নিউইয়র্কে অফশোর ব্যাংকিং নিয়ে ক্যাম্পেইন

দেশের উন্নয়নে অংশ নিন নিজেরাও লাভবান হোন

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৪, ১৩:৪৬ , অনলাইন ভার্সন
অফশোর ব্যাংকিংয়ের আওতায় প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘরে বসেই বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে সঞ্চয় করতে পারবেন প্রবাসীরা। আবার চাইলেই খুব সহজে জমা করা এসব বৈদেশিক মুদ্রা নিতে পারবেন বিদেশে। এ ধরনের লেনদেনে প্রবাসীদের জন্য থাকছে কর ছাড়, লেনদেন ফি মওকুফসহ নানান সুবিধা। সঞ্চয়ের এসব অর্থ কিভাবে উপার্জন করা হয়েছে কিংবা আয়ের উৎসও জানতে চাইবে না ব্যাংকগুলো। 
গত ২৪ মে সন্ধ্যায় নিউইর্য়কের লাগোয়ারডিয়া ম্যারিয়েট হোটেলে বাংলাদেশের চারটি শীর্ষ ব্যাংকের (অগ্রণী, ব্র্যাক, ডাচ্ বাংলা ও সিটি ব্যাংক পিএলসি) উদ্যোগে অফশোর ব্যাংকিং ফিক্সড ডিপোজিট স্কিম নিয়ে প্রবাসী ও বিনিয়োগকারীদের সাথে মত-বিনিময় সভায়  এমন তথ্য জানান  ব্যাংকগুলোর এমডিরা।
এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নিউইয়র্ক ও এর পাশ্ববর্তী অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে তিন শতাধিকের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি যোগ দেন। উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তারাও। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী সায়দুর রহমান এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশে কনসাল জেনালের মো. নাজমুল হুদা। 
অনুষ্ঠানের শুরুতে অফশোর ব্যাংকিং সর্ম্পকে বিস্তারিত ধারনা এবং এ কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করলে কী সুবিধা পেতে পারে বিনিয়োগকারীরা সে সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোকপাত করেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন। তিনি জানান, এরই মধ্যে মরিশাসসহ বিশ্বে তুলনামূলক  ছোট অর্থনীতির দেশগুলো অফশোর ব্যাংকিংয়ের এ ধারণাকে কাজে লাগিয়ে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দেশে এনে দেশের অর্থনীতির ভিতকে মজবুত করছে। বাংলাদেশও এ সুযোগকে কাজে লাগাতে চায়। প্রায় ৫শ বিলিয়নের অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ যদি প্রবাসী বাংলাদেশী ও বিনিয়োগকারীদের নিকট সকল সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে বৈদেশিক মুদ্রা নিশ্চিত করতে পারে তাহলে দেশের ব্যাংকগুলোর আর্থিক সক্ষমতা  বাড়বে, বৈদেশিক মুদ্রার যোগান বেড়ে আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে, পাশাপাশি কমে আসবে রিজার্ভ সংকটও। অফশোর ব্যাংকিং সর্ম্পকে ধারণা দিতে গিয়ে মাশরুর আরেফিন জানান, এ লেনদেন পুরোপুরি ব্যাংকিং নির্ভর, প্রবাসের ব্যাংকগুলো থেকে দেশের ব্যাংকে সরাসরি ট্রান্সফার, নগদ লেনদেনের কারবার থাকছে না। প্রবাসীরা নির্দিষ্ট অংকের বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করলে এর বিপরীতে তিন মাস থেকে ৫ বছর মেয়াদী সঞ্চয়ের ওপর সবোর্চ্চ লভ্যাংশ যা প্রায় ৯ শতাংশ হারে পাবেন। 
তিনি বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলো যে রেট দিচ্ছে তা ৬ শতাংশের নিচে। একই সাথে প্রবাসীরা ওবিউ তে যে অর্থ রাখবেন তা দেশে বাংলা টাকায় ভাঙ্গাতে পারবেন। ট্যাক্স ফাইলে দেখানো যাবে। আবার কত বৈদেশিক মুদ্রা রাখবেন সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন সীমা থাকছে না। সিটি ব্যাংকের এমডি আরো জানান, করমুক্ত, লেনদেন জনিত ফি মুক্ত এ সেবায় গ্রাহক চাইলে সরাসরি ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। আবার চাইলে দেশের ব্যাংক