আরবি শব্দ ইসলাম, যার আক্ষরিক অর্থ নিঃশর্ত ‘আত্মসমর্পণ’। কারো মতে শান্তি। ইসলাম হলো আল্লাহতায়ালার কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করা এবং একমাত্র তাঁর আনুগত্য স্বীকার করা। ইসলাম আমাদের ধর্ম বলতে বোঝায় ইসলাম সকল বিশ্বাসীদের ধর্ম। ইসলামে বিশ্বাসী যারা তারা সবাই মুসলমান। আমি ইসলাম বিশ্বাস করি তাই আমিও মুসলমান। যিনি যখন বিশ্বাস করবেন, তখন তিনিও মুসলামান হবেন।
পৃথিবীর আদি ধর্ম ইসলাম। আদিপিতা আদম আলাইহিস সালাম আল্লাহ প্রেরিত শুধু প্রথম বান্দাই নন, তিনি প্রথম নবীও ছিলেন। পরবর্তীতে আদম আলাইহিস সালামের অনেক সন্তান শয়তানের ধোঁকায় আল্লাহর নির্দেশিত পথ থেকে বিপথগামী হন। বিভিন্ন ধর্ম থেকে যারা আল্লাহ ইচ্ছায় সর্বশেষ নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর দাওয়াত গ্রহণ করে আল্লাহর নির্দেশিত পথ ইসলামে বিশ্বাসী হয়েছেন তাঁরাও মুসলমান। বলতে গেলে আদর্শ মুসলমান।
বাবা আদম আলাইহিস সালাম নবী হলেও তাঁর প্রতি কোন আসমানী কিতাব প্রেরণ করা হয়নি। মূসা আলাইহিস সালামের সময় প্রথম আসমানী কিতাব ইঞ্জিল অবতীর্ণ হয়। ঈসা আলাইহিস সালামের উপর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আসমানী কিতাব যব্বুর বা বাইবেল অবতীর্ণ হয়। যুগে যুগে আরো অনেক নবী ও কিতাব বা ছহীফা মহান আল্লাহ দুনিয়ায় প্রেরণ করেন। অবশেষে সর্বশেষ নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর উপর পরিপূর্ণ শেষ আসমানী কিতাব আল কুরআন নাজিল করা হয় এবং পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাব অকার্যকর করা হয়। শেষ নবী (স.) কে হবেন, কেমন হবেন, তা পবিত্র কুরআনের পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব সমূহে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বাসী বলতে বোঝায়- আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী, ফেরেস্তাগণে বিশ্বাসী, কুরআনে বিশ্বাসী, অন্যান্য আসমান কিতাবে বিশ্বাসী, নবী-রাসূলগণে বিশ্বাসী, বিচার দিনে বিশ্বাসী এবং ভালমন্দ যা কিছু হয়- তা আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়, তাতে বিশ্বাসী। আপনি এই সকল বিষয়ে বিশ্বাসী হলে আপনিও একজন মুসলমান এবং আপনার ধর্ম ইসলাম। কাউকে ইসলামের দাওয়াত দিলে আমরা এই ভেবে দেই যে- আপনারা ও আমরা সবাই পরস্পরের আত্মীয়। বাবা আদম এবং মা হাওয়ার সন্তান আমরা সবাই। কেউ দশ জেনারেশন, কেউ বিশ জেনারেশন কিংবা কেউ আরো অনেক পূর্বে বিশ্বাসের ভিন্নতায় পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। আপনারা হয়ত বলছেন আমরা পথহারা, আর আমরা বলছি আপনারা সঠিক পথ থেকে বঞ্চিত। আমরা যা মনে করি- শুরুতে মানব সন্তান ছিলেন মাত্র দু’জন। তারপর ধীরে ধীরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তাই শুরুতে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন তাদেরকে আল্লাহ দুনিয়ায় বসবাসের জ্ঞান দান করে অনেকটা মুক্তভাবে ছেড়ে দেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে দুনিয়া ও আখেরে সুখী হওয়া যায় এমন পথ প্রদর্শন করতে মহান আল্লাহতা’লা ধাপে ধাপে নবী-রাসূল ও আসমানী কিতাব প্রেরণ করেন। দুনিয়ায় কোন বিজ্ঞানী কোন কিছু আবিষ্কার করলে তা একটি ক্যাটালগসহ আমাদের হাতে পৌঁছে দেন। একই আবিষ্কারকে আরো উন্নত করলে সেটিও ক্যাটালগসহ পৌঁছে যায় আমাদের হাতে। কিছু মানুষ আছেন তারা অর্জনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও উন্নত ভার্সন গ্রহণ করতে চান না, যা আছে তা নিয়েই থাকতে চান। যেমন আমার হাতে একসময় ফ্লিপ ফোন ছিল। বাজারে আই ফোন আসার পর তা অনেক উন্নত হওয়া সত্ত্বেও সহজে আমি আইফোন নিতে চাইনি। আমি মনে করতাম আমার জন্য ফ্লিপ ফোনই ভাল। কিন্তু ছেলেরা জোর করে আই ফোন কিনে দিলে এখন ভাবছি আই ফোন আরও অনেক ভাল। পবিত্র কুরআন আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষও পরিপূর্ণ দুনিয়া ও আখেরের ক্যাটালগ। তা অনেকে সহজে গ্রহণ করতে চান না। কিন্তু যারা গ্রহণ করেছেন তাঁরা অন্যান্যদের জন্য খুব আফসোস করেন। অনেকে ইসলামের দাওয়াতে নিজেকে মনে-প্রাণে উৎসর্গ করেন।
