আপনারা সবাই জানেন, মানুষের মৌলিক অধিকার পাঁচটি। সেগুলো হলো খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। এই পাঁচটি বিষয় একজন মানুষের পাওয়ার অধিকার আছে। একটি দেশকে অবশ্যই তার একজন নাগরিককে মানবাধিকারগুলো দিতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা কোনো দেশ এসব থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করতে পারবে না।
এ সম্পর্কে আরও অনেক কথা আছে, যেগুলো আমাদের বড় বড় জ্ঞানীরা ভুলে গেছেন মানবাধিকার সম্পর্কে। যেগুলো আপনারা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন। কষ্ট করে নিচে দেওয়া তথ্যগুলো পড়তে থাকুন, আশা করব আপনার চাওয়া সকল তথ্য আপনারা পেয়ে যাবেন। নিচে মানবাধিকার নিয়ে কিছু কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।
মানবাধিকার হলো এমন এক জিনিস, যা পাওয়া বর্তমান সময়ে অনেক কষ্টকর। কেননা বর্তমান সময়ে মানবাধিকার বলতে কোনো বিষয় নেই। কারণ বর্তমানে ছেলেমেয়েদেরকে সমান অধিকার দেওয়া হয় না। এখানে ধনী-দরিদ্র ভেদাভেদ করা হয়। কিন্তু এটা কোনো মানবাধিকারের পর্যায়ে পড়ে না। এ নিয়ে অনেক কথা আমাদের মনীষীরা বলে গিয়েছেন।
বিশ্বমানবতা এই নেতার, সেই নেতার, সেই রাজা বা রাজপুত্র বা ধর্মীয় নেতার নয়। পৃথিবী মানবতার। জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত মানবতার সেবা করা। মানবতার মাহাত্ম্য মানুষ হওয়ার মধ্যে নয়, মানবিক হওয়ার মধ্যে। একজন ভালো মানুষের একটা উষ্ণ হৃদয়, স্নেহময় মন থাকে। এটাই আমার মৌলিক বিশ্বাস। ভদ্রতা মানবতার ফুল। পৃথিবীর প্রায় অনেক মানুষই আছে, যারা কোনো না কোনো মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে।
আমি আশা করি, মানুষ অবশেষে বুঝতে পারবে একটিই ‘জাতি’Ñসেটা হলো মানবজাতি এবং আমরা সবাই এর সদস্য। যারা মানবতা সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি শিক্ষা দেয়, তারা সব সময় মানুষ হয় না। উদারতা মানবতার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ উপাদান। মানবতার সেবা করা মানে আমি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেকে সেবা করি। নিজের হৃদয়ে মাধুর্য খুঁজে নাও, তাহলেই পাবে প্রতিটি হৃদয়ে মাধুর্য।
বর্তমান সময়ে প্রায় বেশির ভাগ মানুষই জানে না মানবাধিকারের বাণীগুলো কী কী। তাই তাদের জন্য আজকে আমরা মানবাধিকার নিয়ে যত বাণী আছে, তার কিছু আপনাদের সামনে তুলে ধরব, যাতে আপনাদের মানবাধিকার সম্পর্কে কিছুটা ধারণা হয়। মানবসেবার চেয়ে উচ্চতর ধর্ম আর নেই। সাধারণের জন্য কাজ করাই সবচেয়ে বড় ধর্ম। নৈতিক সাহস মানবতার সর্বোচ্চ প্রকাশ। আমি চিৎকার করা ভালো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ নীরবতা মানবতার বিরুদ্ধে প্রকৃত অপরাধ।
শুধু অন্যের সেবায় বেঁচে থাকা জীবনই বেঁচে থাকার যোগ্য। স্বার্থপরতা মানবতাবিরোধী। মানবতা ছাড়া সমাজে বেঁচে থাকা খুবই কঠিন। যে সমাজে মানবতাকে সর্বজনীনভাবে প্রয়োগ করা হয়, সেটাই পরিপূর্ণ সুশীল সমাজ। সুশীল সমাজ হলো আধুনিক সমাজ। আর মানবতাবিরোধী সমাজ হলো বর্বর সমাজ, যা ছিল প্রাচীনকালে। আমরা সে সমাজ চাই না। বর্তমানে উন্নত বিশ্ব হয়েছে মানবতার প্রয়োগের মাধ্যমে। মানবতার যেখানে বিপর্যয় সেখানে বসবাস দুর্বিষহ। মানবতাকে সবার মনে ধারণ করা খুবই প্রয়োজন। আমার এ লেখা পড়ে যদি আপনাদের মনে একটুও পরিবর্তন আসে, তাহলেই আমার পরিশ্রম সার্থক হবে।
