এ বছর অনুষ্ঠিত ৩৮তম ফোবানা সম্মেলন সফলভাবে শেষ হয়েছে। গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর যথাক্রমে শুক্র, শনি ও রোববার লেবার ডে উইকেন্ডে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শহর নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড ও মিশিগানে উৎসবে মেতে উঠেছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বিভক্ত হলেও প্রতিটি সম্মেলনে ছিল আশানুরুপ উপস্থিতি।
নিউইয়র্ক : জমকালো আয়োজনে শুরু হয়ে নিউইয়র্কে সফলভাবে শেষ হয়েছে ৩৮তম ফোবানা সম্মেলন। ৩০ আগস্ট নিউইয়র্কের লাগোয়ার্ডিয়া এয়ারপোর্ট ম্যারিয়ট হোটেলর বলরুমে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা। তিনি আয়োজকদের প্রশংসা করে বলেন, ফোবানার মাধ্যমে দুই দেশের শিল্প সাংস্কৃতিক এবং কবি , সাহিত্যিকদের মেল বন্ধন ঘটে। ফোবানা সম্মেলনই শুরু করেছিল এই যুগান্তকারী অধ্যায়।
বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণে সম্মেলনস্থল হয়ে উঠে উৎসবমুখর। ছুটির দিন হওয়ায় ম্যারিয়টের বলরুম ছিল কানায় কানায় পুর্ণ।
সম্মেলনের সদস্য সচিব ফাহাদ সোলায়মানের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতায় ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরী, প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতিকে তুলে ধরা, নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়ার অভিপ্রায়ে এই ফোবানা সম্মেলনের আয়োজন করেছি আমরা।
গিয়াস আহমেদ ঘোষণা করেন- আগামী বছর ৩৯তম ফোবানা সম্মেলন নিউইয়র্কেই অনুষ্ঠিত হবে।
সম্মেলনের আহবায়ক আসেফ বারী টুটুল এই আয়োজনের সফল সমাপ্তিতে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামসের যোগদানের কথাও ঘোষণা করেন আসেফ বারী টুটুল। তবে মেয়র অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। মেয়র অফিসের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মীর বাশারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
শিল্পীদের সুরের মুর্ছনা, দর্শক-শ্রোতার বাঁধভাঙ্গা উল্লাস, বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, কাব্য জলসা আর আয়োজকদের সমাপনী ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হল তিনব্যাপী ৩৮তম ফোবানা সম্মেলন। সেমিনার, কাব্য জলসা, ফ্যাশন শো, বিভিন্ন ধরণের পসরা নিয়ে সাজানো রকমারী স্টল ও দেশ এবং প্রবাসের স্বনামধন্য শিল্পীদের পরিবেশনায় নিউইয়র্ক ফোবানার প্রতিটি মুহূর্ত ছিল প্রাণবন্ত ও উপভোগ্য।
সমাপনী দিনে শিল্পীদের পরিবেশনাই ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এদিনে জনপ্রিয় ব্যান্ড সঙ্গীত শিল্পী (প্রমিথিউস) বিপ্লব, ফিডব্যাকের লুমিন, আঁখি আলমগীর ও বাউল শিল্পী লায়লার পরিবেশনা দর্শক-শ্রোতা প্রাণভরে উপভোগ করেন। এছাড়া চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ কৃষ্ণা তিথি, শাহ মাহবুব, শামীম সিদ্দিকী, ত্রিনিয়া হাসান, রিয়া, আমানত হোসেন আমানের পরিবেশনা দর্শক-শ্রোতাকে আপ্লুত করে।
সম্মেলনের শেষদিনেও বেশ কয়েকজনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সমাপনী বক্তৃতায় ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ বলেন, আপনাদের স্বতঃস্ফুর্ততায় আমরা অভিভূত। তাই আমরা আয়োজকরা ঘোষণা করছি, আগামী ফোবানাও এই নিউইয়র্কেই অনুষ্ঠিত হবে। উপস্থিত সকলেই করতালি দিয়ে এই ঘোষণাকে স্বাগত জানান। গিয়াস আহমেদ তিনদিনব্যাপী এই আয়োজনের সাথে সংশিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
এসময় ফোবানা সম্মেলনের সদস্য সচিব ফাহাদ সোলায়মান বলেন, নিউইয়র্কবাসীকে বিনোদন দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, কতটা পেরেছি, এর মূল্যায়ন আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম। ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের এশিয়ান অ্যাডভাইজার ফাহাদ সোলায়মান।
মিয়া মোহাম্মদ দুলাল ও জাহাঙ্গীর আলম জয়ের উপস্থাপনায় সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির নির্বাহী সেক্রেটারি দেওয়ান এ আজিম জুয়েল, প্রধান উপদেষ্টা ডা. মাসুদুর রহমান, অ্যাটর্নি মিজানুর রহমান, ডা. আব্দুস সবুর, ডা. রহমান মুক্তা, ডা. বর্ণালী হাসান, লায়ন রকি আলিয়ান, লায়ন জেএফএম রাসেল, দুলাল বেহেদু, মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, তারেক হাসান খান, মুসতাক আহমেদ, বিলাল চৌধুরী, নুর আমিন, অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, মুহাম্মদ কাদের শিশির, কাজি তোফায়েল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম ভুইয়া রুমি, তৈমুর জাকারিয়া, খন্দকার ফরহাদ, কিউ জামান, কাজি ওয়াহিদ এলিন, আলমগীর খান আলম, নাফিউল ইসলাম পাননা, সোহরাব হোসেইন, মুহাম্মদ মহসীন, মিয়া আলীম পাখি, রিয়াজ রহমান, এম এম জসিম, কাউসার আহমেদ, এমরান শাহ রন, সৈয়দ গাওসুল আজম, সাইদ রহমান সাইদ, নিউইয়র্ক মহানগর উত্তরের সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা, মুনমুন হাসিনা বারী, নুসরাত আহমেদ নীপা, মোশাররফ হোসাইন সবুজ, জসিম ভুঁইয়া, ভিপি জসিম, সৈয়দ এ আর ফারুক, শাহিনুর রহমান বিপ্লব, ডা. চৌধুরী সারোয়ার হাসান, প্রিসিলা, মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, বাদল মীর্জা, সাইফুর খান হারুন, মাকসুদ চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, আবদুস সবুর, আব্দুর রশিদ বাবু, বদিউল আলম, আবদুল বাতেন, ড. শওকত আলী, জাকারিয়া মাসুদ জিকো, ইসমাইল চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ সাদেক, সাহাদাৎ হোসেন রাজু, দেওয়ান কাউছারসহ বিশিষ্টজনেরা।