অবশ্য কেউ যদি কোন ভক্তি ছাড়া পবিত্র কুরআনকে জানতে চান, তিনি হয়ত তাতে কোন রহস্য খুঁজে পাবেন না । আর ভক্তি সহকারে যতই খুঁজবেন ততই আল্লাহর মহিমা ও সত্যের সন্ধান পাবেন। অবশেষে দেখবেন এই পৃথিবীতে যত সম্পদ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সম্পদ এই কুরআনের বাণী। উদাহরণ স্বরূপ ঃ খনি থেকে কোন সম্পদ আহরণকালে কোদালের প্রথম কোপে কোন কিছুই পাওয়া যায় না। কিন্তু যতই গভীরে পৌঁছা যায় ততই মূল্যবান খনিজসম্পদ বা আকরিকের সন্ধান মেলে। অবশেষে দেখা যায় কোন ভূখন্ডের উপরিভাগে যত মূল্যবান সম্পদ রয়েছে তার চেয়ে ঢের বেশি মূল্যবান সম্পদ মাটির গভীরে লুক্কায়িত রয়েছে। তাই সকল সৃষ্টির ক্যাটালগ বা শাশ^ত জীবনবিধান আল কুরআন অনুসরণ করে আমরা এমন সব মহা মূল্যবান সম্পদ অর্জন করতে পারি যা সারা দুনিয়ার সম্পদের চেয়েও অনেক অনেক বেশি মূল্যবান। প্রশ্ন জাগতে পারে যে দুনিয়া সৃষ্টি ও মানবজাতি প্রেরণের শুরুতে কি আল্লাহর চিন্তা পরিপূর্ণ ছিল না? আল্লাহ কেন ধাপে ধাপে ইহকাল ও পরকালের ক্যাটালগ পাঠালেন? জবাব হলো- আল্লাহর জ্ঞান অসীম। তিনি মহাজ্ঞানী। তাই সময় এবং প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে মানবজাতি কখন এবং কতটুকু তাঁর লীলা বুঝতে পারবে এবং মানতে পারবে তা বিবেচনা করেই ধাপে ধাপে ক্যাটালগ বা নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। বিজ্ঞানীদের আকাশে পাঠানো স্যাটেলাইটের সাথে যোগাযোগ রাখতে পৃথিবীতে আরেকটি গ্রাউন্ড স্যাটেলাইট তৈরি করতে হয়। উভয় স্যাটেলাইটের যেগাযোগের মাধ্যমে মহাকাশের তথ্য পাওয়া যায়। আমরা যারা ঈমান নামের স্যাটেলাইট আমাদের হৃদয়ে স্থাপন করতে পারবো তাঁরাই কেবল আল্লাহর লীলা বুঝতে পারবো। আর এই গ্রাউন্ড স্যাটেলাইট তৈরির উপকরণ হলো ‘আল্লাহর অনুগ্রহ অর্জন’, যা তাঁর কাছেই চাইতে হয়। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁর নিজের ইচ্ছা ও খুশীতে। তিনিই জানেন তাতে তাঁর কত আনন্দ। আমরা যেমন দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান করি, তার জন্য শ্রম দান করি টাকাও খরচ করি। শুধুমাত্র মন ও চোখের আনন্দের জন্য। আল্লাহ আসল বাগান বানাবেন পরকালে। দুনিয়ায় আমাদের কাজকর্মের হিসেবে আমাদেরকে দিয়ে সেখানে বাগান সাজাবেন। পরকালে ভাল থাকার জন্য দুনিয়া আমাদের অনুশীলন ও পরীক্ষা কেন্দ্র। দুঃখের বিষয় হলো- দুনিয়াবী সম্পদের মোহে আবিষ্ট এবং লোভে পড়ে তার পেছনে ধাওয়া
করায় আমরা পরকালে
চিরসুখী হতে দুনিয়ায় আল্লাহ প্রদত্ত লোভনীয় অফারগুলো গ্রহণ করতে পারি না। জাগতিক ভোগ-বিলাস ও মুখরোচক খাবার সংগ্রহ এবং স্ত্রী সন্তানদের সুখনিশ্চিত করার জন্য সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকায় আমরা পরকালীন পাথেয় সঞ্চয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কিন্তু আমরা জানি যে দুনিয়াতে পুরোপুরি সুখী হওয়া কারও পক্ষেই সম্ভবই নয়। শিক্ষিত অশিক্ষিত ধনী গরীব সকলেই কোন না কোনভাবে দুঃখী। তার চেয়ে এই সময় আল্লাহকে খুশী রাখার চেষ্টা করলে ইহকাল ও পরকালে সুখী হওয়া সম্ভব। যে কোন কিছু একটি মাত্রার চেয়ে বেশি বা কম হলে তা অস্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক কিছুই ভাল নয়। আমরা সন্তানদের আমাদের নিজের চেয়ে বেশি ভালবাসি। তাই জীবন চলার মত আর্থিক অবস্থা থাকা সত্ত্বেও সন্তানদের সুখী ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে আমরা পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ি। তা সঠিক নয়। বহু জেনারেশন পূর্বে আমাদের কেউ একজন ইসলামের দাওয়াত কবুল করেছেন এবং তাঁর আত্মীয়গণের অনেকে শয়তানের ধোঁকায় ইসলাম কবুল করেন নি। (শয়তান আল্লাহকে বলেছিল আমরা মানুষদের আমাদের পথে টানবো) আমরা মনে করি আপনারা, ভিন্ন ধর্মের লোকেরা শয়তানের ধোঁকায় পড়া আমাদের ঐ আত্মীয়গণের বংশধর। তাই মনের ভালবাসা থেকে এবং আল্লাহকে খুশি করতে আমরা আপনাদেরকে ইসলামের পথে দাওয়াত দিচ্ছি। তা ছাড়া এটা আমাদের ধর্মীয় কর্তব্য। আমরা ভাগ্যবান যে আমাদের পূর্ববর্তী কোন এক মুরুব্বী ইসলাম ইসলাম গ্রহণ করায় আমরা সরাসরি মুসলমান। আর আপনাদের মুরুব্বী আল্লাহর নির্দেশিত পথ গ্রহণ না করায় আপনাদের জন্য নতুন করে ইসলাম গ্রহণ করা কঠিন হয়েপড়েছে। কারণ বর্তমানে নতুন করে ইসলাম গ্রহণ করা এত সহজও নয়। আজ আমিও যদি আপনাদের দলের একজন হতাম তবে আমারও একই অবস্থাই হতো। তবে আপনাদের খুশির খবর হল- আপনারা স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কেটে যদি আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি অনুগত হন, তবে আপনাদের জন্য ক্ষমা পাওয়া আমাদের চেয়ে সহজ। এমন কি একই কাজে আমাদের চেয়ে আপনাদের নেকি অনেক বেশি হবে। অর্থাৎ আমাদের অতীত গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করতে পারেন, নাও করতে পারেন। কিন্তু যখন থেকে আপনারা আল্লাহ মনোনীত ও তাঁর রাসূল (স) প্রচারিত ধর্ম গ্রহণ করবেন, তখন থেকে আপনার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
তবে অবশেষে আমি যে ইসলাম গ্রহণ করতাম তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি; কারণ আমি মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলেও আমার মনে অনেক প্রশ্ন ছিল। সেই প্রশ্নগুলোর জবাব না পাওয়া পর্যন্ত আমি ক্ষান্ত ছিলাম না। এমনকি আমি খুব শক্ত মনের একজনবিশ্বাসীও ছিলাম না। যাকেই ধর্মীয় প্রশ্ন করেছি তিনি কোন জবাব না দিয়ে বরং আমাকে তওবা করার পরামর্শ দিয়েছেন। অতঃপর একজন উচ্চ শিক্ষিত আলেম আমার প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন আমার প্রশ্নগুলো অর্থবহ ছিল। তিনিআরো বলেছেন যে যাদের মনে এমন প্রশ্ন জাগবে না, কিছু না বুঝেই তারা ইসলামে দলগত হয়েছেন। আমি সঠিক পথে চলার জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করেছি । আমি মনে করি কোন মাদ্রাসা শিক্ষা ছাড়াই আল্লাহ আমার ইসলামিক জ্ঞানের দরজা সামান্য খুলে দিয়েছেন। তার প্রমাণ যেভাবে পেয়েছি তা হলো- আমি মাদ্রাসার ছাত্র ছিলাম না কখনো। এলাকার একজন গীতিকার এবং প্রবাসী হিসেবে গ্রামের স্থানীয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আমাকে ডেকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে পাঁচ মিনিট বক্তব্য দেয়ার সূযোগ দেন। যেহেতু আমি বক্তৃতা দানে অভ্যস্ত নই, তাই পাঁচ মিনিট কথা বলে নিজেই থেমে যাই। তাঁরা আরো কথা বলতে আমাকে অনুরোধ করেন। আবারো দশ মিনিট কথা বলে আমি থেমে যাই। তাঁদের অনুরোধে এরপর প্রায় এক ঘন্টা পনের মিনিট কথা বললাম। আমি যখন পাঁচ মিনিট বক্তব্য শেষ করি, প্রিন্সিপাল সাহেব ছাত্রদের একটি ক্লাস সাসপেন্ড করে আমার কথা ছাত্রদের শোনার সুযোগ দিতে একজন শিক্ষককে হুকুম দেন। পরে প্রিন্সিপাল সাহেব মন্তব্য করলেন ঃ “ইনি প্রাতিষ্ঠানিক ইসলামী শিক্ষা গ্রহণ না করলেও হাদিসের বাইরে কোন কথা বলেননি”। এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি মনে করি আল্লাহ নিজেই আমার হৃদয়ে কিছু ইসলামিক জ্ঞান দান করেছেন।
আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে বেশ কিছু মাধ্যম রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হল ওয়াজ মাহফিল। এই ওয়াজ মাহফিল থেকে মুসলমানের মনে কোন কঠিন প্রশ্ন থাকলে তার জবাব দেয়া, কুরআনের বাণীগুলো বুঝিয়ে বলা, আল্লাহ যেসব বিষয়ে সতর্ক করেছেন এবং যেসব বিষয়ে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন তা জনগণকে অবহিত করা ছিল ওয়াজের মূল উদ্দেশ্য। ওয়াজ শুনে যেন মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি হয় এবং অন্যান্য ধর্মের লোকদের কানে পৌঁছলে তাঁরাও যেন কুরআনের বাণীর প্রতি আকৃষ্ট হন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল ওয়াজ মাহফিলে উচ্চ ভলিউমের মাইক ব্যবহার করলেও তা থেকে কৌতুক, প্যারডি