শিশু অধিকার : শিশুরা হচ্ছে জাতির ভবিষ্যৎ এবং একই সঙ্গে সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশ। শিশুর প্রতি ব্যবহারে সতর্কতা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বিশ্ব শিশু পরিস্থিতিতে পরস্পরবিরোধী একটি অবস্থা বিরাজমান থাকা সত্ত্বেও বর্তমান বিশ্ববাসীর মধ্যে এক জায়গায় একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ করা যায়, যা হচ্ছে শিশু অধিকার সম্পর্কে পূর্বেকার যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও অনেক বেশি সচেতনতা। শিশুর প্রতি দায়িত্ববোধ এখন আর শুধু নীতিবোধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা ক্রমবর্ধমান হারে বৃহত্তর সামাজিক ও আইনানুগ বাধ্যবাধকতার আওতায় চলে আসছে। অধিকার-বিষয়ক আলোচনার পূর্বে কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন আবশ্যক।
লেখক ব্লাঞ্চেট তার ১৯৯৬ সালে পরিচালিত গবেষণায় শিশু সম্পর্কে যে সংজ্ঞা দিয়েছেন, তা হলো যে মানবসন্তানের কিছু বোঝার ক্ষমতা নেই, তাকে বলা হয় শিশু। এটা নির্ভর করে তার শারীরিক বিকাশ ও জীবনযাপন পরিস্থিতির ওপরÑবয়স কমবেশি হতে পারে।
সাধারণভাবে বয়সের তারতম্যের কারণে আমরা কাউকে শিশু, কাউকে যুবক, কাউকে বৃদ্ধ বলে থাকি। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে ১৮ বছরের কম বয়সী যেকোনো মানবসন্তানকেই শিশু বলা হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় শিশু নীতি ১৪ বছরের নিচে যেকোনো বালক-বালিকাকে শিশু বলছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে প্রচলিত সাবালকত্ব আইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সাবালকত্বের বয়স শুরু হবে ১৮ বছর থেকে।
বয়স/বয়সসীমা : চাকরিতে নিয়োগের অনুমতি প্রসঙ্গে (কারখানা আইন-১৯৬৫, দোকান ও প্রতিষ্ঠান আইন-১৯৬৫, শিশু শ্রমিক নিয়োগ আইন-১৯৩৮) ১৮ থেকে ২১ বছরের মধ্যে। বিয়ে মেয়েদের জন্য ১৮ ও ছেলেদের জন্য ২১ বছর। তামাক, সুরা বা অন্য কোনো মারাত্মক ড্রাগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ১৬ বছর।
বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বশেষ বয়স ১০ বছর। সামরিক বাহিনীতে স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ ১৬ (অভিভাবকের সম্মতিতে), ফৌজদারি দায়দায়িত্ব ১২ বছর থেকে সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব এবং ফৌজদারি আইন ভঙ্গ করা সম্পর্কিত খণ্ডনযোগ্য আনুমানিক বয়সসীমা ৭ থেকে ১১ বছর। গ্রেফতার, আটক বা কারারুদ্ধের মাধ্যমে ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা (ফৌজদারি দায়দায়িত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত) নির্ধারিত কোনো বয়স নেই।
মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে ১৭ বছর, ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ৭ বছর, তবে শর্ত থাকে যে বয়সের অনুমান সম্পর্কে কোনো যুক্তি খণ্ডন করা হয়নি। আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া প্রসঙ্গে যদিও সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য কোনো সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারিত নেই, তবে সাক্ষীকে অবশ্যই প্রশ্ন বোঝা এবং উত্তর দেওয়ার মতো যথেষ্ট বুদ্ধিসম্পন্ন ও সচেতন হতে হবে আদালতে অভিযোগ দায়েরের মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে (অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া)।
