বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যা-নির্যাতনের প্রতিবাদে প্রবাসে বিক্ষোভ সমাবেশ, র্যালি-কর্মসূচি পালনের আরো খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত এসব প্রতিবাদ সমাবেশে সরকারের ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠছে অনুষ্ঠানস্থল। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে মোনাজাত করা হয় বিভিন্ন র্যালি ও সমাবেশ থেকে।
নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির বিক্ষোভ : কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দেশব্যাপী সহিংসতার প্রেক্ষিতে এবার ‘রাষ্ট্র সংস্কার’ চেয়ে নিউইয়র্কে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে বিএনপি। নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির আয়োজনে গত ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার সিটি প্লাজায় সংগঠনের সভাপতি অলিউল্লাহ আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাঈদুর রহমান সাঈদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘পদত্যাগ’ দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন ফারুক বলেন, ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় বেগম জিয়াকে কারাগারে রেখে শেখ হাসিনা বাকশালি স্টাইলে সারা জীবন ক্ষমতায় থাকতে চান। কিন্তু জনতা জেগেছে। শেখ হাসিনা আর এই গণতন্ত্রের নামে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য গিয়াস আহমেদ বলেন, এই প্রবাস থেকে নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করে এরশাদকে হটানোর পথ সুগম করেছিলাম। ১/১১-তে গঠিত সেনাসমর্থিত কেয়ারটেকার সরকার হটাতেও প্রবাসীরা দুর্বার আন্দোলনে শরিক হয়েছিলাম। সেই চেতনায় বর্তমানের আন্দোলনকে শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য গোলাম ফারুক শাহীন বলেন, শেখ হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে অন্তত একমাস রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ রাখতে হবে। আর এটি হচ্ছে সময়ের দাবি।
সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা, সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, সৈয়দা মাহমুদা শিরিন, স্টেট বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জসিমউদ্দিন, যুগ্ম-সম্পাদক আরিফুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক রইচউদ্দিন, নিউইয়র্ক মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবাদ চৌধুরী, বরিশাল বিভাগ জাতীয়তাবাদী ফোরামের সভাপতি জাফর তালুকদার, স্টেট বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক আনিসুর রহমান, হুমায়ূন কবীর, দেওয়ান কাউসার, আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, আশরাফ হোসেন, বদরুল হক আজাদ, এআর মাহবুবুর রহমান, বাচ্চু মিয়া, হাফিজুর রহমান পিন্টু, জিনাত রেহানা নীরা, মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান ও ওয়াহেদ আলী মণ্ডল প্রমুখ।
জ্যাকসন হাইটসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ : প্রদীপ প্রজ্জলন
কোটা সংস্কার আন্দোলনে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের দাবীর সমর্থনে এবং নিহতের প্রতিবাদে নিউইয়র্কে ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন নিউইয়র্কের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত ২৭ জুলাই শনিবার বিকেলে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা মোমবাতি প্রজ্বলন ছাড়াও নিহতদের প্রতি সমবেদনা ও দায়ীদের বিচার ছাড়াও কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি কর্মসূচি পালন করেন।
