বিধাতা পৃথিবীকে এমনভাবেই সৃষ্টি করেছেন যে প্রকৃতি থেকেই মানুষ শেখার জন্য খুঁজে পায় অসংখ্য উৎস। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষ দাবিদার হলেও পশু-পাখিদের কাছ থেকেও কিন্তু শেখার আছে অনেক কিছু! নেতৃত্ব থেকে শুরু করে মিতব্যয়িতা, পারিবারিক বন্ধন ইত্যাদি অনেক কিছুই আমরা তাদের দৈনিক কার্যক্রম দেখে শিখতে পারি।
ঈগলকে আমরা চিনি শক্তিধর, দক্ষ একটি শিকারি পাখি হিসেবে। তবে পাখির রাজা ঈগল নিজ জীবনে মেনে চলে সাতটি মূলনীতি, যা মানুষ হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয় ও অনুসরণীয়। ঈগল অনেক উঁচুতে ওড়ে এবং কখনোই চড়ুই কিংবা অন্য ছোট পাখিদের সঙ্গে মেশে না, ওড়েও না।
ঈগল যেই উচ্চতায় উড়ে বেড়ায়, সেই উচ্চতায় অন্য কোনো পাখি পৌঁছাতেও পারে না। এ জন্যই ঈগল একা ওড়ার সিদ্ধান্ত নেয়, কারও সঙ্গে দল বেঁধে নয়। কাক-চড়ুই যেহেতু ঈগলের সমান এত উঁচুতে উড়তে পারে না, তাই ঈগল তাদের সঙ্গে দল বাঁধে না। মানুষ হিসেবে তোমাকেও জীবনে চলার পথে এমন মানুষগুলোর সঙ্গেই চলতে-ফিরতে-মিশতে হবে, যারা তোমার সমান স্বপ্ন দেখে, যাদের সঙ্গে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি মেলে, যাদের সঙ্গে থাকলে তোমার ব্যক্তিগত উন্নয়ন সম্ভবপর হবে।
বন্ধুত্ব করতে হবে সম-মানসিকতার মানুষের সঙ্গে এবং এড়িয়ে চলতে হবে এই কাক ও চড়ুইদের, যাদের সঙ্গে তোমার জীবনের লক্ষ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। ঈগলের রয়েছে তীক্ষè দৃষ্টিশক্তি, যার মাধ্যমে সে আকাশে থাকা অবস্থাতেই পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত দেখতে পায়, তাও একদম স্পষ্ট! ঈগল যখন তার শিকার খোঁজে, সে তার সব ফোকাস সেটার ওপর নিয়ে যায় এবং বেরিয়ে পড়ে শিকারের জন্য। যত বাধাই আসুক না কেন, সেটিকে না পাওয়া পর্যন্ত ঈগল কোনোক্রমেই তার চোখ সরায় না।
ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ কৌশল অবলম্বন করে। স্মার্টলি কমিউনিকেট করার প্রয়োজনীয় স্কিলস হাই-প্রোফাইল মানুষদের সঙ্গে নেটওয়ার্কিংয়ের কৌশল। ঈগল যেমন খুব স্পষ্টভাবে সবই দেখতে পায়, কিন্তু ফোকাস করে শুধু একটি প্রাণীর ওপর, তেমনভাবে তোমাকেও সবকিছু জানতে হবে, খোঁজখবর রাখতে হবে, তবে ফোকাস রাখতে হবে যেকোনো একটি কাজের ওপর।
নিজেকে জানো, জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করো এবং সেই একটি লক্ষ্যের পেছনেই ছোটো। যত বিপত্তিই আসুক না কেন, ফোকাস হারানো চাই না! পাখির রাজা ঈগল সর্বদা জীবন্ত প্রাণীকে খাবার হিসেবে খেয়ে থাকে। কখনোই কোনো মৃত জিনিস তারা ভক্ষণ করে না। রোজ রোজ নতুন শক্তির চাহিদায় ঈগল পাখি কখনোই মৃত কিছু না খেয়ে বরং জীবন্ত ও নতুন কোনো শিকারের পেছনে ছোটে।
ঠিক একইভাবে গতিশীল পৃথিবীতে নিজেকে এগিয়ে রাখার লক্ষ্যে নিজেকে সর্বদা নতুন সব তথ্য দিয়ে আপডেটেড রাখতে হবে। প্রতি সেকেন্ডেই বদলে যাচ্ছে অনেক কিছু। তাই সার্বক্ষণিক তোমাকে জানতে হবে সর্বশেষ তথ্য ও খবর। জীবনের লক্ষ্য আরও স্পষ্ট করার জন্য এসব নতুন তথ্য নতুন শক্তির জোগান দেয়।