ফোবানাকে সাইটেশন প্রদান করেন অ্যাসেম্বলি মেম্বার জেসিকা গঞ্জালেস রাহোস। এছাডা বিশিষ্ট জনকে সাইটেশন প্রদান করেন, অ্যাসেম্বলি মেম্বার জেনিফার রাজকুমার এবং কুইন্স বরো প্রেসিডন্ট ডনোভান রিচার্ড।
ম্যারিল্যান্ড : বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবার প্রত্যয় উচ্চারিত হলো ফেডারেশন অব বাংলাদেশি এসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা’র (ফোবানা) সম্মেলনে। গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর যথাক্রমে শুক্র, শনি ও রোববার লেবার ডে উইকেন্ডে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয় এই সম্মেলন।
সম্মেলনে বক্তারা ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, ছাত্র-জনতার রক্ত ঋণ শোধ করবে প্রবাসীরা। সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে প্রায় এক কোটি প্রবাসী। তারা দুনীর্তি, স্বৈরাচার ও বৈষম্যমুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ফিরে আনার জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছে প্রবাসীরা।
ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা ছিল ফোবানার এই সম্মেলনে। ফোবানা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে শনিবার রাতে হিলটন হোটেলের কনভেনশন সেন্টারে তিল ধারনের জায়গা ছিল না। উপচে ভরা দর্শকদের উপস্থিতিতে সম্মেলনে ম্যারিল্যান্ডের গেইথার্সবার্গ সিটি মেয়র জুড আশমান আনুষ্ঠানিকভাবে ফোবানাকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। তা গ্রহণ করেন ফোবানার স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম এবং ফোবানা হোস্ট কমিটির কনভেনর জাহাঙ্গীর কবির বাবলুসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
উৎসবমুখর পরিবেশে ম্যারিল্যান্ডের গেইথার্সবার্গ হিলটন (ডাবল ট্রি) হোটেলে ৩০ আগস্ট শুক্রবার ৩৮তম ফোবানার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশি বংশোদভূত মূলধারার রাজনীতিক ও সিটি অব কলেজ পার্কের মেয়র ড. ফজলুল কবির। এসময় পুরো হোটেল চত্ত্বরজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।
ফোবানার হোস্ট কমিটির আহবায়ক জাহাঙ্গীর কবির বাবলুর সভাপতিত্বে ৩০ আগস্ট শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় তিনদিন ব্যাপী ফোবানার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও প্রেসিডেন্ট ফর গ্লোবাল বাংলাদেশি’স ড. হাসনাত হোসেন এমবিই। গেস্ট অব অনার ছিলেন ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফোবানার কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য দেন আলী ইমাম শিকদার, ড. আবু জুবায়ের দারা, কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম, ফিরোজ আহমেদ, রানো নেওয়াজ, সারওয়ার মিয়া, হাদী কাইয়ুম, শরাফত হোসেন বাবু, কবিরুল ইসলাম, ফারুক আহমেদ, নিশান রহিম, আহসান হাবিব, নওশেদ হায়দার, রবিউল আলম, রিজিয়া পারভীন, এম জিন্নাহ ও ড. আনোয়ারুল করিম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন খোন্দকার ইসমাইল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াত করেন মোহাম্মদ শফিউল্লাহ। শুরুতেই বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার জাতীয় সংগীত পরিবেশ করা হয়। স্মরণ করা হয় ৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে শহীদদের। অনুষ্ঠানে ফোবানা নেতৃবৃন্দ সিটি অব কলেজ পার্কের মেয়র ড. ফজলুল কবিরকে ক্রেস্ট প্রদান করেন।
শনিবার দ্বিতীয় দিনের এ সম্মেলনে স্থানীয় শিল্পীরা অসাধারণ সংগীত, নাচ ও ফ্যাশন শো প্রদর্শন করে সকলের প্রসংশা অর্জন করেছেন। রিজিয়া পারভীন, রানো নেওয়াজ, মোস্তফা অনিক রাজ ও মরিয়ম মারিয়ার সঙ্গীতে হলভর্তি শ্রোতারা করতালি ও উল্লাস করে তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আরো অংশ নিয়েছিলেন মাহিন সুজন, তানভীর হাসান, জনি, পলি সায়ন্থনি, জোহরা আলিম ও সামিউল খান।
ভার্জিনিয়া : যুক্তরাষ্ট্রে ফোবানা সম্মেলনের ইতিহাসে নয়া রেকর্ড গড়লেন ভার্জিনিয়ার ৩৮তম ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোশিয়েশন্স ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) সম্মেলন। তিন দিনব্যাপী ৩৮তম ঐতিহাসিক ফোবানা সম্মেলন সফল করে যুক্তরাষ্ট্রের হাজারো প্রবাসীদের তাক লাগিয়ে দিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি (বাগডিসি)। প্রবাসীদের আশানুরূপ উপস্থিতি দেখে সম্মেলনের দর্শকশ্রোতারা খুব আনন্দিত বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।
গত ৩০ আগস্ট শুক্রবার থেকে ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনের ক্রিস্টাল গেটওয়ে ম্যারিয়ট হোটেলে শুরু হওয়া উত্তর আমেরিকার প্রবাসীদের বাঙালিদের মিলনমেলা খ্যাত ফোবানা সম্মেলন শেষ হয়েছে গত ১ সেপ্টেম্বর রবিবার মধ্যরাতে।