সমাবেশের শুরুতে গীতা পাঠ ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে নিহত ছাত্রছাত্রীদের জন্য দোয়া করা হয়। পরে কোটা আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের নাম বলে ধরে উল্লেখ এবং তাদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। সমাবেশকারীরা পুলিশের গুলি আর সহিসংসতায় নিহতদের ছবিও প্রদর্শণ করে এবং শ্রদ্ধা জানায়। এছাড়াও সমাবেশকারীরা সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে, কবিতায় আর গানে গানে তাদের প্রতিবাদ জানায়। বক্তারা বলেন, দেশে শিক্ষার্থীরা আজ নিরপদ নয়, তারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। অধিকার আদায় করতে গিয়ে তারা মারা যাচ্ছে। আজ কেনো আমাদেরকে প্রতিবাদ করতে হচ্ছে। এসব সময়ের দাবি। সমাবেশে যোগদানকারী অনেকেই আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং কান্না করেন।
সমাবেশে থেকে বর্তমানে বাংলাদেশের চলমান সহিংসতা বন্ধ করার জন্য শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং অবিলম্বে সকল হত্যাকাণ্ডের বিচারও দাবি করেন। আহ্বায়ক নওশীন খানের নেতৃত্বে সমাবেশে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর সাথে অভিভাবকগণ যোগ দেন। এসময় তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে তাদের দাবির সমর্থনে ‘লাগো শহীদের রক্তে কেনা দেশটা কারো বাপের না, সলিডারিটি উইথ বাংলাদেশী স্টুডেন্টস, শেখ হাসিনা কিলার, দেশ বিকানো স্বৈরাচার এই মূহুর্তে বাংলা ছাড়, তুমি কে আমি কে বিকল্প বিকল্প’ প্রভৃতি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শণ করে এবং ‘ইউ ওয়ান্ট জাস্টিস’ গগণ বিদারী শ্লোগানে জ্যাকসন হাইটস এলাকা প্রকম্পিত করে তোলে।
বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বিএপিপি, নিউইয়র্ক সিটি ফর স্টুডেন্টস অব বাংলাদেশ, এনওয়াইইউ বিএসএ, বিএসএ সিসিএনওয়াই, আরবিএমসি, চীল্ডরেন অব ১৯৭১ সহ ১৭টি সংগঠনের ব্যানারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা গেছে।
জেএসডি, যুক্তরাষ্ট্র : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ছাত্র হত্যার দায়ে সরকারের পদত্যাগ করতে হবে।
শান্তিপূর্ণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে দমন করার জন্য পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের তীর্থভূমিতে প্রতিদিন ছাত্র হত্যা করায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আজ জাতীয় রাজনীতির প্রধান অ্যাজেন্ডায় পরিণত হয়ে পড়েছে। শক্তি প্রয়োগ এবং ছাত্রহত্যা করে জাগরণকে স্তব্ধ করা যাবে না। বিরাজমান বৈরী পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের পদত্যাগের কোন বিকল্প নেই।
ছাত্র জাগরণে আন্দোলনে যারা শহীদ হচ্ছেন, তাদের জাতীয় বীর ঘোষণা করে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্ম এবং বৈষম্যহীন জাতি বিনির্মাণের কারিগরদের ‘রাজাকার’ আখ্যা দেয়া বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এবং প্রকাশ্যে জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে।
তিনি নিরস্ত্র ছাত্রদের হত্যার দায় নির্ধারণে জাতিসংঘের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থসমূহের প্রতিনিধি সমন্বয়ে ‘তদন্ত কমিটি’ গঠন করার দাবি জানান।
গত ২০ জুলাই নিউইয়র্কের জেএসডি আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন। সন্ধ্যা ৭টায় জ্যাকসন হাইটসে ডাইভারসিটি প্লাজার সামনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেএসডি’র আহ্বায়ক মোহাম্মদ এনামুল হায়দার।
যুগ্ম-আহ্বায়ক সামছুদ্দিন আহমেদ শামীমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সারোয়ার হোসেন, প্রবাসী কল্যাণ সম্পাদক এম এ মালেক, যুক্তরাষ্ট্র জেএসডি’র যুগ্ম-আহ্বায়ক এম জাকির হোসেন স্বপন, তছলিম উদ্দিন খান, মোহাম্মদ রফিকুল উল্লাহ, সদস্য গাজী আজম বাদল, মোহাম্মদ বাহার, ফরিদ উদ্দিন রতন, সামওয়ান বিন রব (রাব্বুল) প্রমুখ।
ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডেভলোপমেন্ট ইউএসএ : বাংলাদেশে চলমান ছাত্র আন্দোলনে নিহত ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষের মৃত্যু ও রাষ্ট্রিয় সম্পদ নষ্টের প্রতিবাদে ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডেভলোপমেন্ট ইউএসএ গত ২১ জুলাই বিকাল ৭ টায় জ্যাকসন হাইটসে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। উক্ত সভায় অর্গানাইজেশনের কর্মকর্তা ছাড়াও সাধারণ মানুষ যোগদান করেন ও তাদের ক্ষোভ ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।
