ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার এখন ক্ষমতায়। তারা রাষ্ট্র সরকারের ঘোষণা দিয়েছে। বলছে- দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার মুল শক্তি প্রবাসীদের বিমানবন্দরে ভিআইপি মর্যাদা দেওয়া হবে। সব সরকারই এমন কথা বলে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।
অতীতে কোনো সরকারের আমলেই কোনো কিছুর পরিবর্তন হয়নি। সরকার প্রধানরা একের পর এক আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু আজও চালু হয়নি বাংলাদেশ বিমানের নিউইয়র্ক-ঢাকা রুট।
তারপরও- নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন সারা বিশ্বের প্রায় দুই কোটি প্রবাসী। তাদের বিশ্বাস- ড. ইউনূস কথা রাখবেন। তার রাষ্ট্র সংস্কারে উদ্যোগে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। দেশ থেকে দুর্নীতি বিদায় হবে চিরতরে। প্রতিষ্ঠা হবে সুশাসন। নিউইয়র্কে তাকে কাছে পেলে প্রবাসীরা নানান যৌক্তিক দাবি জানাবেন। এসব দাবির মধ্যে থাকবে নিউইয়র্ক-ঢাকা রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু, দেশে সুশাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং বিমাবন্দরে হয়রানি বন্ধের দাবি। এছাড়া প্রবাসী রেমিটান্সে ৫ শতাংশ প্রণোদনা প্রদানের দাবিও থাকবে। অন্যান্য দাবির মধ্যে থাকবে- প্রবাসীদের ভোটাধিকার, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রবাস থেকে দ্রুত সময়ে পাসপোর্ট প্রদানের ব্যবস্থা করা।
প্রবাসীদের ধারাবাহিত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মাতৃভূমিতে যাওয়ার পর বিমানবন্দরে তাদের হয়রানি করা হয়। লাগেজ পেতে বিলম্ব হয়। মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে যাওয়া প্রবাসীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন সময় প্রবাসীরা অভিযোগ করলেও এসব অভিযোগের সুরাহা হয়নি কখনো। বরং অভিযোগ করার পর প্রবাসীদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়।
প্রবাসীরা দেশে গেলে নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় ভোগেন। সম্পদ ও অর্থের লোভে আত্মীয়-স্বজনদের দ্বারা মামলাজনিত হয়রানির শিকার হন। এছাড়া দেশে বাড়ি করতে গেলে চাঁদাবাজদের চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়। থানায় অভিযোগ করলে উল্টো পুলিশ নানান অজুহাতে হয়রানি করে। এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না।
প্রবাসীরা অর্থনীতির চালিকা শক্তি। রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছেন। অথচ নিজ দেশে প্রবাসীরা বৈষম্যের শিকার। তাদের জন্য কোথাও ন্যুনতম সুযোগ সুবিধা নেই। আকাশ, সড়ক ও নৌপথের পরিবহনে তারা টিকেট কিনতে গেলে কোনো প্রায়োরিটি পান না। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বা অন্য দেশের পর্যটকদের জন্য টিকেটের কোটা আছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রেলপথের টিকেটে বিদেশি নাগরিকদের জন্য কোটা রয়েছে। অথচ প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিজ দেশে অবহেলিত।
প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করা নিউইয়র্কে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘প্রবাসী অধিকার’-এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, প্রতিবছর বিশ্বের ১৭২টি দেশে সরকারিভাবে বৈধ কাজের ভিসা নিয়ে প্রবাসে পাড়ি দেন প্রায় ১০ লাখ মান্ষু। বিভিন্নভাবে আরও নানা ভিসা নিয়ে মোট পাড়ি দেন ২০ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক। এই প্রবাসীরা প্রবাসে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রতি মাসে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে রাখছেন অসামান্য অবদান। রাষ্ট্র ও সমাজ এসব মুখে স্বীকার করলেও বাস্তবতায় প্রবাসীরা সব সময় অবহেলিত। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি কর্তৃক প্রবাসীদের হয়রানির শেষ নেই।
