বিশ্বের ১৫৬টি পদক-সম্মাননা ড. ইউনুসের গলায়। কিন্তু স্বদেশে শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন মামলার মালা। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরও অভিষিক্ত হচ্ছেন। অর্ন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন। ছাত্র ও সেনাশক্তির সহযোগিতায় শুরু করেছেন অগ্রযাত্রা। কিন্তু রাষ্ট্রপরিচালনায় এসে পাহাড়সম সমস্যার মুখোমুখি। সেক্টরে সেক্টরে পেশাজীবীদের দাবি-দাওয়ার উত্তাল ঢেউ। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সচিবালয় বেদখল। আন্দোলনরত আনসার বহিনীর হাতে মন্ত্রীসম উপদেষ্টারা জিম্মি। ছাত্র ও সেনাশক্তির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পরিস্থিতির উত্তরণ। কিন্তু নিজ কার্যালয় ও সচিবালয়কেন্দ্রিক আন্দোলন থামছেনা। আধিকাংশ আন্দোলনের নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মিলছে। অন্যদিকে সমমনা দলগুলো থেকে দ্রুত নির্বাচনের চাপ। ‘জাতীয় ভাষণে’ নির্বাচনী রোড-ম্যাপ না থাকায় প্রকাশ পাচ্ছে অসন্তোষ।
ইউনুস সরকারের গলায় ষড়যন্ত্রের মালা আ’লীগ নিষিদ্ধকরণ ঠেকাতে আনসার, উপজেলা চেয়ারম্যানদের সাঁড়াশি মুভমেন্ট
আগস্টের ৮ তারিখে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। ছাত্র ও সেনাসমর্থিত সরকারটি যেন ‘জন্ম থেকেই জ্বলছে’। প্রথমে সারাদেশে পুলিশের কর্মবিরতি। ট্রাফিক সিস্টেম ও থানা পরিচালনা নিয়ে অচলাবস্থা। বিভিন্নস্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা। শহর-মহল্লায় রহস্যজনক ডাকাতির ধুম। শেখ হাসিনার পৈতৃকবাস গোপালগগঞ্জে আর্মির গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ। উচ্চ-আদালতে ‘ফুলকোট’ ডেকে ‘জুডিশিয়াল ক্যু’-এর চেষ্টা। ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২-এর ‘ভস্মিভূত বঙ্গবন্ধু ভবনে’ রাজনৈতিক কর্মসূচি। টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধির বদল ‘ঢাকা মার্চ কার্যক্রম। সরকারবিরোধী প্রতিটি পদক্ষেপই ব্যর্থ হয় ছাত্র-সেনাশক্তির সক্রিয়তায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের ডায়েরীতে ২৫ আগস্ট ‘রক্তহিম’ করা দিবস। আ’লীগকে বাতিল করা বিষয়ে হাইকোর্টে শুনানি ছিলো। আওয়ামী ঘনিষ্ঠদের ধারণা ছিলো ঐ দিনই রায় দেবে। তাতে শুধু দল হিসেবে আ’লীগকে নিষিদ্ধ করা নয়। তত্ত্ববধায়ক সরকার পদ্ধতি নিষিদ্ধকারী ‘পঞ্চদশ সংশোধনী’ও বাতিল হবে। হলে, অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক বৈধতা পাবে। অন্যদিকে শেখ হাসিনার অধীনস্থ ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২৪-এর নির্বাচন বাতিল হবে।
উল্লেখিত বিষয় নিয়ে মহাটেনশনে ছিলো আওয়ামী মহল। প্রতিহতকরণে নেয়া হয় প্রতিবিপ্লবমূলক কর্মসূচি। সারা দেশের প্রায় ১০ হাজার আনসার সদস্য জমায়েত হয় ঢাকায়। প্রচারণা রয়েছে- ১৫ বছরের শাসনামলে চাকরি পেয়েছে ৪২ হাজার। এর ২৯ হাজার সদস্যের পৈতৃকবাস শেখ হাসিনার গোপালগন্জে ীগ। সাবেক অতিরিক্ত সচিব শামসুজ্জামান ভুঁইয়া তথ্যটি দিয়েছেন। ব্যাখ্যা মতে, নবনিযুক্ত ৩৯ হাজার আনসারই আ’লীগ মনোভাবাপন্ন। চাকরি জাতীয়কারণসহ একাধিক দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