বক্তব্য রাখেন আমেরিকান একজন রিটায়ার্ড জাজ থমাস, মুকিত চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা মির এম রহমান, এলিট প্রিন্টিংয়ের কর্ণধার রাশেদ উদ্দিন হীরা, ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটসের ভাইস প্রেসিডেন্ট শামসুন নাহার ও ডা. নার্গিস রহমান, স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার অ্যাম্বাসেডর সাবরিনা শেখ, স্টুডেন্ট অ্যাক্টিভিস্ট ফারহান।
সংগঠনের সবার পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট শাহ শহিদুল হক বলেন, আমরা চাই যারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রত্যেক নিহত পরিবারকে আর্থিক অনুদান প্রদান করতে হবে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও জনগণের সম্পদ যারা বিনষ্ট করেছে, তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান বলেন, আমি অত্যন্ত উৎকণ্ঠার সাথে বিষয়টি দেখছি, দেশ বিভক্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছে- যা হবে অত্যন্ত মারাত্মক। এই বিভক্তির অতিসত্ত্বর সমাধান জরুরি।
বাংলাদেশি প্রবাসী নাগরিক সমাজ ইউএসএ : গত ২৫ জুলাই বাংলাদেশি প্রবাসী নাগরিক সমাজ ইউএসএ’র পক্ষ থেকে জাতিসংঘের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক অ্যাকটিং প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহিম হাওলাদার। উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম-আহ্বায়ক নূর আমিন এবং সংগঠনের সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন শিফন।
বক্তব্য রাখেন, সংগঠক আলী ইমাম শিকদার, মঈন উদ্দিন নাসের, মিয়া আলীম, নাজমুল আলম পাটোয়ারী, মোস্তফা করিম ফরিদ, নূর আমীন, মোহাম্মদ আলী, আমিন মেহেদী বাবু, ইফতেখার জামান রতন, জামাল উদ্দিন, নজরুল ইসলাম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সর্বত্র চলছে ব্যাপক গণহত্যা। স্বজনদের কান্নায় দেশের আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। বর্তমান এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি করেন তারা।
সভায় একজন বক্তা বলেন, বাংলাদেশের নারায়নগঞ্জের কোন একটি বাসার ছাদে একটি ছোট ছেলেকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে।
বক্তারা বলেন, ঢাকার বাড্ডায় একজন মহিলা এই জুলুম নিপীড়ন, অত্যাচার ও গণহত্যার বিরুদ্ধে পুলিশের সাথে প্রতিবাদ করলে পুলিশ তার মেয়ে এবং মেয়ের জামাইকে নিয়ে যায়। তাদের কোন খোঁজ এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
বক্তারা অভিযোগ করেন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় হেলিকপ্টার থেকে মিছিলের ওপর গুলি করে নির্বিচারে নিরস্ত্র ছাত্র-ছাত্রীদের হত্যা করে শত শত লাশ হেলিকপ্টারে করে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।
বিভিন্ন বক্তা বলেন, ঢাকার হাতিরঝিলে প্রতিবাদী ছাত্র-ছাত্রীদের লাশ পাওয়া গেছে।
বক্তারা ইউএন’কে লক্ষ্য করে বলেন, আপনাদের দ্বায়িত্ব পৃথিবীর দেশে দেশে সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আমরা দেখলাম আপনাদের লোগো সম্পৃক্ত গাড়ি এবং হেলিকপ্টার এই গণহত্যায় অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। এই ঘটনা আমরা উদ্বিগ্ন এবং মর্মাহত। আমরা এই ঘটনার পরিপূর্ণ তদন্ত এবং বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
বক্তারা আরো বলেন, এই হত্যাকাণ্ড সুপরিকল্পিত। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে পাশর্^বর্তী রাষ্ট্র ভারত জড়িত বলে তারা সভা থেকে অভিযোগ করেন।
বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের সংগ্রামকে পরিপূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বক্তারা বলেন, এই আন্দোলন যদি পরাজিত হয়, তাহলে বাংলাদেশ পরাজিত হবে।
বক্তারা আন্দোলন করতে গিয়ে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং তাদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানান।
