আন্তর্জাতিক চাপে সরকার

প্রকাশ : ০১ অগাস্ট ২০২৪, ০৯:৪১ , অনলাইন ভার্সন
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে যে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা সামাল দিতে এখনো হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এই আন্দোলন সামাল দিতে গিয়ে সরকার যেসব কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, তার সমালোচনা করছে আন্তর্জাতিক মহল। বিষয়টি নিয়ে সরকারের ওপর নানামুখী চাপ আসতে শুরু করেছে। সহিংসতায় সপ্তাহের কম সময়ে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু ও কয়েক হাজার মানুষ আহত হওয়া এবং বর্তমানে দেশব্যাপী যে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে, তার ওপর নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ। এ ছাড়া জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের নজরদারিতে আছে পুরো বিষয়টি। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
এখনই সতর্ক না হলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ভবিষ্যতে চাপ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশের কয়েকজন কূটনীতিক। তারা বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, নিরস্ত্র মানুষকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি, দেশের ভেতরকার অভিযানে জাতিসংঘের লোগোযুক্ত যানবাহন ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নজরদারি বাড়িয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ভারত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জার্মানি, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ অর্ধশতাধিক দেশে বাংলাদেশিরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে বিক্ষোভ করেছেন। এসব বিক্ষোভ কারা করেছেন, সে বিষয়ে তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে চিঠি দিতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশে সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পৃথক দুটি প্রস্তাব এনেছেন ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই সদস্য রুপা হক ও আপসানা বেগম। বাংলাদেশে যা চলছে, তা নিয়ে সম্প্রতি রোম, প্যারিস, ম্যানচেস্টার ও লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারে বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করে রুপা হক গত ২৫ জুলাই পার্লামেন্টে বলেন, এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্য সরকারের ভূমিকা দরকার। প্রাণহানির ঘটনায় আপসানা বেগম ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আলোচনার জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এতে প্রভাবশালী স্বতন্ত্র এমপি জেরেমি করবিনসহ ২২ জন ব্রিটিশ এমপি স্বাক্ষর করেছেন। ওই প্রস্তাবের জবাবে পার্লামেন্টে লেবার সরকারের মুখপাত্র লুসি পাওয়েল এমপি জানান, চলমান সহিংসতার বিষয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। প্রাণহানি অগ্রহণযোগ্য। এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ হালনাগাদ তথ্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উপস্থাপনের নিশ্চয়তা দেন তিনি। এদিকে এবারের আন্দোলনের সময় সহিংসতায় কতজন নিহত হয়েছেন, কত লোক আহত হয়েছেন, আর কতজনকে আটক করা হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার প্রধান ফলকার তুর্ক। তিনি বিক্ষোভ সামাল দেওয়ার সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক নীতি ও মান মেনে চলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বিক্ষোভকারীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরাসরি গুলি করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক গত ২৫ জুলাই নিউইয়র্কে বলেন, বাংলাদেশে যা ঘটছে, যে গণগ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তা তারা দেখছেন। সব সহিংস কর্মকাণ্ডের তদন্ত স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে করার তাগিদ দেন তিনি।
জার্মান সরকার এক বিবৃতিতে সহিংসতার ঘটনাগুলোর তদন্ত এবং তাতে জড়িত এমন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সঠিক আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের তাগিদ দেয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ যে মূল নীতিগুলোর ওপর (১৯৭১ সালে) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা কার্যকর করা এবং সাম্প্রতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ঊর্ধ্বতন পরিচালক ডিপ্রোজ মুচেনা বিবৃতিতে বলেছেন, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা এবং সক্রিয় পর্যবেক্ষণের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিক্ষোভ দমনে বেআইনিভাবে প্রাণঘাতী ও কম প্রাণঘাতী- উভয় ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিষ্ঠার পর সংগঠিত সবচেয়ে বড়, ব্যাপক ও জনপ্রিয় আন্দোলন হিসেবে অভিহিত করেছে ব্রাসেলসভিত্তিক ক্রাইসিস গ্রুপ। সংস্থাটির পরিচালক পিয়েরে প্রকাশ ২৫ জুলাই এক বিবৃতিতে বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসন, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন ধুঁকছে, তার ভেতর সরকার নিজেই এই আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী দলসহ সবার সঙ্গে সংলাপের পরিবেশ তৈরির পরামর্শ দেন তিনি। পিয়েরে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ভারতকেও ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। ক্রাইসিস গ্রুপ একই সঙ্গে সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
সার্বিক দিক নিয়ে সাবেক কূটনীতিক ও বিশ্লেষক হুমায়ুন কবির বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে অভিযোগগুলো তুলছে, তার সপক্ষে বিভিন্ন প্রমাণ এরই মধ্যে তারা সংগ্রহ করেছে। সরকারের উচিত সবকিছু ঢালাওভাবে অস্বীকার করার অবস্থান থেকে সরে আসা। কাজে বস্তুনিষ্ঠ হওয়া। কোথাও ঘাটতি থাকলে স্বীকার করা।


 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041