ভারতে দুই নারীকে ধর্ষণ ও বিবস্ত্র করে হাঁটানো : মূল অভিযুক্তের বাড়িতে আগুন

প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৩, ১৩:৩০ , অনলাইন ভার্সন
ভারতের মণিপুরে দুই নারীকে বিবস্ত্র করে হাঁটানো এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভে রাজ্যটি উত্তাল হয়ে পড়েছে। বিক্ষুব্ধ নারীরা এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত একজনের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদি ঘটনার কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেওয়ার পর ২১ জুলাই (শুক্রবার) পর্যন্ত চারজন গ্রেপ্তার হয়েছে। মণিপুর পরিস্থিতির ওপর আলোচনার দাবি নিয়ে শুক্রবার কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের দুই কক্ষেই উত্তাপ ছড়িয়েছে। এতে আগামী সোমবার পর্যন্ত দুই কক্ষের অধিবেশন মুলতবি করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

জানা গেছে, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা দুই মাস আগে ঘটে। তবে সম্প্রতি ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র নিন্দার ঝড় ওঠে। এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় মহিলা কমিশন ঘটনা জেনেও নীরব ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।

মণিপুর রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলের এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা হেমন্ত পান্ডে বলেছেন, ‘স্থানীয় বিক্ষুব্ধ নারীরা গ্রামের প্রধান অভিযুক্তের বাড়ির কিছু অংশ ভাঙচুর করেছেন এবং পুড়িয়ে দিয়েছেন।

এদিকে মণিপুর পরিস্থিতি বিতর্কে উত্তপ্ত ভারতের আইনসভা। উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা ও নিম্নকক্ষ লোকসভায় প্রাত্যহিক কার্যক্রম স্থগিত রেখে শুক্রবার মণিপুর ইস্যুতে আলোচনার দাবি তুলেছিল বিরোধী দলগুলো। বিরোধীরা বলছিল, সংবিধানের ২৬৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আলোচনা হোক। কিন্তু বিজেপির তরফ থেকে বলা হচ্ছিল, ১৭৬ অনুচ্ছেদের আওতায় এখন শুধু সংক্ষিপ্ত আলোচনা হোক। 

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সংবিধানের ১৭৬ অনুচ্ছেদের আওতায় তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর স্বল্পকালীন আলোচনা হয়। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিআইএম এবং অন্য প্রধান বিরোধী দলগুলো হুঁশিয়ারি দিয়েছে, বর্ষা মৌসুমের চলতি অধিবেশনে মণিপুর ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা না হলে আগামী দিনে দুই কক্ষই অচল করে দেওয়া হবে। 

শেষ পর্যন্ত গতকাল বিরোধীদের হট্টগোলের কারণে রাজ্যসভা কয়েক ঘন্টার জন্য ও লোকসভার উভয় কক্ষের অধিবেশন দিনের জন্য মুলতবি করতে বাধ্য হন লোকসভার স্পিকার ও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান। এর আগে বিরোধীরা মণিপুর ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘নীরবতা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং স্লোগান দিতে থাকেন। 

দুই নারীর সম্মানহানির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের কথা উল্লেখ করে কংগ্রেসের আইনপ্রণেতা মানিক চাঁন ঠাকুর বলেন, ‘৮০ দিন পর ৮০ সেকেন্ডের জন্য প্রধানমন্ত্রী মণিপুর নিয়ে কথা বলেছেন। আইনসভার ভেতরে এক সেকেন্ডের জন্যও কথা বলেননি। অধিবেশনে এসে প্রকৃত বিষয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দেওয়া উচিত।’ 

গ্রেপ্তার চারজন : মণিপুরে বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানান, নারীদের সম্মানহানির নিন্দাজনক ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে চারজনকে। সর্বশেষ ৩২ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাঁর নাম হুইরেম হীরাদাস সিং। অভিযোগ দায়ের করার ৭০ দিন পর তাঁকে থৌবল জেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

এর আগে এক সন্দেহভাজন এবং অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয় বুধবার। আরেকজনকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করা হয়। ব্যবস্থা নিতে সরকারের কথিত ধীরগতির বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অনেক ঘটনা একসঙ্গে সংঘটিত হওয়ার কারণে কাংপোকপি জেলার শ্লীলতাহানির বিষয়টি নির্দিষ্ট করতে সময় লাগছিল। তিনি ঘটনাটিকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে বর্ণনা করেন। 
মূল অভিযুক্তের বাড়িতে আগুন

মণিপুরের গণমাধ্যমে বলা হয়, অবমাননার ঘটনার মূল অভিযুক্ত হচ্ছেন হুইরেম হীরাদাস। থৌবল এলাকায় তাঁর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ নারীরা। মণিপুরে নারীদের অধিকার রক্ষাকারী ‘মেইরা পাইবিস’ নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা বৃহস্পতিবার এ কাজ করেন। রাজ্যের নংপক সেকমাই থানার অন্তর্গত বি ফাইনম কুকি গ্রামের ঘটনাস্থলে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে। এতে নারীদের অংশগ্রহণ দেখা গেছে। রাজ্যের অন্যান্য জায়গাসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে। 

ঘটনা জানলেও নীরব ছিল মহিলা কমিশন : ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় মহিলা কমিশন ঘটনা জেনেও নীরব ছিল। কমিশনের চেয়ারপারসন রেখা শর্মা গতকাল নিজেই বিষয়টি স্বীকার করেন। ভারতের একটি সংবাদমাধ্যমের গত ১২ মের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নির্যাতনের ওই ঘটনাট নিয়ে গত ১২ জুন জাতীয় মহিলা কমিশনে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছিল। অভিযোগপত্রের একটি প্রতিলিপিও দেখা যায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সঙ্গে। এতে স্পষ্ট করে বলা হয়, মোট তিনজন নারীকে নিগৃহীত করা হয়েছে এবং দুজনকে নগ্ন করে হাঁটানো হয়েছে। 

রেখা শর্মা গতকাল বলেন, ‘গত তিন মাসে আমরা তিনবার মণিপুর সরকারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোনো জবাব মেলেনি।’ 

মণিপুরে জাতিগত সহিংসতা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১২৫ জন নিহত হয়েছে এবং ৪০ হাজারের বেশি লোক বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে।


ঠিকানা/এম
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078