তা ছাড়া আশপাশের কিছু মানুষ মৃত ও পচা মাংসের মতোই। তারা সর্বদা এমন সব কথাই বলে, যা আমাদের নিরুৎসাহিত করে। তবে এখানেই শিক্ষা নিয়ে হাজির হয় ঈগল পাখি। সে যেমন চড়ুই-কবুতরের মতো পাখিদের জন্য নিরুৎসাহিত না হয়ে আরও উঁচুতে উড্ডয়ন করে, তোমাকেও কোনো কিছুতে কান না দিয়ে ঈগলের মতোই এগিয়ে যেতে হবে নিজের স্বপ্ন ছুঁতে।
ঝড় এলে ঈগল পাখি তা এড়িয়ে না গিয়ে বরং ঝড়ের বেগকেই কাজে লাগিয়ে উঁচুতে উড়ে যায়। অন্য পাখিরা যখন পাতা ও গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকে, ঈগল তখন ঝড়ের বিরুদ্ধে তার ডানা ঝাপটে যায় এবং ঝড়ের বেগকেই কাজে লাগিয়ে মেঘকে ভেদ করে উপরে উঠে যায়। এমনকি একবার বাতাসের বেগ পেয়ে গেলেই ঈগল তার ডানা ঝাপটানো বন্ধ করে দেয় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবেই উপরে যেতে থাকে। ঝড়কে যেন সে খুব ভালোবাসে!
চ্যালেঞ্জকে চ্যালেঞ্জ নয়, সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে। অন্য সব পাখি যখন আশ্রয়ের জন্য জায়গা খোঁজে, ঈগল তখন ঝড়ের মাঝেও উড্ডয়নে মগ্ন থাকে। ঝড়ের বেগকে কাজে লাগিয়েই ঈগল টিকে থাকে বৈরী আবহাওয়ায়। তাই সাফল্যপিপাসু একজন স্বপ্নবাজকেও প্রতিটি চ্যালেঞ্জ সাদরে গ্রহণ করতে হবে। একমাত্র প্রতিকূল পরিস্থিতিই পারে নতুন কিছু শেখাতে, সমস্যা সমাধানের দারুণ দক্ষতাটি বাড়াতে। অতএব, চ্যালেঞ্জ এলে এড়িয়ে না গিয়ে তার মুখোমুখি হতে হবে, দৃপ্ত হাতে লড়তে হবে। বাধা নয়, শক্তিতে পরিণত করতে হবে, ঠিক যেভাবে ঈগল করে।
একটা মেয়েঈগল ও ছেলেঈগল যদি কখনো বন্ধু হতে চায়, মেয়েঈগলটি প্রথমেই ছেলেঈগলটির কমিটমেন্টের পরীক্ষা নিয়ে নেয়। কীভাবে? সাক্ষাৎ হওয়ার পর মেয়েঈগলটি মাটিতে নেমে এসে গাছের একটি ডাল তুলে নেয়। তার পিছু পিছু ছেলেঈগলটিও উড়ে যায়। মেয়েঈগলটি সেই ডাল নিয়ে উপরের দিকে উড়ে যায় এবং একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় যাওয়ার পর গাছের সেই ডালটি নিচে ফেলে দেয়। তার পিছু নেওয়া সেই ছেলেঈগলটি তা দেখে ডালটি ধরার জন্য দ্রুত নিচের দিকে যায়। ডালটি সে মেয়েঈগলের কাছে ফিরিয়ে আনে।
এই কার্যক্রমের পুনরাবৃত্তি কয়েক ঘণ্টা ধরে হতেই থাকে, যতক্ষণ না পর্যন্ত মেয়েঈগল আশ্বস্ত হয় যে ছেলেঈগলটি এই ডাল ফিরিয়ে আনার কাজটি আত্মস্থ করতে পেরেছে। এটা তার কাছে ছেলেঈগলটির ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার’ পরিচয় তুলে ধরে। অর্থাৎ ইংরেজিতে আমরা যেটাকে বলি ঈড়সসরঃসবহঃ। একমাত্র ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার’ পরিচয় দিতে পারলেই পরে তারা দুজন বন্ধু হতে পারে।
এখান থেকে প্রাপ্য শিক্ষা এটাই, ব্যক্তিগত জীবনেই হোক আর পেশাগত জীবনেই হোক, কারও সঙ্গে কোনো চুক্তিতে বা সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার আগে তার ঈড়সসরঃসবহঃ যাচাই করে নিতে হবে। এমন কারও সঙ্গে কাজে যোগ দিতে হবে, যে কাজের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ও মনোযোগী। নিজের কর্মচারী বা জুনিয়রদের অ্যাসাইনমেন্ট দিতে হবে এবং পরখ করতে হবে যে তোমার তত্ত্বাবধান ব্যতীত তারা কতটুকু ভালো কাজ করেছে, কত মনোযোগ ও গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করেছে। ঈগল আমাদের এই শিক্ষাটা কত সুন্দর করেই না দিয়েছে!