উল্লেখ্য, চার লাখ আনসারের মধ্যে এনারা ছিলেন চুক্তিভিত্তিক। প্রতিদিন ৫০০ টাকা হারে ভাতা, রেশন। তিনবছর পর পর ৬ মাসের রেস্ট বা অবকাশ। এই সময়টায় ভাতা ও রেশন বন্ধ থাকে। আনসারদের দাবি ছিলো চাকরি জাতীয়করণ। পাশাপাশি ৬ মাসের রেস্ট-প্রথা স্থায়ীভাবে বন্ধকরণ।
উল্লেখিত বিষয়ে সচিবালয়ে উর্ধতনদের সাথে বৈঠক হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দুই ছাত্রনেতা কাম উপদেষ্টাও ছিলেন। সরকারপক্ষ তাদের দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। দাবিগুলো বাস্তবায়নে ‘পরামর্শক কমিটি’ গঠন করেন। অপরাহ্নে সাংবাদিক সম্মেলনে উভয়পক্ষ বক্তব্য দেন। আনসারদের নেতা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা করেন। কিন্তু রহস্যজনকভাবে স্তিমিত আন্দোলন ফের জ্বলে ওঠে। এমনিতেই বিশাল সচিবালয়ের চতুর্দিক ঘেরাও ছিলো। কিন্তু দেয়াল টপকিয়ে প্রায় ৭০০ আনসার ভেতরে ঢোকে। সচিবালয়ে কর্মরত ১৮ জন উপদেষ্টাকে ঘেরাও করে। সচিব এবং সকল কর্মকর্তাকে জিম্মি করা হয়। শ্লোগান ওঠেÑ এক দফা এক দাবি...।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম সচিবালয় অচল করা হয়। ইতোমধ্যে আনসার মুভমেন্টে ষড়যন্ত্রের আভাষ পরিলক্ষিত হয়। ছাত্র-উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ফেসবুকে পোস্ট দেন। লেখেন- আনসাররা আমাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। অন্যদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলন নেতারাও উদ্যোগী হন। সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহও পোস্ট দেন। নগরীর ছাত্রদের টিএসসি চত্বরে আসার আহবান জানান। উল্লেখ্য, সেখানে বন্যাত্রাণ কার্যক্রম চলছিলো। ফলে ছাত্ররা অনায়াসে সংঘবদ্ধ হয়ে ওঠেন। রাত নয়টার মধ্যে লাঠি, ইট-পাটাকেল নিয়ে চলে পাল্টা আক্রমণ। অন্যদিকে সেনাবাহিনীও ঘটনাস্থলে আসতে থাকে।
সচিবালয়ের চতুর্দিকে থাকা আনসারেরা সমানে হামলা চালায়। অর্ধশতাধিক ছাত্রকে আহত করে। রহস্যজনকভাবে গুলীও চালায়। সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ সাতজন মারাত্নকভাবে আহত হন। কিন্তু ছাত্র ও সেনাশক্তির কাছে আনসারেরা পরাভূত হয়। সচিবালয়ের অভ্যন্তরে থাকা ৩৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সমবেত প্রায় পাঁচ হাজার আনসারকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, যুক্ত ও গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অসংখ্য ভুয়া আনসার পাওয়া যায়। পোশাক ও ক্যাপ পরে তারা আন্দোলনে অংশ নেয়। একটি বিশেষ দলের হয়ে অংশগ্রহণের সত্যতা প্রকাশ করে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক শামীম হাসিনা সরকারে প্রতিমন্ত্রী ছিলো। সরকার শামীম-সহোদরকে আনসার কতৃর্পক্ষের ‘ডিজি’ বানিয়েছিলো। ওনার মাধ্যমে আনসার সেক্টরে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা আত্নীকরণ হয়।
আটককৃত আনসারদের বিচারকার্য শুরু হয়েছে। প্রধান অভিযোগ পাঁচটি-
ক). যথাযথ কতৃর্পক্ষের অনুমতি ছাড়াই মফস্বল থেকে ঢাকায় জমায়েত,
খ). অনুমতি ছাড়াই দেওয়াল টপকে সচিবালয়ে প্রবেশ,
গ). সরকারের ১৮ জন উপদেষ্টা, সচিব কর্মকর্তাদের আটক, জিম্মিকরণ।
ঘ). নিরীহ ছাত্রদের পিটানো, আহতকরণ ও গুলীবর্ষন।
ঙ). চুক্তি ভিত্তিক চাকরির বিধিমালা চরমভাবে লঙ্খন।