গান, নৃত্য, ঝগড়াটে কথা এবং সুরেলা কণ্ঠে বাংলা কিসসা, বিদেশ ভ্রমণের গালগল্প প্রচার হয়। গান পরিবেশন করে কন্ঠের প্রতিভা প্রদর্শন করা হয়। গান শেষ করে “ বলুন, নাউজুবিল্লাহ” বলে হারামকে হালাল করা হয়। এইসব মাহফিল থেকে শেখার কিছু নেই- না মুসলমানের না অমুসলমানের। গান ও কৌতুক পরিবেশনের মধ্যে ওয়াজি ভাইরাল হন এবং সারা বছর ওয়াজির বুকিং থাকে। আপনারা এইসব হুজুরদের ইসলামের খাদেম ভাববেন না। ভাবগম্ভীর ধর্মকে নিয়ে তামাশার ছলে পরিবেশন করার জন্য পরকালে তামাশাকারীর জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। শেষ বিচারের দিন আমাদের সবাইকে সবকিছুর কড়ায়-গন্ডায় হিসাব দিতে হবে। সেদিন ‘আমি জানতাম না’ অথবা ‘আমার জানার সুযোগ ছিলনা’ বলে পার পাওয়া যাবে না। তেমনি দুনিয়াবী সকল আইনও নাগরিকের জানা বাধ্যতামূলক: জানতাম না বলে দুনিয়ার আদালতেও ক্ষমা মেলে না। সাধারণত আমরা মনে করি আইন বুঝবেন উকিল আর বিচারকগণ। কিন্তু তা সত্য নয়, আইন সকলকেই জানতে হয়। শুধু নিজের দেশের আইন নয়, সারা পৃথিবীর সকল দেশের ছোট বড় আইন এবং নিয়ম-কানুন জানতে হয়, যদি বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছা মনে থাকে। আইন না জানলে কখনো জরিমানা, কখনো কারাভোগ করতে হবে।
ইউরোপ-আমেরিকায় অসংখ্য বাংলাদেশি পরিবারের অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের ঐ দেশের সরকার নিজের হেফাজতে নিয়ে গেছে, তাদের পিতামাতা সন্তানের গায়ে হাত তুলেছিলেন বলে। পশ্চিমা দেশে অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের ধমক দেয়া বা গায়ে হাত তোলা শুধু দন্ডনীয় অপরাধই নয়, সরকার তাদেরকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায়। সন্তানের বয়স ১৮হলে ফেরত দেয়। ততদিনে এইসব সন্তানরা পরিবারকে ভুলে যায়। কেউ কেউ কুকুরকে লাথি দিয়েও জেলে গেছেন। সিঙ্গাপুওে রাস্তায় কাগজ ফেলে অনেককে জরিমানা দিতে হয়েছে, যার মূল্য বিমান টিকিটের চেয়েও বেশি। অর্থাৎ এক দেশে যা খুব স্বাভাবিক বিষয় অন্যদেশে তা বিরাট অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। কখনো কেউ ক্ষমা পান নি “আমি এই আইনটি জানতাম না” বলে। যেহেতু পবিত্র কুরআন আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ আসমানী কিতাব। তাই এই কিতাবের বাণী সকলের কাছে পৌঁছে দেয়া বিশ্বাসীদের দায়িত্ব। ইসলামের পথে দাওয়াত না দেয়ার কারণে মুসলমানদেরও জবাবদিহি করতে হতে হবে এবং দাওয়াত গ্রহণ না করলে অমুসলিম ভাইবোনদের ও জবাব দিতে হবে। এই যেমন আমি যতটুকু পারছি আমার মত করে চেষ্টা করছি। আমার মনে হয় কারো কথা বলে বা লিখে দাওয়াত পৌঁছাতে সম্ভব না হলে, তিনি আরেকজনের লেখা শেয়ার করেও নেকি অর্জন করতে পারেন। পরকালে আপনারা বলবেন, হুজুরদের ওয়াজ কিছুটা শুনেছি। তাতে কৌতুক কিসসা আর বিদেশ ভ্রমণের বাহাদুরিই শুধু প্রাধান্য পেয়েছে। তাই আমি বলি, ইতোমধ্যে অন্যান্য ধর্ম থেকে যেসব জ্ঞাণী গুণী মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছেন- তাঁদের বক্তব্যও শুনতে পারেন। আর যাঁরা সুর বা কন্ঠের অতিশয় প্রতিভা না দেখিয়ে সাবলিল ভাষায় বক্তব্য রাখেন, তাঁদের কথাও শুনতে পারেন। মুমিন জীবনের প্রধানতম লক্ষ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি বা তাঁর ভালোবাসা অর্জন। আমরা ইহকাল ও পরকালে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভের আশায় খুব আন্তরিকভাবে তাঁরই সাহায্য কামনা করতে পারি। আমরা বলতে পারি- “হে আল্লাহ/ ভগবান/ গড/ স্রষ্টা আমাদেরকে আপনার নির্দেশিত পথে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিচালিত করুন, আমরা আপনারই সাহায্য চাই”। তা বলতে হবে মনে-প্রাণে। আল্লাহ আমাদের সকলের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে তাঁর ইচ্ছায় দুনিয়ায় আমাদেরকে পরিচালিত করুন এবং আদম হাওয়া পরিবারকে জান্নাত দান করুন। আমার এই লেখায় অনিচ্ছাকৃত কোন ভুল হয়ে থাকলে মহান আল্লাহ পাক আমাকে ক্ষমা করুন, আমিন!