ডিম পাড়ার সময় এলে বাবা-ঈগল ও মা-ঈগল পাহাড়ের এমন একটি জায়গা বেছে নেয়, যেখানে কোনো শিকারির হামলা করার সুযোগ থাকে না। বাসা তৈরির পালা এলে ছেলেঈগল এই বাসা নির্মাণের জন্য প্রথমে কিছু কাঁটা বিছায়, তার ওপর গাছের ছোট ছোট ডালা, তার ওপর আবার কিছু কাঁটা দিয়ে একদম শেষে কিছু নরম ঘাস বিছিয়ে দেয়। ছোট্ট আবাসটির নিরাপত্তার জন্য বাইরের দিকে তারা কাঁটা ও শক্ত ডালা বিছিয়ে রাখে।
বাচ্চা-ঈগলগুলোর যখন উড়তে শেখার সময় হয়, মা-ঈগল তাদেরকে বাইরে ছুড়ে দেয় কিন্তু পড়ে যাওয়ার ভয়ে ছানাগুলো ফিরে আসে। মা-ঈগল এবার সব নরম ঘাস সরিয়ে ফেলে পুনরায় তাদের বাইরে ছুড়ে দেয়। আর তাই ছানাগুলো যখন ফিরে আসে, কাঁটার সঙ্গে আঘাত পেয়ে তারা নিজেই বাইরে ঝাঁপ দেয় এই ভেবে যে এত প্রিয় মা-বাবা কেন এমন করছে?
এবার বাবা-ঈগল নিয়োজিত হয় তাদের উদ্ধারকাজে। নিচে পড়ে যাওয়ার আগেই সে তার পিঠে করে ছানাগুলোকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। যত দিন পর্যন্ত ছানাগুলো তাদের ডানা ঝাঁপটানো না শুরু করে, এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকে। এখান থেকে শিক্ষা নেওয়ার মতো অনেক বিষয় আছে। এ রকম সুরক্ষিত আশ্রয় গড়ে তোলার এই প্রস্তুতি আমাদের শেখায় যেকোনো পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার। পরিবারের সব কাজে প্রত্যেকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সর্বদাই কাম্য। তা পরিবারের ছোট সদস্যদের কাছেও একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়।
বাচ্চা-ঈগলের গায়ে কাঁটা লাগায় তারা শেষ পর্যন্ত ডানা ঝাঁপটানো শুরু করে এবং তখনই প্রকৃতপক্ষে নতুন একটা বিষয় আবিষ্কার করে। তারা আবিষ্কার করে যে তারা উড়তে পারে। অতএব, এখান থেকে আমাদের শেখা উচিত, আমরা যেখানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, সারা জীবন ওখানেই থাকলে আমরা নতুন কিছু শিখব না, জীবন নিয়ে জানব না, নিজের ক্ষমতাগুলো নিয়ে অবগত হব না। এককথায়, ‘ঈড়সভড়ৎঃ তড়হব’ থেকে বের হতেই হবে! নচেৎ নতুন কিছু শেখা কখনোই সম্ভব নয়।
পৃথিবীতে আর যা কিছুই হয়ে যাক, বাবা-মা কখনোই সন্তানের অমঙ্গল কামনা করেন না। মা-ঈগল তার ছানাগুলোকে ছুড়ে দিতে চায়, যেন তারা উড়তে শেখে, বাবা-ঈগল তাদের পড়ে যাওয়া হতে বাঁচায়Ñএটাই কি অনুসরণীয় নয়? বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈগল পাখির ডানার পালকগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে, যে কারণে সে আগের মতো খুব দ্রুত গতিতে উড়তে পারে না। দুর্বল বোধ করলে সে এমন একটি জায়গায় আশ্রয় নেয়, যেখানে পাথর রয়েছে। সেখানে সে তার শরীরের প্রতিটি পালক টেনে ছিঁড়ে ও উঠিয়ে ফেলে। নতুন পালক না গজানো পর্যন্ত সেই দুর্বল ঈগল কোথাও বের হয় না। নতুন পালক গজিয়ে গেলে সে পুনরায় বজ্রগতিতে উড়ে বেড়ায়।
ঈগলের মানসিকতা : পশুদের রাজা যেমন সিংহকে বলা হয়, ঠিক তেমনি পাখিদের রাজা হলো ঈগল। সিংহকে যেমন তার মধ্যে থাকা বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য এই তকমা দেওয়া হয়েছে, ঠিক তেমনি ঈগল পাখির মধ্যেও রয়েছে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য, যা একে বাকি পাখিদের থেকে ওপরের স্থানে রাখে। আজকের আলোচনায় আমরা জানব ঈগলের মানসিকতার সেই সব বৈশিষ্ট্য এবং এর থেকে আমরা জীবনের কী কী শিক্ষা পাই।
