মহান ত্যাগের মহিমা নিয়ে আসছে কোরবানির ঈদ

প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৪, ১২:৩৫ , অনলাইন ভার্সন
ঈদুল আজহা বা প্রচলিত কথায় কোরবানির ঈদ সমাগত। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ইতিমধ্যেই ঘোষিত হয়েছে আগামী ১৬ জুন আমেরিকায় উদযাপিত হতে যাচ্ছে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত পবিত্র ঈদুল আজহা। বাংলাদেশে হচ্ছে ১৭ জুন। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে কোরবানির পশুর আগাম কেনাবেচা হচ্ছে বিভিন্ন খামারের গরু-ছাগল এবং অন্যান্য পশু, যেমন উট, দুম্বা, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি। বাংলাদেশে ইদানিং অনেক ভালো ভালো খামার হয়েছে। উচ্চশিক্ষিত, এমনকি লন্ডন, আমেরিকা, জাপান, চীন, অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী অনেক যুবক বাংলাদেশে ভালো ভালো জাতের গরু-ছাগল তৈরি করছেন। তাদের এই উদ্যোগ ভারতীয় গরু-ছাগলের উপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা এবং বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে কোরবানির পশু চোরাচালানও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে। এও দেখা যাচ্ছে, অন্য খাতের পুঁজি তুলে অনেকে গরু-ছাগলের খামারে খাটাচ্ছেন।
যাক, এবার ঈদুল আজহার প্রেক্ষাপট, সামাজিক শিক্ষা এবং ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠনে ঈদুল আজহা কতটা ভূমিকা রাখতে পারে, সে নিয়ে কিছু কথা বলা যেতে পারে। মুসলমানদের ধর্ম ইসলাম। সব ধর্মের কিছু সাধারণভাবে পালনীয় কর্তব্য থাকে। তেমনি কিছু অত্যাবশ্যকীয় পালনীয় থাকে। ইসলামে অবশ্যপালনীয় কর্তব্য পাঁচটি-কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত। জিলহজ মাসের ৯ তারিখে চতুর্থ ফরজ হজ পালন এবং দশম দিনে আল্লাহর নামে কোনো হালাল পশু কোরবানি দেওয়া হয়। আসলে তিন দিন কোরবানি দেওয়া আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর অবশ্যপালনীয় কর্তব্য বলে নির্দেশ দান করেছেন। মনে রাখতে হবে, মহান প্রভু আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। আমাদের তাঁর প্রতিটি নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালনীয় কর্তব্য। আমাদের পরম পিতা, বিশ^জাহানের পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর প্রিয় বন্ধু।
আল্লাহর অসীম রহমতে মা হাজেরার কোলে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর ঔরসে জন্ম নিলেন হজরত ইসমাইল (আ.)। হজরত ইবরাহিমের চোখের মণি হজরত ইসমাইল। আল্লাহ হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করলেন। এক রাতে আল্লাহ পাক হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে স্বপ্নে আদেশ দিলেন, তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর নামে কোরবানি দিতে। হজরত ইবরাহিম (আ.) স্বপ্নের প্রকৃত অর্থ বুঝতে না পেরে একটি পশু কোরবানি দিলেন। পরের রাতে আবার স্বপ্নে আদিষ্ট হলেন তাঁর প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর নামে কোরবানি দিতে। এভাবে তিন রাতে হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে স্বপ্নের মাধ্যমে আদেশ দিলেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর নামে কোরবানি দিতে। এবার হজরত ইবরাহিম (আ.) বুঝতে পারলেন, তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু হজরত ইসমাইল (আ.)। তিনি বিচলিত বোধ করলেন। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ বলে কথা। পুত্র ইসমাইলও আল্লাহর নির্দেশের কথা শুনে সানন্দে নিজেকে সমর্পণ করলেন আল্লাহর ইচ্ছার কাছে। এরপর এক দূরবর্তী স্থানে নিয়ে গিয়ে প্রিয় সন্তান ইমাইলকে কোরবানি দিতে উদ্যত হলেন। আল্লাহ পিতা-পুত্রের নিয়তকে কবুল করে নিয়ে ইসমাইলের স্থলে একটি হালাল পশু কোরবানি দিয়ে দিলেন।
সেই থেকে সমগ্র সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য কোরবানি ওয়াজিব করে দিলেন। ৯ জিলহজ পবিত্র হজ পালনের পর কোরবানি করতে হয়। ঈদুল আজহার কোরবানির মধ্য দিয়ে ইসলাম ধর্মের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য প্রকাশ পায়। মানুষ আল্লাহর সৃষ্ট। সর্বোত্তম জীব হওয়া সত্ত্বেও তার মধ্যে অনেক কুপ্রবৃত্তি বাস করে। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অমান্য করে রিপুর দাসত্ব মেনে কুপথে পরিচালিত হয়। শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করে কুপথে চালিত করে। আল্লাহর নির্দেশিত পথ থেকে সরিয়ে এনে কুপথে পরিচালিত করে। ইসলামের আলোর পথ থেকে অন্ধকারের দিকে চালিত করে। ধর্মীয় দিক ছাড়াও পারিবারিক, সামাজিক, এমনকি অর্থনৈতিক দিক থেকেও কোরবানির প্রভাব অপরিসীম। ত্যাগের শিক্ষা, মানবতার শিক্ষা, সহমর্মিতা ও সহনশীলতার শিক্ষা লাভ করা যায় কোরবানির শিক্ষা থেকে। অনুভব করা যায় গরিব, দুঃখী, অসহায়, দুস্থ মানুষের অবস্থা। বিপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের দুঃখ-কষ্ট অনুভব করার শিক্ষা অর্জন করা যায় কোরবানির শিক্ষা থেকে। একটি আদর্শ ও সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার চেতনা অর্জন করা যায় কোরবানির মহিমা থেকে।
কোরবানি নিয়ে আরও একটি জরুরি কথা এখানে বলা যায়। আল্লাহর নির্দেশমতো যারা কোরবানি দিতে সক্ষম হন, আল্লাহ পাক তাদের কোরবানি এতটাই পছন্দ করেন যে কোরবানির পশুর রক্ত মাটি স্পর্শ করার আগেই আল্লাহ পাক তাদের কোরবানি কবুল করে নেন। তবে লোক দেখানো কোরবানি আল্লাহর একদম পছন্দ নয়। একটা কথা সকল মুসলমানদের স্মরণে রাখা দরকার, কোরবানিটা যেন অবশ্যই সর্বোতভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নিবেদিত হয়।
আমাদের প্রার্থনা আল্লাহ পাক যেন আমাদের নেক নিয়তের কোরবানি কবুল করে নেন। সবার জীবন ঈদ আনন্দে ভরে উঠুক। সবার জীবন সুন্দর ও পুণ্যময় হোক। প্রবাসে ও দেশে ঠিকানার সকল পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা-ঈদ মোবারক।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078