লেখক : গীতিকার
পৃথিবীর আদি ধর্ম ইসলাম। আদিপিতা আদম আলাইহিস সালাম আল্লাহ প্রেরিত শুধু প্রথম বান্দাই নন, তিনি প্রথম নবীও ছিলেন। পরবর্তীতে আদম আলাইহিস সালামের অনেক সন্তান শয়তানের ধোঁকায় আল্লাহর নির্দেশিত পথ থেকে বিপথগামী হন। বিভিন্ন ধর্ম থেকে যারা আল্লাহ ইচ্ছায় সর্বশেষ নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর দাওয়াত গ্রহণ করে আল্লাহর নির্দেশিত পথ ইসলামে বিশ্বাসী হয়েছেন তাঁরাও মুসলমান। বলতে গেলে আদর্শ মুসলমান।
বাবা আদম আলাইহিস সালাম নবী হলেও তাঁর প্রতি কোন আসমানী কিতাব প্রেরণ করা হয়নি। মূসা আলাইহিস সালামের সময় প্রথম আসমানী কিতাব ইঞ্জিল অবতীর্ণ হয়। ঈসা আলাইহিস সালামের উপর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আসমানী কিতাব যব্বুর বা বাইবেল অবতীর্ণ হয়। যুগে যুগে আরো অনেক নবী ও কিতাব বা ছহীফা মহান আল্লাহ দুনিয়ায় প্রেরণ করেন। অবশেষে সর্বশেষ নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর উপর পরিপূর্ণ শেষ আসমানী কিতাব আল কুরআন নাজিল করা হয় এবং পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাব অকার্যকর করা হয়। শেষ নবী (স.) কে হবেন, কেমন হবেন, তা পবিত্র কুরআনের পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব সমূহে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বাসী বলতে বোঝায়- আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী, ফেরেস্তাগণে বিশ্বাসী, কুরআনে বিশ্বাসী, অন্যান্য আসমান কিতাবে বিশ্বাসী, নবী-রাসূলগণে বিশ্বাসী, বিচার দিনে বিশ্বাসী এবং ভালমন্দ যা কিছু হয়- তা আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়, তাতে বিশ্বাসী। আপনি এই সকল বিষয়ে বিশ্বাসী হলে আপনিও একজন মুসলমান এবং আপনার ধর্ম ইসলাম। কাউকে ইসলামের দাওয়াত দিলে আমরা এই ভেবে দেই যে- আপনারা ও আমরা সবাই পরস্পরের আত্মীয়। বাবা আদম এবং মা হাওয়ার সন্তান আমরা সবাই। কেউ দশ জেনারেশন, কেউ বিশ জেনারেশন কিংবা কেউ আরো অনেক পূর্বে বিশ্বাসের ভিন্নতায় পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। আপনারা হয়ত বলছেন আমরা পথহারা, আর আমরা বলছি আপনারা সঠিক পথ থেকে বঞ্চিত। আমরা যা মনে করি- শুরুতে মানব সন্তান ছিলেন মাত্র দু’জন। তারপর ধীরে ধীরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তাই শুরুতে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন তাদেরকে আল্লাহ দুনিয়ায় বসবাসের জ্ঞান দান করে অনেকটা মুক্তভাবে ছেড়ে দেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে দুনিয়া ও আখেরে সুখী হওয়া যায় এমন পথ প্রদর্শন করতে মহান আল্লাহতা’লা ধাপে ধাপে নবী-রাসূল ও আসমানী কিতাব প্রেরণ করেন। দুনিয়ায় কোন বিজ্ঞানী কোন কিছু আবিষ্কার করলে তা একটি ক্যাটালগসহ আমাদের হাতে পৌঁছে দেন। একই আবিষ্কারকে আরো উন্নত করলে সেটিও ক্যাটালগসহ পৌঁছে যায় আমাদের হাতে। কিছু মানুষ আছেন তারা অর্জনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও উন্নত ভার্সন গ্রহণ করতে চান না, যা আছে তা নিয়েই থাকতে চান। যেমন আমার হাতে একসময় ফ্লিপ ফোন ছিল। বাজারে আই ফোন আসার পর তা অনেক উন্নত হওয়া সত্ত্বেও সহজে আমি আইফোন নিতে চাইনি। আমি মনে করতাম আমার জন্য ফ্লিপ ফোনই ভাল। কিন্তু ছেলেরা জোর করে আই ফোন কিনে দিলে এখন ভাবছি আই ফোন আরও অনেক ভাল। পবিত্র কুরআন আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষও পরিপূর্ণ দুনিয়া ও আখেরের ক্যাটালগ। তা অনেকে সহজে গ্রহণ করতে চান না। কিন্তু যারা গ্রহণ করেছেন তাঁরা অন্যান্যদের জন্য খুব আফসোস করেন। অনেকে ইসলামের দাওয়াতে নিজেকে মনে-প্রাণে উৎসর্গ করেন।