একা চলার ক্ষমতা রাখতে হবে : ঈগল অন্য পাখিদের মতো দল বেঁধে ওড়ে না। তারা একা বা নিজের প্রজাতির সঙ্গেই আকাশের উচ্চতায় ওড়ে, যেখানে অন্য পাখিরা পৌঁছাতে পারে না। অর্থাৎ নিজের লক্ষ্যকে উঁচু রাখো এবং সেখানে পৌঁছানোর জন্য দল ছেড়ে একা চলতে শেখো অথবা একমাত্র তাদেরই সঙ্গে নাও, যারা তোমার মতো দৃষ্টিভঙ্গি রাখে এবং যাদের লক্ষ্য একই।
লক্ষ্য স্থির রাখো : ঈগল পাখি অনেক উচ্চতায় উড়লেও নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকে। ঈগল কয়েক কিলোমিটার দূরত্ব থেকেও নিজের শিকারের প্রতি ধৈর্যের সঙ্গে তীক্ষè নজর রাখে এবং সঠিক সময়ে নিজের শিকারের ওপর আক্রমণ করে তা অর্জন করে। অর্থাৎ এর থেকে আমরা এটাই শিখতে পারি, ধৈর্যের সঙ্গে পর্যবেক্ষণের পরে নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করো এবং তার ওপর অবিচল থাকো। ততক্ষণ হাল ছেড়ো না, যতক্ষণ না তুমি সেটাকে অর্জন করছ।
বিপদের সম্মুখীন হতে শেখো : অন্য পাখিদের বিপরীত ঈগল ঝড়-ঝঞ্ঝা দেখে ভয় পায় না। তারা ঝড়ের সময় অন্য পাখিদের মতো আশ্রয় খুঁজে বেড়ায় না। ঈগল ঝড় পছন্দ করে, কারণ ঝড়ের তীব্রতাকে কাজে লাগিয়ে তারা ঝড়ের ওপরে উড়তে পারে এবং তাদের ডানাকে আরাম দিতে পারে। এর ফলে ঈগল আরও শক্তিশালী হয়। অর্থাৎ যেকোনো বিপদ দেখে পালিয়ে না গিয়ে আমাদের উচিত তার সম্মুখীন হওয়া এবং লড়াই করা। প্রতিটি বিপদ আমাদের কোনো না কোনো শিক্ষা দিয়ে যায়, যা পরবর্তী সময়ে আমাদের আরও শক্তিশালী করে তোলে।
সম্পর্কের প্রতি দায়িত্ববান হও : ঈগল নিজের জন্য সঙ্গী খোঁজার আগে তার যোগ্যতা এবং তার প্রতি সঙ্গীর অঙ্গীকারের পরীক্ষা নেয়। অর্থাৎ জীবনে যেকোনো সম্পর্কে যাওয়ার আগে দেখে নাও, সেই ব্যক্তির সঙ্গে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি মেলে কি না এবং সে তোমার এবং তোমার জীবনের লক্ষ্যের প্রতি কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ।
নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করতে শেখো : জীবনের প্রায় ৪০ বছর অতিক্রম করার পর ঈগল পাখির শরীর জীর্ণ হয়ে পড়ে, তখন তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এক. নিজের এই দুর্বলতাকে স্বীকার করে নিয়ে মৃত্যুর পথ বেছে নেওয়া অথবা দুই. বেদনাদায়ক পদ্ধতিতে নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করে জীবনের আরও ৩০টি বছর উপভোগ করা।
এই পদ্ধতিতে ঈগলকে নিজের পাখনা নিজেকে টেনে ছিঁড়তে হয় এবং নিজের ঠোঁট নিজেকে ভাঙতে হয়। এই পদ্ধতিতে পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় লাগে। এরপর ঈগলের শরীরে নতুন পাখনা ও ঠোঁট আসে, যা তাকে আগের মতো শক্তিশালী ও শিকারে পারদর্শী করে তোলে। অর্থাৎ ত্যাগ ছাড়া সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়। নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমাদের অনেক সময় কঠিন সময় অতিক্রম করতে হয়, কিন্তু যে শেষ অবধি হাল না ছেড়ে ধৈর্য নিয়ে সইতে পারবে, সাফল্য তার কাছে ধরা দেবেই।
লেখক : গবেষক ও সমাজসেবক।
ঈগলকে আমরা চিনি শক্তিধর, দক্ষ একটি শিকারি পাখি হিসেবে। তবে পাখির রাজা ঈগল নিজ জীবনে মেনে চলে সাতটি মূলনীতি, যা মানুষ হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয় ও অনুসরণীয়। ঈগল অনেক উঁচুতে ওড়ে এবং কখনোই চড়ুই কিংবা অন্য ছোট পাখিদের সঙ্গে মেশে না, ওড়েও না।