শাখায় গিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিংয়ের (আইবি অ্যাকাউন্ট) আওতায় গ্রাহকদের পরিবার অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। প্রযুক্তির সবোর্চ্চ ব্যবহার যাতে করতে পারেন গ্রাহকরা, সে নিশ্চয়তা দেবে ব্যাংক। থাকবে না কোন ভোগান্তি। এমন কিছু তথ্যও পূরণ করতে হবে না যা গ্রাহকের বিরক্তির কারণ হয়। বলেন, ব্যাংক এখানে নিরপেক্ষ, প্রবাসীদের দিকে তাকিয়ে আছে। বাংলাদেশের ব্যাংকে টাকা রাখলে যদি কোন সমস্যা অনুভব না করে গ্রাহক তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় রাখলে কি সমস্যা? তবে এ সময় গ্রাহকরাকোন ব্যাংকে ডলার রাখলে নিরাপদ বৈধ করবে তা গ্রাহককে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে  বলে ও জানান তিনি। 
এ সময় ব্র্যাক ব্যাংকের আর্থিক সূচকগুলোর অবস্থা তুলে ধরে অফশোর ব্যাংকিংয়ের আ্ওতায় ডিপোজিট স্কিম চালু করলে কী কী সুবিধা দেবে সে নিয়ে আলোচনা করেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংক নিবার্হীদের শীর্ষ সংগঠন এবিবির প্রেসিডেন্ট সেলিম আর এফ হোসেন জানান, বিদেশে বসে আস্থার সংকট হতেই পারে, সে ক্ষেত্রে দেশে কার্যরত ৬১ টি ব্যাংকের আর্থিক সূচকগুলো যাচাইবাছাই করে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি। বলেন, কোন ফি নেই, চার্জ নেই, এমনকি অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করলে দিতে হবে না বাড়তি সুদও। বিশ্বের সবচেয়ে সেরা সুদহার। নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশীরা এখানে বিনিয়োগ করলে আমেরিকার তুলনায় বেশি লভ্যাংশ পাবে। 
অনুষ্ঠানে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের এমডি বলেন, ডাচ্ বাংলা দেশের একটি স্বনামন্য ব্যাংক। বাংলাদেশে যে কয়েকটি ব্যাংক আন্তর্জাতিক রেটিং কোম্পানি দ্বারা রেটিং করা হয়, এ ব্যাংক সব সময় তাতে শীর্ষে। গেল ২ বছর থেকে ত্রিপল এ রেটিং ডাচ্ বাংলা ব্যাংকে যেকোন প্রবাসী বাংলাদেশী নিজের নামে বা আপন জনের নামে বিশ্বের যেকোন জায়গা থেকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন এবং বিনিয়োগের অর্থ লাভসহ যেকোন সময়ে বিদেশে বসেই নিয়ে আসতে পারবেন। তিনি দেশে বিনিয়োগের এ সুযোগ গ্রহনের জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান। বলেন, প্রবাসীরা স্কিমে বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করলে বিশেষত এক লাখ ডলারের ওপরে জমা রাখলে প্রায়োরিটি কার্ড ও ভিসা কার্ড দেয়া হবে যেখানে ফ্রি হেলথ চেকআপ, এয়ারপোর্ট ভিত্তিক যাতায়াতসহ সকল সুযোগ সুবিধা, বিশ্বের যেকোন দেশের এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। 
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। একই সাথে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বৃদ্ধির জন্য সবাইকে আহ্বান জানান।  একই সাথে প্রবাসী আর ব্যাংকগুলোর সাথে সমন্বয়ের দায়িত্ব নেন  নিউইয়র্কে বাংলাদেশে কনসাল জেনালের মো. নাজমুল হুদা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা ম্যানেজমেন্টে বরাবরই রক্ষণশীল ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু এবার, এ পদক্ষেপ নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। জানান, দূতাবাস সবসময় প্রবাসী আর ব্যাংকারদের হয়ে কাজ করবে। 
