উইন রোজারিও হত্যার ভিডিও দেখে  হতবাক যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশিরা

প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৪, ১৬:৩০ , অনলাইন ভার্সন
নিউইয়র্কে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ উইন রোজারিও বাড়ির রান্নাঘরে মা ও ছোট ভাইয়ের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার ৩৬ দিন পর ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা যায় উইন রোজারিওর ছোটভাই উৎস পুলিশকে অনুনয় বিনয় করে বলছে- ‘প্লিজ, আমার মাকে গুলি করবেন না।’
এ ভিডিও দেখার পর সবার একটাই প্রশ্ন- এ কি করলো এনওয়াইপিডি! উইনকে বাঁচিয়ে রাখার যথেষ্ট সুযোগ ছিল এবং তাকে বাঁচিয়ে রাখা উচিৎ ছিল। পুলিশের বডিক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে উইন রোজারিও হত্যার রোমহর্ষক দৃশ্য দেখে হতবাক যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
গত ২৭ মার্চ ওজনপার্কের ১০৩ স্ট্রিট ও ১০১ অ্যাভিনিউর বাসা থেকে উইন রোজারিও নিজে পুলিশের সাহায্য চেয়ে ৯১১-এ কল করেন। এরপর মা ও ছোট ভাইয়ের সামনেই পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১৯ বছর বয়সী উইন রোজারিও।
পুলিশ উইনকে হত্যার আগে দ্রুত বাড়তে থাকা উত্তেজনার মুহূর্তগুলোর সময় তার ভাই উৎস হাতজোড় করে অফিসারদের বলেন, ‘প্লিজ, আমার ভাই ও মাকে গুলি করবেন না!’
উইন হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তার পরিবার এবং বাঙালি কমিউনিটির পক্ষ থেকে দাবি জানানো হচ্ছিল, পুলিশের বডি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ করা হোক।
অফিসারদের জবাবদিহিতার অভাব নিয়ে পরিবারের হতাশার কথা জানানোর পরে রাজ্য অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস ভিডিওটি প্রকাশ করেছে। অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসের নির্দেশনায় গত ৩ মে ঘটনার ভিডিও প্রকাশ করা হয়। পুলিশের বডিক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে উইন রোজারিও হত্যার রোমহর্ষক দৃশ্য দেখে হতবাক যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।
প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, ৯১১-এ খবর পাওয়ার পর পুলিশ অফিসাররা দুপুরের দিকে উইনের ছোটভাই উৎসের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বাসায় প্রবেশ করেন। এরপর তিন মিনিটের মধ্যে উইন রোজারিও পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান।
এদিকে এনওয়াইপিডি গত ৩ মে এক বিবৃতিতে বলেছে, উইন নিহতের ঘটনায় জড়িত দুই পুলিশ কর্মকর্তার শিল্ড ও আগ্নেয়াস্ত্র প্রত্যাহার করে তাদের পরিবর্তিত অ্যাসাইনমেন্ট-এ রাখা হয়েছে এবং ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে।
নিউইয়র্কের জাস্টিস কমিটির পক্ষ থেকে গত ৩ মে এক বিবৃতিতে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক লইডা কলোন বলেন, ‘ভিডিওগুলো খুবই কষ্টদায়ক এবং তা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার শামিল। উইনকে গুলি করার বিষয়ে নিউইয়র্ক পুলিশ যে বক্তব্য দিয়েছিল, তার সঙ্গে ভিডিওর কোনো মিল নেই। মুহূর্তের মধ্যে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় উইনকে হত্যা করা হয়েছে।’
ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- স্যালভেটর অ্যালোঙ্গি ও ম্যাথিউ সিয়ানফ্রকো।