ঈগল যেই উচ্চতায় উড়ে বেড়ায়, সেই উচ্চতায় অন্য কোনো পাখি পৌঁছাতেও পারে না। এ জন্যই ঈগল একা ওড়ার সিদ্ধান্ত নেয়, কারও সঙ্গে দল বেঁধে নয়। কাক-চড়ুই যেহেতু ঈগলের সমান এত উঁচুতে উড়তে পারে না, তাই ঈগল তাদের সঙ্গে দল বাঁধে না। মানুষ হিসেবে তোমাকেও জীবনে চলার পথে এমন মানুষগুলোর সঙ্গেই চলতে-ফিরতে-মিশতে হবে, যারা তোমার সমান স্বপ্ন দেখে, যাদের সঙ্গে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি মেলে, যাদের সঙ্গে থাকলে তোমার ব্যক্তিগত উন্নয়ন সম্ভবপর হবে।
বন্ধুত্ব করতে হবে সম-মানসিকতার মানুষের সঙ্গে এবং এড়িয়ে চলতে হবে এই কাক ও চড়ুইদের, যাদের সঙ্গে তোমার জীবনের লক্ষ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। ঈগলের রয়েছে তীক্ষè দৃষ্টিশক্তি, যার মাধ্যমে সে আকাশে থাকা অবস্থাতেই পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত দেখতে পায়, তাও একদম স্পষ্ট! ঈগল যখন তার শিকার খোঁজে, সে তার সব ফোকাস সেটার ওপর নিয়ে যায় এবং বেরিয়ে পড়ে শিকারের জন্য। যত বাধাই আসুক না কেন, সেটিকে না পাওয়া পর্যন্ত ঈগল কোনোক্রমেই তার চোখ সরায় না।
ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ কৌশল অবলম্বন করে। স্মার্টলি কমিউনিকেট করার প্রয়োজনীয় স্কিলস হাই-প্রোফাইল মানুষদের সঙ্গে নেটওয়ার্কিংয়ের কৌশল। ঈগল যেমন খুব স্পষ্টভাবে সবই দেখতে পায়, কিন্তু ফোকাস করে শুধু একটি প্রাণীর ওপর, তেমনভাবে তোমাকেও সবকিছু জানতে হবে, খোঁজখবর রাখতে হবে, তবে ফোকাস রাখতে হবে যেকোনো একটি কাজের ওপর।
নিজেকে জানো, জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করো এবং সেই একটি লক্ষ্যের পেছনেই ছোটো। যত বিপত্তিই আসুক না কেন, ফোকাস হারানো চাই না! পাখির রাজা ঈগল সর্বদা জীবন্ত প্রাণীকে খাবার হিসেবে খেয়ে থাকে। কখনোই কোনো মৃত জিনিস তারা ভক্ষণ করে না। রোজ রোজ নতুন শক্তির চাহিদায় ঈগল পাখি কখনোই মৃত কিছু না খেয়ে বরং জীবন্ত ও নতুন কোনো শিকারের পেছনে ছোটে।
ঠিক একইভাবে গতিশীল পৃথিবীতে নিজেকে এগিয়ে রাখার লক্ষ্যে নিজেকে সর্বদা নতুন সব তথ্য দিয়ে আপডেটেড রাখতে হবে। প্রতি সেকেন্ডেই বদলে যাচ্ছে অনেক কিছু। তাই সার্বক্ষণিক তোমাকে জানতে হবে সর্বশেষ তথ্য ও খবর। জীবনের লক্ষ্য আরও স্পষ্ট করার জন্য এসব নতুন তথ্য নতুন শক্তির জোগান দেয়।
তা ছাড়া আশপাশের কিছু মানুষ মৃত ও পচা মাংসের মতোই। তারা সর্বদা এমন সব কথাই বলে, যা আমাদের নিরুৎসাহিত করে। তবে এখানেই শিক্ষা নিয়ে হাজির হয় ঈগল পাখি। সে যেমন চড়ুই-কবুতরের মতো পাখিদের জন্য নিরুৎসাহিত না হয়ে আরও উঁচুতে উড্ডয়ন করে, তোমাকেও কোনো কিছুতে কান না দিয়ে ঈগলের মতোই এগিয়ে যেতে হবে নিজের স্বপ্ন ছুঁতে।
ঝড় এলে ঈগল পাখি তা এড়িয়ে না গিয়ে বরং ঝড়ের বেগকেই কাজে লাগিয়ে উঁচুতে উড়ে যায়। অন্য পাখিরা যখন পাতা ও গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকে, ঈগল তখন ঝড়ের বিরুদ্ধে তার ডানা ঝাপটে যায় এবং ঝড়ের বেগকেই কাজে লাগিয়ে মেঘকে ভেদ করে উপরে উঠে যায়। এমনকি একবার বাতাসের বেগ পেয়ে গেলেই ঈগল তার ডানা ঝাপটানো বন্ধ করে দেয় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবেই উপরে যেতে থাকে। ঝড়কে যেন সে খুব ভালোবাসে!