ভার্জিনিয়ার প্রাণকেন্দ্র আর্লিংটনের ক্রিস্টাল গেটওয়ে ম্যারিয়ট হোটেলে ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ভয়েস অব আমেরিকার সাবেক সাংবাদিক ইকবাল বাহার চৌধুরী। ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের আহবায়ক রোকসানা পারভীন ও সদস্য সচিব আবু রুমি, প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন নুরু, চেয়ারপারসন এটর্নি মোহাম্মদ আলমগীর, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি আবীর আলমগীর এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে যোগ দিতে গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসিসহ প্রায় ২৫টি অঙ্গরাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে হাজারো দর্শক বিকেলের মধ্যেই হাজির হন সম্মেলন স্থলে। ভার্জিনিয়ার ফোবানার আয়োজকরা জানান, উত্তর আমেরিকার প্রায় ৮৬টি সংগঠন এবারের সম্মেলনে অংশ নিতে ভার্জিনিয়ায় উপস্থিত হন।
মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত বাংলাদেশিরাও একদিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন ভার্জিনিয়ায় অনুষ্ঠিত ৩৮তম সম্মেলনের উদ্বোধক ও প্রবীণ সাংবাদিক ইকবাল বাহার চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রবাসে এ রকমের সম্মেলন করে শিক্ষার্থীদের মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে উৎসাহ দিতে হবে। তাহলে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের মত বাংলাদেশিরাও একদিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেবেন।
৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের বর্তমান চেয়ারপারসন অ্যাটর্নি মোহাম্মদ আলমগীর, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি আবীর আলমগীর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৮৬টি বাংলাদেশি সংগঠনের অংশ গ্রহণ করেছে এবারের ফোবানা সম্মেলনে। ২৫টিরও বেশি অঙ্গরাজ্য থেকে শতশত শিল্পী ও কলা-কুশলীরা ভার্জিনিয়ায় উপস্থিত ছিলেন। তিন দিন সাংস্কৃতিককর্মীরা তাদের বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে আমাদের দর্শকশ্রোতাদের আনন্দ দেন।
শামীম চৌধুরী ও আবীর আলমগীরের যৌথ সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ভার্জিনিয়া স্টেট সিনেটর ড. গাজালা এফ হাশমী, ভার্জিনিয়া স্টেটের একমাত্র বাংলাদেশি সিনেটর সাদ্দাম আজলান সেলিম, আর্লিংটন কাউন্টি বোর্ডের সদস্য সুসান কুনিংহাম, রিজিওনাল ডাইরেক্টর তানিয়া ট্যালেন্টো, ইউএস সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার। ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের কোষাধক্ষ্য ড. প্রিয়লাল কর্মকার মূলধারার রাজনীতিবীদদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদেরকে সম্মেলনে আসার জন্য সর্বদাই যোগাযোগ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান রোকেয়া হায়দার, স্কটল্যান্ড থেকে আগত অতিথি স্কটিস পার্লালামেন্টের সদস্য ফয়সল চৌধুরী, ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের বর্তমান চেয়ারপারসন এটর্নি মোহাম্মদ আলমগীর, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি আবীর আলমগীর, আহবায়ক রোকসানা পারভীন ও সদস্য সচিব আবু রুমি, প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন নুরু, নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি মাসুদ রব চৌধুরী, যুগ্ম এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি খালেদ রউফ, ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিপ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় ক্রিস্টাল গেটওয়ে ম্যারিয়ট হোটেলে ‘ব্লাক টাই ডিনারে’ অংশ নেন অতিথিবৃন্দরা। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন স্বাগতিক সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি (বাগডিসি)। ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের আহবায়ক আহবায়ক রোকসানা পারভীন, সদস্য সচিব আবু রুমি, প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন নুরু ও সমন্বয়ক গোলাম মোস্তফা উক্ত ব্লাক টাই ডিনারে নেতৃত্ব দেন।
শুক্রবার সন্ধায় বাংলাদেশ, আমেরিকান ও কানাডার জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে ৩৮তম ফোবানার উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানের শুভসুচনা হয়। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি (বাগডিসি) বান্টের শিল্পীরা বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার (তিন দেশের) জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