ফ্লোরিডায় প্রতিবাদ সমাবেশ : ফ্লোরিডা থেকে দিল এ রহমান চাঁপা জানান, গত ২৭ জুলাই বিকেল সাড়ে ছয়টায় গেইন্সভিলের ডাউন টাউনে বো ডিডলি কমিউনিটি প্লাজায় ইউনিভার্সিটি অ্যাভিনিউয়ের পাশে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটি, ওকালার বাংলাদেশি কমিউনিটি, ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের এই প্রতিবাদ সমাবেশে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সবার হাতে ছিল নানারকম পোস্টার/প্লে কার্ড এবং বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত ব্যানার। বক্তারা নানা বিষয়ে তাদের বক্তব্য রেখেছেন। সবার বক্তব্যই ছিল সুন্দর এবং প্রাসঙ্গিক। অনুষ্ঠানটি প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে চলে।
লন্ডনে বিশাল ছাত্র গণজমায়েত : লন্ডন থেকে নজরুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে লন্ডনের ট্রফালগার স্কোয়ারে এক বিশাল ছাত্র গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক মানুষ জাতীয় পতাকা নিয়ে এ গণজমায়েতে অংশ নেন। সমাবেশে দেশে হত্যা, গুম, নির্যাতন ও গণগ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে পার্লামেন্টের এমপি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে এসব হত্যা ও নির্যাতন বন্ধের জন্য বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বক্তারা বিগত এক সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃংখলা বাহিনীর নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র বর্ণনা করে বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা সরকারকে ব্যর্থ আখ্যায়িত করে পদত্যাগ দাবি করেন। ছাত্র হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিও জানানো হয় সমাবেশ থেকে।
প্রতিবাদকারীরা বিভিন্ন সরকার বিরোধী শ্লোগানে মুখরিত করে তোলে লন্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়ার। লন্ডন ছাড়াও যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম, লেস্টার কার্ডিফসহ বিভিন্ন শহরে বসবাসরত বাংলাদেশিরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশে চলমান ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ছাত্রসহ জনজীবনে নিরাপত্তার জোর দাবি জানান।
নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির বিক্ষোভ : কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দেশব্যাপী সহিংসতার প্রেক্ষিতে এবার ‘রাষ্ট্র সংস্কার’ চেয়ে নিউইয়র্কে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে বিএনপি। নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির আয়োজনে গত ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার সিটি প্লাজায় সংগঠনের সভাপতি অলিউল্লাহ আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাঈদুর রহমান সাঈদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘পদত্যাগ’ দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন ফারুক বলেন, ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় বেগম জিয়াকে কারাগারে রেখে শেখ হাসিনা বাকশালি স্টাইলে সারা জীবন ক্ষমতায় থাকতে চান। কিন্তু জনতা জেগেছে। শেখ হাসিনা আর এই গণতন্ত্রের নামে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য গিয়াস আহমেদ বলেন, এই প্রবাস থেকে নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করে এরশাদকে হটানোর পথ সুগম করেছিলাম। ১/১১-তে গঠিত সেনাসমর্থিত কেয়ারটেকার সরকার হটাতেও প্রবাসীরা দুর্বার আন্দোলনে শরিক হয়েছিলাম। সেই চেতনায় বর্তমানের আন্দোলনকে শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য গোলাম ফারুক শাহীন বলেন, শেখ হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে অন্তত একমাস রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ রাখতে হবে। আর এটি হচ্ছে সময়ের দাবি।
সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা, সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, সৈয়দা মাহমুদা শিরিন, স্টেট বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জসিমউদ্দিন, যুগ্ম-সম্পাদক আরিফুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক রইচউদ্দিন, নিউইয়র্ক মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবাদ চৌধুরী, বরিশাল বিভাগ জাতীয়তাবাদী ফোরামের সভাপতি জাফর তালুকদার, স্টেট বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক আনিসুর রহমান, হুমায়ূন কবীর, দেওয়ান কাউসার, আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, আশরাফ হোসেন, বদরুল হক আজাদ, এআর মাহবুবুর রহমান, বাচ্চু মিয়া, হাফিজুর রহমান পিন্টু, জিনাত রেহানা নীরা, মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান ও ওয়াহেদ আলী মণ্ডল প্রমুখ।
জ্যাকসন হাইটসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ : প্রদীপ প্রজ্জলন
কোটা সংস্কার আন্দোলনে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের দাবীর সমর্থনে এবং নিহতের প্রতিবাদে নিউইয়র্কে ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন নিউইয়র্কের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত ২৭ জুলাই শনিবার বিকেলে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা মোমবাতি প্রজ্বলন ছাড়াও নিহতদের প্রতি সমবেদনা ও দায়ীদের বিচার ছাড়াও কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি কর্মসূচি পালন করেন।
সমাবেশের শুরুতে গীতা পাঠ ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে নিহত ছাত্রছাত্রীদের জন্য দোয়া করা হয়। পরে কোটা আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের নাম বলে ধরে উল্লেখ এবং তাদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। সমাবেশকারীরা পুলিশের গুলি আর সহিসংসতায় নিহতদের ছবিও প্রদর্শণ করে এবং শ্রদ্ধা জানায়। এছাড়াও সমাবেশকারীরা সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে, কবিতায় আর গানে গানে তাদের প্রতিবাদ জানায়। বক্তারা বলেন, দেশে শিক্ষার্থীরা আজ নিরপদ নয়, তারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। অধিকার আদায় করতে গিয়ে তারা মারা যাচ্ছে। আজ কেনো আমাদেরকে প্রতিবাদ করতে হচ্ছে। এসব সময়ের দাবি। সমাবেশে যোগদানকারী অনেকেই আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং কান্না করেন।
সমাবেশে থেকে বর্তমানে বাংলাদেশের চলমান সহিংসতা বন্ধ করার জন্য শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং অবিলম্বে সকল হত্যাকাণ্ডের বিচারও দাবি করেন। আহ্বায়ক নওশীন খানের নেতৃত্বে সমাবেশে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর সাথে অভিভাবকগণ যোগ দেন। এসময় তারা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে তাদের দাবির সমর্থনে ‘লাগো শহীদের রক্তে কেনা দেশটা কারো বাপের না, সলিডারিটি উইথ বাংলাদেশী স্টুডেন্টস, শেখ হাসিনা কিলার, দেশ বিকানো স্বৈরাচার এই মূহুর্তে বাংলা ছাড়, তুমি কে আমি কে বিকল্প বিকল্প’ প্রভৃতি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শণ করে এবং ‘ইউ ওয়ান্ট জাস্টিস’ গগণ বিদারী শ্লোগানে জ্যাকসন হাইটস এলাকা প্রকম্পিত করে তোলে।
বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বিএপিপি, নিউইয়র্ক সিটি ফর স্টুডেন্টস অব বাংলাদেশ, এনওয়াইইউ বিএসএ, বিএসএ সিসিএনওয়াই, আরবিএমসি, চীল্ডরেন অব ১৯৭১ সহ ১৭টি সংগঠনের ব্যানারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা গেছে।
জেএসডি, যুক্তরাষ্ট্র : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ছাত্র হত্যার দায়ে সরকারের পদত্যাগ করতে হবে।
শান্তিপূর্ণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে দমন করার জন্য পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের তীর্থভূমিতে প্রতিদিন ছাত্র হত্যা করায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আজ জাতীয় রাজনীতির প্রধান অ্যাজেন্ডায় পরিণত হয়ে পড়েছে। শক্তি প্রয়োগ এবং ছাত্রহত্যা করে জাগরণকে স্তব্ধ করা যাবে না। বিরাজমান বৈরী পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের পদত্যাগের কোন বিকল্প নেই।