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী সায়দুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে কোন ব্যাংক দেউলিয়া হয়নি। তিনি দৃঢতার সাথে জানান, সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক কোন ব্যাংককে দেউলিয়া হতে দেবে না। এ সময় তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কোন সাংবাদিককে প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। বরং  গণমাধ্যমে তথ্য সরবরাহ সহ কথা বলবার জন্য এরই মধ্যে চারজন মুখপাত্র নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে ও জানান তিনি। যেকোন সাংবাদিক যেকোন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে বাধা নেই বলেও  উল্লেখ করেন  ডেপুটি গভর্নর।  
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৯টি ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রমে যারা বিনিয়োগ করবে তারা বিদেশি বা অনাবাসী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হতে হবে।
বিদেশে যে বাংলাদেশি বসবাস করছেন তার পক্ষে দেশে অবস্থানরত কোনো বাংলাদেশি নাগরিক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। পাঁচ ধরনের বৈদেশিক মুদ্রা- ডলার, পাউন্ড, ইউরো, জাপানি ইয়েন ও চীনা ইউয়ানে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।
অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, অফশোর ব্যাংকিংয়ে অর্থ লগ্নী করে যেন পরবর্তীতে ঝুকিঁ তৈরি না হয় সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে সবসময় নজরদারি বাড়াতে হবে। কেবল অর্থ সঞ্চয় নয়, বিদেশের মাটিতে বসে দেশের অ্যাকাউন্ট থেকে যেন সহজে ঋণ করা যায় সে বিষয়ে বিশেষ পদক্ষেপ নেবার আহ্বান জানান বিনিয়োগ কারীরা। 
সূত্র জানায়, আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকের কাছে এ দেশে বাড়ি, গাড়ি, বিজনেস করার পরও অনেক অর্থ উদ্বৃত্ত থাকে। অনেকেই দেশে বাসা-বাড়ি, জমিজমা কেনেন। পাশাপাশি দেশেও অনেকেরই ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। এর পরও অনেকের কাছেই অর্থ উদ্বৃত্ত থাকে। এই অর্থ তারা কোন খাতে বিনিয়োগ করবেন, তা নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা করতে পারেন না। এ দেশে ব্যাংকে অর্থ রাখলে বাংলাদেশের মতো তেমন লভ্যাংশ মেলে না। এসব বিষয় দেশের ব্যাংকগুলো এবং সরকারও জানে। তাই অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সরকার প্রবাসীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার নেওয়ার চেষ্টা করছে। এখানে সরকারের দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে। এক. প্রবাসীদের কাছ থেকে বেশি পরিমাণে ডলার নিয়ে দেশের রিজার্ভ বাড়ানো ও অর্থনীতি চাঙা রাখা, দুই. প্রবাসীদের ভবিষ্যৎ জীবন অনেকটাই নিরাপদ ও নিশ্চিত রাখা।
এদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল করাসহ বিভিন্ন কারণে সরকার অফশোর ব্যাংকিং প্রোগ্রাম চালু করলেও এই প্রোগ্রাম সম্পর্কে অনেকেই তেমন জানেন না। এ সম্পর্কে প্রবাসীদের জানানোর জন্য যে ধরনের প্রচার-প্রচারণার দরকার, সেটি তেমনভাবে হয় না। এমনকি সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি ও বিনিয়োগ-সংক্রান্ত সুবিধাগুলোর বিষয়ে প্রবাসীদের কাছে সরকারের দূতাবাস, কনস্যুলেট কিংবা মানি এক্সচেঞ্জ থেকেও জানানোর উদ্যোগ তেমন একটা নেওয়া হয় না। মাঝে মাঝে কিছু কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা নেহাতই হাতে গোনা। অফশোর ব্যাংকিং প্রোগ্রামের বিষয়টি নিয়েও তেমন প্রচারণা নেই। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হলেও এই খাতে প্রবাসীরা বিশাল অর্থ বিনিয়োগ করতেন বলে মনে করেন ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক আশরাফুল হাসান বুলবুল। শেষে ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী সায়েরা রেজা ও শান্তনীল ধর। তাদের একের পর এক মনমাতানো গানে শ্রোতারা মুগ্ধ হন। 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041