীরের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তখনই আপনি সুস্বাস্থ্যের সুপ্রভাতে উপনীত হবেন।
নিরাময়ের জন্য আপনার প্রথম প্রয়োজন এক প্রশান্ত মন। ‘সমস্যা’ শব্দটির পরিবর্তে ‘সম্ভাবনা’ শব্দটি বেশি ব্যবহার করুন। শৃঙ্খলা জীবনকে সমৃদ্ধ করে। লোহা ও চুম্বকের রাসায়নিক উপাদান এক হলেও সুশৃঙ্খল আণবিক বিন্যাসের কারণে চুম্বকের রয়েছে আকর্ষণী শক্তি, যা লোহার নেই। ব্যর্থরা অবচেতনভাবে ব্যর্থতার সঙ্গে নিজেদের সংযুক্ত করে। সচেতনভাবে সাফল্যের সঙ্গে একাত্ম হলে সাফল্যই আপনার দিকে আকৃষ্ট হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস পানি পানের অভ্যাস করুন। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে, সহজে পেটের কোনো পীড়া হবে না।
সহপাঠী বা প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক আর বন্ধুত্ব এক নয়। চেতনা ও আদর্শের মিল রয়েছে, এমন কারও সঙ্গেই বন্ধুত্ব হতে পারে। কর্মস্থলে প্রতিযোগীকে সব সময় শ্রদ্ধা করুন। শক্তিশালী প্রতিযোগী আপনার মেধার সর্বোত্তম বিকাশে অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে। শোষিতরা শোষিতের হাতেই সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়। যে কখনো সম্মান পায়নি, সে জানে না অন্যকে কীভাবে সম্মান করতে হয়। আপনার সময় নেইÑএ অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সময় কোন কাজে ব্যয় করবেন, তা নির্ধারণের অধিকার আপনার রয়েছে।
আত্মকেন্দ্রিকতা ও ‘আমারটা আগে’ এ দৃষ্টিভঙ্গি জীবনকে এক ক্লান্তিকর বোঝায় পরিণত করে। আর বিনয়, সহানুভূতি ও উপকার যত ক্ষুদ্রই হোক, জীবনকে প্রাণবন্ত ও হাস্যোজ্জ্বল করে তোলে। নিয়ত বা অভিপ্রায় হচ্ছে মনের লাগাম। নিয়ত মনকে নিয়ন্ত্রণ করে, দেহকে সঠিক পথে পরিচালিত করে, দেহ-মনে নতুন বাস্তবতার জন্ম দেয়। মুক্ত বিশ্বাস হচ্ছে সকল সাফল্য, সকল অর্জনের ভিত্তি। বিশ্বাসই রোগ নিরাময় করে, মেধাকে বিকশিত করে, যোগ্যতাকে কাজে লাগায়, দক্ষতা সৃষ্টি করে। ব্যর্থতাকে সাফল্যে আর অশান্তিকে প্রশান্তিতে রূপান্তরিত করে।
সুন্দর প্রত্যাশা ও প্রত্যয় নিয়ে দিন শুরু করুন। ঘুম ভাঙতেই বলুন, শোকর আলহামদুলিল্লাহ/থ্যাঙ্কস গড বা প্রভু ধন্যবাদ, একটি নতুন দিনের জন্য। দিনের সমাপ্তিও ঘটবে এভাবে। যা করতে পারবেন না বা করবেন না, সে ব্যাপারে বিনয়ের সঙ্গে প্রথমেই ‘না’ বলুন। কাউকে অভিনন্দন জানানোর সুযোগ পেলে আন্তরিকভাবে জানান। স্থান-কাল-পাত্র বুঝে হাসিমুখে কথা বলুন। হৃদয়ের আন্তরিকতা মুখের হাসিতে শতগুণে প্রস্ফুটিত হয়। প্রস্তুতি ছাড়া যাত্রাপথের কষ্টকে বাড়িয়ে দেয়। স্বপ্ন ও বিশ্বাস পথচলার সে প্রস্তুতিরই সূচনা করে।
প্রতিটি কাজ করার আগে অন্তত একবার নিজেকে জিজ্ঞেস করুন কাজটি আপনি কেন করবেন। নিজের কাছে নিজ সততা বজায় রাখুন। প্রতিটি কাজে আপনার পক্ষে যা করা সম্ভব, আন্তরিকতার সঙ্গে করুন। বুদ্ধিমান সব সময় কথা বা কাজের আগে চিন্তা করে। আর বোকারা চিন্তা করে (পস্তায়) কাজের পরে। একজন মানুষকে তার নাম ধরে সম্বোধন করুন। আলাপ-আলোচনায় একাধিকবার তার নাম উল্লেখ করুন। কাজ শেষ হলেই পারিশ্রমিক শোধ করবেন। যেকোনো সংকটকে বিপদ না ভেবে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিন।
