১৭৭৬ সালে যুক্তরাজ্যের কবল থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই থেকে আজ প্রায় আড়াইশ বছরের ইতিহাসে দেশটিতে কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেননি। বিশ্বব্যাপী নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। নারীদের অধিকার আদায়ে বেশ সোচ্চার থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রেই নারীরা পিছিয়ে আছে, যা অনেককেই বিস্মিত করে। কারণ ভিন্ন দেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গসমতা নিয়ে ব্যাপক সরব থাকা দেশটি এখনো কোনো নারী প্রেসিডেন্টকে গ্রহণ করেননি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা নিয়ে নারী প্রার্থীগণ অংশগ্রহণ করেও শেষ পর্যন্ত জয়মাল্য উঠে পুরুষ প্রার্থীর গলায়। দেশটির জন্ম ইতিহাস থেকে সেই পুরুষতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাই চলে আসছে। অথচ ইউরোপের অনেক দেশেই নারী হয়েছেন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান। প্রগতিশীল হয়েও মার্কিনিদের মধ্যে কেন এত রক্ষণশীল মনোভাব, এ প্রশ্ন বিশ্বজুড়েই। আড়াইশ বছরের ইতিহাসে হোয়াইট হাউসের ক্ষমতা পাওয়ার মূল দৌড়ে অংশ নিয়েছেন মাত্র তিন নারী প্রার্থী। এদের মধ্যে সর্বপ্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ছিলেন রিপাবলিনা মার্গারেট চেস স্মিথ। যিনি ১৯৬৪ সালে মার্কিন ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। অন্যজন ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়া নারী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। সাবেক ফার্স্ট লেডি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দেওয়ায় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন তিনি। ৩০ লাখের বেশি পপুলার ভোট পেয়েও ইলেক্টোরাল কলেজের নিয়মে পরাজিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে। ২০২৪ সালের ৫ই নভেম্বর দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক কাউন্ট ডাউন শুরু হয়েছিল এবার হয়তো নারী প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছে দেশটি। এবারও হতাশ। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কাছাকাছি থেকেও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্যদিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনি এমন কীর্তি গড়েছেন, যা তার আগে সম্ভব করতে পেরেছিলেন মাত্র একজন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মাত্র একজনের ঝুলিতেই ছিল এমন কৃতিত্ব। তার নাম গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ক্লিভল্যান্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচনে গিয়ে পরাজিত হওয়ার পর ফের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন। এ বিষয়ে উইলিয়াম পিটারসন ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক লুইস পিকোনে বলেছেন, গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প দুইজনই অনন্য। এই দুই সাবেক প্রেসিডেন্টই পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে পরাজিত হওয়ার পরও ফের বিজয়ী হয়েছেন। মার্কিন নির্বাচনে নারীদের এই পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, আড়াইশ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিচালনায় নারীর নেতৃত্ব মেনে নেওয়ার অবস্থায় আসেনি আমেরিকার জনগণ। তবে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে নারী নেতৃত্বকে মেনে নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। তার প্রমাণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে রেকর্ড করেছিলেন এই কমলা হ্যারিস।
মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকায় নারীদের কাজ করার তেমন সুযোগ ছিল না। ষাটের দশকে নারী আন্দোলনের পর থেকে পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু হয়। তবে তখনও যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে নারী উপস্থিতি বাড়েনি।
১৯৭৭ সালে করা এক মার্কিন জরিপ অনুযায়ী, দেশটির ৫০ শতাংশ জনগণ মনে করেনÑ নারীরা আবেগি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন; যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রভাবশালী দেশে নারীরা রাষ্ট্রপরিচালনায় না আসাই ভালো।