চ্যালেঞ্জকে চ্যালেঞ্জ নয়, সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে। অন্য সব পাখি যখন আশ্রয়ের জন্য জায়গা খোঁজে, ঈগল তখন ঝড়ের মাঝেও উড্ডয়নে মগ্ন থাকে। ঝড়ের বেগকে কাজে লাগিয়েই ঈগল টিকে থাকে বৈরী আবহাওয়ায়। তাই সাফল্যপিপাসু একজন স্বপ্নবাজকেও প্রতিটি চ্যালেঞ্জ সাদরে গ্রহণ করতে হবে। একমাত্র প্রতিকূল পরিস্থিতিই পারে নতুন কিছু শেখাতে, সমস্যা সমাধানের দারুণ দক্ষতাটি বাড়াতে। অতএব, চ্যালেঞ্জ এলে এড়িয়ে না গিয়ে তার মুখোমুখি হতে হবে, দৃপ্ত হাতে লড়তে হবে। বাধা নয়, শক্তিতে পরিণত করতে হবে, ঠিক যেভাবে ঈগল করে।
একটা মেয়েঈগল ও ছেলেঈগল যদি কখনো বন্ধু হতে চায়, মেয়েঈগলটি প্রথমেই ছেলেঈগলটির কমিটমেন্টের পরীক্ষা নিয়ে নেয়। কীভাবে? সাক্ষাৎ হওয়ার পর মেয়েঈগলটি মাটিতে নেমে এসে গাছের একটি ডাল তুলে নেয়। তার পিছু পিছু ছেলেঈগলটিও উড়ে যায়। মেয়েঈগলটি সেই ডাল নিয়ে উপরের দিকে উড়ে যায় এবং একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় যাওয়ার পর গাছের সেই ডালটি নিচে ফেলে দেয়। তার পিছু নেওয়া সেই ছেলেঈগলটি তা দেখে ডালটি ধরার জন্য দ্রুত নিচের দিকে যায়। ডালটি সে মেয়েঈগলের কাছে ফিরিয়ে আনে।
এই কার্যক্রমের পুনরাবৃত্তি কয়েক ঘণ্টা ধরে হতেই থাকে, যতক্ষণ না পর্যন্ত মেয়েঈগল আশ্বস্ত হয় যে ছেলেঈগলটি এই ডাল ফিরিয়ে আনার কাজটি আত্মস্থ করতে পেরেছে। এটা তার কাছে ছেলেঈগলটির ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার’ পরিচয় তুলে ধরে। অর্থাৎ ইংরেজিতে আমরা যেটাকে বলি ঈড়সসরঃসবহঃ। একমাত্র ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার’ পরিচয় দিতে পারলেই পরে তারা দুজন বন্ধু হতে পারে।
এখান থেকে প্রাপ্য শিক্ষা এটাই, ব্যক্তিগত জীবনেই হোক আর পেশাগত জীবনেই হোক, কারও সঙ্গে কোনো চুক্তিতে বা সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার আগে তার ঈড়সসরঃসবহঃ যাচাই করে নিতে হবে। এমন কারও সঙ্গে কাজে যোগ দিতে হবে, যে কাজের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ও মনোযোগী। নিজের কর্মচারী বা জুনিয়রদের অ্যাসাইনমেন্ট দিতে হবে এবং পরখ করতে হবে যে তোমার তত্ত্বাবধান ব্যতীত তারা কতটুকু ভালো কাজ করেছে, কত মনোযোগ ও গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করেছে। ঈগল আমাদের এই শিক্ষাটা কত সুন্দর করেই না দিয়েছে!