২৫ আগস্ট দুপুরে ঘটে আরেক নাটকীয় ঘটনা।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের দফতর যমুনা, ও ঘেরাও হয়। সারাদেশ থেকে উপজেলার পুরুষ-মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরা সমবেত হন। এক সপ্তাহ পূর্বে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাদের পদবী বাতিল হয়। ১৯ আগস্ট জেলা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়রবৃন্দ পদহারান। অতিরিক্ত সচিব, ডিসি, ইউএনও, প্রশাসন ক্যাডারকে সেসবে বসানো হয়। এ বিষয়ে ‘সাপ্তাহিক ঠিকানা’ বিস্তারিত প্রতিবেদন ছাপে। তাতে বলা হয়, প্রশাসন ক্যাডারও হাসিনা সরকারের নিয়োগকৃত। অতএব ‘আওয়ামী ক্যাডারদের হাতেই মাঠ প্রশাসন।’ ৯৫% চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মেয়র আওয়ামীপন্থী।
ড. ইউনুসের অফিস ঘেরাওকালে পদচ্যুত মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানরা উচ্চকন্ঠ ছিলেন। কোন বিবেচনায় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বাতিল হলেন- জানতে চান। প্রত্যেককে স্ব স্ব পদ ফিরিয়ে দিতে দাবি জানান। তারা বলেন আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। আন্দোলনকারীদের একটি দল ড. ইউনুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। নিজেদের দাবিনামা, ক্ষোভ তুলে ধরেন। প্রতিউত্তরে এক সপ্তাহ সময় নেন প্রধান উপদেষ্টা। বলেন বিষয়টি স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত। এছাড়া উপদেষ্টা পরিষদেও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। প্রতিনিধিদল সম্মতি সূচক হাসি দিয়ে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু খানিক পরেই ৯৮০ জন ভাইস-চেয়ারম্যান আন্দোলন চলমান রাখেন। আনসার আন্দোলনের দিনে তারাও রাজধানীতে ছিলেন সক্রিয়। মেট্রোপলিটন পুলিশ অবশ্য তাদের ‘যমুনা এলাকা’ থেকে হটান। দলটি অত:পর সচিবালয়ের আশে-পাশে অবস্থান নেয়। কিন্ত ছাত্র ও সেনাশক্তির আক্রমণের ভয়ে কেটে পড়ে। তথ্যমতে, একটি গোপন ষড়যন্ত্রের আগুন আপাতত প্রশমিত হয়।
বন্যা-জলকপাটের পর দুর্ভিক্ষের দূরাভাষ
বাংলাদেশে আরেকদফা জনপ্রিয়তা হারালো ভারত। ২১ আগস্ট মধ্যরাতে খুলে দিয়েছিলো ত্রিপুরার ‘ডম্বুরু বাঁধ’। অতিবৃষ্টির কারণে ভারতের ‘সেভেন সিস্টারস’ ছিলো জলমগ্ন। পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে প্রধানত ত্রিপুরা রাজ্যে। ৮ টি জেলায় সাড়ে ৬ হাজার পরিবার বাড়িছাড়া হয়। রাজধানী আগরতলাসহ ১১ এলাকার স্কুল-কলেজ বন্ধ। ধর্মনগরের শিল্পী-শিক্ষিকা নবনীতা ভট্টাচার্য প্রকাশ করেন অসহায়ত্ব। এই প্রতিনিধিকে বলেন, একজীবনে এতো প্লাবন দেখিনি। বাজার-ঘাট করতে না পেরে অভুক্ত থাকতে হচ্ছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে একতরফা সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য-প্রশাসন। ডম্বুরু হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রজেক্ট-এর বাঁধ খুলে দেয়। ১৯৯৩ অর্থাৎ ৩১ বছর পর জলকপাট খুলে দেয়া হয়। গোমতী নদী কেন্দ্রিক এই জলপ্রবাহ মরণ আঘাত হানে। ফেনীসহ পার্শ্ববর্তী ৮ টি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। মানবিক বিপর্যয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্বদেশ-প্রবাস। সচেতন মহলের একটিই প্রশ্ন- আগাম বার্তা কোথায়? রাত ১২ টায় নোটিশ ছাড়াই গেট খোলা হলো কেনো?