অবশ্য কেউ যদি কোন ভক্তি ছাড়া পবিত্র কুরআনকে জানতে চান, তিনি হয়ত তাতে কোন রহস্য খুঁজে পাবেন না । আর ভক্তি সহকারে যতই খুঁজবেন ততই আল্লাহর মহিমা ও সত্যের সন্ধান পাবেন। অবশেষে দেখবেন এই পৃথিবীতে যত সম্পদ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সম্পদ এই কুরআনের বাণী। উদাহরণ স্বরূপ ঃ খনি থেকে কোন সম্পদ আহরণকালে কোদালের প্রথম কোপে কোন কিছুই পাওয়া যায় না। কিন্তু যতই গভীরে পৌঁছা যায় ততই মূল্যবান খনিজসম্পদ বা আকরিকের সন্ধান মেলে। অবশেষে দেখা যায় কোন ভূখন্ডের উপরিভাগে যত মূল্যবান সম্পদ রয়েছে তার চেয়ে ঢের বেশি মূল্যবান সম্পদ মাটির গভীরে লুক্কায়িত রয়েছে। তাই সকল সৃষ্টির ক্যাটালগ বা শাশ^ত জীবনবিধান আল কুরআন অনুসরণ করে আমরা এমন সব মহা মূল্যবান সম্পদ অর্জন করতে পারি যা সারা দুনিয়ার সম্পদের চেয়েও অনেক অনেক বেশি মূল্যবান। প্রশ্ন জাগতে পারে যে দুনিয়া সৃষ্টি ও মানবজাতি প্রেরণের শুরুতে কি আল্লাহর চিন্তা পরিপূর্ণ ছিল না? আল্লাহ কেন ধাপে ধাপে ইহকাল ও পরকালের ক্যাটালগ পাঠালেন? জবাব হলো- আল্লাহর জ্ঞান অসীম। তিনি মহাজ্ঞানী। তাই সময় এবং প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে মানবজাতি কখন এবং কতটুকু তাঁর লীলা বুঝতে পারবে এবং মানতে পারবে তা বিবেচনা করেই ধাপে ধাপে ক্যাটালগ বা নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। বিজ্ঞানীদের আকাশে পাঠানো স্যাটেলাইটের সাথে যোগাযোগ রাখতে পৃথিবীতে আরেকটি গ্রাউন্ড স্যাটেলাইট তৈরি করতে হয়। উভয় স্যাটেলাইটের যেগাযোগের মাধ্যমে মহাকাশের তথ্য পাওয়া যায়। আমরা যারা ঈমান নামের স্যাটেলাইট আমাদের হৃদয়ে স্থাপন করতে পারবো তাঁরাই কেবল আল্লাহর লীলা বুঝতে পারবো। আর এই গ্রাউন্ড স্যাটেলাইট তৈরির উপকরণ হলো ‘আল্লাহর অনুগ্রহ অর্জন’, যা তাঁর কাছেই চাইতে হয়। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁর নিজের ইচ্ছা ও খুশীতে। তিনিই জানেন তাতে তাঁর কত আনন্দ। আমরা যেমন দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান করি, তার জন্য শ্রম দান করি টাকাও খরচ করি। শুধুমাত্র মন ও চোখের আনন্দের জন্য। আল্লাহ আসল বাগান বানাবেন পরকালে। দুনিয়ায় আমাদের কাজকর্মের হিসেবে আমাদেরকে দিয়ে সেখানে বাগান সাজাবেন। পরকালে ভাল থাকার জন্য দুনিয়া আমাদের অনুশীলন ও পরীক্ষা কেন্দ্র। দুঃখের বিষয় হলো- দুনিয়াবী সম্পদের মোহে আবিষ্ট এবং লোভে পড়ে তার পেছনে ধাওয়া
করায় আমরা পরকালে
চিরসুখী হতে দুনিয়ায় আল্লাহ প্রদত্ত লোভনীয় অফারগুলো গ্রহণ করতে পারি না। জাগতিক ভোগ-বিলাস ও মুখরোচক খাবার সংগ্রহ এবং স্ত্রী সন্তানদের সুখনিশ্চিত করার জন্য সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকায় আমরা পরকালীন পাথেয় সঞ্চয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কিন্তু আমরা জানি যে দুনিয়াতে পুরোপুরি সুখী হওয়া কারও পক্ষেই সম্ভবই নয়। শিক্ষিত অশিক্ষিত ধনী গরীব সকলেই কোন না কোনভাবে দুঃখী। তার চেয়ে এই সময় আল্লাহকে খুশী রাখার চেষ্টা করলে ইহকাল ও পরকালে সুখী হওয়া সম্ভব। যে কোন কিছু একটি মাত্রার চেয়ে বেশি বা কম হলে তা অস্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক কিছুই ভাল নয়। আমরা সন্তানদের আমাদের নিজের চেয়ে বেশি ভালবাসি। তাই জীবন চলার মত আর্থিক অবস্থা থাকা সত্ত্বেও সন্তানদের সুখী ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে আমরা পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ি। তা সঠিক নয়। বহু জেনারেশন পূর্বে আমাদের কেউ একজন ইসলামের দাওয়াত কবুল করেছেন এবং তাঁর আত্মীয়গণের অনেকে শয়তানের ধোঁকায় ইসলাম কবুল করেন নি। (শয়তান আল্লাহকে বলেছিল আমরা মানুষদের আমাদের পথে টানবো) আমরা মনে করি আপনারা, ভিন্ন ধর্মের লোকেরা শয়তানের ধোঁকায় পড়া আমাদের ঐ আত্মীয়গণের বংশধর। তাই মনের ভালবাসা থেকে এবং আল্লাহকে খুশি করতে আমরা আপনাদেরকে ইসলামের পথে দাওয়াত দিচ্ছি। তা ছাড়া এটা আমাদের ধর্মীয় কর্তব্য। আমরা ভাগ্যবান যে আমাদের পূর্ববর্তী কোন এক মুরুব্বী