যুদ্ধে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নন-কমিশন অফিসারের ক্ষেত্রে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর এবং কমিশনড অফিসারের ক্ষেত্রে দুই বছরের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর। এর বাইরেও বাংলাদেশে প্রচলিত কিছু কিছু আইনে শিশু হিসেবে কাদেরকে অভিহিত করা যাবে, সে সম্পর্কিত বিধানের উল্লেখ রয়েছে। চুক্তি আইনে বলা হয়েছে, ১৮ বছর বয়সের কম কোনো ব্যক্তি চুক্তি করতে পারে না। এই আইনে ১৮ বছরের কম বয়সের মানবসন্তানকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
নিম্নতম মজুরি আইনে ১৮ বছর পূর্ণ না হলে সে শিশু হিসেবে গণ্য হয়। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের তালাক আইনে নাবালক নির্ধারণের ক্ষেত্রে পুত্রের ১৬ বছর এবং কন্যার ১৩ বছরের কম হলে নাবালক বলা হয়েছে। খনি আইনে ১৫ বছর পূর্ণ না হলে তাকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। শিশুকে খনিতে কাজে নেওয়া যায় না। ১৯৩৯ সালের মোটর গাড়ি আইনে ১৮ বছরের কম বয়সের ব্যক্তিকে গাড়ি এবং ২০ বছরের কম বয়সের ব্যক্তিকে বড় গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয় না।
এত বৈপরীত্য সত্ত্বেও এই মুহূর্তে আমাদের জন্য যে বিষয়টি আশার সঞ্চার করছে, সেটি হলো সরকার শিশুর সংজ্ঞা নির্ধারণের এই জটিল বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের দ্বিমাসিক নিউজলেটার জুলাই-আগস্ট/২০০৫ সংখ্যায় মানবজমিনের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদের অনুসরণে অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়স্ক সব বালক-বালিকা শিশু হিসেবে গণ্য হবে। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ‘দি কোর্ট অব ওয়ার্ডস (সংশোধন আইন)-২০০৫’ নামের একটি বিল উত্থাপিত হয়েছে। ভূমি প্রতিমন্ত্রী উকিল আব্দুস সাত্তার বিলটি উত্থাপন করলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ৬ সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে প্রেরণ করা হয়। বিলে বলা হয়েছে : আজকের শিশু জাতির সোনালি ভবিষ্যতের স্থপতি। সুন্দর, কল্যাণকর জাতি গঠনের জন্য প্রয়োজন এমন সুন্দর পরিবেশ, যেখানে জাতির ভবিষ্যৎ স্থপতিগণ সকল সম্ভাবনাসহ সুস্থ, স্বাভাবিক ও স্বাধীন মর্যাদা নিয়ে শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, আধ্যাত্নিক ও সামাজিকভাবে পূর্ণ বিকাশ লাভ করতে পারবে। শিশুদের জন্য এরূপ একটি পরিবেশ গঠন কারও দয়া বা অনুগ্রহের ওপর নির্ভরশীল থাকলে চলবে না।
এ জন্য প্রয়োজন শিশুর অধিকার-সংবলিত উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন এবং তার সফল বাস্তবায়ন। এই বাস্তব সত্য উপলব্ধি করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিশু অধিকারের ওপর বিভিন্ন আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের নিরন্তর প্রচেষ্টা চলছে। বাংলাদেশও পরিবর্তনশীল সময়ের দাবি অনুযায়ী শিশু অধিকারের ওপর বিভিন্ন আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এক অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে।
দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে শিশুদের জন্য সুষ্ঠু কার্যক্রম গ্রহণ অপরিহার্য। প্রত্যেক শিশুকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় সবার অংশগ্রহণ একান্ত বাঞ্ছনীয়। শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। জাতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে শিশুদের উন্নয়নের সার্বিক কার্যক্রম অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন।
