বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের চেয়েও কঠিন হতে পারে আফগান চ্যালেঞ্জ

প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৩, ১১:৫৬ , অনলাইন ভার্সন
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৩-০ ব্যবধানে হারালেও বাংলাদেশের অপেক্ষায় এখন আফগানিস্তানের দুরূহ চ্যালেঞ্জ।

সতীর্থ ব্যাটসম্যানরা যখন নেটে নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছেন, সাকিব আল হাসান তখন সেন্টার উইকেটে। ব্যাটকে চাবুক বানিয়ে সপাটে হাঁকাচ্ছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। বল আছড়ে পড়ছে মাঠের নানা প্রান্তে। টি-টোয়েন্টির প্রস্তুতি যাকে বলে! সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবারের এই অনুশীলনের চিত্র অবশ্য সাকিবের ক্যারিয়ারজুড়েই দেখা গেছে কম-বেশি। নিজের প্রস্তুতি, নিজের কাজটুকু সবসময়ই তিনি খুব ভালো করেই জানেন।

এই সিরিজও তার ব্যতিক্রম নয়। নিজের করণীয় যেমন জানেন তিনি, তেমনি স্পষ্ট করে জানেন তিনি দলের লক্ষ্যও। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দুটি ম্যাচই জিততে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবে সঙ্গে ছোট্ট একটি পাদটীকাও জুড়ে দিলেন, ‘কাজটা সহজ হবে না।’

কতটা কঠিন হবে? সেই উত্তর মিলবে শুক্রবার থেকে। সিলেটে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটি এ দিন। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে খেলা শুরু সন্ধ্যা ৬টায়।

দুই দলের শক্তি-দুর্বলতা আর নানা বাস্তবতা ও পারিপার্শ্বিকতার গভীরে গেলেও ফুটে ওঠে, আদতে কতটা কঠিন হতে পারে এই সিরিজ। গত মার্চেই দেশের মাঠে বাংলাদেশ ৩-০তে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। যে সংস্করণে বছরের পর বছর ধরে ধুঁকছিল বাংলাদেশ, সেখানে এই ফলাফলকে অভাবনীয় বললেও কম বলা হয়। এর পরপরই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও টি-টোয়েন্টি সিরিজে জয় ধরা দেয়। যদিও তা ছিল অনেকটা প্রত্যাশিতই। বিশ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা অর্জন বলা যায় ইংল্যান্ড সিরিজের জয়কেই।

কিন্তু আফগানদের চ্যালেঞ্জ হতে পারে আরও কঠিন। যদিও আইসিসি টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশেরও এক ধাপ নিচে থেকে দশে এখন আফগানরা। তবে শক্তি-সামর্থ্যে আফগানদের পিছিয়ে রাখার লোক বাংলাদেশেও খুব একটা মিলবে না। দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়েও সেটির ছাপ স্পষ্ট। ৯ বারের দেখায় আফগানদের জয় ৬টি, বাংলাদেশের ৩টি।

ইংল্যান্ডের জন্য একটি বড় বাধা ছিল এখানকার কন্ডিশন। আফগানিস্তানের জন্য কন্ডিশন এখানে কোনো সমস্যাই নয়। এই কন্ডিশনে আফগানদের বোলিং আক্রমণের ধারও ইংলিশদের চেয়ে অনেক বেশি। বিশেষ করে রশিদ খান, মুজিব উর রহমান ও মোহাম্মদ নবিকে গড়া আফগান স্পিন আক্রমণ তো যে কোনো কন্ডিশনেই প্রতিপক্ষের জন্য মাথাব্যথার কারণ। সঙ্গে যদি তরুণ বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার নূর আহমাদকেও একাদশে রাখার কোনো পথ বের করে নেয় আফগানিস্তান, তাহলে এই স্পিন আক্রমণের ধারে এই কন্ডিশনে কচুকাটা হতে পারে যে কোনো ব্যাটিং লাইন আপ।  

আফগানরা মানসিকভাবে মাঠে নামবে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাসের হাওয়াতেও। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অপেক্ষায় বড় চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ অবশ্য লড়াইয়ের রসদ খুঁজছে টি-টোয়েন্টিতে সাম্প্রতিক সাফল্যের পুঁজি থেকেই। ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ দুটি সিরিজে ফলাফলে সাফল্য ধরা দিয়েছে তো বটেই, মাঠের ক্রিকেটেও বাংলাদেশ নিজেদের চেনাতে পেরেছেন নতুন করে। ভয়ডরহীন ও আগ্রাসী ক্রিকেটের প্রদর্শনী দেখাতে পেরেছে তারা এই দুই সিরিজে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দুর্বোধ্য ভাষার জট অবশেষে খুলতে শুরু করেছে বলে মনে হয়েছে।

সেই বদলে যাওয়ার আবেশ নিয়েই আরেকটি সিরিজে বাংলাদেশ নিজেদের এগিয়ে নিতে পারবে, বিশ্বাস অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের।

