আগামীতে আরো বড় আয়োজনের প্রত্যাশায় ১৭ জুলাই সোমবার শেষ হলো চার দিনব্যাপী নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা। কখনো মেঘ, কখনো বৃষ্টি আবার কখনো খরতাপ ছিল। কিন্তু কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি, তাই বিপুল বাঙালির স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সার্থক করে তুলেছিল বইমেলাকে। নিউইয়র্কের কুইন্সের জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্ট সেন্টারে বইপ্রেমী ও সংস্কৃতিমনাদের ঢল ছিল চোখে পড়ার মত। প্রবাসে বাঙালির প্রাণের স্পন্দন ছিল পুরো বইমেলাজুড়ে।
গত ১৪ জুলাই শুক্রবার ফিতা কেটে বইমেলার উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) সিতারা বেগম, বীর প্রতীক।
বইমেলার ৩২তম আসরে বাংলাদেশ ও ভারতের কলকাতা থেকে ২৫টি প্রকাশনা সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের দশটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। আগের মেলার তুলনায় এবার স্টলও বেশি ছিল। বিক্রিও হয়েছে প্রায় এক লাখ ডলার মূল্যের বই। এবারের বইমেলায় মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন কবি আসাদ চৌধুরী।
গত ১৭ জুলাই সোমবার মেলার শেষ দিনটি রাখা হয়েছিল শিশু কিশোরদের জন্য। পুরো দিনের কর্মসূচিতে ছিল শিশু-কিশোরদের প্রাধান্য। তাদের আয়োজনে এবং অংশগ্রহণে ছিল নাচ-গান, কবিতা আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। নিউইয়র্কে বাংলাদেশি নতুন প্রজন্ম দানিয়েল সামি বলেন, এখানে এসে বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। অনেক নতুন বন্ধু পেয়েছি। তাদের সঙ্গে গান, কবিতা ও আবৃত্তিতে অংশ নিয়ে সবার সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। এখানে একটি ভিন্ন জগৎ পেয়েছি।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ভারতের কলকাতা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে লেখক-পাঠকেরা যোগ দিয়েছেন বইমেলায়। চারদিনের এই মেলা হয়ে উঠেছিল বিশ্ব বাঙালির মিলনমেলা। এ ধরনের একটা আয়োজন করতে পেরে আয়োজকরা খুশি।
৩২তম নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলার আহবায়ক ড. আব্দুন নূর বলেন, চার দিন সবাই মিলে একটি পরিবারের মত ছিলাম। যারা এসেছেন মেলায় বেশিরভাগই পরিবার নিয়ে এসেছিলেন। এ মিলনমেলা ভেঙে যাওয়ায় খারাপ লাগছে। একই সঙ্গে ভালো লাগছে মেলাটি সুন্দর ও সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়েছে বলে।
এবার মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরষ্কার পেয়েছেন কবি আসাদ চৌধুরী। গত রোববার মেলার ৩য় দিন সন্ধ্যায় কবি আসাদ চৌধুরীর পক্ষে ক্রেস্ট ও তিন হাজার ডলার প্রাইজমানি গ্রহণ করেন তাঁর সহধর্মিনী সাহানা চৌধুরী ও কন্যা নুসরাত জাহান চৌধুরী। পুরস্কারটি তুলে দেন জিএফবি গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক ভূঁইয়া । বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা সংস্থা থেকে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা শ্রেষ্ঠ প্রকাশনা’ পুরস্কার পেয়েছে নালন্দা ও কথাপ্রকাশ। এটি তুলে দেন সমাজসেবী ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
এবারের বইমেলায় বাংলাদেশের ২৫টি প্রকাশনা সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের দশটি প্রতিষ্ঠান স্টল নেয়। মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী বিশ্বজিত সাহা বলেন, চারদিনের বইমেলায় প্রায় এক লাখ ডলার বিক্রি হয়েছে। এরই মধ্যে অনেক দর্শনার্থী আমাদের অনুরোধ করেছেন মেলার সময় বাড়ানোর। আগামীতে সপ্তাহব্যাপী বইমেলা করা যায় কিনা সে বিষয়ে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন কমিটি চিন্তাভাবনা করছে।
সংস্কৃতিকর্মী ও সাংবাদিক তোফাজ্জল লিটন জানান, বইমেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীরা নিজেদের মতো করে গেয়েছেন গান। হয়েছে প্রতিবাদ অনুষ্ঠানও। বাংলাদেশের গাইবান্ধা স্টেডিয়াম সংলগ্ন রাষ্ট্র্রস্বীকৃত জেলার প্রধান বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবিতে ‘নিউইয়র্ক প্রবাসী গাইবান্ধাবাসী’র আয়োজনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে বইমেলা প্রাঙ্গণে। বই বিক্রির পাশাপাশি মেলার সমরেশ মজুমদার মঞ্চে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, কবিতা আবৃত্তি, সেমিনার ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী
এর আগে ১৪ জুলাই শুক্রবার বিকালে উদ্বোধনী পর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম. বইমেলার আয়োজক মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী, প্রখ্যাত ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, পশ্চিম বাংলার কবি সুবোধ সরকার, কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার সভাপতি ত্রিদিব চট্টপাধ্যায় প্রমুখ। এর আগে ৩২তম বইমেলা উপলক্ষে ৩২ জন কবি-সাহিত্যিক, লেখক-প্রকাশ, সাংবাদিক ও অতিথি প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন।
এদিকে চার দিনের ‘নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা’র নাম পরিবর্তন করে ‘নিউইয়র্ক বাংলা আন্তর্জাতিক বইমেলা’র ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ‘ভারত, বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বাঙালি এই মেলায় অংশগ্রহণ করায় তার ব্যাপ্তি বিস্তৃত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী, তাই এটিকে আন্তর্জাতিক বইমেলা নামকরণে কোনো দ্বিধা থাকতে পারে না। বিপুল করতালির মধ্যে উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে এই ঘোষণা দেন প্রথমে বইমেলার আহ্বায়ক বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. আব্দুন নূর এবং এরপরই মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সভাপতি একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরন নবী। সামনের বছর ৩৩তম বইমেলার নামকরণ হলো ‘নিউইয়র্ক বাংলা আন্তর্জাতিক বইমেলা’।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন (অব.) ডা. সিতারা বেগম বলেন, ‘আমি এখানে এসে অত্যন্ত আনন্দিত, খুশি এবং গর্বিত। মনে হচ্ছে যে, আমার বীর প্রতিক খেতাব পাওয়াটা বোধহয় স্বার্থকই হয়েছে। কারণ, এখানে এত বাঙালি-বাংলাদেশ, কলকাতা, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রিলিয়া থেকে এসেছেন, সবারই একটি পরিচয়, তা হচ্ছে বাঙালি।’
জীবিত একমাত্র বীর প্রতিক খেতাবপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব.) ডা. সিতারা বেগমের ৭৮ বছর বয়স। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হলেও মনোবল হারাননি। তবে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না বলে চেয়ারে বসে বক্তব্য প্রদানের জন্য সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের লেখক-কবি-সাহিত্যিকগণের মধ্যে যারা এই প্রবাসে স্থায়ীভাবে বাস করছেন তাদের সেই সত্ত্বা অটুট রেখে বাঙালি সংস্কৃতির ফল্গুধারা নতুন প্রজন্মের সামনে উপস্থাপনের চমৎকার একটি পরিবেশ তৈরি করেছে এই বইমেলা। একইসাথে যারা বাংলাদেশে থাকতে লেখালেখির সাথে যুক্ত ছিলেন না, তাদেরও একটি অংশ এই প্রবাসে লেখালেখিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এবং উৎসাহবোধ করছেন গত ৩২ বছরের এই মেলা থেকে। প্রিয় মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা, আবেগ, যে অনুভূতি তা প্রকাশ করার জন্য অনেকে লিখছেন অথবা উদ্যোগী হয়েছেন। তাই এই বইমেলা শুধু বই পড়ার জন্যই নয়, নতুন লেখক সৃষ্টিতেও অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখছে।
লেখক-সাংবাদিক শামিম আল আমিন এবং সাবিনা হাই উর্বি’র উপস্থাপনায় প্রথম পর্বে আরো বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, আবৃত্তি শিল্পী আহকাম উল্লাহ, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (প্রেস) এজেডএম সাজ্জাদ হোসেন, কলকাতা বইমেলার সভাপতি সুধাংশু শেখর দে, সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
এর আগে প্রদীপ প্রজ্বলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন এবারের বইমেলার প্রধান অতিথি ক্যাপ্টেন (অব.) ডা, সিতারা বেগম, বইমেলার উদ্বোধক ও কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান, এবারের বইমেলার আহ্বায়ক ড. আব্দুন নূর, মুক্তধারার চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরন নবী, ‘মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার’র প্রবর্তক, বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এবং শিল্পপতি গোলাম ফারুক ভূঁইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবিদুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজবাহউদ্দিন আহমেদ, প্রখ্যাত ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, ঠিকানার প্রধান সম্পাদক মুহম্মদ ফজলুর রহমান, ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান রোকেয়া হায়দার, লেখক-সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস, লেখক ফেরদৌস সাজেদীন, সাংবাদিক ও লেখক জসীম মল্লিক, লেখক-সাংবাদিক ফাহিম রেজা নূর, সাংবাদিক ও কবি আলফ্রেড খোকন প্রমুখ।