ডিম পাড়ার সময় এলে বাবা-ঈগল ও মা-ঈগল পাহাড়ের এমন একটি জায়গা বেছে নেয়, যেখানে কোনো শিকারির হামলা করার সুযোগ থাকে না। বাসা তৈরির পালা এলে ছেলেঈগল এই বাসা নির্মাণের জন্য প্রথমে কিছু কাঁটা বিছায়, তার ওপর গাছের ছোট ছোট ডালা, তার ওপর আবার কিছু কাঁটা দিয়ে একদম শেষে কিছু নরম ঘাস বিছিয়ে দেয়। ছোট্ট আবাসটির নিরাপত্তার জন্য বাইরের দিকে তারা কাঁটা ও শক্ত ডালা বিছিয়ে রাখে।
বাচ্চা-ঈগলগুলোর যখন উড়তে শেখার সময় হয়, মা-ঈগল তাদেরকে বাইরে ছুড়ে দেয় কিন্তু পড়ে যাওয়ার ভয়ে ছানাগুলো ফিরে আসে। মা-ঈগল এবার সব নরম ঘাস সরিয়ে ফেলে পুনরায় তাদের বাইরে ছুড়ে দেয়। আর তাই ছানাগুলো যখন ফিরে আসে, কাঁটার সঙ্গে আঘাত পেয়ে তারা নিজেই বাইরে ঝাঁপ দেয় এই ভেবে যে এত প্রিয় মা-বাবা কেন এমন করছে?
এবার বাবা-ঈগল নিয়োজিত হয় তাদের উদ্ধারকাজে। নিচে পড়ে যাওয়ার আগেই সে তার পিঠে করে ছানাগুলোকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। যত দিন পর্যন্ত ছানাগুলো তাদের ডানা ঝাঁপটানো না শুরু করে, এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকে। এখান থেকে শিক্ষা নেওয়ার মতো অনেক বিষয় আছে। এ রকম সুরক্ষিত আশ্রয় গড়ে তোলার এই প্রস্তুতি আমাদের শেখায় যেকোনো পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার। পরিবারের সব কাজে প্রত্যেকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সর্বদাই কাম্য। তা পরিবারের ছোট সদস্যদের কাছেও একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়।
বাচ্চা-ঈগলের গায়ে কাঁটা লাগায় তারা শেষ পর্যন্ত ডানা ঝাঁপটানো শুরু করে এবং তখনই প্রকৃতপক্ষে নতুন একটা বিষয় আবিষ্কার করে। তারা আবিষ্কার করে যে তারা উড়তে পারে। অতএব, এখান থেকে আমাদের শেখা উচিত, আমরা যেখানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, সারা জীবন ওখানেই থাকলে আমরা নতুন কিছু শিখব না, জীবন নিয়ে জানব না, নিজের ক্ষমতাগুলো নিয়ে অবগত হব না। এককথায়, ‘ঈড়সভড়ৎঃ তড়হব’ থেকে বের হতেই হবে! নচেৎ নতুন কিছু শেখা কখনোই সম্ভব নয়।
পৃথিবীতে আর যা কিছুই হয়ে যাক, বাবা-মা কখনোই সন্তানের অমঙ্গল কামনা করেন না। মা-ঈগল তার ছানাগুলোকে ছুড়ে দিতে চায়, যেন তারা উড়তে শেখে, বাবা-ঈগল তাদের পড়ে যাওয়া হতে বাঁচায়Ñএটাই কি অনুসরণীয় নয়? বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈগল পাখির ডানার পালকগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে, যে কারণে সে আগের মতো খুব দ্রুত গতিতে উড়তে পারে না। দুর্বল বোধ করলে সে এমন একটি জায়গায় আশ্রয় নেয়, যেখানে পাথর রয়েছে। সেখানে সে তার শরীরের প্রতিটি পালক টেনে ছিঁড়ে ও উঠিয়ে ফেলে। নতুন পালক না গজানো পর্যন্ত সেই দুর্বল ঈগল কোথাও বের হয় না। নতুন পালক গজিয়ে গেলে সে পুনরায় বজ্রগতিতে উড়ে বেড়ায়।
ঈগলের মানসিকতা : পশুদের রাজা যেমন সিংহকে বলা হয়, ঠিক তেমনি পাখিদের রাজা হলো ঈগল। সিংহকে যেমন তার মধ্যে থাকা বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য এই তকমা দেওয়া হয়েছে, ঠিক তেমনি ঈগল পাখির মধ্যেও রয়েছে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য, যা একে বাকি পাখিদের থেকে ওপরের স্থানে রাখে। আজকের আলোচনায় আমরা জানব ঈগলের মানসিকতার সেই সব বৈশিষ্ট্য এবং এর থেকে আমরা জীবনের কী কী শিক্ষা পাই।
