৫ই আগস্টের বিপ্লবে বিদেশী যোগসূত্র

প্রকাশ : ১৪ অগাস্ট ২০২৪, ২১:৩২ , অনলাইন ভার্সন
ইতিহাসে বিরল এবং অসীম সাহসে তরুণ ছাত্রদের নেতৃত্বে ৫ই আগস্ট, ২০২৪ যে গণ-অভ্যুত্থান ঘটে গেল তাতে কি বিদেশি কানেকশন ছিল না? হয়তো আছে কিন্তু প্রমাণ করা কঠিন। পতিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী অবশ্য আমেরিকার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। কিন্তু তিনি যেভাবে বলেছেন, ব্যাপারটি সেভাবে ঘটেনি। সেন্টমার্টিন দ্বীপ এবং বঙ্গোপসাগর দিলেই উনি ক্ষমতায় থাকতে পারতেন। প্রথমত, একটি দেশে থেকে অন্য একটি দেশ কিছু চাইতে গেলে খুব গভীর সম্পর্ক থাকতে হয়।
যেমন ভারত আমাদের পোর্টগুলো ব্যবহার করছে বা ট্রানজিট নিয়েছে এক গভীর সম্পর্ক থেকে। শেখ হাসিনার সাথে আমেরিকার তেমন কোনো  সম্পর্কই নেই ঘাঁটি চাওয়া তো দূরের কথা। দ্বিতীয়ত, সেন্টমার্টিন দ্বীপ আকারে এত ছোট সেখানে কোনো ঘাঁটি স্থাপনের জন্য উপযুক্ত নয়। তৃতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহুবার স্পষ্ট করে বলেছে তারা কখনই বাংলাদেশের ভূখণ্ড চায়নি। তারপরও মার্কিনিরা কি করেছে বা করেনি, সে কথা ধর্তব্যের মধ্যে না নিয়ে, এ কথা অনস্বীকার্য, তরুণরা শুধু লাঠি হাতে যেভাবে সশস্ত্র মিলিটারি, জধন, বিজিবি, পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং হেলমেট বাহিনীর সাথে  বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে লড়েছে, তাতে বিদেশি সহায়তা মূল্যহীন। তারপরেও বিভিন্ন মিডিয়ায় কিছু কথা বা কূটনৈতিক অঙ্গনে দৃশ্যমান কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করলে একটা ধারণা পাওয়া সম্ভব।
২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে আমেরিকা একটা ভূমিকা রাখতে চেয়েছিল যা সবার জানা। কিন্তু বিশ্বের একমাত্র সুপার পাওয়ার আমেরিকা তৃতীয় বিশ্বের গরিব দেশের একজন স্বৈরাচারের হুমকিতে লেজ গুটিয়ে চলে যাবে, সেটা মনে করার কোন কারণ ছিল না বা তারা বসে থাকেনি। সে সময় ভারতের জাতীয় নির্বাচনের আগে মোদি সরকার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমেরিকা যাতে কিছু না করে সে রকম অনুরোধ ছিল। আমেরিকা ভারতের অনুরোধকে সম্মান করে কোন প্রকার পিউনিটিভ পদক্ষেপ থেকে বিরত থেকেছে, তবে মাঠ গোছানোর কাজে পিছিয়ে ছিল না। ৬ই মে ভারতের নির্বাচন শেষ হওয়ার আগের দিন ৫ই মে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা সফর করে মাঠ দেখে গেলেন। নেটওয়ার্কতে সক্রিয় করে গেলেন। আর তাদের নেটওয়ার্ক এত গভীরভাবে বিস্তৃত যার ধারণা খুব কম লোকেই বোঝে; ছাত্র, শিক্ষক, রাজনৈতিক দল, এনজিওগুলো, এমনকি সরকারের অভ্যন্তরেও তাদের হাত রয়েছে।
 ১৩ই জুলাই ঢাকাস্থ আমেরিকান দূতাবাস থেকে দু’জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হয় যা নিয়ে সরকারের দু’জন মন্ত্রী পলক ও আরাফাত ভীষণ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেয়, যে বিদেশি মিশন থেকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। ১৫ ও ১৬ই জুলাই ছাত্ররা আরো জোড়ালো আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। মার্কিন দূতাবাস তাদের খুব জরুরি নয় এমন কর্মচারীদের ছুটি নিয়ে যেতে বলেন এবং পশ্চিমের অনেক দূতাবাসও  আমেরিকারকে অনুসরণ করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাসান মাহমুদ এই বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হলে বলেন বাংলাদেশের অবস্থা এতটা খারাপ হয়নি যে তাদেরকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। বাস্তবিক অর্থেই সে সময় পরিবেশ এতটা খারাপ ছিল