তিন দিনের ফোবানা সম্মেলনে ছিলো গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি সেমিনার, সাহিত্য, কারিগরি শিক্ষার প্রভাব ও উন্নয়ন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও সাইবার সিকিউরিটি, নারীর ক্ষমতায়ন, যুব উন্নয়ন, মূলধারায় নেতৃত্বের বিকাশ, ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকার বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা, আরবান ডেভেলপমেন্ট, ন্যানো টেকনোলজির এবং এর কার্যকারিতা, স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে এআই এর প্রভাব, তরুণ মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের স্কলাশিপ অ্যাওয়ার্ড, তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণে সংগীত ও নৃত্য প্রতিযোগিতা, ক্ষমতায়নে নারীর ভূমিকা, অর্জন এবং তাৎপর্য, কারুপণ্য শিল্পের প্রদর্শনী, বর্ণীল ফ্যাশন শো, সাহিত্যের উপর আলোকপাত এবং কাব্য জলসা, ফোবানা গ্রন্থমেলা, যুব ফোরাম ও নেটওয়ার্কিং, এনআরবি ব্যবসায়ী এবং ব্যবসা উদ্যোক্তাদের, নেটওয়ার্কিং, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এলামনাই ফোরাম নিয়ে আলোচনা, আন্তঃধর্মীয় শান্তি আলোচনা, বাংলাদেশের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র প্রদর্শিনী ইত্যাদি।
আগামী ২০২৫ সালের ৩৯তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে জর্জিরার আটলান্টায়। স্বাগতিক সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছে বাংলা ধারা। ছাড়াও ২০২৬ সালে ৪০তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ক্যালিফোর্নিয়ায়। স্বাগতিক সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালিফোর্নিয়া।
মিশিগান : যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের বাংলা টাউন খ্যাত ডেট্রয়েটের জেইন ফিল্ডে শেষ হয়েছে তিন দিনের ফোবানা সম্মেলন। গত ৩০ আগস্ট শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া তিনদিন ব্যাপী উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম বাংলাদেশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ফোবানার ৩৮তম সম্মেলন শেষ হয় ১ সেপ্টেম্বর রোববার।
এবারের ফোবানার আয়োজক বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশান অব মিশিগান। ৩০ আগস্ট বিকেল ৬টায় হিলটন গার্ডেন ইন-এ হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
তিনদিন ব্যাপী আয়োজনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলা টাউনখ্যাত ডেট্রয়েটের জেইন ফিল্ডে এবং হোটেল একোমডেশান, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, কাব্য জলসা, বিজনেস নেটওয়ার্কিং সামিট, প্রথম আলো ফাউন্ডশনের 'দেখা সাক্ষাৎ'সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়েছে সাউথ ফিল্ড শহরের হিলটন গার্ডেন ইন হোটেলে। এ তিন দিনের মেলায় ছিল বিশেষ সেমিনার, ওয়ার্কশপ, আলোচনা সভা, বিজনেস নেটওয়ার্কিং সামিট, সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান, ব্যান্ড শো, ট্যালেন্ট শো, ইয়থ ফোরাম, নৃত্য, রাফেল ড্র, দেশী আড্ডা, ছিল ৭০ এর অধিক স্টল যাতে ছিল বাংলাদেশি কাপড়, খেলনা, ঘর সাজানোর জিনিষ, রকমারি খাবারের দোকান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছিল বিশেষ আয়োজন। তিনদিন ব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন বাংলাদেশ ও উত্তর আমেরিকার জনপ্রিয় শিল্পীরা।
জনপ্রিয় শিল্পী বালাম একের পর এক তার জনপ্রিয় গানগুলি পরিবেশন করেন, দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে তার গান শোনেন। এছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করেন তোশিবা, ইকবাল হিমেল, জায়েদ খান, দিনাত জাহান মুন্নী, অংকন, বিন্দুকণাসহ আরো অনেকে।
মিশিগান হচ্ছে আমেরিকার মধ্যে দ্বিতীয় বাঙালি জনবহুল অঙ্গরাজ্য, যেখানে ৫০ হাজারের বেশী প্রবাসী বাংলাদেশি বাস করেন বলে ধারণা করা হয়। মিশিগান ছাড়াও নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, কানাডা থেকেও অনেক দর্শকশ্রোতা এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
ফোবানার চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান, ফোবানার প্রাক্তন চেয়ারপারসন ও আউটস্ট্যান্ডিং মেম্বার বেদারুল ইসলাম বাবলা, প্রাক্তন চেয়ারপারসন জাকারিয়া চৌধুরী, ফোবানার এক্সিকিউটিভ জয়েন্ট সেক্রেটারি মো. কবির কিরণ, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরীসহ ফোবানার আরো অনেক কর্মকর্তা এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
কর্মকর্তারা জানান, ফোবানার মূল লক্ষ্য হচ্ছে উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে ধরে রাখা, নতুন প্রজন্মের কাছে তার প্রচার ও প্রসারে সাহায্য করা, উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারি বাংলাদেশিদের মধ্যে যোগসুত্র গড়ে তোলা, সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়িক সেতু বন্ধন তৈরী করা, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা।
এদিকে মিশিগান শহরে সফল ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের সমাপ্তির দিনে ফোবানা এজিএম মিটিংয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী ২০২৪-২৫ সালের জন্য নতুন চেয়ারম্যান পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন ফ্লোরিডার আতিকুর রহমান ও নির্বাহী সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন টেক্সাসের নিহাল রহিম। পূর্ণাঙ্গ কমিটি পরবর্তীতে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন ফোবানার কর্মকর্তারা।
