নাজুক দশা এখনো কাটাতে পারেনি পুলিশ। আবার দশা বদলও হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজধানীতে পুলিশকেন্দ্রিক ছোট্ট ঘটনা।
কাকরাইলের অডিট ভবনের সামনে গ্রেড পরিবর্তনের দাবিতে অডিটরদের সড়ক অবরোধ কর্মসূচি। ঘন্টা তিনেক ধরে সড়কটি অবরোধ করে রাখেন মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক- সিএজির অধীন দেড়-দুইশ’ অডিটর। দাবি- ১১তম গ্রেড থেকে তাদেরকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করতে হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধিদলকে আলোচনার জন্য ডাকা হলো। যাবেন না তারা। এ অবস্থায় কী করণীয় পুলিশের?
এ পরিস্থিতির একপর্যায়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সড়ক থেকে আন্দোলনকারীদের সরাতে ‘অ্যাকশনে’ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন অধস্তন কর্মকর্তাদের নির্বিকার ভূমিকার কারণে বাধে বিপত্তি। নমুনা বুঝে আন্দোলনকারীদের তোড় বেড়ে যায়। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে সাঁজোয়া যান আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার- এপিসি এবং জলকামান আনা হয়। আন্দোলনকারীদের পাঁচ মিনিটের মধ্যে সড়ক থেকে সরে যেতে আল্টিমেটাম দেয় পুলিশ। আন্দোলনকারীদের আর এখন কেয়ার করার টাইম আছে কাউকে? পুলিশেরও কি দৌড়ানো বা পালাবার সময় এখন?
অধস্তন পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে ডিসি সারোয়ার জাহানকে বলতে শোনা যায়, সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ও লাঠি নিয়ে সবাই প্রস্তুত হোন। একপর্যায়ে হ্যান্ডমাইকে তিনি সবাইকে আন্দোলনকারীদের দিকে এগিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু তার সঙ্গে থাকা রমনা জোনের এডিসি, রমনার এসি (পেট্রল), রমনা থানার ওসিসহ কয়েক পুলিশ সদস্য ছাড়া অধস্তন আর কাউকে এগোতে দেখা যায়নি। ডিসি সারোয়ার জাহান দফায় দফায় সেখানে উপস্থিত পুলিশ ফোর্সকে উজ্জীবিত করার সে কি চেষ্টা! বলেন, ‘সাহস নিয়ে আপনারা এগিয়ে আসুন’। এ সময় কনস্টেবল এবং এসআই পর্যায়ের কয়েক পুলিশ সদস্য জানিয়ে দেন, তারা কোনো ‘অ্যাকশনে’ যাবেন না। এই চান্সে সড়কে দোয়া ও মোনাজাত শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ভাবা যায় দৃশ্যটা?
দৃশ্যপট এখানেই শেষ নয়। এরই মধ্যে অডিট ভবনের সামনে উপস্থিত হন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. ইসরাইল হাওলাদার। তিনি সব ফোর্সকে ডেকে একত্র করেন। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে শুরু করেন। আন্দোলনকারীদের কয়েকজন ধাক্কা দিয়ে সড়কের বাইরে নিতে থাকেন। তখন আন্দোলনকারীরাও তার ওপর চড়াও হন। এ সময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের একটি অংশ সামনে এগোতে থাকলে আন্দোলনকারীদের বড় অংশ রাস্তা ছাড়তে থাকেন। সামনেও এভাবেই চলবে?
তা হয় না। হতে পারে না। সেনাবাহিনীকে কোন পরিবেশে-পরিস্থিতিতে মাঠে নামাতে এবং পরবর্তীতে তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিতে হয়েছে বোঝা গেলো কিছু? আগে নির্বিকারে-নির্বিচারে গুলি করে মানুষ মারা হয়েছে বলে এখনও মারতে হবে? অথবা আগে পিটুনি বা মার দেয়া হয়েছে বলে এখন বিশাল ছাড় বা ফ্রি করে দিতে হবে? কোনোটাই সমাধান নয়। পুলিশকে আর ব্যবহার না করার কথা বলা হয়েছে, অবৈধ নির্দেশ না শোনার কথা বলা হয়েছে। অ্যাকশনে গেলে আবার যে বিপদে পড়বে না, তারই বা গ্যারান্টি কই?
গত ১৫-১৬ বছরে অমানবিক যত কাজ আছে তার কোনোটাই বাদ দেয়নি পুলিশ। সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান, কাঁদানে গ্যাস, লাঠি নয়, আরো বহুবিধ মারণাস্র নিয়ে দানবীয় ‘সাহস’ ও হিংস্র ‘উজ্জীবিত’ শক্তিতে ‘অ্যাকশনে’ গেছে পুলিশ। ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এঁরা যা যা করেছে, সেগুলো সারাবিশ্বের ইতিহাসে বিরল, বর্বরতম-নিষ্ঠুরতম। স্বৈরাচারের প্রায় ১৬ বছরে গুম-খুন-ক্রসফায়ার করে এঁরা রীতিমত দম্ভ ও উল্লাস করেছে। এঁদের প্রভূ স্বৈরাচার থেকে বাহবা, মেডেল, পদোন্নতি, লুটপাটের সুবিধা নিয়ে পুরো দেশটিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এখন তারা ভালো হয়ে গেছে, না নতুন কোনো আয়োজন?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।
কাকরাইলের অডিট ভবনের সামনে গ্রেড পরিবর্তনের দাবিতে অডিটরদের সড়ক অবরোধ কর্মসূচি। ঘন্টা তিনেক ধরে সড়কটি অবরোধ করে রাখেন মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক- সিএজির অধীন দেড়-দুইশ’ অডিটর। দাবি- ১১তম গ্রেড থেকে তাদেরকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করতে হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধিদলকে আলোচনার জন্য ডাকা হলো। যাবেন না তারা। এ অবস্থায় কী করণীয় পুলিশের?