ভিডিও অনুসারে, মানসিক যন্ত্রণায় থাকা কুইন্সের কিশোর উইন রোজারিওর মা ও ভাই তাকে গুলি না করার জন্য পুলিশকে বারবার অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ অফিসাররা তার অনুরোধ উপেক্ষা করে একাধিক গুলি চালিয়ে উইনকে হত্যা করে।
এনওয়াইপিডি চীফ অফ পেট্রোল জন চেল এই হত্যাকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, ১৯ বছর বয়সী এই কিশোর ড্রয়ার থেকে এক জোড়া কাঁচি বের করে ধরেছিল এবং অফিসারদের দিকে তেড়ে আসছিল।
প্রকাশিত ফুটেজটি নিশ্চিত করে যে, বাড়িতে পৌঁছানোর তিন মিনিটের মধ্যে কীভাবে উত্তেজনা দ্রুত বাড়তে থাকে এবং অফিসার ম্যাথিউ সিয়ানফ্রোকো ও সালভেটর অ্যালোঙ্গি টেসিং ও পরে উইন রোজারিওকে মারাত্মকভাবে গুলি করেন।
ভিডিওটি জনসাধারণের সাথে শেয়ার করার পরে উইনের পরিবার গত ৩ মে একটি বিবৃতি দেয়। এতে বলা হয়, ‘আমরা উইনকে হারানোর এক মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেছে এবং আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। আমরা প্রতিদিন তাকে মিস করছি। ভিডিওটি পুনরায় ছাড়া আমাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক ও বেদনাদায়ক। যে ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়েছে তাতে পরিষ্কার যে উইনকে বাঁচিয়ে রাখা উচিত ছিল। কিন্তু পুলিশ তাকে কিংবা আমাদের কোনো ধরনের পাত্তা না দিয়ে তাকে হত্যা করেছে। পুলিশ ঠান্ডা মাথায় সংকট সৃষ্টি করেছে এবং তাকে হত্যা করেছে। যত দ্রুত সম্ভব অফিসারদের বরখাস্ত ও খুনের জন্য তাদের বিচার করা উচিত।’
হৃদয় বিদারক দৃশ্য : ভিডিওতে দেখা যায়, অফিসাররা প্রথমে একজনের সাথে কথা বলছেন যিনি বাড়ির বাইরে নিজেকে উইনের ভাই উৎস বলে পরিচয় দেন। ভাই অফিসারদের বলেন, উইন ৯১১ এ কল করেছে এবং ‘তার একটি এপিসোড আছে।’
একজন অফিসার জানতে চাইলেন, ‘কি ধরনের এপিসোড? সে কি বাইপোলার সিজোর মতো?’
উৎস উত্তর দেন, ‘সে এটাও জানেন না যে সে আপনার সাথে আসলে কি করছে।’
অফিসারদের যখন তাদের ঘরে নেয়া হলো, তখন মায়ের সঙ্গে থাকা উইনকে তারা বলল, ‘কি খবর, বন্ধু?’
অফিসারদের দেখার কিছুক্ষণ পরেই উইন গিয়ে রান্নাঘরের ড্রয়ার থেকে একজোড়া কাঁচি বের করে আনল এবং পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তাকে গুলি করে। তার মা তাকে ধরে ফেলেন এবং তার কাছ থেকে কাঁচিও নিয়ে যান। কিন্তু পুলিশ তাকে চিৎকার করে বলেছিল ‘তাকে ছেড়ে দাও এবং ফিরে আসো।’
উৎস এ সময় পুলিশ অফিসারদের থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে পাশের লিভিং রুমে হাত তুলে অনুরোধ করল, ‘প্লিজ, আমার মাকে গুলি করবেন না।’
এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা না! তাকে বলুন এই পথ থেকে দূরে সরে যেতে!’
তার মা ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার পরে পুলিশ তাকে আবার গুলি করে।
উইনের মা অফিসারদের কাছে অনুরোধ করেন, ‘গুলি করবেন না!’
উইন পড়ে না গিয়ে আবার রান্নাঘরের একটি চেয়ার থেকে কাঁচিটি ধরে অফিসারদের দিকে তেড়ে যান।
তখন তার মা তাকে জোর করে ধাক্কা দিয়ে আবার অফিসারদের থেকে দূরে রান্নাঘরে নিয়ে যায়।
একজন অফিসার বারবার তাকে চিৎকার করে বলেন, ‘পথ থেকে সরে যাও!’
উইন তারপর দোল খায় এবং কাঁচিটি তার পাশে ধরে।
উইনকে একাধিকবার গুলি করার আগে একজন অফিসার চিৎকার করে বলেন, ‘না! 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041