তিনি জানান, প্রবাসীদের বলা হয় ‘রেমিট্যান্সযোদ্ধা’। অথচ এই যোদ্ধাদের সম্মানটা কোথাও দেওয়া হয় না। উল্টো হতে হয় নানা জায়গায় লাঞ্ছনার শিকার। সমাজ কিংবা রাষ্ট্র কোথাও প্রবাসীদের যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয় না। একজন প্রবাসী দেশের টানে দীর্ঘদিন পর ছুটিতে যান এবং তাতেও ভোগান্তির শেষ নেই। দেশের বিমানবন্দরগুলোতে কতিপয় কর্মকর্তাদের হাতে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হয় প্রবাসীদের। বিমানবন্দরে প্রবাসীদের সঙ্গে করা হয় অমানবিক আচরণ। এ ছাড়া দিনরাত মেধা ও শ্রম দিয়ে পরিবারের জন্য কেনা দামি মালামালও চুরি হয় দেশের বিমানবন্দরগুলোতে। তিনি জানান, দেশের বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রীদের মালামালের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে হবে। যাত্রীদের সম্মানের ব্যাপারে ওপরমহলের সার্বক্ষণিক নজরদারি জোরদার করতে হবে।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশ সোসাইটির প্রচার সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ভর করে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, তা স্বীকার করা হয়। কিন্তু বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধে কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করা হয় না। ইমিগ্রেশনে ঢুকলে মনে হয়, আমি কোনো অপরাধী এবং অপরাধ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছি। এ অবস্থা পরিবর্তনের সময় এসেছে।
নিউইয়র্ক প্রবাসী আলমগীর হোসেন জানান, ঢাকায় বিমানবন্দরে প্রবাসীদের সঙ্গে আনা মালামাল চেকের নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা এবং প্রবাসীর সঙ্গে থাকা নগদ অর্থ বকশিশের নামে নিয়ে নেওয়া বিমানবন্দরের প্রতিদিনের চিত্র। বিমানবন্দরে একজন প্রবাসীর সঙ্গে অসদাচরণ থেকে শুরু করে লাগেজ ছুড়ে ফেলা, এমনকি গায়ে হাত তোলার মতো ঘটনাও নতুন কিছু নয়। অন্তর্বতী সরকারের কাছে আমাদের দাবি- রাষ্ট্র সংস্কারে প্রবাসীদের দাবিগুলো যেন অগ্রাধিকার পায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিমানবন্দরের যাত্রীসেবা নিয়ে সন্তুষ্ট হয়েছে, অথবা হয়রানির শিকার হয়নি, এমন প্রবাসী খুঁজে পাওয়া দুর্লভ। অতীতে সরকারগুলো প্রবাসী হয়রানি বন্ধে কিছু পদক্ষেপ নিলেও বাস্তবে চিত্র একই, বরং দিন দিন প্রবাসী হয়রানির মাত্রা আরো বাড়ছে। তবে অন্তর্বতী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তবে আমরা চাই স্থায়ী সমাধান।
নিউইয়র্ক প্রবাসী জেসমিন আক্তার রুবী জানান, দূতাবাস বা কনস্যুলেটে গিয়েও ভোগান্তির শেষ নেই। পাসপোর্ট নবায়ন করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয়। এমনকী ভিন্নমতের কেউ হলে তাকে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য মাসের পর মাস ঘুরতে হয়েছে।
নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে বসবাসরত আলাউদ্দিন স্বপন বলেনম প্রবাসজীবনের একটি বড় সমস্যা প্রবাসীর লাশ দেশে নেওয়া। প্রবাসে এসে অনেকে রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় বা কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাসহ নানা কারণে মারা যান। দেখা যায়, মৃত প্রবাসীর লাশ যে সংখ্যক দেশে ফেরে, তার চেয়ে অনেক বেশিসংখ্যক লাশ বিদেশেই থেকে যায়। দেশে পরিবারের সদস্যরা প্রিয় মানুষকে শেষ দেখাও দেখতে পারেন না। নানা জটিলতা ও বাধাবিপত্তির কারণে লাশ দেশে আনতে বা পাঠাতে সমস্যা হয়।
তিনি জানান, লাশ দেশে পাঠাতে দরকার হয় মোটা অঙ্কের টাকা, যা অনেক প্রবাসীর পরিবারের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয় না। অনেক সময় কোনো প্রবাসী মারা গেলে দেশে পাঠানোর জন্য চাঁদা তুলতে হয়, যা খুবই দুঃখজনক। এ ছাড়া লাশ নিয়ে দূতাবাসের সহায়তা নিতে গেলেও ভোগান্তির শেষ থাকে না। বিশ্বের যেকোনো দেশে বাংলাদেশি মারা গেলে প্রবাসীর লাশ দেশে বিনা খরচে যাবে, এমনটা চান প্রবাসীরা ও তাঁদের পরিবার।
প্রবাসীরা যাতে নিরাপদে সফর করতে পারেন, সে জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং তা যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রয়োজনে প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী সুরক্ষা আইন করতে হবে। প্রবাসীরা দেশের সূর্যসন্তান, তাই প্রবাসীদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মীদের আরও আন্তরিক হতে হবে। প্রবাসীর লাশ বিনা খরচে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রবাসীরা ভালো থাকলে বাড়বে রেমিট্যান্স, রেমিট্যান্স বাড়লে আরও ভালো থাকবে প্রাণের বাংলাদেশ। রাষ্ট্র সংস্কারে এসব বিষয় অগ্রাধিকার পাক, দাবি কোটি প্রবাসীর। এই মুহূর্তে প্রবাসীরা তাকিয়ে আছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে।