এ সম্পর্কে আরও অনেক কথা আছে, যেগুলো আমাদের বড় বড় জ্ঞানীরা ভুলে গেছেন মানবাধিকার সম্পর্কে। যেগুলো আপনারা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন। কষ্ট করে নিচে দেওয়া তথ্যগুলো পড়তে থাকুন, আশা করব আপনার চাওয়া সকল তথ্য আপনারা পেয়ে যাবেন। নিচে মানবাধিকার নিয়ে কিছু কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।
মানবাধিকার হলো এমন এক জিনিস, যা পাওয়া বর্তমান সময়ে অনেক কষ্টকর। কেননা বর্তমান সময়ে মানবাধিকার বলতে কোনো বিষয় নেই। কারণ বর্তমানে ছেলেমেয়েদেরকে সমান অধিকার দেওয়া হয় না। এখানে ধনী-দরিদ্র ভেদাভেদ করা হয়। কিন্তু এটা কোনো মানবাধিকারের পর্যায়ে পড়ে না। এ নিয়ে অনেক কথা আমাদের মনীষীরা বলে গিয়েছেন।
বিশ্বমানবতা এই নেতার, সেই নেতার, সেই রাজা বা রাজপুত্র বা ধর্মীয় নেতার নয়। পৃথিবী মানবতার। জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত মানবতার সেবা করা। মানবতার মাহাত্ম্য মানুষ হওয়ার মধ্যে নয়, মানবিক হওয়ার মধ্যে। একজন ভালো মানুষের একটা উষ্ণ হৃদয়, স্নেহময় মন থাকে। এটাই আমার মৌলিক বিশ্বাস। ভদ্রতা মানবতার ফুল। পৃথিবীর প্রায় অনেক মানুষই আছে, যারা কোনো না কোনো মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে।
আমি আশা করি, মানুষ অবশেষে বুঝতে পারবে একটিই ‘জাতি’Ñসেটা হলো মানবজাতি এবং আমরা সবাই এর সদস্য। যারা মানবতা সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি শিক্ষা দেয়, তারা সব সময় মানুষ হয় না। উদারতা মানবতার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ উপাদান। মানবতার সেবা করা মানে আমি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেকে সেবা করি। নিজের হৃদয়ে মাধুর্য খুঁজে নাও, তাহলেই পাবে প্রতিটি হৃদয়ে মাধুর্য।
বর্তমান সময়ে প্রায় বেশির ভাগ মানুষই জানে না মানবাধিকারের বাণীগুলো কী কী। তাই তাদের জন্য আজকে আমরা মানবাধিকার নিয়ে যত বাণী আছে, তার কিছু আপনাদের সামনে তুলে ধরব, যাতে আপনাদের মানবাধিকার সম্পর্কে কিছুটা ধারণা হয়। মানবসেবার চেয়ে উচ্চতর ধর্ম আর নেই। সাধারণের জন্য কাজ করাই সবচেয়ে বড় ধর্ম। নৈতিক সাহস মানবতার সর্বোচ্চ প্রকাশ। আমি চিৎকার করা ভালো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ নীরবতা মানবতার বিরুদ্ধে প্রকৃত অপরাধ।
শুধু অন্যের সেবায় বেঁচে থাকা জীবনই বেঁচে থাকার যোগ্য। স্বার্থপরতা মানবতাবিরোধী। মানবতা ছাড়া সমাজে বেঁচে থাকা খুবই কঠিন। যে সমাজে মানবতাকে সর্বজনীনভাবে প্রয়োগ করা হয়, সেটাই পরিপূর্ণ সুশীল সমাজ। সুশীল সমাজ হলো আধুনিক সমাজ। আর মানবতাবিরোধী সমাজ হলো বর্বর সমাজ, যা ছিল প্রাচীনকালে। আমরা সে সমাজ চাই না। বর্তমানে উন্নত বিশ্ব হয়েছে মানবতার প্রয়োগের মাধ্যমে। মানবতার যেখানে বিপর্যয় সেখানে বসবাস দুর্বিষহ। মানবতাকে সবার মনে ধারণ করা খুবই প্রয়োজন। আমার এ লেখা পড়ে যদি আপনাদের মনে একটুও পরিবর্তন আসে, তাহলেই আমার পরিশ্রম সার্থক হবে।
