ডলারের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি

মানি এক্সচেঞ্জের প্রফিট মার্জিন না থাকার শঙ্কা

প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৪, ১৫:৫৯ , অনলাইন ভার্সন
হঠাৎ করেই ডলারের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই অস্থিরতার কারণে কেউবা লাভবান হবেন, কেউ হবেন ক্ষতিগ্রস্ত। যারা দেশ থেকে তার সন্তানের জন্য লেখাপড়ার খরচ পাঠাবেন, তাদের এখন বেশি টাকা লাগবে। যারা বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাবেন, তাদেরও বেশি টাকা লাগবে। আমদানিতেও বেশি টাকা লাগবে। তবে যারা রপ্তানি করবেন তারা লাভবান হবেন। ডলার মূল্য বাড়ার কারণে লাভবান হবে সোনালী এক্সচেঞ্জ। তবে নিউইয়র্কের  মানি এক্সচেঞ্জগুলোর প্রফিট মার্জিন না থাকার শঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে সোনালী এক্সচেঞ্জের সিইও দেবশ্রী মিত্র বলেন, এত দিন বাজারে অন্যান্য মানি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন শতাংশ প্রণোদনা দিতে হতো। এখন আর সেটি দিতে হবে না। এখন কেবল ১১৭ টাকার সঙ্গে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিতে হবে। আট পয়সা কম থাকবে ১২০ টাকার চেয়ে। সেটি ভর্তুকি দেওয়া হবে। ফলে লোকসান কমবে।
ডলারের দাম বাড়ায় সোনালী এক্সচেঞ্জের রেট এখন অন্য সব এক্সচেঞ্জের সমান হওয়ায় তারা ভালো রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। গত কয়েক দিনে তাদের রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ ৩০-৪০ শতাংশ বেড়েছে। এদিকে ডলারের দাম বাড়ায় একাধিক মানি এক্সচেঞ্জ তাদের প্রফিট মার্জিন কমার আশঙ্কা করছে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক দাম বেঁধে দেওয়ায় এখন তাদের সব ব্যাংকের কাছে একই রেটে ডলার বিক্রি করতে হবে। কোনো ব্যাংকের কাছে বেশি দামে ডলার বিক্রি করতে পারবে না। একজন মানি এক্সচেঞ্জ বিশেষজ্ঞ বলেন, বাজারে রাতারাতি এর প্রভাব পড়বে না। আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। দেখেশুনে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রেট বাড়লেই ডলারের চাহিদা কমবে, এটা মনে হচ্ছে না। কারণ এর চাহিদা বাড়তেই থাকবে।
অন্যদিকে প্রবাস থেকে যারা দেশে ডলার পাঠাচ্ছেন, দাম বাড়ার কারণে তাদের পরিবার-পরিজন বেশি অর্থ পাচ্ছেন। ডলারের দাম বাড়লে প্রবাসীরা দেশে বেশি বেশি পরিমাণে অর্থ পাঠানো শুরু করেন। সামনে কোরবানি ঈদ। এ উপলক্ষেও তারা রেমিট্যান্স পাঠাবেন। এতে করে চলতি মে মাসে রেমিট্যান্স-প্রবাহ কিছুটা বাড়তে পারে।
তবে ডলারের দাম এক লাফে সাত টাকা বাড়ায় চিন্তিত যেসব স্টুডেন্ট বিদেশে লেখাপড়া করেন, তাদের অভিভাবকেরা। বাংলাদেশ থেকে যেসব স্টুডেন্টের পরিবার পড়ালেখার খরচ চালায়, তাদেরকে এখন আরও বেশি অর্থ খরচ করতে হবে। যারা বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাবেন, তাদেরও খরচ পড়বে বেশি। আবার যারা পণ্য আমদানি করবেন তাদেরকে বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হবে। কারণ তারা ডলারে পেমেন্ট করবেন কিন্তু অর্থটি তাদেরকে টাকায় হিসাব করে ব্যাংকে দিতে হবে। তবে যেসব রপ্তানি পণ্য থেকে আয় বাড়বে। দেশের অর্থনীতিতে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে মুদ্রা লেনদেন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ একজন বলেছেন, বিভিন্ন কারণেই ডলারের দাম বাংলাদেশে বেড়েছে। আইএমএফের পরামর্শ ছিল। রিজার্ভ বাড়ানোর উদ্দেশ্যও রয়েছে। সেটি ছাড়াও রপ্তানির মাধ্যমে আয় বাড়ানো, আমদানি-নির্ভরতা কমানোর বিষয়টি রয়েছে। বড় একটি কারণ হচ্ছে দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়ানো। অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে, দেশে অবৈধ পথে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স যাচ্ছে। কারণ হুন্ডিতে অর্থ প্রেরণকারীরা ডলারের বিপরীতে দাম বেশি পাচ্ছে। সরকার ডলারের দাম বাড়িয়ে হুন্ডিকে রোধ করতে চাইছে। যদিও অনেকেই মনে করছেন, ডলারের দাম বাড়লেও লাভ নেই, কারণ তখন হুন্ডির রেটও বাড়বে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি দেশের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। কারণ ডলারের রেট বেশি বেড়ে যাওয়ায় দেশের টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এটা দেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। সেই সঙ্গে দেশে আমদানি খরচ বেড়ে যায় এবং জিনিসপত্রের দামও বাড়ে।
ডলারের বাজারে বর্তমানে অনেকটাই অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন স্যানমানের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মাসুদ রানা তপন। তিনি বলেন, ডলারের দাম হঠাৎ করেই সাত টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হলো। বাংলাদেশ ব্যাংক যখন সার্কুলার দিয়ে এটা করে দেয়, তখন সেটি বাধ্যতামূলকভাবে পালন করতে হয়। এর কম দামে কোনোভাবেই বিক্রি করা যাবে না। আবার ওই দামে বিক্রি করতে গেলে মানি এক্সচেঞ্জগুলোর তেমন প্রফিট মার্জিন থাকবে না।
তিনি বলেন, আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেট কম ছিল। এ কারণে যেসব ব্যাংকের ডলারের বেশি দরকার ছিল, তারা বেশি দামে ডলার নিত আর যেগুলোর বেশি ডলারের দরকার থাকত না, তারা কম হলেও নিয়ে নিত। কিন্তু এখন আর সেটি হবে না। এখন সবাইকে একই রেটে বিক্রি করতে হবে। এখন আমরা এক ডলারের বিপরীতে ১১৭ টাকা দিচ্ছি। সেই সঙ্গে আড়াই শতাংশ প্রণোদনাও দিচ্ছি। সে ক্ষেত্রে দাম পড়ে ১২০ টাকা। এখন আমরা এর চেয়ে বেশি দাম দিলে বাজারে আরও অস্থিরতা তৈরি হবে। বাজারে এর প্রভাব দেখার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) অর্থ পরিশোধের পর রিজার্ভ নেমেছে। তা রয়েছে ১৯ বিলিয়নের কম। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত ১০ বছরের মধ্যে এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। আকুর দায় পরিশোধের পর রিজার্ভের পরিমাণ ১ হাজার ৮১৯ বিলিয়ন ডলার (বিপিএম-৬) বা ১৮ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। ২০১৪ সালের শুরুতে রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়ানোর পর আর কখনো নিচে নামেনি। বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে। আইএমএফ ইতিমধ্যে দুই কিস্তি ঋণ দিয়েছে।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041