অতীতে কোনো সরকারের আমলেই কোনো কিছুর পরিবর্তন হয়নি। সরকার প্রধানরা একের পর এক আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু আজও চালু হয়নি বাংলাদেশ বিমানের নিউইয়র্ক-ঢাকা রুট।
তারপরও- নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন সারা বিশ্বের প্রায় দুই কোটি প্রবাসী। তাদের বিশ্বাস- ড. ইউনূস কথা রাখবেন। তার রাষ্ট্র সংস্কারে উদ্যোগে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। দেশ থেকে দুর্নীতি বিদায় হবে চিরতরে। প্রতিষ্ঠা হবে সুশাসন। নিউইয়র্কে তাকে কাছে পেলে প্রবাসীরা নানান যৌক্তিক দাবি জানাবেন। এসব দাবির মধ্যে থাকবে নিউইয়র্ক-ঢাকা রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু, দেশে সুশাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং বিমাবন্দরে হয়রানি বন্ধের দাবি। এছাড়া প্রবাসী রেমিটান্সে ৫ শতাংশ প্রণোদনা প্রদানের দাবিও থাকবে। অন্যান্য দাবির মধ্যে থাকবে- প্রবাসীদের ভোটাধিকার, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রবাস থেকে দ্রুত সময়ে পাসপোর্ট প্রদানের ব্যবস্থা করা।
প্রবাসীদের ধারাবাহিত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মাতৃভূমিতে যাওয়ার পর বিমানবন্দরে তাদের হয়রানি করা হয়। লাগেজ পেতে বিলম্ব হয়। মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে যাওয়া প্রবাসীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন সময় প্রবাসীরা অভিযোগ করলেও এসব অভিযোগের সুরাহা হয়নি কখনো। বরং অভিযোগ করার পর প্রবাসীদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়।
প্রবাসীরা দেশে গেলে নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় ভোগেন। সম্পদ ও অর্থের লোভে আত্মীয়-স্বজনদের দ্বারা মামলাজনিত হয়রানির শিকার হন। এছাড়া দেশে বাড়ি করতে গেলে চাঁদাবাজদের চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়। থানায় অভিযোগ করলে উল্টো পুলিশ নানান অজুহাতে হয়রানি করে। এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না।
প্রবাসীরা অর্থনীতির চালিকা শক্তি। রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছেন। অথচ নিজ দেশে প্রবাসীরা বৈষম্যের শিকার। তাদের জন্য কোথাও ন্যুনতম সুযোগ সুবিধা নেই। আকাশ, সড়ক ও নৌপথের পরিবহনে তারা টিকেট কিনতে গেলে কোনো প্রায়োরিটি পান না। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বা অন্য দেশের পর্যটকদের জন্য টিকেটের কোটা আছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রেলপথের টিকেটে বিদেশি নাগরিকদের জন্য কোটা রয়েছে। অথচ প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিজ দেশে অবহেলিত।
প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করা নিউইয়র্কে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘প্রবাসী অধিকার’-এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, প্রতিবছর বিশ্বের ১৭২টি দেশে সরকারিভাবে বৈধ কাজের ভিসা নিয়ে প্রবাসে পাড়ি দেন প্রায় ১০ লাখ মান্ষু। বিভিন্নভাবে আরও নানা ভিসা নিয়ে মোট পাড়ি দেন ২০ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক। এই প্রবাসীরা প্রবাসে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রতি মাসে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে রাখছেন অসামান্য অবদান। রাষ্ট্র ও সমাজ এসব মুখে স্বীকার করলেও বাস্তবতায় প্রবাসীরা সব সময় অবহেলিত। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি কর্তৃক প্রবাসীদের হয়রানির শেষ নেই।