ফোবানা এক্সিকিউটিভ কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী আগামী ফোবানা সম্মেলন ২০২৫ কানাডার মন্ট্রিয়ালে হওয়ার ঘোষণা দেন। ৩৯তম ফোবানার স্বাগতিক সংগঠন কানাডা বাংলাদেশ সলিডারিটি। নির্বাচনে ছিলেন জিয়াউল হক জিয়া এবং ইকবাল কবীর। তারা অত্যান্ত সফল এবং সেরা একটি ফোবানা অনুষ্ঠিত করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
নিউইয়র্ক : জমকালো আয়োজনে শুরু হয়ে নিউইয়র্কে সফলভাবে শেষ হয়েছে ৩৮তম ফোবানা সম্মেলন। ৩০ আগস্ট নিউইয়র্কের লাগোয়ার্ডিয়া এয়ারপোর্ট ম্যারিয়ট হোটেলর বলরুমে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা। তিনি আয়োজকদের প্রশংসা করে বলেন, ফোবানার মাধ্যমে দুই দেশের শিল্প সাংস্কৃতিক এবং কবি , সাহিত্যিকদের মেল বন্ধন ঘটে। ফোবানা সম্মেলনই শুরু করেছিল এই যুগান্তকারী অধ্যায়।
বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণে সম্মেলনস্থল হয়ে উঠে উৎসবমুখর। ছুটির দিন হওয়ায় ম্যারিয়টের বলরুম ছিল কানায় কানায় পুর্ণ।
সম্মেলনের সদস্য সচিব ফাহাদ সোলায়মানের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতায় ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরী, প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতিকে তুলে ধরা, নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়ার অভিপ্রায়ে এই ফোবানা সম্মেলনের আয়োজন করেছি আমরা।
গিয়াস আহমেদ ঘোষণা করেন- আগামী বছর ৩৯তম ফোবানা সম্মেলন নিউইয়র্কেই অনুষ্ঠিত হবে।
সম্মেলনের আহবায়ক আসেফ বারী টুটুল এই আয়োজনের সফল সমাপ্তিতে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামসের যোগদানের কথাও ঘোষণা করেন আসেফ বারী টুটুল। তবে মেয়র অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। মেয়র অফিসের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মীর বাশারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
শিল্পীদের সুরের মুর্ছনা, দর্শক-শ্রোতার বাঁধভাঙ্গা উল্লাস, বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, কাব্য জলসা আর আয়োজকদের সমাপনী ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হল তিনব্যাপী ৩৮তম ফোবানা সম্মেলন। সেমিনার, কাব্য জলসা, ফ্যাশন শো, বিভিন্ন ধরণের পসরা নিয়ে সাজানো রকমারী স্টল ও দেশ এবং প্রবাসের স্বনামধন্য শিল্পীদের পরিবেশনায় নিউইয়র্ক ফোবানার প্রতিটি মুহূর্ত ছিল প্রাণবন্ত ও উপভোগ্য।
সমাপনী দিনে শিল্পীদের পরিবেশনাই ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এদিনে জনপ্রিয় ব্যান্ড সঙ্গীত শিল্পী (প্রমিথিউস) বিপ্লব, ফিডব্যাকের লুমিন, আঁখি আলমগীর ও বাউল শিল্পী লায়লার পরিবেশনা দর্শক-শ্রোতা প্রাণভরে উপভোগ করেন। এছাড়া চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ কৃষ্ণা তিথি, শাহ মাহবুব, শামীম সিদ্দিকী, ত্রিনিয়া হাসান, রিয়া, আমানত হোসেন আমানের পরিবেশনা দর্শক-শ্রোতাকে আপ্লুত করে।
সম্মেলনের শেষদিনেও বেশ কয়েকজনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সমাপনী বক্তৃতায় ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ বলেন, আপনাদের স্বতঃস্ফুর্ততায় আমরা অভিভূত। তাই আমরা আয়োজকরা ঘোষণা করছি, আগামী ফোবানাও এই নিউইয়র্কেই অনুষ্ঠিত হবে। উপস্থিত সকলেই করতালি দিয়ে এই ঘোষণাকে স্বাগত জানান। গিয়াস আহমেদ তিনদিনব্যাপী এই আয়োজনের সাথে সংশিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
এসময় ফোবানা সম্মেলনের সদস্য সচিব ফাহাদ সোলায়মান বলেন, নিউইয়র্কবাসীকে বিনোদন দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, কতটা পেরেছি, এর মূল্যায়ন আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম। ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের এশিয়ান অ্যাডভাইজার ফাহাদ সোলায়মান।
মিয়া মোহাম্মদ দুলাল ও জাহাঙ্গীর আলম জয়ের উপস্থাপনায় সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির নির্বাহী সেক্রেটারি দেওয়ান এ আজিম জুয়েল, প্রধান উপদেষ্টা ডা. মাসুদুর রহমান, অ্যাটর্নি মিজানুর রহমান, ডা. আব্দুস সবুর, ডা. রহমান মুক্তা, ডা. বর্ণালী হাসান, লায়ন রকি আলিয়ান, লায়ন জেএফএম রাসেল, দুলাল বেহেদু, মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, তারেক হাসান খান, মুসতাক আহমেদ, বিলাল চৌধুরী, নুর আমিন, অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, মুহাম্মদ কাদের শিশির, কাজি তোফায়েল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম ভুইয়া রুমি, তৈমুর জাকারিয়া, খন্দকার ফরহাদ, কিউ জামান, কাজি ওয়াহিদ এলিন, আলমগীর খান আলম, নাফিউল ইসলাম পাননা, সোহরাব হোসেইন, মুহাম্মদ মহসীন, মিয়া আলীম পাখি, রিয়াজ রহমান, এম এম জসিম, কাউসার আহমেদ, এমরান শাহ রন, সৈয়দ গাওসুল আজম, সাইদ রহমান সাইদ, নিউইয়র্ক মহানগর উত্তরের সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা, মুনমুন হাসিনা বারী, নুসরাত আহমেদ নীপা, মোশাররফ হোসাইন সবুজ, জসিম ভুঁইয়া, ভিপি জসিম, সৈয়দ এ আর ফারুক, শাহিনুর রহমান বিপ্লব, ডা. চৌধুরী সারোয়ার হাসান, প্রিসিলা, মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, বাদল মীর্জা, সাইফুর খান হারুন, মাকসুদ চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, আবদুস সবুর, আব্দুর রশিদ বাবু, বদিউল আলম, আবদুল বাতেন, ড. শওকত আলী, জাকারিয়া মাসুদ জিকো, ইসমাইল চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ সাদেক, সাহাদাৎ হোসেন রাজু, দেওয়ান কাউছারসহ বিশিষ্টজনেরা।