ইসলাম ইসলাম গ্রহণ করায় আমরা সরাসরি মুসলমান। আর আপনাদের মুরুব্বী আল্লাহর নির্দেশিত পথ গ্রহণ না করায় আপনাদের জন্য নতুন করে ইসলাম গ্রহণ করা কঠিন হয়েপড়েছে। কারণ বর্তমানে নতুন করে ইসলাম গ্রহণ করা এত সহজও নয়। আজ আমিও যদি আপনাদের দলের একজন হতাম তবে আমারও একই অবস্থাই হতো। তবে আপনাদের খুশির খবর হল- আপনারা স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কেটে যদি আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি অনুগত হন, তবে আপনাদের জন্য ক্ষমা পাওয়া আমাদের চেয়ে সহজ। এমন কি একই কাজে আমাদের চেয়ে আপনাদের নেকি অনেক বেশি হবে। অর্থাৎ আমাদের অতীত গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করতে পারেন, নাও করতে পারেন। কিন্তু যখন থেকে আপনারা আল্লাহ মনোনীত ও তাঁর রাসূল (স) প্রচারিত ধর্ম গ্রহণ করবেন, তখন থেকে আপনার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
তবে অবশেষে আমি যে ইসলাম গ্রহণ করতাম তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি; কারণ আমি মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলেও আমার মনে অনেক প্রশ্ন ছিল। সেই প্রশ্নগুলোর জবাব না পাওয়া পর্যন্ত আমি ক্ষান্ত ছিলাম না। এমনকি আমি খুব শক্ত মনের একজনবিশ্বাসীও ছিলাম না। যাকেই ধর্মীয় প্রশ্ন করেছি তিনি কোন জবাব না দিয়ে বরং আমাকে তওবা করার পরামর্শ দিয়েছেন। অতঃপর একজন উচ্চ শিক্ষিত আলেম আমার প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন আমার প্রশ্নগুলো অর্থবহ ছিল। তিনিআরো বলেছেন যে যাদের মনে এমন প্রশ্ন জাগবে না, কিছু না বুঝেই তারা ইসলামে দলগত হয়েছেন। আমি সঠিক পথে চলার জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করেছি । আমি মনে করি কোন মাদ্রাসা শিক্ষা ছাড়াই আল্লাহ আমার ইসলামিক জ্ঞানের দরজা সামান্য খুলে দিয়েছেন। তার প্রমাণ যেভাবে পেয়েছি তা হলো- আমি মাদ্রাসার ছাত্র ছিলাম না কখনো। এলাকার একজন গীতিকার এবং প্রবাসী হিসেবে গ্রামের স্থানীয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আমাকে ডেকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে পাঁচ মিনিট বক্তব্য দেয়ার সূযোগ দেন। যেহেতু আমি বক্তৃতা দানে অভ্যস্ত নই, তাই পাঁচ মিনিট কথা বলে নিজেই থেমে যাই। তাঁরা আরো কথা বলতে আমাকে অনুরোধ করেন। আবারো দশ মিনিট কথা বলে আমি থেমে যাই। তাঁদের অনুরোধে এরপর প্রায় এক ঘন্টা পনের মিনিট কথা বললাম। আমি যখন পাঁচ মিনিট বক্তব্য শেষ করি, প্রিন্সিপাল সাহেব ছাত্রদের একটি ক্লাস সাসপেন্ড করে আমার কথা ছাত্রদের শোনার সুযোগ দিতে একজন শিক্ষককে হুকুম দেন। পরে প্রিন্সিপাল সাহেব মন্তব্য করলেন ঃ “ইনি প্রাতিষ্ঠানিক ইসলামী শিক্ষা গ্রহণ না করলেও হাদিসের বাইরে কোন কথা বলেননি”। এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি মনে করি আল্লাহ নিজেই আমার হৃদয়ে কিছু ইসলামিক জ্ঞান দান করেছেন।
আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে বেশ কিছু মাধ্যম রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হল ওয়াজ মাহফিল। এই ওয়াজ মাহফিল থেকে মুসলমানের মনে কোন কঠিন প্রশ্ন থাকলে তার জবাব দেয়া, কুরআনের বাণীগুলো বুঝিয়ে বলা, আল্লাহ যেসব বিষয়ে সতর্ক করেছেন এবং যেসব বিষয়ে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন তা জনগণকে অবহিত করা ছিল ওয়াজের মূল উদ্দেশ্য। ওয়াজ শুনে যেন মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি হয় এবং অন্যান্য ধর্মের লোকদের কানে পৌঁছলে তাঁরাও যেন কুরআনের বাণীর প্রতি আকৃষ্ট হন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল ওয়াজ মাহফিলে উচ্চ ভলিউমের মাইক ব্যবহার করলেও তা থেকে কৌতুক, প্যারডি গান, নৃত্য, ঝগড়াটে কথা এবং সুরেলা কণ্ঠে বাংলা কিসসা, বিদেশ ভ্রমণের গালগল্প প্রচার হয়। গান পরিবেশন করে কন্ঠের