শিক্ষা-শান্তি-প্রগতি এই তিন মূলমন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। কিন্তু বর্তমানে আমরা কী দেখছিÑ প্রকৃত শিক্ষা থেকে বহু দূরে সরে যাচ্ছে প্রাচীনতম বৃহৎ সংগঠনটি। বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে সম্মানজনক অবস্থায় নিতে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা চতুর্থবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেলেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ গত ৭৫ বছরে কতটা নেতৃত্বগুণে সমৃদ্ধ হয়েছে সেই প্রশ্ন এখন উঠতে শুরু করেছে। উত্তর খুঁজে দেখা যাচ্ছে- গত ১৫ বছরে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে স্খলন ঘটেছে। আমরা দেখছি- ছাত্রলীগের মধ্যে আদর্শিক নেতৃত্বে বলিয়ান হওয়ার চেয়ে দলবাজি, টেন্ডারবাজি, নারী কেলেঙ্কারি, মারামারি, নতুন ছাত্রদের দলে টানতে ব্যর্থতা ও ছাত্রকল্যাণে ঈর্ষণীয় ভূমিকা রাখতে পারছে না।
অতি সম্প্রতি ছাত্রদের সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছোট্ট একটা ইস্যুকে ‘তিল থেকে তাল’ বানানোর পেছনে ছাত্রলীগের চরম দুর্বল নেতৃত্ব লক্ষ্য করেছি আমরা। ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদের অধিকারের সঙ্গে পূর্ণ সম্মতি জানিয়ে যৌক্তিক দাবিকে শক্তিশালী করে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে পারত। বরং ছাত্রলীগের বল প্রয়োগ করে সাধারণ ছাত্রদের নিবৃত্ত করার ভুল চেষ্টায় আন্দোলন করে মাঠ গরম করা হয়েছে। ছাত্রলীগের ব্যানারে অনেক অছাত্র সেই আন্দোলনে জড়িয়ে নিরীহ শিক্ষার্থীদের শারীরিকভাবে আঘাত করেছে, রক্তাক্ত করেছে স্বাধীন বাংলার পথ-ঘাট। কোনো মুক্তচিন্তার মানুষ বিশ্বাস করতে না পারলেও সেই চিত্রই দৃশ্যমান।
অথচ ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে সততা, নিষ্ঠা, পরিশ্রমী ও পরোপকারী মনোভাব, মানবদরদী-সহমর্মিতা, নির্লোভ-নিরহংকার ও সৎ সাহস থাকবে। সেই গুণাবলিতে গড়ে উঠা ছাত্রলীগ কর্মীরা সাধারণ ছাত্রদের পাশে দাঁড়ালে দেশ ও দেশের বাইরের অপশক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধশক্তি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক কোটা সংস্কারের দাবিকে ছিনতাই করতে পারত না, বহু ছাত্রের প্রাণ বেঁচে যেত। সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনে ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। ছাত্রলীগের সঙ্গে গোটা ছাত্র সমাজের দেয়াল সৃষ্টি হতো না।
বর্তমান ছাত্রলীগের দুর্বল নেতৃত্বে সাধারণ ছাত্রদের মনের ক্ষত দূর করতে হয়তো আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। তবে, সময় শেষ হয়ে যায়নি। বর্তমান ছাত্রলীগকে মনে রাখতে হবে স্বাধীন বাংলাদেশের মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এই ছাত্র সংগঠন। এই ছাত্র সংগঠনকে ছাত্রসমাজের প্রতিপক্ষ বানানো কাম্য হতে পারে না, হতে দেয়া যায় না। কোটা সংস্কার নিয়ে সাধারণ ছাত্ররা বিপৎগামী হলে তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। নিজেদের লোভ-লালসা, আত্ম অহংকার ভুলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ছাত্রলীগ কর্মীদের মনে রাখতে হবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্বদ্যালয়গুলোতে অদম্য মেধা নিয়ে ভর্তি হয়ে কোনো বঞ্চনা মেনে নেয়নি। ইতিহাস থেকে সেই তথ্য আমরা পাই। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন আমাদের শিক্ষার্থীদের হাতেই অর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তীতে আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। ছাত্রদের যৌক্তিক কোনো আন্দোলন বৃথা যায়নি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সেটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি আমাদের ছাত্রসমাজকে নিয়ে ভাবতেন এবং বলতেন, ‘ছাত্র ও যুবসমাজের প্রতিটি সদস্যকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তারাই হয়ে উঠবে আদর্শবান শক্তি। এই আদর্শ মানুষ বলতে তিনি এমন ব্যক্তিকে বুঝিয়েছেন, যে উন্নত মানবিক গুণাবলি ধারণ করবে ও অন্যের জন্য অনুসরণযোগ্য হবে।’ অর্থাৎ, সামাজিকভাবে যা কিছু ভালো-শ্রেষ্ঠ, মহৎ ও কল্যাণকর সবকিছুই থাকবে ছাত্রসমাজের প্রতিটি সদস্যের মধ্যে। আদর্শ মানুষ হতে হলে সবার ভেতর যেসব গুণ থাকা দরকার সেগুলো হলোÑ সততা, নিষ্ঠা, পরিশ্রমী ও পরোপকারী মনোভাব, মানবদরদী-সহমর্মিতা, নির্লোভ-নিরহংকার ও সাহস। এসব গুণে গুণান্বিত হওয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানকে উপাধি দেয়া হয় বঙ্গবন্ধু। তিনি নিজে ছিলেন আদর্শবাদী মানুষ। বাংলার শোষিত-নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের মুক্তিই ছিল তার জীবনের মূল লক্ষ্য ও আদর্শ। তবে কি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ছাত্রলীগ আজ আদর্শচ্যুত হয়ে যাচ্ছে? ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস কি ভুলতে বসেছে? ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্বকে কি বিশেষ পরিস্থিতিতে সাংগঠনিকভাবে মোকাবিলায় ব্যর্থ হচ্ছে? নতুন প্রজন্মের মেধাবী ও প্রজ্ঞাবান শিক্ষার্থীদের সুশৃঙ্খল নেতৃত্বের মাধ্যমে বার বার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে কেন ছাত্রলীগ?
আমরা দেখছি, আগামী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভালো-শ্রেষ্ঠ, মহৎ ও কল্যাণকর যৌক্তিক অধিকার আদায়ের আহ্বান স্বাগত জানাতে ছাত্রলীগ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ছাত্রলীগই পারত কোটা আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ-বিস্ফোরণ থামিয়ে বাংলাদেশে ছাত্র নেতৃত্বের সঠিক আসনে বসার গৌরব অর্জন করতে। তাদের উচিত ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে নেতৃত্ব দিয়ে যৌক্তিক দাবিগুলো প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করে আদায় করে নেওয়া। তাতে সারা দেশের মানুষের মনেও আস্থা তৈরি হতো ছাত্রলীগের ওপর। কিন্তু তারা সেটি না করে বল প্রয়োগের দিকে হেঁটেছেন। এ ক্ষেত্রে ছাত্রলীগকে যারা নির্দেশনা দিয়েছেন, ভুলটা তাদের উপরেও বর্তায়।
ছাত্রলীগ সম্পর্কে বিশেষ কথা হলো- কোটা ইস্যুতে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে যে আঘাতের কালিমা লেগেছে তা চিরতরে মুছে দিতে ছাত্রলীগকে নমনীয় হয়ে ক্ষমা চাওয়া হতে পারে মহৎ গুণের বহিঃপ্রকাশ। যেসব ছাত্র আহত-নিহত হয়েছেন তাদের পরিবার-পরিজনের পাশে আর্থিক সহায়তা নিয়ে দাঁড়ানো হতে পারে সাধারণ ছাত্র সমাজের সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে সুন্দর সেতুবন্ধ।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিল তিল করে গত এক দশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে ও ‘ভিশন ২০২১’ অর্জনের পর ‘ভিশন ২০৪১’ বা স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনে দৃঢ় নেতৃত্বে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে বলেন, অপরাধীদের পরিচয় একটাই, তারা অপরাধী। তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে ও কতিপয় হীনস্বার্থান্বেষী, অপচেষ্টাকারী, ব্যক্তিগতভাবে সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা জরুরি হয়ে পড়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের অনেক ভালো কাজ চাপা পড়ে যাচ্ছে, যা নিয়ে হীনস্বার্থবাদীরা মোটেও চিন্তিত নয়। বর্তমানে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রশ্নে মানুষের মধ্যে অভূতপূর্ব ঐক্য তৈরি হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তির প্রবেশগম্যতাকে ব্যবহার করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। অর্থনৈতিক এই রূপান্তরের জন্য শিক্ষাব্যবস্থায়ও রূপান্তর প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নেতাকর্মীদের মধ্যে থাকবে সততা, নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও পরোপকারী মনোভাব, মানবদরদী-সহমর্মিতা, নির্লোভ-নিরহংকার এবং সাহস। বঙ্গবন্ধু নিজে আদর্শবাদী মানুষ ছিলেন। আগামী দিনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও দিকনির্দেশনায় কাজ করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।