ছাত্র জাগরণে আন্দোলনে যারা শহীদ হচ্ছেন, তাদের জাতীয় বীর ঘোষণা করে তিনি বলেন, নতুন প্রজন্ম এবং বৈষম্যহীন জাতি বিনির্মাণের কারিগরদের ‘রাজাকার’ আখ্যা দেয়া বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এবং প্রকাশ্যে জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে।
তিনি নিরস্ত্র ছাত্রদের হত্যার দায় নির্ধারণে জাতিসংঘের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থসমূহের প্রতিনিধি সমন্বয়ে ‘তদন্ত কমিটি’ গঠন করার দাবি জানান।
গত ২০ জুলাই নিউইয়র্কের জেএসডি আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন। সন্ধ্যা ৭টায় জ্যাকসন হাইটসে ডাইভারসিটি প্লাজার সামনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেএসডি’র আহ্বায়ক মোহাম্মদ এনামুল হায়দার।
যুগ্ম-আহ্বায়ক সামছুদ্দিন আহমেদ শামীমের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সারোয়ার হোসেন, প্রবাসী কল্যাণ সম্পাদক এম এ মালেক, যুক্তরাষ্ট্র জেএসডি’র যুগ্ম-আহ্বায়ক এম জাকির হোসেন স্বপন, তছলিম উদ্দিন খান, মোহাম্মদ রফিকুল উল্লাহ, সদস্য গাজী আজম বাদল, মোহাম্মদ বাহার, ফরিদ উদ্দিন রতন, সামওয়ান বিন রব (রাব্বুল) প্রমুখ।
ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডেভলোপমেন্ট ইউএসএ : বাংলাদেশে চলমান ছাত্র আন্দোলনে নিহত ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষের মৃত্যু ও রাষ্ট্রিয় সম্পদ নষ্টের প্রতিবাদে ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডেভলোপমেন্ট ইউএসএ গত ২১ জুলাই বিকাল ৭ টায় জ্যাকসন হাইটসে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। উক্ত সভায় অর্গানাইজেশনের কর্মকর্তা ছাড়াও সাধারণ মানুষ যোগদান করেন ও তাদের ক্ষোভ ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।
বক্তব্য রাখেন আমেরিকান একজন রিটায়ার্ড জাজ থমাস, মুকিত চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা মির এম রহমান, এলিট প্রিন্টিংয়ের কর্ণধার রাশেদ উদ্দিন হীরা, ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটসের ভাইস প্রেসিডেন্ট শামসুন নাহার ও ডা. নার্গিস রহমান, স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার অ্যাম্বাসেডর সাবরিনা শেখ, স্টুডেন্ট অ্যাক্টিভিস্ট ফারহান।
সংগঠনের সবার পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট শাহ শহিদুল হক বলেন, আমরা চাই যারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রত্যেক নিহত পরিবারকে আর্থিক অনুদান প্রদান করতে হবে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও জনগণের সম্পদ যারা বিনষ্ট করেছে, তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান বলেন, আমি অত্যন্ত উৎকণ্ঠার সাথে বিষয়টি দেখছি, দেশ বিভক্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছে- যা হবে অত্যন্ত মারাত্মক। এই বিভক্তির অতিসত্ত্বর সমাধান জরুরি।
বাংলাদেশি প্রবাসী নাগরিক সমাজ ইউএসএ : গত ২৫ জুলাই বাংলাদেশি প্রবাসী নাগরিক সমাজ ইউএসএ’র পক্ষ থেকে জাতিসংঘের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক অ্যাকটিং প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহিম হাওলাদার। উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম-আহ্বায়ক নূর আমিন এবং সংগঠনের সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন শিফন।
বক্তব্য রাখেন, সংগঠক আলী ইমাম শিকদার, মঈন উদ্দিন নাসের, মিয়া আলীম, নাজমুল আলম পাটোয়ারী, মোস্তফা করিম ফরিদ, নূর আমীন, মোহাম্মদ আলী, আমিন মেহেদী বাবু, ইফতেখার জামান রতন, জামাল উদ্দিন, নজরুল ইসলাম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সর্বত্র চলছে ব্যাপক গণহত্যা। স্বজনদের কান্নায় দেশের আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। বর্তমান এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি করেন তারা।