উল্লেখ্য, ত্রিপুরা রাজ্যে বিজেপি সরকারের শাসন। রাজনীতিতে এটিকে ‘ডবল ইঞ্জিন সরকার’ বলে। অর্থাৎ মোদী সরকারের কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সম্পর্কিত। ফলে, বাংলাদেশের সচেতন মহল বিষয়টি নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। তাদের মতে হাসিনাপন্থী মোদী সরকার এটি ঘটিয়েছে। সরকারের ছাত্র-উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও তীর্যক বক্তব্য রাখেন। বলেন, এলাকায় সমস্যা থাকতেই পারে। তবে আগাম পূর্বাভাষ না দেওয়াটি রহস্যজনক। আমাদের লাখ লাখ মানুষকে বিপদে ফেলেছে ভারত।
ভৌগলিকভাবে ফেনী’র তিনদিকে ভারতের পাহাড়ী এলাকা। ভারী বর্ষনে অত্যধিক পরিমাণ পানি ভেতরে ঢোকে। রাতারাতি আটটি জেলা পানিবন্দী হয়ে ওঠে। সরকার এবং সচেতন ছাত্র-জনগণ ও উদ্যোগী হয়। পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারে চলে সার্বজনীন প্রচেষ্টা। নৌকা, স্পীডবোট, হেলিকপ্টার, কলার ভেলা সচল হয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলন টিএসসিতে খোলে ত্রাণকেন্দ্র। রাজধানীবাসী উদারহস্তে অর্থ ও অন্যান্য সামগ্রী দান করে। ত্রাণের পাহাড় জমিয়ে ফেলে তিন দিনেই।
সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী দেখায় তুমুল তৎপরতা। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস দেখান আরেক জাদু। এনজিও কর্মকর্তাদের ডেকে এক ঘন্টার সভা করেন। ত্রাণ-পুর্নবাসনে এক হাজার কোটি টাকার প্রতিশ্রুতিও আদায় করেন। এছাড়া চীনসহ বিভিন্ন দেশ আর্থিক সহযোগিতায় অংশ নেয়।
বিশাল এক নাগরিক ভালোবাসার দৃষ্টান্ত দৃশ্যমান হয়। সারাদেশেই কল্যাণমূলক কার্যক্রম চলতে থাকে। বন্যা দুর্গত এলাকায় মসজিদে মসজিদেও ঠাঁই পায় হিন্দু পরিবার। প্রবাসী এবং শিশুরাও অনুদান প্রদানে দৃষ্টান্ত রাখেন।
বাংলাদেশে ভারতের হাই কমিশনার প্রণয়কুমার ভার্মা মুখ খুলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বলেন- ডম্বুরু বাঁধ খুলে দেয়া হয়নি। অতিরিক্ত জলের চাপে নিজে থেকেই খুলে গেছে। ড. ইউনুসু বলেন, দুই দেশের উচ্চ ক্ষমতাবিশিষ্ট কমিটি থাকতে হবে। সেই কমিটিই নির্ধারণ করবে বাঁধ কি অবস্থায় খুলবে। আবার কোন যুক্তিতে তা বন্ধ থাকবে।
উল্লেখ্য, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জলবন্টন সমস্যা দীর্ঘদিনের। তিস্তাসহ ৫৩ টি নদীর জলহিস্যার সমাধান হয়নি। ইতোমধ্যে ফারাক্কার ১০৯ টি স্প্যান খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে উত্তরবঙ্গ, বৃহত্তর ফরিদপুর, যশোর, খুলনা হুমকির মুখে। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বৃহত্তর সিলেটে চাপা আন্দোলন চলছে। পানিবন্টন ইস্যুতে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ভারতবিদ্বেষী। ফলে, অন্তর্বর্তী সরকারকে ভারত-ঠেকাও মনোভাব দেখাতে হচ্ছে।
সদ্যবিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রেহানা, পুতুল শুধু নয়। আওয়ামী লীগের অসংখ্য পলাতক নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার দু‘জন কূটনীতিককে চাকরিচ্যুত করেছে। দিল্লীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ। কলকাতার উপ হাইকমিশনের প্রথম সচিব রঞ্জন রায়। উভয়ে ভারত ও আ’লীগের সেতুবন্ধ বলে অভিযোগ। তাদের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে। ভারতের বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ড. ইউনুসের সরাসরি ছাত্র। ঢাকা ‘ইউনুস সেন্টারে’ পাচঁদিন প্রশিক্ষণ নিয়ে গেছে। একারণে বিজেপি সরকারের ধারণা ড. ইউনুস কংগ্রেসপন্থী। ভারতে অবস্থিত আ’লীগ নেতারাও তেমন ধারণা দিয়ে চলেছে। ইউনুস-মোদী সেতুবন্ধ সম্পর্ক যেন না হয়- প্রচেস্টা চলছে।
