প্রথম বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে ধরাশায়ী বাইডেন

প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৪, ২৩:২২ , অনলাইন ভার্সন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিয়েছেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিতর্কে আক্রমণাত্মক ট্রাম্পের সামনে বারবার খেই হারিয়ে ফেলেছেন ৮১ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট বাইডেন। নিজেদের প্রার্থীর এমন পারফরম্যান্সে ডেমোক্র্যাটিক দলের সদস্যরা হতাশ।

বাইডেনের বয়স নিয়ে আলোচনা চলছে দ্বিতীয়বার প্রার্থিতা ঘোষণার পর থেকেই। বিশেষ করে, মার্কিন তরুণেরা বয়সের কারণেই বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চায় না। এ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প বহুবার হাসি-ঠাট্টা করেছেন।

ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ফলাফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। আর প্রথম বিতর্কেই বাইডেনের এমন পরাজয়ে উদ্বিগ্ন ডেমোক্র্যাট নীতিনির্ধারকেরা। এ ক্ষতি কীভাবে পোষানো যাবে—তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। বাইডেনের বিকল্প খুঁজতে শুরু করেছেন অনেকে।

কেউ কেউ বাইডেনকে সরিয়ে নির্বাচনে নতুন প্রার্থী দেওয়ার কথা বলছেন। কিছু ডেমোক্র্যাট বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাতে শুরু করেছেন। আবার বাইডেন নিজে থেকে সরে দাঁড়াবেন কি না, সেটি নিয়েও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে কথা চলছে।

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্বাচনী প্রচার কৌশলবিদ ডেভিড অ্যাক্সেলরড সিএনএনকে বলেছেন, ‘বিতর্ক তুঙ্গে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাইডেন শক্তিশালী হয়েছিলেন। কিন্তু আমার মনে হয়, ততক্ষণে শ্রোতাদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে এখন যে আলোচনা চলছে, তাতে ফলপ্রসূ কিছু হবে না। তবে তার (বাইডেন) চালিয়ে যাওয়া উচিত কি না তা নিয়ে সামনে আলোচনা হবে।’

বাইডেনের এক শীর্ষ তহবিল জোগানদাতা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট “অযোগ্য” প্রমাণিত হয়েছেন। আগস্টে দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে বাইডনকে ভোটের লড়াই থেকে সরে যেতে নতুন করে আহ্বান জানানো হবে বলে আশা করছি।’

তবে বাইডেনের বিকল্প পাওয়া সহজ হবে না। এ ছাড়া বাইডেনকে পাশ কাটানো সম্ভব হবে কি না সেটি নিয়েও অনেকে সন্দিহান। বাইডেন ছাড়া কোন প্রার্থী দলের সমর্থন পাবেন সেটিও যেমন নিশ্চিত নয়, তেমনি সেই প্রার্থী ট্রাম্পকে মোকাবিলা করতে কতটা সক্ষম হবেন, সেটিও অনিশ্চিত।

ইতিহাস কী বলে
আমেরিকার ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী বদলের নজির আছে। প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন ১৯৬৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ান। ওই সময় ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকাজুড়ে প্রতিবাদ চলছিল। তোপের মুখে জনসন ওভাল অফিসে আকস্মিক এক ঘোষণায় বলেন, ‘আমি আর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দলের মনোনয়ন চাইব না। দল দিলেও আমি গ্রহণ করব না।’

কিন্তু সেটি ছিল ওই নির্বাচনী বছরের মার্চের শেষ দিকে। এখনকার মনোনয়নের বিবেচনায় এমন পরিবর্তনের জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। জনসনের বিপরীতে বাইডেন এরই মধ্যে মনোনয়নের জন্য যথেষ্ট ডেলিগেট নিজের অনুকূলে বাগিয়ে নিয়েছেন।

বাইডেনের মনোনয়ন বাতিল হবে কি?

