প্রবাসে আমরা কেমন আছি?

প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৪ , অনলাইন ভার্সন
প্রবাসজীবনটা নিয়ে আমাদের অধিকাংশ মানুষের মনে কতটা প্রভাব বা প্রবাসে আমরা কেমন আছি জানা না গেলেও মুখে একটা হাহাকার হাহাকার শব্দ শোনা যায়। আসলে কি তা-ই? প্রবাসের বিচিত্র বর্ণময়তায় আমাদের মনটা যখন রাঙা হয়ে ওঠে, তখন প্রবাসজীবনে আমাদের সব বর্ণহীনতা, মালিন্য, জীর্ণতা, হাহাকারের ধূসর মেঘ কেটে যায়।
হয়তো হৃদয়ের ভেতরে যে অতৃপ্তি সব সময় দেশ নিয়ে, ফেলে আসা স্বজন নিয়ে যে অতি শীতল বরফের চাঙ জমা হয়, সেই বরফ গলাতেই আমরা উষ্ণতায় মেতে উঠি বিভিন্ন আয়োজন উপলক্ষে। অনেকের স্বজনহীন জীবন কেটে যায় দশকের পর দশক। ঘরে মরে থাকা লাশের খবর মেলে কয়েক দিন গত হয়ে যাওয়ার পর। এই জীবন নিয়ে আমরা আনন্দের, উৎসবের উপলক্ষ খুঁজি। সেই উপলক্ষ আমাদের এনে দেয় আনন্দে মেতে ওঠার সুযোগ। হই-হুল্লোড়ে পার করে দিতে চাই যাপিত কঠিন কঠোর জীবনের ভার।
কী সেই উপলক্ষ? কিসেই উদযাপন? মুসলমানদের ঈদ উৎসব, রমজানে ইফতার পার্টি। ইদানীং তো জমজমাট সাহ্্রি পার্টির আনন্দ আয়োজনের কথাও শোনা যায়। রমজানের ঈদ, কোরবানির ঈদ। হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গোৎসবসহ নানা পালাপার্বণ। গরমে বনভোজন। বনভোজনে সব সম্প্রদায়ের সব সংগঠনের সকল পর্যায়ের নারী-পুরুষ, শিশু, যুবক-তরুণ সবাই আমরা মেতে উঠি আনন্দে। নুরু-পুষি, আয়শা-সুফি সবাই মিলে হুল্লোড় করি একটা দিন বনভোজনের আনন্দে। একটা বনভোজনের সমাপ্তি ঘটলেই পরবর্তী বছরের জন্য পার্ক রিজার্ভ করে রাখা হয়, যেন পার্ক পাওয়ার সমস্যায় পড়তে না হয়।
বলা হয়ে থাকে, বাঙালিরা সংগঠন-প্রিয়। দেশের নামে, বিভাগের নামে, জেলার নামে, উপজেলা এমনকি থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও আমাদের সংগঠন আছে। সেসব সংগঠন নিয়ে মাতামাতির শেষ নেই। মনোমালিন্য আছে। ভাগাভাগিও আছে। এসব নিয়ে এমন ঘটনাও ঘটে, গতকালের যারা অন্তরঙ্গ বন্ধু, গলায় গলায় মিল; পরদিনই ভাগাভাগি, মুখ দেখাদেখি বন্ধ। মনে হয় জীবনের মতো তারা একজন আরেকজনের মুখ দেখবে না। কিন্তু আগামীকালই দেখা যাবে গতকাল যার মুণ্ডু চাই, একদিন পরই মনপ্রাণ উজাড় করে দুজন সংগঠনের কাজে বা বনভোজনে মেতে উঠেছে।
উত্তর আমেরিকাব্যাপী, বিশেষ করে নিউইয়র্কে অন্যতম প্রধান প্রধান সংগঠনের মধ্যে বাংলাদেশ সোসাইটি, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন, চিটাগং সমিতি, বিয়ানীবাজার অ্যাসোসিয়েশন উল্লেখযোগ্য। সবগুলো সংগঠনই বছরজুড়ে মেতে থাকে ইফতার পার্টি, বনভোজন, ঈদ, পূজা আয়োজন নিয়ে। মানুষকে সবচেয়ে বেশি উৎসবমুখর দেখা যায় কয়েকটি উদযাপনকে কেন্দ্র করে। যেমন ইফতার পার্টি, বনভোজন, ঈদ ও দুর্গোৎসব। আর বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে অনেক রকম খেলা চলে। নির্বাচন নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা, এমনকি সংগঠন দ্বিধাবিভক্তির মতো ঘটনাও ঘটে। কিন্তু এসব নিয়ে মন-কষাকষির ঘটনা দেখা যায় না। আজ কিছু নিয়ে মন-কষাকষি হলেও আগামীকালই দেখা যাবে গলাগলি হতে।
তবে সুদিনের চেয়েও দুর্দিনে আমরা প্রবাসীরা যেন আরও বেশি একাত্ম হয়ে একে অপরের পাশে দাঁড়াই। তবে মনে পড়ে ‘অ্যা ফ্রেন্ড ইন নিড ইজ অ্যা ফ্রেন্ড ইনডিড।’ সে সময় আমরা সবাই যে ‘অসময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু।’ প্রবাসীরা কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকলে প্রবাসী অনেকেই স্বজন হয়ে পাশে দাঁড়ান। খোঁজখবর নেন রোগীর পরম আত্মীয় হয়ে। কেউ মারা গেলে অন্য সবাই পরম আত্মীয় হয়ে নিহতের পরিবারের পাশে দাঁড়ান। হাসপাতাল থেকে ফিউনারেল, সেখান থেকে দাফন-কাফন শেষে গোরস্তান পর্যন্ত শেষ বিদায়ের সব আনুষ্ঠানিকতায় প্রবাসীদের উদার সহযোগিতা সত্যি অনুসরণযোগ্য।
একজনের শোকে আমরা দশজন কাতর হই। সেই শোকের মধ্যেও শক্তি খুঁজতে আশ্রয় নিই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। মনে মনে বলি : ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত মাগে/ তবু প্রাণ নিত্যধারা, হাসে সূর্য চন্দ্র তারা, বসন্ত নিকুঞ্জে আসে বিচিত্র রাগে...।’
জীবন থেমে থাকে না। নদীর স্রোতোধারার মতো জীবনও সামনে এগিয়ে চলে। আমরা প্রবাসীরাও তেমনি শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও আনন্দ খুঁজে বেড়াই। যেটুকু পাই সেটুকু নিয়েই আমরা প্রবাসজীবনের আনন্দ-বেদনার কাব্য গেঁথে চলি।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041