শুকতারা

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮:২০ , অনলাইন ভার্সন
আজ কোনো কাজেই মন বসছে না রেবেকা জামানের। ছেলে (আবির) কল করবে। আজ আবিরের মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দেবে। কষ্টে কাটানো দিনগুলোর কথা আজ রেবেকা জামানের খুব বেশি মনে পড়ছে।
পরিবারের পছন্দে রেবেকা জামানের বিয়ে হয়েছিল। স্বামী ভালো চাকরি করত। সমাজের অনেক নামকরা পরিবারেই তার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু রেবেকা জামানের পরিবার হয়তো বুঝতে পারেনি সমাজের নামকরা পরিবারে বিয়ে দিলেই মেয়েরা সুখী হয় না। সুখী হতে হলে প্রয়োজন হয় সুন্দর মনমানসিকতার লোকজন।
বিয়ের পরই রেবেকা জামান বুঝতে পারে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে মানিয়ে চলা তার পক্ষে সম্ভব নয়। স্বামী এবং সবার আচার-আচরণ তার কাছে ভীষণ অস্বাভাবিক লাগত। রেবেকা জামানের স্বামী ভালোবাসত তারই মামাতো বোনকে। সেই মামাতো বোনও সেই বাড়িতেই থাকত এবং মামাতো বোনের সঙ্গে তার স্বামীর সম্পর্কটা ছিল স্বামী-স্ত্রীর মতোই এবং শ্বশুরবাড়ির কেউই তাদের এই সম্পর্ক নিয়ে মাথা ঘামাত না। রেবেকা জামানের ননদরাও তাদের ফ্রেন্ডদের নিয়ে রুমের ভেতর সময় কাটাত কিন্তু কেউ কিছুই বলত না। সেই বাড়িতে রেবেকা জামানের পরিচয়টা যে কী, সেটা সে নিজেই বুঝত না। রেবেকা জামান তার পরিবারের সঙ্গে এসব নিয়ে বহুবার আলোচনাও করেছে কিন্তু তার পরিবারের সবাই বলত, বিয়ে যেহেতু হয়েই গেছে কী আর করার, একটু মানিয়ে নিতেই হবে। তাকে তো কেউ আর শারীরিক নির্যাতন করছে না। এক বছর সংসার করার পর রেবেকা জামান যখন প্রেগন্যান্ট হলো, তখন তার স্বামী বলতে লাগল, সেই সন্তান তার নয়। রেবেকা জামানের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। কোথায় যাবে, কী করবে, এই সমাজের সবাই কী বলবে এসব শুনলে। আর রেবেকা জামানের পরিবারই-বা বিষয়টি কীভাবে নেবে? সন্তান আসার সুখবরে কেউ তো খুশি হলোই না বরং আরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে লাগল। রেবেকা জামানের স্বামী তাকে ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল এবং খুব অল্প দিনের মধ্যেই ডিভোর্স দিয়ে তার মামাতো বোনকে বিয়ে করল।
প্রেগন্যান্ট ডিভোর্সি একজন নারী এই সমাজ এবং নিজের পরিবারে যে কী পরিমাণ অবহেলিত, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। পরিবারের সবার কাছ থেকে প্রতিনিয়ত শুনতে হতো স্বামীর সংসার ঠিকমতো করতে না পারার জন্য নানা কটু কথা। তাদের বক্তব্যÑমেয়েদের একটু মানিয়ে নিতে হয়। সমাজের কাছে পরিবারের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়ে গেছে। রেবেকার জন্য তার পরিবারকে সমাজ ছিঃ ছিঃ করছে। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী কাউকে মুখ দেখাতে পারছে না তার পরিবার। রেবেকা জামান তখন সিদ্ধান্ত নিল, সে তার পরিবারের সঙ্গে থাকবে না। কিন্তু কোথায় যাবে? আত্মহত্যাও করতে পারছে না। কারণ তার পেটে সন্তান।
রেবেকা জামানের এই দুঃসময়ে তাকে সাহায্য করেছিলেন তারই এক শিক্ষক। রেবেকাকে গ্রামে একটি এনজিওতে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনি। গ্রামে থেকেই এনজিওতে কাজ করে সন্তান জন্ম দিয়েছিল এবং সন্তানকে একটু একটু করে বড় করে তুলেছে। সন্তানকে একা বড় করে তুলতে গিয়ে রেবেকা জামানের ওপর ভীষণ ঝড়-ঝাপটা যান। তার ওপর মধ্যবয়সী একজন ডিভোর্সি নারীর প্রতি সমাজের কুদৃষ্টি ও অসম্মান তো আছেই। শুধু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে এবং সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেই রেবেকা জামান লড়াই করেছে প্রতিনিয়ত। ছোটবেলা থেকেই রেবেকার ছেলেটি অনেক মেধাবী। সে স্বপ্ন দেখেছে তার ছেলে একদিন অনেক বড় ডাক্তার হবে। কিন্তু ছেলের স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সবক্ষেত্রে একই সমস্যায় তাকে পড়তে হচ্ছে। কারণ সে একজন সিঙ্গেল মাদার। স্কুল-কলেজ সব জায়গাতেই বাবার নাম অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
মাঝে মাঝে রেবেকা জামানের ভীষণ ভয় হয় তার ছেলে আবিরকে নিয়ে। কারণ যাকে সে তিলে তিলে এত বড় করেছে, তার শরীরে যে বইছে তারই বাবার রক্ত। সেই পরিবারের রীতি-নীতি, আচার-আচরণ তার ছেলের স্বভাবে কোনো প্রভাব ফেলবে না তো? একদিন মাকে ছেড়ে বহুদূরে চলে যাবে না তো। এ কথা ভাবতেই রেবেকার বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠল। হঠাৎ করেই রেবেকা জামানের মোবাইলে রিং বেজে উঠল। মোবাইল বেজে ওঠার শব্দে রেবেকার হাত থেকে মোবাইলটা নিচে পড়ে গেল। সে নিচ থেকে মোবাইলটা দ্রুত তুলে হাতে নিয়ে দেখল আবির কল করেছে। মোবাইল রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ও-পাশ থেকে আবির বলে উঠল, মা, আমি মেডিকেলে চান্স পেয়েছি। মা, আমি তোমাকে কোনো দিন কষ্ট দেব না। আমি তোমাকে খুব শিগগিরই আমার কাছে নিয়ে আসব। রেবেকা জামানের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। মোবাইল কানে রেখে ছেলের কথা শুনতে শুনতেই সে ভাবতে থাকে, কী আছে তার জীবনে আর। সে নিজের জীবনে সুখী না-ইবা হলো। তার ছেলে সুখী হোক। অনেক বড় হোক। তার ছেলে সুখী হলেই সে সুখী হবে। কখনো ছেলের অসুখী হওয়ার কারণ সে হবে না।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041