পুলিশের বুলেটে পা হারিয়ে দুঃস্বপ্নে দিন কাটছে আকাশের 

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:২২ , অনলাইন ভার্সন
কী অপরাধ ছিল আমার পোলার? পুলিশের একটি বুলেট সাজানো আমার সংসার চুরমার করে দিল। এভাবেই মনের আকুতি প্রকাশ করলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দেলনে পুলিশের গুলিতে পঙ্গুত্ব বরণ করা আকাশের বাবা দুলাল মিয়া। আকাশ নেত্রকোনা মদন উপজেলার বিয়াশি গ্রামের বাসিন্দা। গত ২০ জুলাই নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় একটি মিষ্টির দোকানে সামনে থেকে আকাশকে পুলিশ গুলি করে তার বাম পায়ে। কেটে ফেলতে হয় তার বাম পা। চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করতে হয় তাকে। 

১৭ বছরের টগবগে যুবক মোহাম্মদ আকাশ। পরিবারের আর্থিক অনটনে লেখাপড়া বেশিদূর এগোয়নি। তাই কৃষক বাবার সংসারে সহযোগিতা করতে গিয়ে ছিল নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। চাকরি নেয় একটি মিষ্টির দোকানে। দোকান মালিক থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করায় বেতনের পুরো টাকাই গ্রামের বাবার কাছে পাঠিয়ে দিতো। ফলে সংসারের আর্থিক সংকট অনেকটাই কেটে যায়। কিন্তু পুলিশের একটি বুলেট আকাশের মা-বাবার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। কেটে ফেলতে হয়েছে তার একটি পা। চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেছে সে। পুলিশ আকাশের বুকে বন্দুক তাক করে। হাত দিয়ে নল সরিয়ে দেয়ায় কাছ থেকে পায়ে গুলি করে।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোডস্থ চাঁন সুপার মার্কেটের নিচে (পূর্বপাশে) বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডারে কাজ করতো আকাশ। প্রতিদিনের মতো ২০শে জুলাই সকালেই দোকানে আসে সে। এদিকে সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল (চিটাগাং রোড) এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছিল। এক পর্যায়ে বিকাল ৪টার দিকে পুলিশের মুহুর্মুহু গুলি ও টিয়ারশেলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ব্যবসায়িদের মাঝে। জীবন বাঁচাতে দোকানের শাটার টেনে থাই গ্লাসের দরজা বন্ধ করে ভেতর অবস্থান করে আকাশ, দোকানের মালিক জাফর আলী ও আরেক কর্মচারী মাসুম। ভেতর থেকে বাইরে গুলির শব্দ পাচ্ছিল তারা। ভয়ে জবুথুবু হয়ে বসে থাকে তিনজন। এক পর্যায়ে দোকানে কয়েক রাউন্ড গুলি করে পুলিশ। এতে দোকানের উত্তর পাশের গ্লাস ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। গুলিতে আহত হয় ক্যাশ কাউন্টারে বসা দোকানের মালিক জাফর আলী। পরে দোকানের সামনের দিকের শাটার আর থাইগ্লাস ভেঙে ভেতরে ঢুকে পুলিশ খুব কাছ থেকে আকাশের বাম হাঁটুতে গুলি করে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে। রক্তে ভেসে যায় দোকানের মেঝে। পুলিশ চলে যাওয়ার পর জাফর আলীকে স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়। আর আকাশকে দ্রুত ঢাকার শ্যামলী এলাকায় একটি প্রাইভেট হসপিটালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৩ দিন তার চিকিৎসা চলে। কিন্তু চিকিৎকরা পা রক্ষা করতে পারবে না জানালে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৪ দিনের মাথায় চিকিৎসকরা তার বাম পা কেটে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন।

এদিকে আকাশ সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না।  আকাশের প্রশ্ন এখন আমি কী করবো? রাস্তায় ভিক্ষা করবো? 

ঠিকানাকে আকাশ জানান, সেদিন পুলিশ আমাকে বলে আমি সহিংসতায় জড়িত এবং দোকানে লুকিয়ে আছি। কিন্তু দুই হাত জোড় করে বার বার বলেছি আমি দোকানে কাজ করি। আমি কোনো আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত না। আমি দোকান থেকে বাইরেও যাই নাই। কিন্তু পুলিশ আমার কোনো কথাই শোনে নাই। আমার বুক বরাবর বন্দুক তাক করে। আমি হাত দিয়ে সরিয়ে দিলে পুলিশ কাছ থেকে আমার বাম পায়ে গুলি করে। আমি নিরপরাধ, আমি কোনো অন্যায় করিনি। দোকানে কাজ করে খাই। বেতনের টাকা পরিবারকে দেই। আমাকে নিয়ে পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিল। কারণ আমি বাবা-মায়ের বড় ছেলে। আর্থিক সংকটে তেমন একটা লেখাপড়া করতে পারিনি। নিরুপায় হয়ে পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা আনতে মিষ্টির দোকানে কাজ নেই। আমি তো এখন পঙ্গু হয়ে গেলাম সারাজীবনের জন্য।

এদিকে আকাশের বাবা দুলাল মিয়া ঠিকানাকে বলেন, আমি যখন শোনলাম আমার ছেলে পুলিশের গুলি খেয়েছে। তখন আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। এর পরও ধার দেনা করে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করেছি। ছেলেকে এখন বাড়িতে নিয়ে এসেছি। আমার পোলার কি অপরাধ ছিল? পুলিশের একটি বুলেট আমার সাজানো সংসার চুরমার করে দিল। 
পরিবারের আর্থিক দুরবস্থা দূর করার আশায় সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল আমার আকাশের। তবে বন্দুকের একটা গুলি সেই স্বপ্নও শেষ করে দিয়েছে।
দুলাল মিয়া জানান, ৪ ছেলে ৩ মেয়ের মধ্যে আকাশ দ্বিতীয়। ছেলেদের মধ্যে সবার বড়। মিষ্টির দোকানে কাজ করে ছেলে সাড়ে ৭ হাজার টাকা বেতন পেতো। সব টাকাই বাড়িতে পাঠিয়ে দিতো। তার আয়ও বন্ধ হয়ে গেছে। আমি সরকারের কাছে আমার ছেলেকে একটা স্থায়ী ব্যবস্থা করে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। যাতে সে তার জীবনটা বাঁচাতে পারে। তার যেন ভিক্ষা করে চলতে না হয়। একটা ভালো কৃত্রিম পা হলে আমার ছেলেটা আবার হাঁটতে পারবে।
তথ্য সূত্র: তোফাজ্জল হোসেন, মদন,(নেত্রকোনা)।

ঠিকানা/এসআর 

 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078