গত ১৪ জুলাই শুক্রবার ফিতা কেটে বইমেলার উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) সিতারা বেগম, বীর প্রতীক।
বইমেলার ৩২তম আসরে বাংলাদেশ ও ভারতের কলকাতা থেকে ২৫টি প্রকাশনা সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের দশটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। আগের মেলার তুলনায় এবার স্টলও বেশি ছিল। বিক্রিও হয়েছে প্রায় এক লাখ ডলার মূল্যের বই। এবারের বইমেলায় মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন কবি আসাদ চৌধুরী।
গত ১৭ জুলাই সোমবার মেলার শেষ দিনটি রাখা হয়েছিল শিশু কিশোরদের জন্য। পুরো দিনের কর্মসূচিতে ছিল শিশু-কিশোরদের প্রাধান্য। তাদের আয়োজনে এবং অংশগ্রহণে ছিল নাচ-গান, কবিতা আবৃত্তি ও ছবি আঁকা। নিউইয়র্কে বাংলাদেশি নতুন প্রজন্ম দানিয়েল সামি বলেন, এখানে এসে বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। অনেক নতুন বন্ধু পেয়েছি। তাদের সঙ্গে গান, কবিতা ও আবৃত্তিতে অংশ নিয়ে সবার সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। এখানে একটি ভিন্ন জগৎ পেয়েছি।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ভারতের কলকাতা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে লেখক-পাঠকেরা যোগ দিয়েছেন বইমেলায়। চারদিনের এই মেলা হয়ে উঠেছিল বিশ্ব বাঙালির মিলনমেলা। এ ধরনের একটা আয়োজন করতে পেরে আয়োজকরা খুশি।
৩২তম নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলার আহবায়ক ড. আব্দুন নূর বলেন, চার দিন সবাই মিলে একটি পরিবারের মত ছিলাম। যারা এসেছেন মেলায় বেশিরভাগই পরিবার নিয়ে এসেছিলেন। এ মিলনমেলা ভেঙে যাওয়ায় খারাপ লাগছে। একই সঙ্গে ভালো লাগছে মেলাটি সুন্দর ও সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়েছে বলে।
এবার মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরষ্কার পেয়েছেন কবি আসাদ চৌধুরী। গত রোববার মেলার ৩য় দিন সন্ধ্যায় কবি আসাদ চৌধুরীর পক্ষে ক্রেস্ট ও তিন হাজার ডলার প্রাইজমানি গ্রহণ করেন তাঁর সহধর্মিনী সাহানা চৌধুরী ও কন্যা নুসরাত জাহান চৌধুরী। পুরস্কারটি তুলে দেন জিএফবি গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক ভূঁইয়া । বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা সংস্থা থেকে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা শ্রেষ্ঠ প্রকাশনা’ পুরস্কার পেয়েছে নালন্দা ও কথাপ্রকাশ। এটি তুলে দেন সমাজসেবী ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
এবারের বইমেলায় বাংলাদেশের ২৫টি প্রকাশনা সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের দশটি প্রতিষ্ঠান স্টল নেয়। মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী বিশ্বজিত সাহা বলেন, চারদিনের বইমেলায় প্রায় এক লাখ ডলার বিক্রি হয়েছে। এরই মধ্যে অনেক দর্শনার্থী আমাদের অনুরোধ করেছেন মেলার সময় বাড়ানোর। আগামীতে সপ্তাহব্যাপী বইমেলা করা যায় কিনা সে বিষয়ে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন কমিটি চিন্তাভাবনা করছে।
সংস্কৃতিকর্মী ও সাংবাদিক তোফাজ্জল লিটন জানান, বইমেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীরা নিজেদের মতো করে গেয়েছেন গান। হয়েছে প্রতিবাদ অনুষ্ঠানও। বাংলাদেশের গাইবান্ধা স্টেডিয়াম সংলগ্ন রাষ্ট্র্রস্বীকৃত জেলার প্রধান বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবিতে ‘নিউইয়র্ক প্রবাসী গাইবান্ধাবাসী’র আয়োজনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে বইমেলা প্রাঙ্গণে। বই বিক্রির পাশাপাশি মেলার সমরেশ মজুমদার মঞ্চে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, কবিতা আবৃত্তি, সেমিনার ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী
এর আগে ১৪ জুলাই শুক্রবার বিকালে উদ্বোধনী পর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম. বইমেলার আয়োজক মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী, প্রখ্যাত ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, পশ্চিম বাংলার কবি সুবোধ সরকার, কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার সভাপতি ত্রিদিব চট্টপাধ্যায় প্রমুখ। এর আগে ৩২তম বইমেলা উপলক্ষে ৩২ জন কবি-সাহিত্যিক, লেখক-প্রকাশ, সাংবাদিক ও অতিথি প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন।