বিদ্যুৎ ক্রয় নিয়ে আদানী গ্রুপের সঙ্গে আছে অসম চুক্তি। ভারতের আদানী শিল্প গ্রুপ প্রধানমন্ত্রী মোদী‘র আশীর্বাদপৃষ্ট। ফলে চুক্তি বাতিল করলে বিজেপি সরকার বিরাগভাজন হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে চাপে রাখার পত্থা খোজাঁ হচ্ছে। জলকপাট লাগা-খোলার পাশাপাশি নেয়া হচ্ছে নবকৌশল। বাংলাদেশে চাল, পেয়াঁজ, রসুন, ভোজ্যতেল প্রেরণে অচলাবস্থা। প্রতিবছর বাংলাদেশকে ৬০% খ্যাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে হয়। সিংহভাগ সামগ্রীর সরবরাহকারী ভারতের বণিক গ্রুপ। সাপ্লাই-কৌশল খাটিয়ে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি করা সম্ভব।
২০০৮-এ ধরা খেয়েছিলো ফখরুদ্দিন-মঈনদ্দিনের কেয়ারটেকার সরকার। পাচঁ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির চুক্তি করেছিলো। দুই লাখ টন প্রাপ্তির পর রহস্যজনকভাবে সরবরাহ বন্ধ। মারাত্নক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছিলো তৎকালীন সরকার। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী তখন ভূমিকা রাখেন। কারাবন্দি হাসিনার মুক্তি ও আ‘লীগকে ক্ষমতায় বসানো। এই গোপন শর্তে কাঙ্খিত চাল পেয়েছিলো তত্তাবধায়ক সরকার। সেই পুরনো চালটি দিয়ে স্বার্থ আদায়ের প্রস্তুতি চলছে। ফলে ইউনুস সরকারের জন্যে দূর্ভিক্ষের দূরাভাষ কড়া নাড়ছে।
ইউনুস সরকারের গলায় ষড়যন্ত্রের মালা আ’লীগ নিষিদ্ধকরণ ঠেকাতে আনসার, উপজেলা চেয়ারম্যানদের সাঁড়াশি মুভমেন্ট
আগস্টের ৮ তারিখে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। ছাত্র ও সেনাসমর্থিত সরকারটি যেন ‘জন্ম থেকেই জ্বলছে’। প্রথমে সারাদেশে পুলিশের কর্মবিরতি। ট্রাফিক সিস্টেম ও থানা পরিচালনা নিয়ে অচলাবস্থা। বিভিন্নস্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা। শহর-মহল্লায় রহস্যজনক ডাকাতির ধুম। শেখ হাসিনার পৈতৃকবাস গোপালগগঞ্জে আর্মির গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ। উচ্চ-আদালতে ‘ফুলকোট’ ডেকে ‘জুডিশিয়াল ক্যু’-এর চেষ্টা। ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২-এর ‘ভস্মিভূত বঙ্গবন্ধু ভবনে’ রাজনৈতিক কর্মসূচি। টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধির বদল ‘ঢাকা মার্চ কার্যক্রম। সরকারবিরোধী প্রতিটি পদক্ষেপই ব্যর্থ হয় ছাত্র-সেনাশক্তির সক্রিয়তায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের ডায়েরীতে ২৫ আগস্ট ‘রক্তহিম’ করা দিবস। আ’লীগকে বাতিল করা বিষয়ে হাইকোর্টে শুনানি ছিলো। আওয়ামী ঘনিষ্ঠদের ধারণা ছিলো ঐ দিনই রায় দেবে। তাতে শুধু দল হিসেবে আ’লীগকে নিষিদ্ধ করা নয়। তত্ত্ববধায়ক সরকার পদ্ধতি নিষিদ্ধকারী ‘পঞ্চদশ সংশোধনী’ও বাতিল হবে। হলে, অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক বৈধতা পাবে। অন্যদিকে শেখ হাসিনার অধীনস্থ ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২৪-এর নির্বাচন বাতিল হবে।
উল্লেখিত বিষয় নিয়ে মহাটেনশনে ছিলো আওয়ামী মহল। প্রতিহতকরণে নেয়া হয় প্রতিবিপ্লবমূলক কর্মসূচি। সারা দেশের প্রায় ১০ হাজার আনসার সদস্য জমায়েত হয় ঢাকায়। প্রচারণা রয়েছে- ১৫ বছরের শাসনামলে চাকরি পেয়েছে ৪২ হাজার। এর ২৯ হাজার সদস্যের পৈতৃকবাস শেখ হাসিনার গোপালগন্জে ীগ। সাবেক অতিরিক্ত সচিব শামসুজ্জামান ভুঁইয়া তথ্যটি দিয়েছেন। ব্যাখ্যা মতে, নবনিযুক্ত ৩৯ হাজার আনসারই আ’লীগ মনোভাবাপন্ন। চাকরি জাতীয়কারণসহ একাধিক দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
উল্লেখ্য, চার লাখ আনসারের মধ্যে এনারা ছিলেন চুক্তিভিত্তিক। প্রতিদিন ৫০০ টাকা হারে ভাতা, রেশন। তিনবছর পর পর ৬ মাসের রেস্ট বা অবকাশ। এই সময়টায় ভাতা ও রেশন বন্ধ থাকে। আনসারদের দাবি ছিলো চাকরি জাতীয়করণ। পাশাপাশি ৬ মাসের রেস্ট-প্রথা স্থায়ীভাবে বন্ধকরণ।