একা চলার ক্ষমতা রাখতে হবে : ঈগল অন্য পাখিদের মতো দল বেঁধে ওড়ে না। তারা একা বা নিজের প্রজাতির সঙ্গেই আকাশের উচ্চতায় ওড়ে, যেখানে অন্য পাখিরা পৌঁছাতে পারে না। অর্থাৎ নিজের লক্ষ্যকে উঁচু রাখো এবং সেখানে পৌঁছানোর জন্য দল ছেড়ে একা চলতে শেখো অথবা একমাত্র তাদেরই সঙ্গে নাও, যারা তোমার মতো দৃষ্টিভঙ্গি রাখে এবং যাদের লক্ষ্য একই।
লক্ষ্য স্থির রাখো : ঈগল পাখি অনেক উচ্চতায় উড়লেও নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকে। ঈগল কয়েক কিলোমিটার দূরত্ব থেকেও নিজের শিকারের প্রতি ধৈর্যের সঙ্গে তীক্ষè নজর রাখে এবং সঠিক সময়ে নিজের শিকারের ওপর আক্রমণ করে তা অর্জন করে। অর্থাৎ এর থেকে আমরা এটাই শিখতে পারি, ধৈর্যের সঙ্গে পর্যবেক্ষণের পরে নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করো এবং তার ওপর অবিচল থাকো। ততক্ষণ হাল ছেড়ো না, যতক্ষণ না তুমি সেটাকে অর্জন করছ।
বিপদের সম্মুখীন হতে শেখো : অন্য পাখিদের বিপরীত ঈগল ঝড়-ঝঞ্ঝা দেখে ভয় পায় না। তারা ঝড়ের সময় অন্য পাখিদের মতো আশ্রয় খুঁজে বেড়ায় না। ঈগল ঝড় পছন্দ করে, কারণ ঝড়ের তীব্রতাকে কাজে লাগিয়ে তারা ঝড়ের ওপরে উড়তে পারে এবং তাদের ডানাকে আরাম দিতে পারে। এর ফলে ঈগল আরও শক্তিশালী হয়। অর্থাৎ যেকোনো বিপদ দেখে পালিয়ে না গিয়ে আমাদের উচিত তার সম্মুখীন হওয়া এবং লড়াই করা। প্রতিটি বিপদ আমাদের কোনো না কোনো শিক্ষা দিয়ে যায়, যা পরবর্তী সময়ে আমাদের আরও শক্তিশালী করে তোলে।
সম্পর্কের প্রতি দায়িত্ববান হও : ঈগল নিজের জন্য সঙ্গী খোঁজার আগে তার যোগ্যতা এবং তার প্রতি সঙ্গীর অঙ্গীকারের পরীক্ষা নেয়। অর্থাৎ জীবনে যেকোনো সম্পর্কে যাওয়ার আগে দেখে নাও, সেই ব্যক্তির সঙ্গে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি মেলে কি না এবং সে তোমার এবং তোমার জীবনের লক্ষ্যের প্রতি কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ।
নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করতে শেখো : জীবনের প্রায় ৪০ বছর অতিক্রম করার পর ঈগল পাখির শরীর জীর্ণ হয়ে পড়ে, তখন তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এক. নিজের এই দুর্বলতাকে স্বীকার করে নিয়ে মৃত্যুর পথ বেছে নেওয়া অথবা দুই. বেদনাদায়ক পদ্ধতিতে নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করে জীবনের আরও ৩০টি বছর উপভোগ করা।
এই পদ্ধতিতে ঈগলকে নিজের পাখনা নিজেকে টেনে ছিঁড়তে হয় এবং নিজের ঠোঁট নিজেকে ভাঙতে হয়। এই পদ্ধতিতে পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় লাগে। এরপর ঈগলের শরীরে নতুন পাখনা ও ঠোঁট আসে, যা তাকে আগের মতো শক্তিশালী ও শিকারে পারদর্শী করে তোলে। অর্থাৎ ত্যাগ ছাড়া সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়। নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমাদের অনেক সময় কঠিন সময় অতিক্রম করতে হয়, কিন্তু যে শেষ অবধি হাল না ছেড়ে ধৈর্য নিয়ে সইতে পারবে, সাফল্য তার কাছে ধরা দেবেই।
লেখক : গবেষক ও সমাজসেবক।