এদিকে চার দিনের ‘নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা’র নাম পরিবর্তন করে ‘নিউইয়র্ক বাংলা আন্তর্জাতিক বইমেলা’র ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ‘ভারত, বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বাঙালি এই মেলায় অংশগ্রহণ করায় তার ব্যাপ্তি বিস্তৃত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী, তাই এটিকে আন্তর্জাতিক বইমেলা নামকরণে কোনো দ্বিধা থাকতে পারে না। বিপুল করতালির মধ্যে উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে এই ঘোষণা দেন প্রথমে বইমেলার আহ্বায়ক বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. আব্দুন নূর এবং এরপরই মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সভাপতি একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরন নবী। সামনের বছর ৩৩তম বইমেলার নামকরণ হলো ‘নিউইয়র্ক বাংলা আন্তর্জাতিক বইমেলা’।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন (অব.) ডা. সিতারা বেগম বলেন, ‘আমি এখানে এসে অত্যন্ত আনন্দিত, খুশি এবং গর্বিত। মনে হচ্ছে যে, আমার বীর প্রতিক খেতাব পাওয়াটা বোধহয় স্বার্থকই হয়েছে। কারণ, এখানে এত বাঙালি-বাংলাদেশ, কলকাতা, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রিলিয়া থেকে এসেছেন, সবারই একটি পরিচয়, তা হচ্ছে বাঙালি।’
জীবিত একমাত্র বীর প্রতিক খেতাবপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব.) ডা. সিতারা বেগমের ৭৮ বছর বয়স। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হলেও মনোবল হারাননি। তবে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না বলে চেয়ারে বসে বক্তব্য প্রদানের জন্য সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের লেখক-কবি-সাহিত্যিকগণের মধ্যে যারা এই প্রবাসে স্থায়ীভাবে বাস করছেন তাদের সেই সত্ত্বা অটুট রেখে বাঙালি সংস্কৃতির ফল্গুধারা নতুন প্রজন্মের সামনে উপস্থাপনের চমৎকার একটি পরিবেশ তৈরি করেছে এই বইমেলা। একইসাথে যারা বাংলাদেশে থাকতে লেখালেখির সাথে যুক্ত ছিলেন না, তাদেরও একটি অংশ এই প্রবাসে লেখালেখিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন এবং উৎসাহবোধ করছেন গত ৩২ বছরের এই মেলা থেকে। প্রিয় মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা, আবেগ, যে অনুভূতি তা প্রকাশ করার জন্য অনেকে লিখছেন অথবা উদ্যোগী হয়েছেন। তাই এই বইমেলা শুধু বই পড়ার জন্যই নয়, নতুন লেখক সৃষ্টিতেও অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখছে।
লেখক-সাংবাদিক শামিম আল আমিন এবং সাবিনা হাই উর্বি’র উপস্থাপনায় প্রথম পর্বে আরো বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, আবৃত্তি শিল্পী আহকাম উল্লাহ, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (প্রেস) এজেডএম সাজ্জাদ হোসেন, কলকাতা বইমেলার সভাপতি সুধাংশু শেখর দে, সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
এর আগে প্রদীপ প্রজ্বলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন এবারের বইমেলার প্রধান অতিথি ক্যাপ্টেন (অব.) ডা, সিতারা বেগম, বইমেলার উদ্বোধক ও কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান, এবারের বইমেলার আহ্বায়ক ড. আব্দুন নূর, মুক্তধারার চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরন নবী, ‘মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার’র প্রবর্তক, বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এবং শিল্পপতি গোলাম ফারুক ভূঁইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবিদুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজবাহউদ্দিন আহমেদ, প্রখ্যাত ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, ঠিকানার প্রধান সম্পাদক মুহম্মদ ফজলুর রহমান, ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান রোকেয়া হায়দার, লেখক-সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস, লেখক ফেরদৌস সাজেদীন, সাংবাদিক ও লেখক জসীম মল্লিক, লেখক-সাংবাদিক ফাহিম রেজা নূর, সাংবাদিক ও কবি আলফ্রেড খোকন প্রমুখ।