উল্লেখিত বিষয়ে সচিবালয়ে উর্ধতনদের সাথে বৈঠক হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দুই ছাত্রনেতা কাম উপদেষ্টাও ছিলেন। সরকারপক্ষ তাদের দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। দাবিগুলো বাস্তবায়নে ‘পরামর্শক কমিটি’ গঠন করেন। অপরাহ্নে সাংবাদিক সম্মেলনে উভয়পক্ষ বক্তব্য দেন। আনসারদের নেতা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা করেন। কিন্তু রহস্যজনকভাবে স্তিমিত আন্দোলন ফের জ্বলে ওঠে। এমনিতেই বিশাল সচিবালয়ের চতুর্দিক ঘেরাও ছিলো। কিন্তু দেয়াল টপকিয়ে প্রায় ৭০০ আনসার ভেতরে ঢোকে। সচিবালয়ে কর্মরত ১৮ জন উপদেষ্টাকে ঘেরাও করে। সচিব এবং সকল কর্মকর্তাকে জিম্মি করা হয়। শ্লোগান ওঠেÑ এক দফা এক দাবি...।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম সচিবালয় অচল করা হয়। ইতোমধ্যে আনসার মুভমেন্টে ষড়যন্ত্রের আভাষ পরিলক্ষিত হয়। ছাত্র-উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ফেসবুকে পোস্ট দেন। লেখেন- আনসাররা আমাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। অন্যদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলন নেতারাও উদ্যোগী হন। সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহও পোস্ট দেন। নগরীর ছাত্রদের টিএসসি চত্বরে আসার আহবান জানান। উল্লেখ্য, সেখানে বন্যাত্রাণ কার্যক্রম চলছিলো। ফলে ছাত্ররা অনায়াসে সংঘবদ্ধ হয়ে ওঠেন। রাত নয়টার মধ্যে লাঠি, ইট-পাটাকেল নিয়ে চলে পাল্টা আক্রমণ। অন্যদিকে সেনাবাহিনীও ঘটনাস্থলে আসতে থাকে।
সচিবালয়ের চতুর্দিকে থাকা আনসারেরা সমানে হামলা চালায়। অর্ধশতাধিক ছাত্রকে আহত করে। রহস্যজনকভাবে গুলীও চালায়। সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ সাতজন মারাত্নকভাবে আহত হন। কিন্তু ছাত্র ও সেনাশক্তির কাছে আনসারেরা পরাভূত হয়। সচিবালয়ের অভ্যন্তরে থাকা ৩৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সমবেত প্রায় পাঁচ হাজার আনসারকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, যুক্ত ও গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অসংখ্য ভুয়া আনসার পাওয়া যায়। পোশাক ও ক্যাপ পরে তারা আন্দোলনে অংশ নেয়। একটি বিশেষ দলের হয়ে অংশগ্রহণের সত্যতা প্রকাশ করে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক শামীম হাসিনা সরকারে প্রতিমন্ত্রী ছিলো। সরকার শামীম-সহোদরকে আনসার কতৃর্পক্ষের ‘ডিজি’ বানিয়েছিলো। ওনার মাধ্যমে আনসার সেক্টরে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা আত্নীকরণ হয়।
আটককৃত আনসারদের বিচারকার্য শুরু হয়েছে। প্রধান অভিযোগ পাঁচটি-
ক). যথাযথ কতৃর্পক্ষের অনুমতি ছাড়াই মফস্বল থেকে ঢাকায় জমায়েত,
খ). অনুমতি ছাড়াই দেওয়াল টপকে সচিবালয়ে প্রবেশ,
গ). সরকারের ১৮ জন উপদেষ্টা, সচিব কর্মকর্তাদের আটক, জিম্মিকরণ।
ঘ). নিরীহ ছাত্রদের পিটানো, আহতকরণ ও গুলীবর্ষন।
ঙ). চুক্তি ভিত্তিক চাকরির বিধিমালা চরমভাবে লঙ্খন।
২৫ আগস্ট দুপুরে ঘটে আরেক নাটকীয় ঘটনা।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের দফতর যমুনা, ও ঘেরাও হয়। সারাদেশ থেকে উপজেলার পুরুষ-মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানরা সমবেত হন। এক সপ্তাহ পূর্বে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাদের পদবী বাতিল হয়। ১৯ আগস্ট জেলা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়রবৃন্দ পদহারান। অতিরিক্ত সচিব, ডিসি, ইউএনও, প্রশাসন ক্যাডারকে সেসবে বসানো হয়। এ বিষয়ে ‘সাপ্তাহিক ঠিকানা’ বিস্তারিত প্রতিবেদন ছাপে। তাতে বলা হয়, প্রশাসন ক্যাডারও হাসিনা সরকারের নিয়োগকৃত। অতএব ‘আওয়ামী ক্যাডারদের হাতেই মাঠ প্রশাসন।’ ৯৫% চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মেয়র আওয়ামীপন্থী।