শিশু অধিকার : শিশুরা হচ্ছে জাতির ভবিষ্যৎ এবং একই সঙ্গে সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশ। শিশুর প্রতি ব্যবহারে সতর্কতা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বিশ্ব শিশু পরিস্থিতিতে পরস্পরবিরোধী একটি অবস্থা বিরাজমান থাকা সত্ত্বেও বর্তমান বিশ্ববাসীর মধ্যে এক জায়গায় একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ করা যায়, যা হচ্ছে শিশু অধিকার সম্পর্কে পূর্বেকার যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও অনেক বেশি সচেতনতা। শিশুর প্রতি দায়িত্ববোধ এখন আর শুধু নীতিবোধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা ক্রমবর্ধমান হারে বৃহত্তর সামাজিক ও আইনানুগ বাধ্যবাধকতার আওতায় চলে আসছে। অধিকার-বিষয়ক আলোচনার পূর্বে কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন আবশ্যক।
লেখক ব্লাঞ্চেট তার ১৯৯৬ সালে পরিচালিত গবেষণায় শিশু সম্পর্কে যে সংজ্ঞা দিয়েছেন, তা হলো যে মানবসন্তানের কিছু বোঝার ক্ষমতা নেই, তাকে বলা হয় শিশু। এটা নির্ভর করে তার শারীরিক বিকাশ ও জীবনযাপন পরিস্থিতির ওপরÑবয়স কমবেশি হতে পারে।
সাধারণভাবে বয়সের তারতম্যের কারণে আমরা কাউকে শিশু, কাউকে যুবক, কাউকে বৃদ্ধ বলে থাকি। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে ১৮ বছরের কম বয়সী যেকোনো মানবসন্তানকেই শিশু বলা হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় শিশু নীতি ১৪ বছরের নিচে যেকোনো বালক-বালিকাকে শিশু বলছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে প্রচলিত সাবালকত্ব আইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সাবালকত্বের বয়স শুরু হবে ১৮ বছর থেকে।
বয়স/বয়সসীমা : চাকরিতে নিয়োগের অনুমতি প্রসঙ্গে (কারখানা আইন-১৯৬৫, দোকান ও প্রতিষ্ঠান আইন-১৯৬৫, শিশু শ্রমিক নিয়োগ আইন-১৯৩৮) ১৮ থেকে ২১ বছরের মধ্যে। বিয়ে মেয়েদের জন্য ১৮ ও ছেলেদের জন্য ২১ বছর। তামাক, সুরা বা অন্য কোনো মারাত্মক ড্রাগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ১৬ বছর।
বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বশেষ বয়স ১০ বছর। সামরিক বাহিনীতে স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ ১৬ (অভিভাবকের সম্মতিতে), ফৌজদারি দায়দায়িত্ব ১২ বছর থেকে সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব এবং ফৌজদারি আইন ভঙ্গ করা সম্পর্কিত খণ্ডনযোগ্য আনুমানিক বয়সসীমা ৭ থেকে ১১ বছর। গ্রেফতার, আটক বা কারারুদ্ধের মাধ্যমে ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা (ফৌজদারি দায়দায়িত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত) নির্ধারিত কোনো বয়স নেই।
মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে ১৭ বছর, ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ৭ বছর, তবে শর্ত থাকে যে বয়সের অনুমান সম্পর্কে কোনো যুক্তি খণ্ডন করা হয়নি। আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া প্রসঙ্গে যদিও সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য কোনো সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারিত নেই, তবে সাক্ষীকে অবশ্যই প্রশ্ন বোঝা এবং উত্তর দেওয়ার মতো যথেষ্ট বুদ্ধিসম্পন্ন ও সচেতন হতে হবে আদালতে অভিযোগ দায়েরের মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে (অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া)।