ফোবানাকে সাইটেশন প্রদান করেন অ্যাসেম্বলি মেম্বার জেসিকা গঞ্জালেস রাহোস। এছাডা বিশিষ্ট জনকে সাইটেশন প্রদান করেন, অ্যাসেম্বলি মেম্বার জেনিফার রাজকুমার এবং কুইন্স বরো প্রেসিডন্ট ডনোভান রিচার্ড।
ম্যারিল্যান্ড : বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবার প্রত্যয় উচ্চারিত হলো ফেডারেশন অব বাংলাদেশি এসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা’র (ফোবানা) সম্মেলনে। গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর যথাক্রমে শুক্র, শনি ও রোববার লেবার ডে উইকেন্ডে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয় এই সম্মেলন।
সম্মেলনে বক্তারা ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, ছাত্র-জনতার রক্ত ঋণ শোধ করবে প্রবাসীরা। সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে প্রায় এক কোটি প্রবাসী। তারা দুনীর্তি, স্বৈরাচার ও বৈষম্যমুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ফিরে আনার জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছে প্রবাসীরা।
ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা ছিল ফোবানার এই সম্মেলনে। ফোবানা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে শনিবার রাতে হিলটন হোটেলের কনভেনশন সেন্টারে তিল ধারনের জায়গা ছিল না। উপচে ভরা দর্শকদের উপস্থিতিতে সম্মেলনে ম্যারিল্যান্ডের গেইথার্সবার্গ সিটি মেয়র জুড আশমান আনুষ্ঠানিকভাবে ফোবানাকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। তা গ্রহণ করেন ফোবানার স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম এবং ফোবানা হোস্ট কমিটির কনভেনর জাহাঙ্গীর কবির বাবলুসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
উৎসবমুখর পরিবেশে ম্যারিল্যান্ডের গেইথার্সবার্গ হিলটন (ডাবল ট্রি) হোটেলে ৩০ আগস্ট শুক্রবার ৩৮তম ফোবানার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশি বংশোদভূত মূলধারার রাজনীতিক ও সিটি অব কলেজ পার্কের মেয়র ড. ফজলুল কবির। এসময় পুরো হোটেল চত্ত্বরজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।
ফোবানার হোস্ট কমিটির আহবায়ক জাহাঙ্গীর কবির বাবলুর সভাপতিত্বে ৩০ আগস্ট শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় তিনদিন ব্যাপী ফোবানার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও প্রেসিডেন্ট ফর গ্লোবাল বাংলাদেশি’স ড. হাসনাত হোসেন এমবিই। গেস্ট অব অনার ছিলেন ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফোবানার কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য দেন আলী ইমাম শিকদার, ড. আবু জুবায়ের দারা, কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম, ফিরোজ আহমেদ, রানো নেওয়াজ, সারওয়ার মিয়া, হাদী কাইয়ুম, শরাফত হোসেন বাবু, কবিরুল ইসলাম, ফারুক আহমেদ, নিশান রহিম, আহসান হাবিব, নওশেদ হায়দার, রবিউল আলম, রিজিয়া পারভীন, এম জিন্নাহ ও ড. আনোয়ারুল করিম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন খোন্দকার ইসমাইল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াত করেন মোহাম্মদ শফিউল্লাহ। শুরুতেই বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার জাতীয় সংগীত পরিবেশ করা হয়। স্মরণ করা হয় ৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে শহীদদের। অনুষ্ঠানে ফোবানা নেতৃবৃন্দ সিটি অব কলেজ পার্কের মেয়র ড. ফজলুল কবিরকে ক্রেস্ট প্রদান করেন।
শনিবার দ্বিতীয় দিনের এ সম্মেলনে স্থানীয় শিল্পীরা অসাধারণ সংগীত, নাচ ও ফ্যাশন শো প্রদর্শন করে সকলের প্রসংশা অর্জন করেছেন। রিজিয়া পারভীন, রানো নেওয়াজ, মোস্তফা অনিক রাজ ও মরিয়ম মারিয়ার সঙ্গীতে হলভর্তি শ্রোতারা করতালি ও উল্লাস করে তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আরো অংশ নিয়েছিলেন মাহিন সুজন, তানভীর হাসান, জনি, পলি সায়ন্থনি, জোহরা আলিম ও সামিউল খান।
ভার্জিনিয়া : যুক্তরাষ্ট্রে ফোবানা সম্মেলনের ইতিহাসে নয়া রেকর্ড গড়লেন ভার্জিনিয়ার ৩৮তম ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোশিয়েশন্স ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা) সম্মেলন। তিন দিনব্যাপী ৩৮তম ঐতিহাসিক ফোবানা সম্মেলন সফল করে যুক্তরাষ্ট্রের হাজারো প্রবাসীদের তাক লাগিয়ে দিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি (বাগডিসি)। প্রবাসীদের আশানুরূপ উপস্থিতি দেখে সম্মেলনের দর্শকশ্রোতারা খুব আনন্দিত বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।
গত ৩০ আগস্ট শুক্রবার থেকে ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনের ক্রিস্টাল গেটওয়ে ম্যারিয়ট হোটেলে শুরু হওয়া উত্তর আমেরিকার প্রবাসীদের বাঙালিদের মিলনমেলা খ্যাত ফোবানা সম্মেলন শেষ হয়েছে গত ১ সেপ্টেম্বর রবিবার মধ্যরাতে।