“ঘরের মাঠে সবশেষ দুটি সিরিজই আমরা ভালো খেলেছি। এটা আমাদের জন্য নতুন আরেকটি চ্যালেঞ্জ। আফগানিস্তান অবশ্যই ভালো দল। আমাদের চেষ্টা থাকবে, যেভাবে আমরা ক্রিকেটটা খেলছি, যেভাবে উন্নতি হচ্ছে, প্রতিটি ম্যাচেই ওভাবে পারফর্ম করার জন্য।”

“আমাদের দলের লক্ষ্য অবশ্যই যেন আমরা দুটি ম্যাচই জিততে পারি। যদিও কাজটি খুব একটা সহজ হবে না। তবে আমাদের আশা এটাই থাকবে।”

ইংল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজের চ্যালেঞ্জের সঙ্গে এবারের সিরিজের তুলনায় যেতে চাইলেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এসবের সুযোগও দেখেন না তিনি। বরং সব চ্যালেঞ্জেকেই আলিঙ্গন করে নিতে দলকে প্রস্তুত দেখতে চান তিনি।

“প্রতিটি সিরিজই কিন্তু একটা চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে চ্যালেঞ্জটি আরও বেশি হয়। কারণ, সব দলেরই সমান সুযোগ থাকে। এখানে আসলে বড় দল, ছোট দল আছে বলে মনে হয় না। যে কোনো দল যে কোনো দলকে হারাতে পারে বা ক্ষমতা রাখে। সেক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা অনেক বেশি এবং এই চ্যালেঞ্জটাই আমাদের উপভোগ করার বিষয়।”

“প্রতিবারই নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে। আমরা যখন ইংল্যান্ডের পর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে খেলেছি, ইংল্যান্ডের সঙ্গে ৩-০তে জিতলেও আয়ারল্যান্ডের কাছে একটা হেরেছিও। চ্যালেঞ্জ আসলে টি-টোয়েন্টিতে অনেক বেশি এবং এই চ্যালেঞ্জই এই সংস্করণটাকে অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং করে তোলে। আমাদের সামনে অবশ্যই বড় একটা চ্যালেঞ্জ এই দুটি ম্যাচ।”

দুই দলের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে আসতে পারে আবহাওয়াও। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, ম্যাচ শুরুর সময়টাতেই বৃষ্টি হানা দেওয়ার শঙ্কা প্রবল। একাদশ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তাই টসের আগে নেওয়া হবে, দাবি করলেন সাকিব।

“আমাদের নির্দেশনা থাকবে, কোচ ও আমাদের তরফ থেকে যেন সবাই প্রস্তুত থাকে। এমন একটা পরিস্থিতি এখানে, যে কোনো সময় বৃষ্টি হতে পারে, সংক্ষিপ্ত ম্যাচ হতে পারে, ৫ ওভারের ম্যাচ হতে পারে, ১০ ওভারের হতে পারে, ১৫-১৮ ওভারের হতে পারে, ২০ ওভারেরও হতে পারে। আমাদের আসলে খোলা মন নিয়ে থাকতে হবে। টসের আগ মুহূর্তে আমরা জানতে পারব যে কত ওভারের ম্যাচ হচ্ছে এবং সেভাবে দলকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করব আমরা।”

রশিদ খানের কাছে অবশ্য গোটা সিরিজের দৃষ্টিভঙ্গিই ভিন্ন। দলকে জয়ের কথা মাথায় রাখতে না করে দিয়েছেন তিনি! জয়টা তার কাছে পরের ব্যাপার। বরং আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাকিয়ে তিনি দলকে এগিয়ে যেতে দেখতে চান প্রক্রিয়ার পথ ধরে। 

“আমি কখনোই দলের কাছে প্রত্যাশা করি না বা বলি না যে এটা বা ওটা করতে হবে। আমার মতে, মূল ব্যাপারটি হলো প্রস্তুতি। আমি কখনোই ফলাফলের কথা বলি না। দলের কাছেও এটা পরিষ্কার যে, ‘এমন জায়গায় নিজেকে ভেবো না যে জিততেই হবে।’ আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রস্তুতি ও মাঠে শতভাগ দেওয়া, সেটা ব্যাটিং হোক বা বোলিং বা ফিল্ডিং।”

“যতক্ষণ পর্যন্ত ভাবনায় এটাই থাকবে, সময়ের সঙ্গে ফলাফলও মিলবে। এজন্যই যদি স্রেফ মনে করি যে এই দুটি ম্যাচ জিততে হবে এবং ট্রফি জিততে হবে, তা আমার মতে আসলে পরের ব্যাপার। দল হিসেবে আমাদের মূল লক্ষ্য প্রতিটি দিন উন্নতি করা। আমাদের চাওয়া, আগামী বছরের বিশ্বকাপে তাকিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া।”

বিশ্বকাপের জন্য দল গোছানোর পথে আছে বাংলাদেশও। ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয় দিয়ে যে ধারা শুরু হয়েছে, সেখানে ছেদ পড়া মানে তো প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্থ হওয়া। এই সিরিজের পর এ বছর সূচিতে আর কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ নেই বাংলাদেশের। এই সিরিজে জয়টা তাই তীব্রভাবেই চাইবেন সাকিবরা।

এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078