লেখক : সাংবাদিক।
অতি সম্প্রতি ছাত্রদের সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছোট্ট একটা ইস্যুকে ‘তিল থেকে তাল’ বানানোর পেছনে ছাত্রলীগের চরম দুর্বল নেতৃত্ব লক্ষ্য করেছি আমরা। ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদের অধিকারের সঙ্গে পূর্ণ সম্মতি জানিয়ে যৌক্তিক দাবিকে শক্তিশালী করে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে পারত। বরং ছাত্রলীগের বল প্রয়োগ করে সাধারণ ছাত্রদের নিবৃত্ত করার ভুল চেষ্টায় আন্দোলন করে মাঠ গরম করা হয়েছে। ছাত্রলীগের ব্যানারে অনেক অছাত্র সেই আন্দোলনে জড়িয়ে নিরীহ শিক্ষার্থীদের শারীরিকভাবে আঘাত করেছে, রক্তাক্ত করেছে স্বাধীন বাংলার পথ-ঘাট। কোনো মুক্তচিন্তার মানুষ বিশ্বাস করতে না পারলেও সেই চিত্রই দৃশ্যমান।
অথচ ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে সততা, নিষ্ঠা, পরিশ্রমী ও পরোপকারী মনোভাব, মানবদরদী-সহমর্মিতা, নির্লোভ-নিরহংকার ও সৎ সাহস থাকবে। সেই গুণাবলিতে গড়ে উঠা ছাত্রলীগ কর্মীরা সাধারণ ছাত্রদের পাশে দাঁড়ালে দেশ ও দেশের বাইরের অপশক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধশক্তি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক কোটা সংস্কারের দাবিকে ছিনতাই করতে পারত না, বহু ছাত্রের প্রাণ বেঁচে যেত। সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনে ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। ছাত্রলীগের সঙ্গে গোটা ছাত্র সমাজের দেয়াল সৃষ্টি হতো না।
বর্তমান ছাত্রলীগের দুর্বল নেতৃত্বে সাধারণ ছাত্রদের মনের ক্ষত দূর করতে হয়তো আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। তবে, সময় শেষ হয়ে যায়নি। বর্তমান ছাত্রলীগকে মনে রাখতে হবে স্বাধীন বাংলাদেশের মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া এই ছাত্র সংগঠন। এই ছাত্র সংগঠনকে ছাত্রসমাজের প্রতিপক্ষ বানানো কাম্য হতে পারে না, হতে দেয়া যায় না। কোটা সংস্কার নিয়ে সাধারণ ছাত্ররা বিপৎগামী হলে তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। নিজেদের লোভ-লালসা, আত্ম অহংকার ভুলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ছাত্রলীগ কর্মীদের মনে রাখতে হবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্বদ্যালয়গুলোতে অদম্য মেধা নিয়ে ভর্তি হয়ে কোনো বঞ্চনা মেনে নেয়নি। ইতিহাস থেকে সেই তথ্য আমরা পাই। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন আমাদের শিক্ষার্থীদের হাতেই অর্জিত হয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তীতে আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। ছাত্রদের যৌক্তিক কোনো আন্দোলন বৃথা যায়নি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সেটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি আমাদের ছাত্রসমাজকে নিয়ে ভাবতেন এবং বলতেন, ‘ছাত্র ও যুবসমাজের প্রতিটি সদস্যকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তারাই হয়ে উঠবে আদর্শবান শক্তি। এই আদর্শ মানুষ বলতে তিনি এমন ব্যক্তিকে বুঝিয়েছেন, যে উন্নত মানবিক গুণাবলি ধারণ করবে ও অন্যের জন্য অনুসরণযোগ্য হবে।’ অর্থাৎ, সামাজিকভাবে যা কিছু ভালো-শ্রেষ্ঠ, মহৎ ও কল্যাণকর সবকিছুই থাকবে ছাত্রসমাজের প্রতিটি সদস্যের মধ্যে। আদর্শ মানুষ হতে হলে সবার ভেতর যেসব গুণ থাকা দরকার সেগুলো হলোÑ সততা, নিষ্ঠা, পরিশ্রমী ও পরোপকারী মনোভাব, মানবদরদী-সহমর্মিতা, নির্লোভ-নিরহংকার ও সাহস। এসব গুণে গুণান্বিত হওয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানকে উপাধি দেয়া হয় বঙ্গবন্ধু। তিনি নিজে ছিলেন আদর্শবাদী মানুষ। বাংলার শোষিত-নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের মুক্তিই ছিল তার জীবনের মূল লক্ষ্য ও আদর্শ। তবে কি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ছাত্রলীগ আজ আদর্শচ্যুত হয়ে যাচ্ছে? ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস কি ভুলতে বসেছে? ছাত্র রাজনীতির নেতৃত্বকে কি বিশেষ পরিস্থিতিতে সাংগঠনিকভাবে মোকাবিলায় ব্যর্থ হচ্ছে? নতুন প্রজন্মের মেধাবী ও প্রজ্ঞাবান শিক্ষার্থীদের সুশৃঙ্খল নেতৃত্বের মাধ্যমে বার বার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে কেন ছাত্রলীগ?
আমরা দেখছি, আগামী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভালো-শ্রেষ্ঠ, মহৎ ও কল্যাণকর যৌক্তিক অধিকার আদায়ের আহ্বান স্বাগত জানাতে ছাত্রলীগ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ছাত্রলীগই পারত কোটা আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ-বিস্ফোরণ থামিয়ে বাংলাদেশে ছাত্র নেতৃত্বের সঠিক আসনে বসার গৌরব অর্জন করতে। তাদের উচিত ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে নেতৃত্ব দিয়ে যৌক্তিক দাবিগুলো প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করে আদায় করে নেওয়া। তাতে সারা দেশের মানুষের মনেও আস্থা তৈরি হতো ছাত্রলীগের ওপর। কিন্তু তারা সেটি না করে বল প্রয়োগের দিকে হেঁটেছেন। এ ক্ষেত্রে ছাত্রলীগকে যারা নির্দেশনা দিয়েছেন, ভুলটা তাদের উপরেও বর্তায়।
ছাত্রলীগ সম্পর্কে বিশেষ কথা হলো- কোটা ইস্যুতে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে যে আঘাতের কালিমা লেগেছে তা চিরতরে মুছে দিতে ছাত্রলীগকে নমনীয় হয়ে ক্ষমা চাওয়া হতে পারে মহৎ গুণের বহিঃপ্রকাশ। যেসব ছাত্র আহত-নিহত হয়েছেন তাদের পরিবার-পরিজনের পাশে আর্থিক সহায়তা নিয়ে দাঁড়ানো হতে পারে সাধারণ ছাত্র সমাজের সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে সুন্দর সেতুবন্ধ।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিল তিল করে গত এক দশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে ও ‘ভিশন ২০২১’ অর্জনের পর ‘ভিশন ২০৪১’ বা স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনে দৃঢ় নেতৃত্বে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে বলেন, অপরাধীদের পরিচয় একটাই, তারা অপরাধী। তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে ও কতিপয় হীনস্বার্থান্বেষী, অপচেষ্টাকারী, ব্যক্তিগতভাবে সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা জরুরি হয়ে পড়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের অনেক ভালো কাজ চাপা পড়ে যাচ্ছে, যা নিয়ে হীনস্বার্থবাদীরা মোটেও চিন্তিত নয়। বর্তমানে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রশ্নে মানুষের মধ্যে অভূতপূর্ব ঐক্য তৈরি হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তির প্রবেশগম্যতাকে ব্যবহার করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। অর্থনৈতিক এই রূপান্তরের জন্য শিক্ষাব্যবস্থায়ও রূপান্তর প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নেতাকর্মীদের মধ্যে থাকবে সততা, নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও পরোপকারী মনোভাব, মানবদরদী-সহমর্মিতা, নির্লোভ-নিরহংকার এবং সাহস। বঙ্গবন্ধু নিজে আদর্শবাদী মানুষ ছিলেন। আগামী দিনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও দিকনির্দেশনায় কাজ করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।
লেখক : সাংবাদিক।