যুদ্ধে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নন-কমিশন অফিসারের ক্ষেত্রে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর এবং কমিশনড অফিসারের ক্ষেত্রে দুই বছরের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর। এর বাইরেও বাংলাদেশে প্রচলিত কিছু কিছু আইনে শিশু হিসেবে কাদেরকে অভিহিত করা যাবে, সে সম্পর্কিত বিধানের উল্লেখ রয়েছে। চুক্তি আইনে বলা হয়েছে, ১৮ বছর বয়সের কম কোনো ব্যক্তি চুক্তি করতে পারে না। এই আইনে ১৮ বছরের কম বয়সের মানবসন্তানকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
নিম্নতম মজুরি আইনে ১৮ বছর পূর্ণ না হলে সে শিশু হিসেবে গণ্য হয়। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের তালাক আইনে নাবালক নির্ধারণের ক্ষেত্রে পুত্রের ১৬ বছর এবং কন্যার ১৩ বছরের কম হলে নাবালক বলা হয়েছে। খনি আইনে ১৫ বছর পূর্ণ না হলে তাকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। শিশুকে খনিতে কাজে নেওয়া যায় না। ১৯৩৯ সালের মোটর গাড়ি আইনে ১৮ বছরের কম বয়সের ব্যক্তিকে গাড়ি এবং ২০ বছরের কম বয়সের ব্যক্তিকে বড় গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া হয় না।
এত বৈপরীত্য সত্ত্বেও এই মুহূর্তে আমাদের জন্য যে বিষয়টি আশার সঞ্চার করছে, সেটি হলো সরকার শিশুর সংজ্ঞা নির্ধারণের এই জটিল বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের দ্বিমাসিক নিউজলেটার জুলাই-আগস্ট/২০০৫ সংখ্যায় মানবজমিনের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদের অনুসরণে অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়স্ক সব বালক-বালিকা শিশু হিসেবে গণ্য হবে। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ‘দি কোর্ট অব ওয়ার্ডস (সংশোধন আইন)-২০০৫’ নামের একটি বিল উত্থাপিত হয়েছে। ভূমি প্রতিমন্ত্রী উকিল আব্দুস সাত্তার বিলটি উত্থাপন করলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ৬ সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে প্রেরণ করা হয়। বিলে বলা হয়েছে : আজকের শিশু জাতির সোনালি ভবিষ্যতের স্থপতি। সুন্দর, কল্যাণকর জাতি গঠনের জন্য প্রয়োজন এমন সুন্দর পরিবেশ, যেখানে জাতির ভবিষ্যৎ স্থপতিগণ সকল সম্ভাবনাসহ সুস্থ, স্বাভাবিক ও স্বাধীন মর্যাদা নিয়ে শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, আধ্যাত্নিক ও সামাজিকভাবে পূর্ণ বিকাশ লাভ করতে পারবে। শিশুদের জন্য এরূপ একটি পরিবেশ গঠন কারও দয়া বা অনুগ্রহের ওপর নির্ভরশীল থাকলে চলবে না।
এ জন্য প্রয়োজন শিশুর অধিকার-সংবলিত উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন এবং তার সফল বাস্তবায়ন। এই বাস্তব সত্য উপলব্ধি করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিশু অধিকারের ওপর বিভিন্ন আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের নিরন্তর প্রচেষ্টা চলছে। বাংলাদেশও পরিবর্তনশীল সময়ের দাবি অনুযায়ী শিশু অধিকারের ওপর বিভিন্ন আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এক অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে।
দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে শিশুদের জন্য সুষ্ঠু কার্যক্রম গ্রহণ অপরিহার্য। প্রত্যেক শিশুকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় সবার অংশগ্রহণ একান্ত বাঞ্ছনীয়। শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। জাতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে শিশুদের উন্নয়নের সার্বিক কার্যক্রম অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন।