মোদী একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেন না যেসব কারণে

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৪, ১৪:৪২ , অনলাইন ভার্সন
ভারতের লোকসভা নির্বাচন যেমনটি ভাবা হয়েছিল তেমন একপেশে হয়নি বরং অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে, তারপরও টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন জোটই জয় পেয়েছে।

জোট হিসেবে এনডিএ সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭২টির চেয়ে বেশি আসন পেলেও মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আর আগের দুইবারের মতো (২০১৪, ২০১৯) একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, এবার তারা পেয়েছে ২৪০টি আসন। ক্ষমতা ধরে রাখতে হলে মোদীকে এবার নিশ্চিতভাবেই এনডিএ জোটের অংশীদারদের ওপর নির্ভর করতে হবে।

এই ফলাফল ব্যক্তি মোদীর জন্য একটি আঘাত হয়ে এসেছে। কারণ গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বা ভারতের প্রধানমন্ত্রী, যখন যে পদেই থাকুন তিনি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেই ক্ষমতায় ছিলেন এবং এক দশক ধরে দেশটির রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে রেখেছেন।

কিন্তু এবার নির্বাচনপূর্ব সব জরিপ ও কেন্দ্রফেরত জরিপগুলোকে ভুল প্রমাণ করে কংগ্রেস পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট ইন্ডিয়ার পুনরুত্থান ঘটেছে, তারা জয়ী হয়েছে ২৩৪টি আসনে।

বিবিসি জানাচ্ছে, অনেক বিশ্ব নেতাই তাদের তৃতীয় মেয়াদের নির্বাচনে হামাগুড়ি দিয়ে ফিনিশিং লাইন পেরিয়েছেন আর মোদীও কোনো ব্যতিক্রম নন। নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী বিজেপি এখনও ভারতের একক বৃহত্তম দল আর মোদী যদি জোটের অংশীদারদের সমর্থনে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তবে তিনি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর রেকর্ড স্পর্শ করবেন।

কিন্তু এবার মোদীর দল লোকসভায় ৬০টিরও বেশি আসন হারিয়েছে, তাই তার এবারের মেয়াদের আকর্ষণ অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে। নির্বাচনী প্রচারণাকালে মোদীর এনডিএ জোট ‘এবার ৪০০ পার’ শ্লোগান দিয়ে প্রচারণা চালিয়েছে, কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর অনেক আগেই তারা দম হারিয়ে ফেলেছে।

এতে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন শিবির যেমন উল্লসিত হয়েছে বিপরীতে বিজেপি শিবিরে কিছুটা হলেও হতশা ছায়া ফেলেছে। অতি আত্মবিশ্বাসী প্রচার ও প্রত্যাশা এভাবে ধাক্কা খাওয়ায় বিজেপির অনেক সমর্থক মুষড়ে পড়েছেন।

কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল, নাগরিকত্ব আইন, রাম মন্দির নির্মাণের মতো হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের অনেক প্রতিশ্রুতি পূরণ করলেও বেকারত্ব, মূল্যস্ফীতি, বাড়তে থাকা অসাম্য ও বিতর্কিত সেনা নিয়োগ সংস্কার এবং আরও কিছু বিষয়ের সঙ্গে সম্ভবত তাদের উল্লেখযোগ্য আসন হারানোর সম্পর্ক আছে।

শেষ পর্যন্ত যে বিষয়গুলো বিজেপির এই অপেক্ষাকৃত খারাপ ফলাফলের কারণ বলে সামনে আসছে তার মধ্যে মোদী নিজের যে ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছিলেন তার ক্ষয় অন্যতম। বিভিন্ন নিয়মিত অনুষ্ঠানকে রঙিন চশমা পরিয়ে ও সেগুলো নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চতুর বার্তা ছড়িয়ে নিজের ব্রান্ডিং দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন মোদী। দুর্বল বিরোধীদল ও বন্ধুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমও মোদী ব্রান্ড গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিল।

কিন্তু এবারের নির্বাচন দেখিয়েছে ব্রান্ড মোদী এবার তার কিছুটা ঔজ্জ্বল্য হারিয়েছে। প্রমাণ হয়েছে, সমর্থকরা তাকে যতটা অজেয় ভেবেছিল মোদী ঠিক ততটা নন।

মোদীর শাসনে ব্যক্তি স্বাধীনতার সঙ্কোচন, বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতাদের কারাগারে পাঠানো, সংখ্যালঘুদের মধ্যে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের একদলীয় শাসনের আতঙ্ক, দরিদ্রদের মধ্যে বঞ্চনার অনুভূতি মোদীর জনপ্রিয়তা হ্রাসে ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারতের ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দুই পঞ্চমাংশের বয়স ২৫ বছরের নিচে, তরুণ এসব ভোটাররা বেকারত্বের মতো কারণগুলোতে বিজেপি থেকে সরে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। মূলস্ফীতি মধ্যবিত্তদেরও ভোগাচ্ছে।

এর পাশাপাশি ভারতের বৃহত্তম সংখ্যালঘু মুসলিমদের কোনঠাসা করে দেওয়ার জন্যও মোদী সমালোচিত হয়েছেন।

সব মিলিয়ে বিজেপি এবার যে ফলাফল করেছে তাতে মোদীকে সামনের দিনগুলোতে অনেক হিসাব করে চলতে হবে, এটি পরিষ্কার হয়ে গেছে। কিন্তু টানা একচেটিয়া ক্ষমতা ভোগ করা মোদী-অমিত শাহ্ জুটি নতুন এই পরিস্থিতির সঙ্গে কতোটা খাপ খাওয়াতে পারবেন তাই এখন দেখার বিষয়।

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041