কাল হো না হো

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৪, ১০:৩৮ , অনলাইন ভার্সন
আজ জর্জিয়া থেকে নিউইয়র্কে ফিরে এলাম। প্লেনে চড়া ডালভাত হয়ে গেছে আমার জন্য। আর ভালো লাগে না। আমার বউ কিন্তু দিব্যি মজা করে প্লেনে। আরবি স্কুলের শিক্ষিকা এবং কনজারভেটিভ মুসলিম বিধায় ফটো ওঠানো নিষেধ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া বারণ বিধায় কেউ দেখে না। যাদের জন্মিতে দেখেছি তারা বড় হয়ে বিয়ে হয়েছে, তাদের সন্তানাদি হয়েছে। আবার তারাও বিয়ের বয়সী বা বিয়ে করছে। জানালা দিয়ে দেখা যায়, দেখছি সন্ধ্যার লাল সূর্যটা কীভাবে রক্তিমে ডুবে যাচ্ছে। কীভাবে গাঢ় অন্ধকারে পৃথিবী তলিয়ে দিচ্ছে। বার্ধক্যে মনে হয় এমনই সব ছোট হয়ে আসে, জীবন ভাসি ভাসি ডুবি ডুবিতে চলে। তারপর একেবারে ডুবে যায়। আজ চা খাচ্ছিলাম, দেশের রসের গুড়ের মিঠাই দিয়ে, কত দিন যে রসের ভিজনা পিঠা খাই না, তা হিসাবে আসে না। জীবন এক জগাখিচুড়ির কঠিন অঙ্ক, হিসাব কষে ফল বের করে আনা সহজ নয়। তবু আমরা চেষ্টা করি মাঝে মাঝে, পারি বা না পারি। যা বলছিলাম, চায়ের কাপের ধার ঘেঁষে ফোঁটা কয়েক টেবিলে গড়িয়ে পড়ল। আমি অবাক হয়ে দেখছি আর ভাবছি, জীবনে এমনই কত কিছু চলে যায়, আমরা না দেখার ভান করি অথচ সামান্য কিঞ্চিৎ কেউ নিলে বা ধরলে আমরা মারমুখী হয়ে উঠি। কারণ আমরা দানশীল নই, উদার মনের মানুষ নই। অথচ সব পড়ে থাকবে এধারেÑএ জগতে এহরাম বাঁধার ন্যায় দুই পিস সাদা কাপড় সঙ্গে যাবে... বাকি সব অধরা অপাথেয়।
চাওয়া-পাওয়ার এই হিসাব-নিকাশে বিধি বাম ভালোবাসা টেকে না। দেনা-পাওনা যখন জীবনধারণের সঞ্চালন, হৃদ্যতা তখন ঘরের চালে উঠে যায়। প্রশ্ন জাগে, নীল ধ্রুবতারা অর্থ দিয়ে কি আপনজনের ভালোবাসা কেনা যায়। উত্তর সম্ভবত না, যায় না। যত দেবেন আরও চাই, যখন দিতে আর পারবেন না ভালোবাসা কর্পূরের মতো উবে যাবে। জমানা বদল গিয়া, গোলাম হোসেন, আকাশ আরও উঁচুতে চলে গেছে ভালোবাসার ফ্লাইটে। তাই সম্ভবত আত্মীয়তার বন্ধনটা টাইট গিঁট্টু হতে ঢিলায় চলে এসেছে প্যান্টের বোতামের মতো। আগে মায়ের কাছে গেলে জিজ্ঞেস করতেন, বাজান, ভালো আছ তো? শুকিয়ে কী হয়ে গেছ, তালের পাখা দিয়ে বাতাস করতেন। এখন আর কেউ করে না! জীবন চলে, আমরা চালিয়ে নিয়ে যাই। কিন্তু জীবন কী, আসল অর্থ কী খুঁজতে গিয়ে আমরা হয়রান হয়ে যাই, হিসাব মেলাতে পারি না। আমরা সবই বুঝি কিন্তু আমাদের করার কিছু নেই, ‘ফটিক’ চরিত্রের মতো এক বাও মিলে, দুই বাও মিলে না পানির মাপের মতো, পানির দামে বাঁচা। জীবন এক ঘুটঘুটে অন্ধকারের কালো কুণ্ডলী, আবার অন্যের কাছে মাঘ মাসের পূর্ণিমা যে যেভাবে নেয়। যে যেভাবেই নিক না কেন, ইদানীং আর স্বচ্ছ পানির আয়না নয়। তাই বোধ হয় সিংহভাগ মানুষই ব্যথার সমুদ্রে নিমজ্জিত, আমরা সে আর্তনাদ শুনতে কি পাই...
মায়েদের সংসারজীবনে অনেক সমস্যা আসে জোয়ার-ভাটার মতো। দুই ছেলে হলে তো কথাই নেই, তাদেরকে অসাধ্য সাধন করতে রাতকে দিন বানাতে হয় সূক্ষ্ম চুলছেঁড়া হিসাব কষার জন্য। বড় ছেলের বাসায় থাকলে ছোট ছেলে ও নাতিরা বেজার। ছোট ছেলের বাসায় থাকলে মায়ের মন কান্দে বড় ছেলের জন্য। মায়েদের বড় ছেলের জন্য একটা সূক্ষ্ম কোণ থাকে, তাদের রেখে থাকতে পারে না। আমার নিজের জীবনে দেখেছি, দাদা মানে আমার বড় ভাইয়ের জন্য মা কত উদ্্গ্রীব থাকতেন। একটা বড় মাছের মাথা মায়ের প্লেটে দিলে বলতেন, ‘বাবুল মৃগেল মাছের মাথা খুব পছন্দ করে, ওকে রেখে কীভাবে খাই।’ আর খাওয়া হতো না। নাতিদের আদর-যত্নে একটা সমতা বজায় রাখার নিমিত্তে মায়ের চেষ্টা আমায় বড্ড কষ্ট দিত। মা চাইতেন ছেলে-বউরা যেন মনঃকষ্ট না নিতে পারে। এটা জাগতিক সমস্যা, নিয়ম ভাঙার উপায় নেই, সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের মতো ঘুরেফিরে আসে মায়েদের জীবনে। আজ মা আর নেই। মনে পড়ে পুরোনো দিনের কথা রহিয়া রহিয়া বহিয়া বহিয়া। স্মৃতিরা জীবন্ত আলোর গতির মতো কত তাড়াতাড়ি সামনে এসে দাঁড়ায়Ñকোনটা জীবন্ত কোনটা কল্পনা, মাঝে মাঝে বিভ্রাট তো বাধেই। সামনে আমরা ঠিকই চলি জীবদ্দশায় কিন্তু স্মৃতিরা কি আমাদের পিছু ছাড়ে, না ছাড়ে না, জোনাকির মতো আলো জ্বেলে অন্ধকারে রাস্তা দেখায়। এ নিয়েই আমাদের বাস, ভালো-মন্দের প্রতিবেশীর মতো। কাল হো না হো, আশার ভেলার খিলখিল হাসিতে সবার জীবন ভরে থাকুক। মেঘলা আকাশ চাই না, চাই স্বচ্ছ নীল আকাশ, যাতে থাকে ওড়ার অদম্য ইচ্ছা ডানা মেলে...।
-নিউইয়র্ক, ১৮ মে ২০২৪
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041