এটি কঠিন হবে। বাইডেন দলীয় মনোনয়ন পেতে বড় কোনো বিরোধিতার মুখে পড়েননি এবং দলের সম্মেলনে প্রতিশ্রুত ডেলিগেটদের ৯৯ শতাংশ তার পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। নতুন প্রার্থী মনোনয়নে সম্মেলন ডাকা হলে এই ডেলিগেটদের বড় অংশ প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতিই আনুগত্য দেখাবেন। ফলে যেকোনো বিরূপ পরিস্থিতি এবং বিকল্প পরিকল্পনা বিবেচনায় বাইডেনের টিকিট বাতিল অনেকটাই অসম্ভব।

বাইডেনকে সরাতে গেলে এখন দলের সামনে দুটি পথ খোলা আছে। প্রথমত, বাইডেনের সম্মতি, আর নয়তো ওই ডেলিগেটদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, যারা বাইডেনকে সমর্থন দিয়েছেন।

এর পরও ডেমোক্র্যাট থেকে অন্য কেউ প্রার্থী হওয়ার কথা চিন্তা করলে তাকে ভোটের আগেই সেটি ঘোষণা করতে হবে। আর প্রেসিডেন্টকে চ্যালেঞ্জ করে মনোনয়ন বাগানো রীতিমতো দলের ভেতরে ক্যু করার মতো কঠিন বিষয়।

কত তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিতে হবে?

নির্বাচনের সময় বেশি নেই। নভেম্বরের আগেই বিকল্প প্রার্থী ঘোষণা করতে হবে। ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি (ডিএনসি) এরই মধ্যে ওহাইওতে ৭ আগস্টের ভোটের জন্য সম্মেলনের আগেই ফোনকলে বাইডেনের মনোনয়ন এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। অপরদিকে রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন ওহাইও আইনসভা সেই সময়সীমা বাড়িয়েছে।

তবে ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান জেইম হ্যারিসন বলছেন, ‘যেভাবেই হোক পার্টি প্রাথমিক রোল কলের সঙ্গে এগিয়ে যাবে।’ যদিও ১৯ আগস্টে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনটি নিছক আনুষ্ঠানিকতা।

সম্মেলনের পর বাইডেন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলে কী হবে?

বাইডেনের স্থানে ভিন্ন প্রার্থী আনার সিদ্ধান্ত দলের জাতীয় কমিটির সদস্যরা নেবেন। তবে এরপর দলটি আরও একটি বাধার মুখে পড়বে। কেননা ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এরই মধ্যে বাইডেনের নামসহ ব্যালট ছাপিয়ে ফেলেছে।

বাইডেন যদি আর দলীয় মনোনয়ন না পান, তাহলে তার নামের ভোটগুলো কীভাবে গণনা করা হবে, সেই আইন একেক অঙ্গরাজ্যে একেক রকম। তবে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটগুলো হয়তো বাইডেনের বিকল্প প্রার্থীর ঝুলিতেই যাবে।

সম্ভাব্য উত্তরসূরি?

বাইডেনের সবচেয়ে যৌক্তিক উত্তরাধিকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, তবে সেটিও স্বয়ংক্রিয় হবে না। প্রাইমারিতে বাইডেনের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছেড়ে তাকে সমর্থন দেওয়া অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম, ইলিনয়ের গভর্নর জেবি প্রিৎজকার এবং মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমার।

যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি নির্বাচনী অঙ্গরাজ্যে ব্লুমবার্গ নিউজ/মর্নিং কনসাল্টের জরিপ অনুসারে, এই প্রার্থীদের মধ্যে কেউই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়তে বাইডেনের চেয়ে ভালো অবস্থানে নেই।

তবে ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সম্ভাবনাময় দুই বিশিষ্ট প্রার্থী ইলিনয়ের গভর্নর জে বি প্রিৎজকার এবং ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম। তারা এই নির্বাচনেও বাইডেনের বিকল্প হতে পারেন। তবে তারা এখনো বাইডেনের পাশেই আছেন।

এমএসএনবিসি টিভি চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে নিউজমকে বাইডেনের সরে যাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘একটি মাত্র পারফরম্যান্সের কারণে আপনি মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন না। তা-ই যদি হয়, তাহলে সেটা আবার কেমন দল!’

প্রার্থী বদলালে টাকার কী হবে?

এখনকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এখানে আর্থিক দিকটি কোনো হেলাফেলার বিষয় নয়।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির হাতে মে মাসের শেষে নগদ ২১ কোটি ২০ লাখ ডলার ছিল। কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের টিকিট পেয়ে গেলে তিনি এই টাকা প্রচারের জন্য পাবেন। তবে অন্য কোনো প্রার্থী নির্বাচনের টিকিট পেলে তাকে শূন্য হাতে প্রচারে নামতে হবে।

বাইডেনকে পুনর্নির্বাচিত করতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এরই মধ্যে প্রায় ৩৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার ব্যয় করে ফেলেছে। অন্য প্রার্থী বাছাই ও তাকে ভোটারদের কাছে পরিচিত করতে পার্টিকে আরও বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হতে পারে।

ঠিকানা/এনআই
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041