সভায় একজন বক্তা বলেন, বাংলাদেশের নারায়নগঞ্জের কোন একটি বাসার ছাদে একটি ছোট ছেলেকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে।
বক্তারা বলেন, ঢাকার বাড্ডায় একজন মহিলা এই জুলুম নিপীড়ন, অত্যাচার ও গণহত্যার বিরুদ্ধে পুলিশের সাথে প্রতিবাদ করলে পুলিশ তার মেয়ে এবং মেয়ের জামাইকে নিয়ে যায়। তাদের কোন খোঁজ এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
বক্তারা অভিযোগ করেন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় হেলিকপ্টার থেকে মিছিলের ওপর গুলি করে নির্বিচারে নিরস্ত্র ছাত্র-ছাত্রীদের হত্যা করে শত শত লাশ হেলিকপ্টারে করে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।
বিভিন্ন বক্তা বলেন, ঢাকার হাতিরঝিলে প্রতিবাদী ছাত্র-ছাত্রীদের লাশ পাওয়া গেছে।
বক্তারা ইউএন’কে লক্ষ্য করে বলেন, আপনাদের দ্বায়িত্ব পৃথিবীর দেশে দেশে সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আমরা দেখলাম আপনাদের লোগো সম্পৃক্ত গাড়ি এবং হেলিকপ্টার এই গণহত্যায় অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। এই ঘটনা আমরা উদ্বিগ্ন এবং মর্মাহত। আমরা এই ঘটনার পরিপূর্ণ তদন্ত এবং বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
বক্তারা আরো বলেন, এই হত্যাকাণ্ড সুপরিকল্পিত। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে পাশর্^বর্তী রাষ্ট্র ভারত জড়িত বলে তারা সভা থেকে অভিযোগ করেন।
বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের সংগ্রামকে পরিপূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বক্তারা বলেন, এই আন্দোলন যদি পরাজিত হয়, তাহলে বাংলাদেশ পরাজিত হবে।
বক্তারা আন্দোলন করতে গিয়ে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং তাদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানান।
ফ্লোরিডায় প্রতিবাদ সমাবেশ : ফ্লোরিডা থেকে দিল এ রহমান চাঁপা জানান, গত ২৭ জুলাই বিকেল সাড়ে ছয়টায় গেইন্সভিলের ডাউন টাউনে বো ডিডলি কমিউনিটি প্লাজায় ইউনিভার্সিটি অ্যাভিনিউয়ের পাশে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটি, ওকালার বাংলাদেশি কমিউনিটি, ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের এই প্রতিবাদ সমাবেশে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সবার হাতে ছিল নানারকম পোস্টার/প্লে কার্ড এবং বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত ব্যানার। বক্তারা নানা বিষয়ে তাদের বক্তব্য রেখেছেন। সবার বক্তব্যই ছিল সুন্দর এবং প্রাসঙ্গিক। অনুষ্ঠানটি প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে চলে।
লন্ডনে বিশাল ছাত্র গণজমায়েত : লন্ডন থেকে নজরুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে লন্ডনের ট্রফালগার স্কোয়ারে এক বিশাল ছাত্র গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক মানুষ জাতীয় পতাকা নিয়ে এ গণজমায়েতে অংশ নেন। সমাবেশে দেশে হত্যা, গুম, নির্যাতন ও গণগ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে পার্লামেন্টের এমপি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে এসব হত্যা ও নির্যাতন বন্ধের জন্য বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বক্তারা বিগত এক সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃংখলা বাহিনীর নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র বর্ণনা করে বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা সরকারকে ব্যর্থ আখ্যায়িত করে পদত্যাগ দাবি করেন। ছাত্র হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিও জানানো হয় সমাবেশ থেকে।
প্রতিবাদকারীরা বিভিন্ন সরকার বিরোধী শ্লোগানে মুখরিত করে তোলে লন্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়ার। লন্ডন ছাড়াও যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম, লেস্টার কার্ডিফসহ বিভিন্ন শহরে বসবাসরত বাংলাদেশিরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশে চলমান ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ছাত্রসহ জনজীবনে নিরাপত্তার জোর দাবি জানান।