আফ্রিকায় খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বৈরথ  

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৪, ১০:১৪ , অনলাইন ভার্সন
যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকায় খনিজপণ্য পরিবহনের একটি রুট তৈরির কাজ করছে। জাম্বিয়া ও কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র থেকে অ্যাঙ্গোলা পর্যন্ত রেলপথটি একসময়ে চালু ছিল, যা এখন পরিত্যক্ত অবস্থায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন চীনের প্রভাব রুখে দিতেই এই করিডোর পুনরায় চালু পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। চীনের কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যেই ঐ দেশগুলোতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে।

জাম্বিয়া ও কঙ্গো থেকে অ্যাঙ্গোলার লবিটো বন্দর পর্যন্ত রেলপথ যা লবিটো করিডোর নামে পরিচিতি পেয়েছে সেটি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে খনিজ পণ্য রপ্তানির কাজে ব্যবহূত হবে। পশ্চিমা দেশগুলো আফ্রিকার খনিজ সম্পদের কাছে পৌঁছানোর সহজ রুট খুঁজছে। চীন যেহেতু আগে থেকেই ঐ অঞ্চলে বিনিয়োগ শুরু করেছে, সেজন্য চীন এ প্রতিযোগিতায় আগে থেকেই সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। এই উদ্দেশ্যে ইউরোপের কয়েকটি কোম্পানি মিলে গঠন করেছে একটি কনসোর্টিয়াম। ইতালি প্রকল্পে ৩২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী গিয়োর্গিয়া মেলোনি সম্প্রতি বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র১ দিবে ২৫০ মিলিয়ন ডলার। প্রকল্পে বৃহত্ বিনিয়োগকারী আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (৫৫০ মিলিয়ন ডলার) এবং আফ্রিকান ফিন্যান্স করপোরেশন। লবিটো প্রকল্পে সব মিলিয়ে ২.৩ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কঙ্গো মূল্যবান খনিজ কোবল্ট উত্পাদনে বিশ্বে নেতৃস্থানীয়। বৈশ্বিকভাবে এ পণ্যটির ৭০ ভাগ ঐ দেশ থেকে আসে। কঙ্গো ও জাম্বিয়া আফ্রিকার প্রধান তামা উত্পাদনকারী দেশ। অন্যদিকে অ্যাঙ্গোলায় যে ৫১টি খনিজ পাওয়া যায় এর ৩৬টি গ্রিন এনার্জি প্রযুক্তির জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। বেলজিয়াম ও পর্তুগাল ১৯০২ থেকে ১৯২৯ সালের মধ্যে সেখানে রেললাইন বসিয়েছিল। অ্যাঙ্গোলার স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা পরবর্তী গৃহযুদ্ধের সময় সেটি ধ্বংস হয়। অ্যাঙ্গোলা ১৯৭৫ সালে পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীন হয়। বেলজিয়াম ও পর্তুগাল সেখানে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটারের যে রেললাইন তৈরি করেছিল সেটাই ব্যবহার উপযোগী করে চীনের খনি কোম্পানিগুলো এখন ব্যবহার করছে। পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে কেবল কানাডার ইভানহো মাইনস তা ব্যবহার করতে পারে।

এদিকে লবিটো করিডোরের বিকল্প হিসেবে চীন ৫০০ কিলোমিটার কম দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট তাজারা লাইন পুনর্নির্মাণ করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। কঙ্গো ও জাম্বিয়া থেকে এর মধ্য দিয়ে আরো দ্রুত খনিজ পরিবহন করা যাবে। লাইনটি চীন মাও জেডংয়ের সময়ে ১৯৭০ এর দশকে প্রথম নির্মাণ করেছিল। লাইনটি জাম্বিয়াকে ভারত মহাসাগরীয় বন্দর দার এসসালামের সঙ্গে যুক্ত করেছে। গত পাঁচ দশকে আফ্রিকায় চীন বলতে গেলে এই একমাত্র অবকাঠামো প্রকল্পটিতেই বিনিয়োগ করেছে। তা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আফ্রিকায় অবকাঠামো বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীন এগিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে বিলম্ব করে ফেলেছে। জাম্বিয়ার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক প্রধান নির্বাহী ইভানস ওয়ালা চাবালা লিখেছেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে লবিটো করিডোরের বিষয়টি আসলে অনেক দেরি হয়ে গেছে... আফ্রিকার অধিকাংশ সাপ্লাই রুটই এখন চীনের নিয়ন্ত্রণে’। চাবালা বর্তমানে দেশটির সরকারের একজন পলিসি পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। তবে তিনি এটাও বলেছেন, এই খাতে মার্কিন বিনিয়োগ অন্যান্য দেশকে এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কিছুটা কমবে।

কঙ্গোর পূর্বাঞ্চল দীর্ঘদিন গৃহযুদ্ধকবলিত থাকায় সেখানে দক্ষ জনবলের ঘাটতি আছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন করিডোর তৈরি করে সেখান থেকে খনিজ বাইরে নিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা কেবল চীনেরই আছে। কেউ কেউ বলছেন, শুধু খনিজ পরিবহন বা চীনের প্রভাব টেনে ধরার চেয়েও লবিটো করিডোরের কিছুটা বেশি গুরুত্ব আছে। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চীনের সঙ্গে আফ্রিকার দেশগুলোর বর্তমান সম্পর্ক নাও থাকতে পারে। তাছাড়া বিশ্ববাণিজ্যে ডলারের গুরুত্ব কমে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নিকট ভবিষ্যতে তৈরি হবে বলে মনে হয় না।

বর্তমানে ইলেকট্রনিক ভিয়েকল বা ইভি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত চীন। কারণ দেশটি এই প্রযুক্তির জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় খনিজ উপকরণ লিথিয়াম কঙ্গো ও জাম্বিয়া থেকে সংগ্রহ করতে পারছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো থেকে এ ব্যাপারে কিছুটা পিছিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্রে ইভির বাজারে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেছে টেসলা। অন্যদিকে চীনের রয়েছে বিওয়াইডি, গিলি, জেপেং ও চেরির মতো কয়েকটি কোম্পানি। এদিকে কঙ্গো ও জাম্বিয়ার পাশাপাশি জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া ও নাইজেরিয়াকে নিয়ে চীন একটি মনোপলি চেইন তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমারা এক্ষেত্রে যে সমস্যার মুখোমুখি তা হলো ঐ সব দেশের ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে। বলা অনাবশ্যক, এই চীনা কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতা বা আইনকানুন নিয়ে খুব বেশি ভাবতে হয় না। এ কারণে পশ্চিমা কোম্পানিগুলোকে কিছুটা অসম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041