প্রতিভা প্রদর্শন করা হয়। গান শেষ করে “ বলুন, নাউজুবিল্লাহ” বলে হারামকে হালাল করা হয়। এইসব মাহফিল থেকে শেখার কিছু নেই- না মুসলমানের না অমুসলমানের। গান ও কৌতুক পরিবেশনের মধ্যে ওয়াজি ভাইরাল হন এবং সারা বছর ওয়াজির বুকিং থাকে। আপনারা এইসব হুজুরদের ইসলামের খাদেম ভাববেন না। ভাবগম্ভীর ধর্মকে নিয়ে তামাশার ছলে পরিবেশন করার জন্য পরকালে তামাশাকারীর জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। শেষ বিচারের দিন আমাদের সবাইকে সবকিছুর কড়ায়-গন্ডায় হিসাব দিতে হবে। সেদিন ‘আমি জানতাম না’ অথবা ‘আমার জানার সুযোগ ছিলনা’ বলে পার পাওয়া যাবে না। তেমনি দুনিয়াবী সকল আইনও নাগরিকের জানা বাধ্যতামূলক: জানতাম না বলে দুনিয়ার আদালতেও ক্ষমা মেলে না। সাধারণত আমরা মনে করি আইন বুঝবেন উকিল আর বিচারকগণ। কিন্তু তা সত্য নয়, আইন সকলকেই জানতে হয়। শুধু নিজের দেশের আইন নয়, সারা পৃথিবীর সকল দেশের ছোট বড় আইন এবং নিয়ম-কানুন জানতে হয়, যদি বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছা মনে থাকে। আইন না জানলে কখনো জরিমানা, কখনো কারাভোগ করতে হবে।
ইউরোপ-আমেরিকায় অসংখ্য বাংলাদেশি পরিবারের অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের ঐ দেশের সরকার নিজের হেফাজতে নিয়ে গেছে, তাদের পিতামাতা সন্তানের গায়ে হাত তুলেছিলেন বলে। পশ্চিমা দেশে অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের ধমক দেয়া বা গায়ে হাত তোলা শুধু দন্ডনীয় অপরাধই নয়, সরকার তাদেরকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায়। সন্তানের বয়স ১৮হলে ফেরত দেয়। ততদিনে এইসব সন্তানরা পরিবারকে ভুলে যায়। কেউ কেউ কুকুরকে লাথি দিয়েও জেলে গেছেন। সিঙ্গাপুওে রাস্তায় কাগজ ফেলে অনেককে জরিমানা দিতে হয়েছে, যার মূল্য বিমান টিকিটের চেয়েও বেশি। অর্থাৎ এক দেশে যা খুব স্বাভাবিক বিষয় অন্যদেশে তা বিরাট অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। কখনো কেউ ক্ষমা পান নি “আমি এই আইনটি জানতাম না” বলে। যেহেতু পবিত্র কুরআন আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ আসমানী কিতাব। তাই এই কিতাবের বাণী সকলের কাছে পৌঁছে দেয়া বিশ্বাসীদের দায়িত্ব। ইসলামের পথে দাওয়াত না দেয়ার কারণে মুসলমানদেরও জবাবদিহি করতে হতে হবে এবং দাওয়াত গ্রহণ না করলে অমুসলিম ভাইবোনদের ও জবাব দিতে হবে। এই যেমন আমি যতটুকু পারছি আমার মত করে চেষ্টা করছি। আমার মনে হয় কারো কথা বলে বা লিখে দাওয়াত পৌঁছাতে সম্ভব না হলে, তিনি আরেকজনের লেখা শেয়ার করেও নেকি অর্জন করতে পারেন। পরকালে আপনারা বলবেন, হুজুরদের ওয়াজ কিছুটা শুনেছি। তাতে কৌতুক কিসসা আর বিদেশ ভ্রমণের বাহাদুরিই শুধু প্রাধান্য পেয়েছে। তাই আমি বলি, ইতোমধ্যে অন্যান্য ধর্ম থেকে যেসব জ্ঞাণী গুণী মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছেন- তাঁদের বক্তব্যও শুনতে পারেন। আর যাঁরা সুর বা কন্ঠের অতিশয় প্রতিভা না দেখিয়ে সাবলিল ভাষায় বক্তব্য রাখেন, তাঁদের কথাও শুনতে পারেন। মুমিন জীবনের প্রধানতম লক্ষ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি বা তাঁর ভালোবাসা অর্জন। আমরা ইহকাল ও পরকালে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভের আশায় খুব আন্তরিকভাবে তাঁরই সাহায্য কামনা করতে পারি। আমরা বলতে পারি- “হে আল্লাহ/ ভগবান/ গড/ স্রষ্টা আমাদেরকে আপনার নির্দেশিত পথে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিচালিত করুন, আমরা আপনারই সাহায্য চাই”। তা বলতে হবে মনে-প্রাণে। আল্লাহ আমাদের সকলের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে তাঁর ইচ্ছায় দুনিয়ায় আমাদেরকে পরিচালিত করুন এবং আদম হাওয়া পরিবারকে জান্নাত দান করুন। আমার এই লেখায় অনিচ্ছাকৃত কোন ভুল হয়ে থাকলে মহান আল্লাহ পাক আমাকে ক্ষমা করুন, আমিন!
লেখক : গীতিকার