তিনি জানান, প্রবাসীদের বলা হয় ‘রেমিট্যান্সযোদ্ধা’। অথচ এই যোদ্ধাদের সম্মানটা কোথাও দেওয়া হয় না। উল্টো হতে হয় নানা জায়গায় লাঞ্ছনার শিকার। সমাজ কিংবা রাষ্ট্র কোথাও প্রবাসীদের যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয় না। একজন প্রবাসী দেশের টানে দীর্ঘদিন পর ছুটিতে যান এবং তাতেও ভোগান্তির শেষ নেই। দেশের বিমানবন্দরগুলোতে কতিপয় কর্মকর্তাদের হাতে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হয় প্রবাসীদের। বিমানবন্দরে প্রবাসীদের সঙ্গে করা হয় অমানবিক আচরণ। এ ছাড়া দিনরাত মেধা ও শ্রম দিয়ে পরিবারের জন্য কেনা দামি মালামালও চুরি হয় দেশের বিমানবন্দরগুলোতে। তিনি জানান, দেশের বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রীদের মালামালের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে হবে। যাত্রীদের সম্মানের ব্যাপারে ওপরমহলের সার্বক্ষণিক নজরদারি জোরদার করতে হবে।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশ সোসাইটির প্রচার সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ভর করে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, তা স্বীকার করা হয়। কিন্তু বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধে কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করা হয় না। ইমিগ্রেশনে ঢুকলে মনে হয়, আমি কোনো অপরাধী এবং অপরাধ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছি। এ অবস্থা পরিবর্তনের সময় এসেছে।
নিউইয়র্ক প্রবাসী আলমগীর হোসেন জানান, ঢাকায় বিমানবন্দরে প্রবাসীদের সঙ্গে আনা মালামাল চেকের নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা এবং প্রবাসীর সঙ্গে থাকা নগদ অর্থ বকশিশের নামে নিয়ে নেওয়া বিমানবন্দরের প্রতিদিনের চিত্র। বিমানবন্দরে একজন প্রবাসীর সঙ্গে অসদাচরণ থেকে শুরু করে লাগেজ ছুড়ে ফেলা, এমনকি গায়ে হাত তোলার মতো ঘটনাও নতুন কিছু নয়। অন্তর্বতী সরকারের কাছে আমাদের দাবি- রাষ্ট্র সংস্কারে প্রবাসীদের দাবিগুলো যেন অগ্রাধিকার পায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিমানবন্দরের যাত্রীসেবা নিয়ে সন্তুষ্ট হয়েছে, অথবা হয়রানির শিকার হয়নি, এমন প্রবাসী খুঁজে পাওয়া দুর্লভ। অতীতে সরকারগুলো প্রবাসী হয়রানি বন্ধে কিছু পদক্ষেপ নিলেও বাস্তবে চিত্র একই, বরং দিন দিন প্রবাসী হয়রানির মাত্রা আরো বাড়ছে। তবে অন্তর্বতী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তবে আমরা চাই স্থায়ী সমাধান।
নিউইয়র্ক প্রবাসী জেসমিন আক্তার রুবী জানান, দূতাবাস বা কনস্যুলেটে গিয়েও ভোগান্তির শেষ নেই। পাসপোর্ট নবায়ন করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয়। এমনকী ভিন্নমতের কেউ হলে তাকে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য মাসের পর মাস ঘুরতে হয়েছে।
নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে বসবাসরত আলাউদ্দিন স্বপন বলেনম প্রবাসজীবনের একটি বড় সমস্যা প্রবাসীর লাশ দেশে নেওয়া। প্রবাসে এসে অনেকে রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় বা কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাসহ নানা কারণে মারা যান। দেখা যায়, মৃত প্রবাসীর লাশ যে সংখ্যক দেশে ফেরে, তার চেয়ে অনেক বেশিসংখ্যক লাশ বিদেশেই থেকে যায়। দেশে পরিবারের সদস্যরা প্রিয় মানুষকে শেষ দেখাও দেখতে পারেন না। নানা জটিলতা ও বাধাবিপত্তির কারণে লাশ দেশে আনতে বা পাঠাতে সমস্যা হয়।
তিনি জানান, লাশ দেশে পাঠাতে দরকার হয় মোটা অঙ্কের টাকা, যা অনেক প্রবাসীর পরিবারের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয় না। অনেক সময় কোনো প্রবাসী মারা গেলে দেশে পাঠানোর জন্য চাঁদা তুলতে হয়, যা খুবই দুঃখজনক। এ ছাড়া লাশ নিয়ে দূতাবাসের সহায়তা নিতে গেলেও ভোগান্তির শেষ থাকে না। বিশ্বের যেকোনো দেশে বাংলাদেশি মারা গেলে প্রবাসীর লাশ দেশে বিনা খরচে যাবে, এমনটা চান প্রবাসীরা ও তাঁদের পরিবার।
প্রবাসীরা যাতে নিরাপদে সফর করতে পারেন, সে জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং তা যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রয়োজনে প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী সুরক্ষা আইন করতে হবে। প্রবাসীরা দেশের সূর্যসন্তান, তাই প্রবাসীদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মীদের আরও আন্তরিক হতে হবে। প্রবাসীর লাশ বিনা খরচে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রবাসীরা ভালো থাকলে বাড়বে রেমিট্যান্স, রেমিট্যান্স বাড়লে আরও ভালো থাকবে প্রাণের বাংলাদেশ। রাষ্ট্র সংস্কারে এসব বিষয় অগ্রাধিকার পাক, দাবি কোটি প্রবাসীর। এই মুহূর্তে প্রবাসীরা তাকিয়ে আছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দিকে।