রিজার্ভ নিয়ে সংকটের শঙ্কা

প্রকাশ : ১৬-০৩-২০২৩ ০৯:১২:০৮ এএম , অনলাইন ভার্সন
নিজস্ব প্রতিনিধি : দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের দায় বাবদ ১ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর গ্রস রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। আর আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি অনুযায়ী নিট রিজার্ভ নেমেছে ২২ বিলিয়নে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের আট মাসে রিজার্ভ কমেছে প্রায় পৌনে ১১ বিলিয়ন ডলার। তবে একক মাস জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে, যা আকু পেমেন্টের কারণে আবার কমে গেছে।
দেশের ইতিহাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০২১ সালের আগস্টে। আর রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০১৭ সালের ২২ জুন। এর পর থেকে করোনার প্রভাব শুরুর আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ৩২ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ওঠানামার মধ্যে ছিল। তবে আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি অনুযায়ী রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের সাত বিলিয়ন ডলারসহ বিভিন্ন তহবিলে দেওয়া ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বাদ দিয়ে রিজার্ভের হিসাব করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এতে সম্মত হয়েছে। সে বিবেচনায় ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এখন ২২ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। করোনার প্রভাব শুরুর পর বিশ্ববাজারে সুদহার অনেক কমে আসে। তখন বিশ্বের অনেক দেশ বিদেশি ঋণ কমালেও বাংলাদেশে বেড়ে যায়। এখন সেই দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে বিশ্ববাজারে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। ফলে পণ্যের বর্ধিত দামের পাশাপাশি আগের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফেরাতে আমদানি দায় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে নতুন এলসি কমলেও আগের দায় পরিশোধের চাপের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমেনি। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে। সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ৫ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। কোনো ব্যাংক যেন আমদানি দায় পরিশোধে ব্যর্থ না হয়, সে জন্য চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর প্রভাবে রিজার্ভ কমছে। রিজার্ভের পতন ঠেকাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন পেয়েছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ডলার চলে এসেছে। এতে রিজার্ভ কিছুটা বাড়লেও আগের ঋণ ও আমদানির চাপে এখনো কমতির দিকেই আছে রিজার্ভ।
বাংলাদেশে ক্রমাগতভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার বিষয়টি ভবিষ্যতে ব্যাপক উদ্বেগের বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। তারা বলছেন, বর্তমানে দেশের অর্থনীতির যে অবস্থা, তাতে হঠাৎ করেই রিজার্ভ ঘুরে দাঁড়াবে না। এই পরিমাণ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের বেশি আমদানি ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। ফলে সামনের মাসগুলোতে রিজার্ভ নিয়ে সংকটে পড়তে পারে সরকার। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম বড় দুটি মাধ্যম হলো রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয়। এই দুই ক্ষেত্রে ডলারের প্রবাহ না বাড়লে ভবিষ্যতে সংকটে পড়ার কথা বলছেন অর্থনীতিবিদেরা।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগের কারণ রয়েছে, যেহেতু এটি এই মুহূর্তে একটি চলন্ত সূচক এবং এটি স্থির নয়। বরং এটির ক্রমাবনতি হচ্ছে এবং এর বাড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তার মতে, আমদানি নিয়ন্ত্রণ করার পরও আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য ঠিক রাখা যাচ্ছে না। আর রেমিট্যান্সের প্রবাহও এখনো ঋণাত্মক। পাশাপাশি বৈদেশিক সাহায্যের প্রবাহ কম। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলছেন, আগামী পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যে রিজার্ভ বাড়ার মতো কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ফলে সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি।
তবে অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, দেশে এখনো রিজার্ভ বাড়ানো সম্ভব এবং বেশ কিছু উপায় রয়েছে। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ গত দুই বছরে বিশাল সংখ্যক মানুষ বিদেশে শ্রমিক হিসেবে পাড়ি জমিয়েছেন। এর মধ্যে ২০২২ সালে প্রায় ১১ লাখ নতুন শ্রমিক বিদেশে গিয়েছেন। এর আগের বছর গেছেন প্রায় ৬ লাখ। গত দুই বছরে বিদেশে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানান তিনি। তবে রেমিট্যান্সের দিকে তাকালে দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরের পর থেকে রেমিট্যান্স আসায় একটা পতন হয়েছে। তিনি বলেন, যেখানে বাংলাদেশে প্রতি মাসে ২০০ কোটি ডলার করে রেমিট্যান্স আসার কথা, সেখানে এটি কমে ১৫০-১৬০ কোটি ডলার করে আসছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে গত ডিসেম্বর থেকে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স পজিটিভ হচ্ছে। গত জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভের স্থিতি বেড়েছে। তবে বরাবরের মতোই আকু পেমেন্টের পর রিজার্ভ কিছুটা কমে গেছে। অন্যদিকে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে আমদানির যে চাপ ছিল, তা এখন আর নেই। এ ছাড়া ঈদ সামনে রেখে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এখন থেকে রিজার্ভ বাড়বে।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041