ভার্জিনিয়ার প্রাণকেন্দ্র আর্লিংটনের ক্রিস্টাল গেটওয়ে ম্যারিয়ট হোটেলে ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ভয়েস অব আমেরিকার সাবেক সাংবাদিক ইকবাল বাহার চৌধুরী। ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের আহবায়ক রোকসানা পারভীন ও সদস্য সচিব আবু রুমি, প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন নুরু, চেয়ারপারসন এটর্নি মোহাম্মদ আলমগীর, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি আবীর আলমগীর এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে যোগ দিতে গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসিসহ প্রায় ২৫টি অঙ্গরাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে হাজারো দর্শক বিকেলের মধ্যেই হাজির হন সম্মেলন স্থলে। ভার্জিনিয়ার ফোবানার আয়োজকরা জানান, উত্তর আমেরিকার প্রায় ৮৬টি সংগঠন এবারের সম্মেলনে অংশ নিতে ভার্জিনিয়ায় উপস্থিত হন।
মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত বাংলাদেশিরাও একদিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন ভার্জিনিয়ায় অনুষ্ঠিত ৩৮তম সম্মেলনের উদ্বোধক ও প্রবীণ সাংবাদিক ইকবাল বাহার চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রবাসে এ রকমের সম্মেলন করে শিক্ষার্থীদের মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে উৎসাহ দিতে হবে। তাহলে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের মত বাংলাদেশিরাও একদিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেবেন।
৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের বর্তমান চেয়ারপারসন অ্যাটর্নি মোহাম্মদ আলমগীর, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি আবীর আলমগীর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৮৬টি বাংলাদেশি সংগঠনের অংশ গ্রহণ করেছে এবারের ফোবানা সম্মেলনে। ২৫টিরও বেশি অঙ্গরাজ্য থেকে শতশত শিল্পী ও কলা-কুশলীরা ভার্জিনিয়ায় উপস্থিত ছিলেন। তিন দিন সাংস্কৃতিককর্মীরা তাদের বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে আমাদের দর্শকশ্রোতাদের আনন্দ দেন।
শামীম চৌধুরী ও আবীর আলমগীরের যৌথ সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ভার্জিনিয়া স্টেট সিনেটর ড. গাজালা এফ হাশমী, ভার্জিনিয়া স্টেটের একমাত্র বাংলাদেশি সিনেটর সাদ্দাম আজলান সেলিম, আর্লিংটন কাউন্টি বোর্ডের সদস্য সুসান কুনিংহাম, রিজিওনাল ডাইরেক্টর তানিয়া ট্যালেন্টো, ইউএস সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার। ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের কোষাধক্ষ্য ড. প্রিয়লাল কর্মকার মূলধারার রাজনীতিবীদদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদেরকে সম্মেলনে আসার জন্য সর্বদাই যোগাযোগ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান রোকেয়া হায়দার, স্কটল্যান্ড থেকে আগত অতিথি স্কটিস পার্লালামেন্টের সদস্য ফয়সল চৌধুরী, ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের বর্তমান চেয়ারপারসন এটর্নি মোহাম্মদ আলমগীর, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি আবীর আলমগীর, আহবায়ক রোকসানা পারভীন ও সদস্য সচিব আবু রুমি, প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন নুরু, নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি মাসুদ রব চৌধুরী, যুগ্ম এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি খালেদ রউফ, ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিপ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় ক্রিস্টাল গেটওয়ে ম্যারিয়ট হোটেলে ‘ব্লাক টাই ডিনারে’ অংশ নেন অতিথিবৃন্দরা। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন স্বাগতিক সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি (বাগডিসি)। ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের আহবায়ক আহবায়ক রোকসানা পারভীন, সদস্য সচিব আবু রুমি, প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন নুরু ও সমন্বয়ক গোলাম মোস্তফা উক্ত ব্লাক টাই ডিনারে নেতৃত্ব দেন।
শুক্রবার সন্ধায় বাংলাদেশ, আমেরিকান ও কানাডার জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে ৩৮তম ফোবানার উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানের শুভসুচনা হয়। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি (বাগডিসি) বান্টের শিল্পীরা বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার (তিন দেশের) জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
তিন দিনের ফোবানা সম্মেলনে ছিলো গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি সেমিনার, সাহিত্য, কারিগরি শিক্ষার প্রভাব ও উন্নয়ন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও সাইবার সিকিউরিটি, নারীর ক্ষমতায়ন, যুব উন্নয়ন, মূলধারায় নেতৃত্বের বিকাশ, ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকার বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা, আরবান ডেভেলপমেন্ট, ন্যানো টেকনোলজির এবং এর কার্যকারিতা, স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে এআই এর প্রভাব, তরুণ মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের স্কলাশিপ অ্যাওয়ার্ড, তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণে সংগীত ও নৃত্য প্রতিযোগিতা, ক্ষমতায়নে নারীর ভূমিকা, অর্জন এবং তাৎপর্য, কারুপণ্য শিল্পের প্রদর্শনী, বর্ণীল ফ্যাশন শো, সাহিত্যের উপর আলোকপাত এবং কাব্য জলসা, ফোবানা গ্রন্থমেলা, যুব ফোরাম ও নেটওয়ার্কিং, এনআরবি ব্যবসায়ী এবং ব্যবসা উদ্যোক্তাদের, নেটওয়ার্কিং, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এলামনাই ফোরাম নিয়ে আলোচনা, আন্তঃধর্মীয় শান্তি আলোচনা, বাংলাদেশের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র প্রদর্শিনী ইত্যাদি।