দেহ হচ্ছে সেরা ওষুধের কারখানা। যখন যতটুকু প্রয়োজন, ঠিক ততটুকু ওষুধই সে তৈরি করে। আর এ ওষুধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে পুরোপুরি মুক্ত। দায়িত্ব নিতে ভয় পাবেন না। তাহলেই নতুন কিছু শিখতে পারবেন। কাজে উদ্যোগী না হলে প্রতিটি কাজই অসম্ভব মনে হয়। ‘আমি এ বিষয়ে জানি না’Ñএ কথাটি বলতে কখনো ভয় পাবেন না। ‘আমি দুঃখিত’ কথাটি সব সময় আন্তরিকতার সঙ্গে উচ্চারণ করুন। দীর্ঘসূত্রতা ও আলস্যকে প্রশ্রয় দেবেন না। যখন যা করা প্রয়োজন, তখনই তা করুন।
প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হোন। প্রকৃতি মন, দেহ ও আত্মার মাঝে সব সময় ভারসাম্য এনে দেয়। নীরব মুহূর্তে প্রতিদিন অন্তত একবার করে বলুন, ‘আমি সাহসী’। একটি কাজ না করার পেছনে হাজারটি অজুহাত দেখানো যায়, কিন্তু কাজটি করার জন্য একটি কারণই যথেষ্ট। জীবনে ব্যর্থতার প্রধান দুটি কারণ হচ্ছে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভাব। সমস্যায় পড়লেই সমাধানের জন্য উৎকণ্ঠিত হবেন না। সমস্যাকে তার প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ছেড়ে দিন। প্রতিটি সমস্যার মধ্যেই নতুন সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে। যেকোনো ঘটনাকে সহজভাবে গ্রহণ করাই হচ্ছে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। প্রশান্ত মনই হচ্ছে শক্তির আসল ফল্গুধারা। মন প্রশান্ত হলে অন্তরের শক্তি জাগ্রত হয় এবং আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভবকে সম্ভব করে। প্রো-অ্যাকটিভ হোন। প্রো-অ্যাকটিভ মানুষের প্রতি অন্যরা আকৃষ্ট হয়। রি-অ্যাকটিভ ব্যক্তি সব সময়ই মানুষের বিতৃষ্ণার কারণ হয়। কারও রুমে ঢোকার সময় আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে ঢুকুন। রাগান্বিত অবস্থায় কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, জীবন বদলে যাবে। যার হারানোর কিছু নেই, তার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। সাহস ও ঝুঁকি গ্রহণে উৎসাহী হোন। সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। পেছনের দিকে তাকালে দেখবেন, কাজ করে অনুতপ্ত হওয়ার চেয়ে যে সুযোগ আপনি হাতছাড়া করেছেন, তা নিয়েই অনুতপ্ত হচ্ছেন বেশি। কান পেতে থাকুন। সুযোগ অনেক সময়ই দরজায় খুব আস্তে করে টোকা দেয়। হেসে কথা বলুন। এতে আপনি শুধু নিজেই আনন্দিত হবেন না, অন্যরাও খুশি হবে। দিনে কমপক্ষে ২০ বার বলুন, ‘আমি বেশ ভালো আছি।’ কারও আশাকে নষ্ট করবেন না। হয়তো এই আশাই তার শেষ সম্বল। রাগ, অভিমান ও অভিযোগ বোকা ও দুর্বলরা করে। বুদ্ধিমানরা পরিস্থিতি পরিবর্তনে বুদ্ধি ও কৌশল প্রয়োগ করে।
নিরাময়ের জন্য প্রয়োজন এক প্রশান্ত মন। আপনার মন ভালো তো সব ভালো। কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন না। একটু থামুন। লম্বা দম নিন। মনকে জিজ্ঞেস করুন, এ মুহূর্তে আমার কী করণীয়? প্রতিটি কাজ শুরু হয় শূন্য থেকে। ধাপে ধাপে তা পূর্ণতা পায়। দুঃখবিলাস বা কোনো কিছুই ভালো না লাগা আলস্যের একটি রূপ। যারা কিছু করে না, তাদের আসলে কিছুই ভালো লাগে না। আর যারা ব্যস্ত, তাদের কিছু ভালো না লাগার কোনো সুযোগ থাকে না।
রূপবতীরা বোকা হয়। স্বতঃসিদ্ধভাবে তাদের চিন্তাগুলোও বোকা হয়। এ হলো জগতের অতি পুরোনো নিয়ম। ইতিবাচক কাজের সঙ্গে জড়িত ইতিবাচক চিন্তাভাবনাই সফলতা বয়ে আনে। ইতিবাচক চিন্তাকে গুরুত্ব দিন। প্রতিটি ইতিবাচক চিন্তাই একটি ইতিবাচক কাজের শুরু। আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরে সবাই আমাকে সম্মান দেবে, আমাকে নিয়ে হইচই করবে এবং তখন যদি কোনো নতুন চিন্তা এসে আমাকে মিথ্যা প্রমাণ করে, তাহলে তার শেষ রক্ষা হবে না।