না; কিন্তু আমেরিকা জানত সামনে কি হতে যাচ্ছে, তাই তারা সতর্ক হিসাবে ঐসব ব্যবস্থা নেয়। ১৮, ১৯শে জুলাই বহু ছাত্র হতাহত হয় এবং আন্দোলন বেগবান হলে সরকার সবকিছু বন্ধ করে দেয়। ইতোমধ্যেই নেটওয়ার্কের অন্যান্য এলিমেন্ট যোগদানের ফলে আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, হেলমেট বাহিনী, পুলিশ, জধন, বিজিবি দিয়ে কোন কিছু দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা না পারার প্রেক্ষাপটে, কারফিই ও সামরিক বাহিনী নামানো হয়। এতে আন্দোলনের কিছুটা ভাটা পরলে সামরিক বাহিনীর ভেতরের এলিমেন্টকে সক্রিয় করা হয়। তারা সামরিক হাইকমান্ডকে চাপ দেয় জনগণের উপর গুলি করা হলে সামরিক বাহিনীর প্রভূত ক্ষতি সাধিত হবে। সেনাপ্রধান সব ঊর্ধ্বতন অফিসার ও সাধারণ সৈন্যদের মনোভাব বুঝে জনগণের বিরুদ্ধে না গিয়ে সরকার/ শেখ হাসিনাকে বোঝাবার চেষ্টা করেন গুলি দিয়ে এই আন্দোলন দমানো যাবে না, বরং তাদের ঢাকা চলো কর্মসূচিতে লক্ষ লক্ষ লোকের সামাল দেয়া অসম্ভব হবে। শেখ হাসিনা অনড় থাকলে সেনাপ্রধান তার বোন ও ছেলেকে ব্যবহার করে রাজি করান। ওদিকে ওয়াশিংটন দিল্লিকে জানিয়ে দেয় শেখ হাসিনার দিন শেষ, যা ৭ই জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। আবার এক সাংবাদিক ভারতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনবীর জয় ঘোষালকে প্রশ্ন করেছিল যে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করতে চীন আমেরিকার কি কোনো ভূমিকা ছিল? তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে দিয়ে বললেন আমরা খতিয়ে দেখছি।
২৬শে জুলাই, যখন আন্দোলন তুঙ্গে, তখন, প্রাক্তন আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা, যাকে এক সময়কার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, কাজের মেয়ে মজিনা বলে তাচ্ছিল করেছিল, প্রেসে এসে বললেন নতুন রাজনৈতিক দল আসছে। তার কথার তাৎপর্য খুবই গভীর। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন আওয়ামী লীগ কে সরিয়ে নতুন একটি রাজনৈতিক দল ঘটিত হতে যাচ্ছে। তার মানে ড. ইউনূস রাজনৈতিক দল করতে যাচ্ছেন। ড. ইউনুছ যাই করুক, ড্যান মজিনা জানতেন আমেরিকার পরিকল্পনায় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো হচ্ছে।
প্যারিসের অলিম্পিকে থাকাবস্থায় ড. ইউনূস ভারতীয় প্রভাবশালী পত্রিকা দি হিন্দুকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশের ছাত্রদের রক্ষার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান এবং একটি নতুন নির্বাচন দাবি করেন। যে ড. ইউনূস শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের দুঃশাসনে কখন কোনো কথা বলেননি, তিনি হঠাৎ করে জোড়ালো কণ্ঠে নতুন একটি  নির্বাচন চাওয়ার তাৎপর্য নিশ্চয়ই রয়েছে। তিনি জানতেন ওয়াশিংটন কি করতে যাচ্ছে। 
 বিপ্লব সফল হওয়ার পরপরই সেনাপ্রধান যেসব রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ডাকেন, তাদের জামায়াতের আমির ও হেফাজত মাওলানা মামুনুল হকও ছিলেন। রাজনৈতিক বোদ্ধারা একটু অবাকই হলো যে এই দুই ইসলামী নেতার এক গুরুত্ব কেন। প্রকৃতপক্ষে,  তারা বৃহৎ নেটওয়ার্কের একটি অংশ বলেই ডাকটি পেয়েছিলেন।
আমেরিকার লক্ষ্য ও দূতাবাসের প্রস্তুতি, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সামরিক নেটওয়ার্কের সক্রিয়তা, ভারত জেনেও চুপ থাকা, ড. ইউনূসের গর্জন, এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের তরুণ সমাজের অকুতোভয় সংগ্রাম। এসবে সম্মিলিত প্রয়াসেই খান খান হয়ে যায় শেখ হাসিনার মসনদ।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078