আগামী ২০২৫ সালের ৩৯তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে জর্জিরার আটলান্টায়। স্বাগতিক সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছে বাংলা ধারা। ছাড়াও ২০২৬ সালে ৪০তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ক্যালিফোর্নিয়ায়। স্বাগতিক সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালিফোর্নিয়া।
মিশিগান : যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের বাংলা টাউন খ্যাত ডেট্রয়েটের জেইন ফিল্ডে শেষ হয়েছে তিন দিনের ফোবানা সম্মেলন। গত ৩০ আগস্ট শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া তিনদিন ব্যাপী উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম বাংলাদেশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ফোবানার ৩৮তম সম্মেলন শেষ হয় ১ সেপ্টেম্বর রোববার।
এবারের ফোবানার আয়োজক বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশান অব মিশিগান। ৩০ আগস্ট বিকেল ৬টায় হিলটন গার্ডেন ইন-এ হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
তিনদিন ব্যাপী আয়োজনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলা টাউনখ্যাত ডেট্রয়েটের জেইন ফিল্ডে এবং হোটেল একোমডেশান, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, কাব্য জলসা, বিজনেস নেটওয়ার্কিং সামিট, প্রথম আলো ফাউন্ডশনের 'দেখা সাক্ষাৎ'সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়েছে সাউথ ফিল্ড শহরের হিলটন গার্ডেন ইন হোটেলে। এ তিন দিনের মেলায় ছিল বিশেষ সেমিনার, ওয়ার্কশপ, আলোচনা সভা, বিজনেস নেটওয়ার্কিং সামিট, সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান, ব্যান্ড শো, ট্যালেন্ট শো, ইয়থ ফোরাম, নৃত্য, রাফেল ড্র, দেশী আড্ডা, ছিল ৭০ এর অধিক স্টল যাতে ছিল বাংলাদেশি কাপড়, খেলনা, ঘর সাজানোর জিনিষ, রকমারি খাবারের দোকান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছিল বিশেষ আয়োজন। তিনদিন ব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন বাংলাদেশ ও উত্তর আমেরিকার জনপ্রিয় শিল্পীরা।
জনপ্রিয় শিল্পী বালাম একের পর এক তার জনপ্রিয় গানগুলি পরিবেশন করেন, দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে তার গান শোনেন। এছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করেন তোশিবা, ইকবাল হিমেল, জায়েদ খান, দিনাত জাহান মুন্নী, অংকন, বিন্দুকণাসহ আরো অনেকে।
মিশিগান হচ্ছে আমেরিকার মধ্যে দ্বিতীয় বাঙালি জনবহুল অঙ্গরাজ্য, যেখানে ৫০ হাজারের বেশী প্রবাসী বাংলাদেশি বাস করেন বলে ধারণা করা হয়। মিশিগান ছাড়াও নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, কানাডা থেকেও অনেক দর্শকশ্রোতা এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
ফোবানার চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান, ফোবানার প্রাক্তন চেয়ারপারসন ও আউটস্ট্যান্ডিং মেম্বার বেদারুল ইসলাম বাবলা, প্রাক্তন চেয়ারপারসন জাকারিয়া চৌধুরী, ফোবানার এক্সিকিউটিভ জয়েন্ট সেক্রেটারি মো. কবির কিরণ, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরীসহ ফোবানার আরো অনেক কর্মকর্তা এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
কর্মকর্তারা জানান, ফোবানার মূল লক্ষ্য হচ্ছে উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে ধরে রাখা, নতুন প্রজন্মের কাছে তার প্রচার ও প্রসারে সাহায্য করা, উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারি বাংলাদেশিদের মধ্যে যোগসুত্র গড়ে তোলা, সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়িক সেতু বন্ধন তৈরী করা, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা।
এদিকে মিশিগান শহরে সফল ৩৮তম ফোবানা সম্মেলনের সমাপ্তির দিনে ফোবানা এজিএম মিটিংয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী ২০২৪-২৫ সালের জন্য নতুন চেয়ারম্যান পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন ফ্লোরিডার আতিকুর রহমান ও নির্বাহী সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন টেক্সাসের নিহাল রহিম। পূর্ণাঙ্গ কমিটি পরবর্তীতে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন ফোবানার কর্মকর্তারা।
ফোবানা এক্সিকিউটিভ কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরী আগামী ফোবানা সম্মেলন ২০২৫ কানাডার মন্ট্রিয়ালে হওয়ার ঘোষণা দেন। ৩৯তম ফোবানার স্বাগতিক সংগঠন কানাডা বাংলাদেশ সলিডারিটি। নির্বাচনে ছিলেন জিয়াউল হক জিয়া এবং ইকবাল কবীর। তারা অত্যান্ত সফল এবং সেরা একটি ফোবানা অনুষ্ঠিত করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।