ড. ইউনুসের অফিস ঘেরাওকালে পদচ্যুত মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানরা উচ্চকন্ঠ ছিলেন। কোন বিবেচনায় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বাতিল হলেন- জানতে চান। প্রত্যেককে স্ব স্ব পদ ফিরিয়ে দিতে দাবি জানান। তারা বলেন আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। আন্দোলনকারীদের একটি দল ড. ইউনুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। নিজেদের দাবিনামা, ক্ষোভ তুলে ধরেন। প্রতিউত্তরে এক সপ্তাহ সময় নেন প্রধান উপদেষ্টা। বলেন বিষয়টি স্থানীয় সরকার সংক্রান্ত। এছাড়া উপদেষ্টা পরিষদেও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। প্রতিনিধিদল সম্মতি সূচক হাসি দিয়ে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু খানিক পরেই ৯৮০ জন ভাইস-চেয়ারম্যান আন্দোলন চলমান রাখেন। আনসার আন্দোলনের দিনে তারাও রাজধানীতে ছিলেন সক্রিয়। মেট্রোপলিটন পুলিশ অবশ্য তাদের ‘যমুনা এলাকা’ থেকে হটান। দলটি অত:পর সচিবালয়ের আশে-পাশে অবস্থান নেয়। কিন্ত ছাত্র ও সেনাশক্তির আক্রমণের ভয়ে কেটে পড়ে। তথ্যমতে, একটি গোপন ষড়যন্ত্রের আগুন আপাতত প্রশমিত হয়।
বন্যা-জলকপাটের পর দুর্ভিক্ষের দূরাভাষ
বাংলাদেশে আরেকদফা জনপ্রিয়তা হারালো ভারত। ২১ আগস্ট মধ্যরাতে খুলে দিয়েছিলো ত্রিপুরার ‘ডম্বুরু বাঁধ’। অতিবৃষ্টির কারণে ভারতের ‘সেভেন সিস্টারস’ ছিলো জলমগ্ন। পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে প্রধানত ত্রিপুরা রাজ্যে। ৮ টি জেলায় সাড়ে ৬ হাজার পরিবার বাড়িছাড়া হয়। রাজধানী আগরতলাসহ ১১ এলাকার স্কুল-কলেজ বন্ধ। ধর্মনগরের শিল্পী-শিক্ষিকা নবনীতা ভট্টাচার্য প্রকাশ করেন অসহায়ত্ব। এই প্রতিনিধিকে বলেন, একজীবনে এতো প্লাবন দেখিনি। বাজার-ঘাট করতে না পেরে অভুক্ত থাকতে হচ্ছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে একতরফা সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য-প্রশাসন। ডম্বুরু হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রজেক্ট-এর বাঁধ খুলে দেয়। ১৯৯৩ অর্থাৎ ৩১ বছর পর জলকপাট খুলে দেয়া হয়। গোমতী নদী কেন্দ্রিক এই জলপ্রবাহ মরণ আঘাত হানে। ফেনীসহ পার্শ্ববর্তী ৮ টি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। মানবিক বিপর্যয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্বদেশ-প্রবাস। সচেতন মহলের একটিই প্রশ্ন- আগাম বার্তা কোথায়? রাত ১২ টায় নোটিশ ছাড়াই গেট খোলা হলো কেনো?
উল্লেখ্য, ত্রিপুরা রাজ্যে বিজেপি সরকারের শাসন। রাজনীতিতে এটিকে ‘ডবল ইঞ্জিন সরকার’ বলে। অর্থাৎ মোদী সরকারের কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সম্পর্কিত। ফলে, বাংলাদেশের সচেতন মহল বিষয়টি নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। তাদের মতে হাসিনাপন্থী মোদী সরকার এটি ঘটিয়েছে। সরকারের ছাত্র-উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও তীর্যক বক্তব্য রাখেন। বলেন, এলাকায় সমস্যা থাকতেই পারে। তবে আগাম পূর্বাভাষ না দেওয়াটি রহস্যজনক। আমাদের লাখ লাখ মানুষকে বিপদে ফেলেছে ভারত।
ভৌগলিকভাবে ফেনী’র তিনদিকে ভারতের পাহাড়ী এলাকা। ভারী বর্ষনে অত্যধিক পরিমাণ পানি ভেতরে ঢোকে। রাতারাতি আটটি জেলা পানিবন্দী হয়ে ওঠে। সরকার এবং সচেতন ছাত্র-জনগণ ও উদ্যোগী হয়। পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারে চলে সার্বজনীন প্রচেষ্টা। নৌকা, স্পীডবোট, হেলিকপ্টার, কলার ভেলা সচল হয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলন টিএসসিতে খোলে ত্রাণকেন্দ্র। রাজধানীবাসী উদারহস্তে অর্থ ও অন্যান্য সামগ্রী দান করে। ত্রাণের পাহাড় জমিয়ে ফেলে তিন দিনেই।
সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী দেখায় তুমুল তৎপরতা। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস দেখান আরেক জাদু। এনজিও কর্মকর্তাদের ডেকে এক ঘন্টার সভা করেন। ত্রাণ-পুর্নবাসনে এক হাজার কোটি টাকার প্রতিশ্রুতিও আদায় করেন। এছাড়া চীনসহ বিভিন্ন দেশ আর্থিক সহযোগিতায় অংশ নেয়।
বিশাল এক নাগরিক ভালোবাসার দৃষ্টান্ত দৃশ্যমান হয়। সারাদেশেই কল্যাণমূলক কার্যক্রম চলতে থাকে। বন্যা দুর্গত এলাকায় মসজিদে মসজিদেও ঠাঁই পায় হিন্দু পরিবার। প্রবাসী এবং শিশুরাও অনুদান প্রদানে দৃষ্টান্ত রাখেন।
বাংলাদেশে ভারতের হাই কমিশনার প্রণয়কুমার ভার্মা মুখ খুলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বলেন- ডম্বুরু বাঁধ খুলে দেয়া হয়নি। অতিরিক্ত জলের চাপে নিজে থেকেই খুলে গেছে। ড. ইউনুসু বলেন, দুই দেশের উচ্চ ক্ষমতাবিশিষ্ট কমিটি থাকতে হবে। সেই কমিটিই নির্ধারণ করবে বাঁধ কি অবস্থায় খুলবে। আবার কোন যুক্তিতে তা বন্ধ থাকবে।
উল্লেখ্য, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জলবন্টন সমস্যা দীর্ঘদিনের। তিস্তাসহ ৫৩ টি নদীর জলহিস্যার সমাধান হয়নি। ইতোমধ্যে ফারাক্কার ১০৯ টি স্প্যান খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে উত্তরবঙ্গ, বৃহত্তর ফরিদপুর, যশোর, খুলনা হুমকির মুখে। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বৃহত্তর সিলেটে চাপা আন্দোলন চলছে। পানিবন্টন ইস্যুতে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ভারতবিদ্বেষী। ফলে, অন্তর্বর্তী সরকারকে ভারত-ঠেকাও মনোভাব দেখাতে হচ্ছে।
সদ্যবিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রেহানা, পুতুল শুধু নয়। আওয়ামী লীগের অসংখ্য পলাতক নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার দু‘জন কূটনীতিককে চাকরিচ্যুত করেছে। দিল্লীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ। কলকাতার উপ হাইকমিশনের প্রথম সচিব রঞ্জন রায়। উভয়ে ভারত ও আ’লীগের সেতুবন্ধ বলে অভিযোগ। তাদের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে। ভারতের বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ড. ইউনুসের সরাসরি ছাত্র। ঢাকা ‘ইউনুস সেন্টারে’ পাচঁদিন প্রশিক্ষণ নিয়ে গেছে। একারণে বিজেপি সরকারের ধারণা ড. ইউনুস কংগ্রেসপন্থী। ভারতে অবস্থিত আ’লীগ নেতারাও তেমন ধারণা দিয়ে চলেছে। ইউনুস-মোদী সেতুবন্ধ সম্পর্ক যেন না হয়- প্রচেস্টা চলছে।
বিদ্যুৎ ক্রয় নিয়ে আদানী গ্রুপের সঙ্গে আছে অসম চুক্তি। ভারতের আদানী শিল্প গ্রুপ প্রধানমন্ত্রী মোদী‘র আশীর্বাদপৃষ্ট। ফলে চুক্তি বাতিল করলে বিজেপি সরকার বিরাগভাজন হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে চাপে রাখার পত্থা খোজাঁ হচ্ছে। জলকপাট লাগা-খোলার পাশাপাশি নেয়া হচ্ছে নবকৌশল। বাংলাদেশে চাল, পেয়াঁজ, রসুন, ভোজ্যতেল প্রেরণে অচলাবস্থা। প্রতিবছর বাংলাদেশকে ৬০% খ্যাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে হয়। সিংহভাগ সামগ্রীর সরবরাহকারী ভারতের বণিক গ্রুপ। সাপ্লাই-কৌশল খাটিয়ে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি করা সম্ভব।
২০০৮-এ ধরা খেয়েছিলো ফখরুদ্দিন-মঈনদ্দিনের কেয়ারটেকার সরকার। পাচঁ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির চুক্তি করেছিলো। দুই লাখ টন প্রাপ্তির পর রহস্যজনকভাবে সরবরাহ বন্ধ। মারাত্নক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছিলো তৎকালীন সরকার। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী তখন ভূমিকা রাখেন। কারাবন্দি হাসিনার মুক্তি ও আ‘লীগকে ক্ষমতায় বসানো। এই গোপন শর্তে কাঙ্খিত চাল পেয়েছিলো তত্তাবধায়ক সরকার। সেই পুরনো চালটি দিয়ে স্বার্থ আদায়ের প্রস্তুতি চলছে। ফলে ইউনুস সরকারের জন্যে দূর্ভিক্ষের দূরাভাষ কড়া নাড়ছে।