বাইডেন-ট্রাম্প শোডাউন

প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৪, ১১:১৯ , অনলাইন ভার্সন
মার্কিন রাজনীতির ঐতিহ্য অনুযায়ী দেশের সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মধ্যে একাধিক বিতর্ক অনুষ্ঠানের রেওয়াজ রয়েছে। গভর্নর, মেয়র ও কংগ্রেসম্যান পদের প্রার্থীদের মধ্যেও অনুরূপ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। তবে বোধগম্য কারণেই প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থীদের মধ্যে বিতর্ক অনুষ্ঠানকে ঘিরে রাজনৈতিক মহল ও জনগণের মধ্যে যে ধরনের বিপুল আগ্রহ ও উত্তেজনা পরিলক্ষিত হয়, সেটা অন্যদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে হয় না। প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থীরা কে কীভাবে দেশে বিদ্যমান সমস্যা ও ইস্যুগুলোর মোকাবেলা ও সমাধান করবেন এবং নির্বাচিত হলে কার ভবিষ্যত পরিকল্পনা (Vision) ও অগ্রাধিকার কী রকম হবে, সে সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা বিতর্কের লক্ষ্য। মার্কিন গণতন্ত্রের জবাবদিহিরও এটা একটা অংশ।
যে প্রার্থীর বক্তব্য ও কর্মপরিকল্পনা জনগণের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য ও পছন্দনীয় হয়, তারা তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন। এই প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় এবারের নির্বাচনের প্রাক্কালে দুটি প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সাধারণত : ফেডারেল বিতর্ক কমিশন এই বিতর্কের আয়োজক হলেও গত ৩০ বছরের মধ্যে এবারে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ইচ্ছানুযায়ী দু’টি মিডিয়াকে সে দায়িত্ব দেয়া হয়। মিডিয়াগুলো হলো সিএনএন ও এবিসি টেলিভিশন।
সিএনএন আয়োজিত বিতর্কটি ২৭ জুন অনুষ্ঠিত হয়। ৯০ মিনিটের অডিয়েন্সবিহীন বিতর্কে মডারেটর ছিলেন ওই টেলিভিশনের সিনিয়র সাংবাদিক জ্যাক ট্যাপার (Jake Tapper) ও ড্যানা ব্যাশ (Dana Bash)। তারা উভয়েই ডেমোক্র্যাট সমর্থক ও কট্টর ট্রাম্পবিরোধী হিসেবে পরিচিত। জ্যাক ট্যাপার একবার ট্রাম্পকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ও শেষ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর যার মডারেটর থাকবেন এবিসি টেলিভিশনের দু’জন সাংবাদিক ডেভিড মুইর David Muir) ও লিনজে ডেভিস (Linsey Davis)। প্রথম বিতর্কের ন্যায় দ্বিতীয় বিতর্কটিও দর্শকশূন্য স্টুডিও কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াসহ সর্বমহলে এবারের প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ককে ঘিরে যেরকম আগ্রহ ও উত্তেজনা দেখা যায়, সেরকমটি সমকালীন আমেরিকার আগের কোনো বিতর্কের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি, যে কারণে এবারের বিতর্ককে মার্কিন রাজনৈতিক মহল ‘Mother of all Presidential Debates’ হিসেবে আখ্যা দেন।
বাইডেন ও ট্রাম্প উভয়ের জন্যই এই বিতর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। বিভিন্ন জনমত জরিপে নির্বাচনে দু’জনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস থাকায় তাদের দু’জনের জন্যই বিতর্কে বাজিমাত করা জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে বাইডেনের বয়স, দুই মহাদেশে দু’টি যুদ্ধ এবং দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক নাজুক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিতর্কে ভালো করাটটা অত্যাবশক হয়ে দাঁড়ায়। বলা যায়, এটা হয়ে উঠে তার জন্য একটা Litmas test-এর মতো। অপরদিকে ট্রাম্পের জন্যও ফৌজদারি মামলার একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি (Convicted Felon) হিসেবে জনগণের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার দায়ও খুব একটা কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। ট্রাম্প আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি অপরাধী কিনাÑ সেই বিচারের ভার তিনি জনগণের ভোটের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। সে জন্য জনগণের কাছে নিজেকে বাইডেনের চাইতে অধিক যোগ্য প্রমাণ করাটা তার জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে ওঠে।