বর্তমানে মার্কিন রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। বড় পরিবর্তন আসে ২০০৮ সালে। ওই বছর ডেমোক্র্যাটিক হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন। তিনিও পুরুষদের মতো প্রচার চালাতে থাকেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, সব যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও কেবল নারী হওয়ায় বিদ্বেষের শিকার হন হিলারি। হিলারির পর এবার নারী নেতৃত্বের অগ্নিশিখা হয়ে হাজির হয়েছিলেন একই দলের কমলা হ্যারিস। জুলাইয়ে নির্বাচনী বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে জো বাইডেনের হেরে যাওয়ার পর আমেরিকান জনগণের ভোট পেতে মাঠে নামেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তার বিশ্বাস, এবার একজন নারী প্রেসিডেন্টকেই বেছে নেবে মার্কিনিরা। আর এমনটা হলে, কমলা হবেন দেশটির ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট।
তবে এবারও সেই পুরুষদের কাছে ভোটে হেরে গেলেন কমলা। কমলার হেরে যাওয়ার কারণ হিসেবে আমেরিকার রাজনীতিতে রক্ষণশীল মনোভাব, পুরুষদের তুলনায় নারীদের ক্ষমতা এবং দক্ষতা সম্পর্কে জনসাধারণ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও গণমাধ্যমের কাছ থেকে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তাছাড়া লিঙ্গবৈষম্য, রাজনীতিতে সীমিত অংশগ্রহণ এবং তাদের যোগ্যতার অবমূল্যায়নের কারণে পুরুষদের তুলনায় নারীদের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, আমেরিকার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অন্যান্য দেশের তুলনায় জনপ্রিয়তার প্রতিযোগিতা বেশি, যা নারীদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। মূলত দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভোট গণনা নারীদের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। জার্মানি, যুক্তরাজ্যের মতো সংসদীয় ব্যবস্থা থাকলে যুক্তরাষ্ট্রেও নারী নেতৃত্ব এগিয়ে যেত।
আমরা আশা করব, ভবিষ্যতে সেই সুযোগ সৃষ্টি হবে, যুক্তরাষ্ট্রেও নারী নেতৃত্ব আসবে। সেই প্রত্যাশা পূরণ হবে কি না সময়ই বলে দেবে।
লেখক : সাংবাদিক
মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকায় নারীদের কাজ করার তেমন সুযোগ ছিল না। ষাটের দশকে নারী আন্দোলনের পর থেকে পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু হয়। তবে তখনও যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে নারী উপস্থিতি বাড়েনি।
১৯৭৭ সালে করা এক মার্কিন জরিপ অনুযায়ী, দেশটির ৫০ শতাংশ জনগণ মনে করেনÑ নারীরা আবেগি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন; যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রভাবশালী দেশে নারীরা রাষ্ট্রপরিচালনায় না আসাই ভালো।
বর্তমানে মার্কিন রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। বড় পরিবর্তন আসে ২০০৮ সালে। ওই বছর ডেমোক্র্যাটিক হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন। তিনিও পুরুষদের মতো প্রচার চালাতে থাকেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, সব যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও কেবল নারী হওয়ায় বিদ্বেষের শিকার হন হিলারি। হিলারির পর এবার নারী নেতৃত্বের অগ্নিশিখা হয়ে হাজির হয়েছিলেন একই দলের কমলা হ্যারিস। জুলাইয়ে নির্বাচনী বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে জো বাইডেনের হেরে যাওয়ার পর আমেরিকান জনগণের ভোট পেতে মাঠে নামেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তার বিশ্বাস, এবার একজন নারী প্রেসিডেন্টকেই বেছে নেবে মার্কিনিরা। আর এমনটা হলে, কমলা হবেন দেশটির ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট।
তবে এবারও সেই পুরুষদের কাছে ভোটে হেরে গেলেন কমলা। কমলার হেরে যাওয়ার কারণ হিসেবে আমেরিকার রাজনীতিতে রক্ষণশীল মনোভাব, পুরুষদের তুলনায় নারীদের ক্ষমতা এবং দক্ষতা সম্পর্কে জনসাধারণ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও গণমাধ্যমের কাছ থেকে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তাছাড়া লিঙ্গবৈষম্য, রাজনীতিতে সীমিত অংশগ্রহণ এবং তাদের যোগ্যতার অবমূল্যায়নের কারণে পুরুষদের তুলনায় নারীদের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, আমেরিকার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অন্যান্য দেশের তুলনায় জনপ্রিয়তার প্রতিযোগিতা বেশি, যা নারীদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। মূলত দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভোট গণনা নারীদের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। জার্মানি, যুক্তরাজ্যের মতো সংসদীয় ব্যবস্থা থাকলে যুক্তরাষ্ট্রেও নারী নেতৃত্ব এগিয়ে যেত।
আমরা আশা করব, ভবিষ্যতে সেই সুযোগ সৃষ্টি হবে, যুক্তরাষ্ট্রেও নারী নেতৃত্ব আসবে। সেই প্রত্যাশা পূরণ হবে কি না সময়ই বলে দেবে।
লেখক : সাংবাদিক