এ পরিস্থিতির একপর্যায়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সড়ক থেকে আন্দোলনকারীদের সরাতে ‘অ্যাকশনে’ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন অধস্তন কর্মকর্তাদের নির্বিকার ভূমিকার কারণে বাধে বিপত্তি। নমুনা বুঝে আন্দোলনকারীদের তোড় বেড়ে যায়। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে সাঁজোয়া যান আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার- এপিসি এবং জলকামান আনা হয়। আন্দোলনকারীদের পাঁচ মিনিটের মধ্যে সড়ক থেকে সরে যেতে আল্টিমেটাম দেয় পুলিশ। আন্দোলনকারীদের আর এখন কেয়ার করার টাইম আছে কাউকে? পুলিশেরও কি দৌড়ানো বা পালাবার সময় এখন?
অধস্তন পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে ডিসি সারোয়ার জাহানকে বলতে শোনা যায়, সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ও লাঠি নিয়ে সবাই প্রস্তুত হোন। একপর্যায়ে হ্যান্ডমাইকে তিনি সবাইকে আন্দোলনকারীদের দিকে এগিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু তার সঙ্গে থাকা রমনা জোনের এডিসি, রমনার এসি (পেট্রল), রমনা থানার ওসিসহ কয়েক পুলিশ সদস্য ছাড়া অধস্তন আর কাউকে এগোতে দেখা যায়নি। ডিসি সারোয়ার জাহান দফায় দফায় সেখানে উপস্থিত পুলিশ ফোর্সকে উজ্জীবিত করার সে কি চেষ্টা! বলেন, ‘সাহস নিয়ে আপনারা এগিয়ে আসুন’। এ সময় কনস্টেবল এবং এসআই পর্যায়ের কয়েক পুলিশ সদস্য জানিয়ে দেন, তারা কোনো ‘অ্যাকশনে’ যাবেন না। এই চান্সে সড়কে দোয়া ও মোনাজাত শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। ভাবা যায় দৃশ্যটা?
দৃশ্যপট এখানেই শেষ নয়। এরই মধ্যে অডিট ভবনের সামনে উপস্থিত হন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. ইসরাইল হাওলাদার। তিনি সব ফোর্সকে ডেকে একত্র করেন। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে শুরু করেন। আন্দোলনকারীদের কয়েকজন ধাক্কা দিয়ে সড়কের বাইরে নিতে থাকেন। তখন আন্দোলনকারীরাও তার ওপর চড়াও হন। এ সময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের একটি অংশ সামনে এগোতে থাকলে আন্দোলনকারীদের বড় অংশ রাস্তা ছাড়তে থাকেন। সামনেও এভাবেই চলবে?
তা হয় না। হতে পারে না। সেনাবাহিনীকে কোন পরিবেশে-পরিস্থিতিতে মাঠে নামাতে এবং পরবর্তীতে তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিতে হয়েছে বোঝা গেলো কিছু? আগে নির্বিকারে-নির্বিচারে গুলি করে মানুষ মারা হয়েছে বলে এখনও মারতে হবে? অথবা আগে পিটুনি বা মার দেয়া হয়েছে বলে এখন বিশাল ছাড় বা ফ্রি করে দিতে হবে? কোনোটাই সমাধান নয়। পুলিশকে আর ব্যবহার না করার কথা বলা হয়েছে, অবৈধ নির্দেশ না শোনার কথা বলা হয়েছে। অ্যাকশনে গেলে আবার যে বিপদে পড়বে না, তারই বা গ্যারান্টি কই?
গত ১৫-১৬ বছরে অমানবিক যত কাজ আছে তার কোনোটাই বাদ দেয়নি পুলিশ। সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান, কাঁদানে গ্যাস, লাঠি নয়, আরো বহুবিধ মারণাস্র নিয়ে দানবীয় ‘সাহস’ ও হিংস্র ‘উজ্জীবিত’ শক্তিতে ‘অ্যাকশনে’ গেছে পুলিশ। ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এঁরা যা যা করেছে, সেগুলো সারাবিশ্বের ইতিহাসে বিরল, বর্বরতম-নিষ্ঠুরতম। স্বৈরাচারের প্রায় ১৬ বছরে গুম-খুন-ক্রসফায়ার করে এঁরা রীতিমত দম্ভ ও উল্লাস করেছে। এঁদের প্রভূ স্বৈরাচার থেকে বাহবা, মেডেল, পদোন্নতি, লুটপাটের সুবিধা নিয়ে পুরো দেশটিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এখন তারা ভালো হয়ে গেছে, না নতুন কোনো আয়োজন?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।