সাম্প্রতিকালে বাইডেন দেশের বাইরে দু’টি আন্তর্জাতিক কর্মসূচিতে (D-Day celebrations I G-7 Summit) অংশ নেন। এসব কর্মসূচিতে বাইডেনের বয়সজনিত দৈহিক ও মানসিক সুস্থতা ও সামর্থ নিয়ে বেশ কিছু নেতিবাচক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে দেখা যায়, যা জনগণের মধ্যে আগামী চার বছর মুক্ত বিশ্বের নেতৃত্ব দানে তার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেগ করে। শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে তিনি যে যথেষ্ট সক্ষম ও সচেতন (Aler) বিতর্কে ভালো করার মাধ্যমে তা প্রমাণ করা বাইডেনের জন্য জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। এ লক্ষ্যে তার উপদেষ্টার প্রস্তুতির জন্য বিতর্কের ৭ দিন পূর্বে তাকে মেরিল্যান্ডের ক্যাম্প ডেভিডে নিয়ে যান। সেখানে তার সাবেক চিফ অফ স্টাফ রন ক্লাইন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানসহ আরও কয়েকজন উপদেষ্টা তাকে বিতর্কের প্রস্তুতিতে নানাভাবে সহায়তা করেন। বাইডেন তার ব্যক্তিগত আইনজীবী বব বাওয়ারকে ট্রাম্প সাজিয়ে তার সঙ্গে মিছেমিছি (Mock) বিতর্কে অংশ নেন। অপরদিকে ট্রাম্প কয়েকটি নির্বাচনী প্রচার সভা ও নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিতর্কের দু’দিন পূর্বে ফ্লোরিডার মার অ্যালাগোর বাসভবনে ফিরে তার উপদেষ্টাদের সঙ্গে কয়েকটি পরিলসি সেশনে যোগ দিয়ে বিতর্কের জন্য প্রস্তুত হন। মিডিয়াতে প্রকাশিত তথ্যমতে মে মাসে ট্রাম্পের নির্বাচনী ৩২ বিলে ১৫১ মিলিয়ন ডলার জমা হয়, যার একটি বড় অংশ বিভিন্ন রাজ্যে লেবার ডে পর্যন্ত সময়ে টিভিতে তার নির্বাচনী বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য ব্যয়িত হবে।
এবারে বিতর্কের প্রসঙ্গে আসা যাক। বিতর্কে বাইডেন সমর্থকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাইডেন তার পূর্বসূচির (ট্রাম্প) বিশৃঙ্খল নেতৃত্ব, ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়া, নিজের নানা সাফল্যের রেকর্ড এবং সর্বোপরি ট্রাম্প নির্বাচিত হলে দেশকে যে কতটা অন্ধকার ভবিষ্যতের মুখোমুখি হতে হবে। সেটা জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। অপরদিকে ট্রাম্প বাইডেনের শাসনে দেশ কতোটা ব্যয়বহুল, দুর্বলতর ও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, সে বিষয়ে আলোকপাত কররেন। আগেরবারের বিতর্কে তিনি যে রকম অসংযত আচরণ করেন, সে তুলনায় এবারে তার আচরণ ছিল বেশ সংযত ও Disciplined। বিতর্কে তিনি অর্থনীতি, রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতি, ইমিগ্রেশন তথা বর্ডার নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রসঙ্গ বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। বাইডেনের শাসনে দেশের অবস্থা যেভাবে খারাপের দিকে যাচ্ছে, তা থেকে দেশকে উদ্ধারের জন্য তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছেন বলে ট্রাম্প ভোটারদের মনে করিয়ে দেন। নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না নামলে তিনি মামলা-মোকাদ্দমা ছাড়া ঝামেলাবিহীন আরামদায়ক জীবন কাটাতে পারতেন বলে জানান।
নির্বাচনে বিজয়ের জন্য বিতর্কে ভালো করাটা একটা ফ্যাক্টর হলেও এর সঙ্গে আরও অনেক ফ্যাক্টর জড়িত রয়েছে। মার্কিন জনগণ তাদের প্রেসিডেন্টের অন্যান্য গুণের মধ্যে Confidence, strength দেখতে চান। বিতর্ক দেখে মনে হয়েছে বাইডেনের মধ্যে এ গুণগুলোর যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। বিতর্কের প্রথম থেকে শেষ অবধি তিনি নিজের বক্তব্য গুছিয়ে বলতে পারেননি। কথা বলতে গিয়ে তিনি মাঝে মধ্যেই হয় খেই হারিয়ে ফেলেছেন নতুবা এমনভাবে বিড়বিড় করে কথা বলেছেন, যা বহু দর্শক শ্রোতার পক্ষে শুনতে ও বুঝতে অসুবিধা হয়েছে। তার প্রতিপক্ষের তুলনায় বক্তব্য ও যুক্তি উপস্থাপনের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অত্যন্ত নিষ্প্রভ, যে কারণে খোদ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অনেককে বিতর্কে তার Performance নিয়ে ব্যাপক হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তারা তার Performance কে nothing good বলে বর্ণনা করেন। কেউ কেউ তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে টিকিট দেওয়া যায় কি না- সেটা ভেবে দেখারও আওয়াজ তোলেন।
বর্ণিত অবস্থার প্রেক্ষাপটে আগামী বিতর্কে বাইডেন আশানুরূপ ভালো Perform না করতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনকে ঠেকানো কঠিন হবে বলে বিদগ্ধ মহলের ধারণা।
লেখক : কলামিস্ট।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078