বিজ্ঞাপনদাতার অনুমতি ছাড়া মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ!

বিপাকে নিউইয়র্কের ব্যবসায়ীরা

প্রকাশ : ০১ মে ২০২৪, ১৭:১৭ , অনলাইন ভার্সন
নিউইয়র্কে প্রতিনিয়ত বাড়ছে গণমাধ্যমের সংখ্যা। একের পর এক পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। অনলাইনভিত্তিক ও ফেসবুকভিত্তিক টিভি হচ্ছে। অনলাইন পোর্টালে পত্রিকা হচ্ছে। এ ছাড়া ই-পেপারও প্রকাশিত হচ্ছে। পত্রিকাসহ বিভিন্ন মিডিয়ার সংখ্যা বাড়লেও বিজ্ঞাপনের বাজার সেভাবে বাড়েনি। এ কারণে পত্রিকাগুলোকে অনেক কষ্ট করে প্রকাশনা অব্যাহত রাখতে হয়। পত্রিকার সংখ্যা দিনে দিনে বাড়তে থাকায় বিজ্ঞাপন ভাগাভাগিও হয়ে যাচ্ছে। ফলে যেসব পত্রিকার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক বেশি ভালো এবং যেসব পত্রিকা পাঠকনন্দিত, তারা সেসব পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। কিন্তু নিউইয়র্কের কমিউনিটি বেইজ বেশির ভাগ মিডিয়াই চায় কোনো একটি প্রতিষ্ঠান কাউকে বিজ্ঞাপন দিলে যেন তাদেরকেও দেওয়া হয়। না দিলে বারবার ফোন করে। কিন্তু সবার চাহিদা থাকলেও ব্যবসায়ীরা সেই চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না। কারণ তাদের বাজেট না থাকার কারণে সবাইকে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন না। এ অবস্থায় বিজ্ঞাপনদাতার অনুমতি ছাড়াই অনেক মিডিয়া বিজ্ঞাপন ছেপে দিচ্ছে! ছাপা হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে বিজ্ঞাপনের মূল্য দাবি করছে। এতে বিপাকে পড়ছেন নিউইয়র্কের অনেক ব্যবসায়ী। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি কোন মিডিয়ায় কত দিনের জন্য কেমন বিজ্ঞাপন দেব, সেটি আমার ইচ্ছা। একটি পত্রিকাকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর অন্যান্য পত্রিকা যদি জানতে চায়, তাদের কেন বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো না, তাহলে আমাদের বিব্রত হতে হয়। কারণ আমরা অনেক লাভ করি না। তাই সব পত্রিকাকে বিজ্ঞাপন দেওয়া সম্ভব হয় না। কোনো কোনো ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, যারা বিজ্ঞাপন দেন তারা কিছু পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিয়ে রেহাই পাচ্ছেন না। না দিলে মনঃক্ষুণ্ন হচ্ছেন মিডিয়ার কর্মী ও মালিকেরা।
সূত্র জানায়, নিউইয়র্কের পুরোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন দেয়। পুরোনোদের পাশাপাশি কিছুু কিছু নতুন প্রতিষ্ঠানও বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যারা আগে বিজ্ঞাপন দিলেও এখন দেয় না। তারা প্রয়োজন না থাকায় কিংবা অর্থাভাবে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে না। কেউ কেউ আবার দু-একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়। এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর অন্যরা বিজ্ঞাপনের জন্য চাপ সৃষ্টি করে।
একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, তিনি বা তার প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন ছাপার অনুমতি না দিলেও বিভিন্ন মিডিয়ায় তাদের বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হচ্ছে। বিনা অনুমতিতে বিজ্ঞাপন প্রকাশের বিষয়ে তাদের বেশ কয়েকজন বলেছেন, আমরা বিজ্ঞাপন দিতে চাই না। কিন্তু আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে দিচ্ছে। তারা বলেন, একসময় বিজ্ঞাপনের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এখন বিজ্ঞাপন লাগে না। কারণ মিডিয়ার বিজ্ঞাপন দেখে ক্লায়েন্ট আসে না। ক্লায়েন্ট আসে রেফারেন্সের মাধ্যমে।
এক ব্যবসায়ী বলেন, একসময় আমি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতাম, এখন বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু কিছু কিছু মিডিয়া আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন চালু রেখেছে। তাদের বলেছি, আমি বিজ্ঞাপন বিল দেব না। তারা বলেছে, বিল দিতে হবে না। পরে আবার দেখা যায় ঠিকই একটি বিল ধরিয়ে দিচ্ছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিনা অনুমতিতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর বিল ধরিয়ে দেওয়া কতটা যৌক্তিক এবং নৈতিক। বিনা অনুমতিতে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে অর্থ দিতে না চাইলে মিডিয়ার বিজ্ঞাপনকর্মীরা বলেন, যা পারেন দিয়েন। এই যা পারেন দিয়েন কত জনকে দেওয়া যাবে? আমাদেরও আয় সীমিত।
আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন একসময়ে চলত। কিন্তু এখন আর কোথাও দিচ্ছি না। সব পত্রিকায় ই-মেইল করে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিতে বলেছি। তার পরও অনেকে বন্ধ করে না। এটা তো হতে পারে না। বন্ধ করার পরও বিজ্ঞাপন চালানো কোনো নীতিতেই পড়ে না।
জানা গেছে, একাধিক মিডিয়া থেকে ব্যবসায়ী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধারকে ফোন করে বিজ্ঞাপন চাওয়া হয়। কেউ কেউ দেন, কেউ দেন না। আর অন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন যাচ্ছে এমন উদাহরণ যখন দেন, তখন বলা হয় ওই মিডিয়াতে আমি তো আমার বিজ্ঞাপন দিতে বলিনি, কোনো অনুমতি দিইনি, তার পরও দিয়ে যাচ্ছে। ছাপতে নিষেধ করেছি, তাও ছেপে যাচ্ছে। কী করব বলুন!
একজন আইনজীবী বলেন, আমি একটি মিডিয়ায় কেবল আমার বিজ্ঞাপন দিই। অন্য কোথাও দিই না। অনেকেই আমার কাছে বিজ্ঞাপন চান, আমি তাদেরকে স্পষ্ট করে বলে দিই, আমি একটি পত্রিকা ছাড়া অন্য কাউকে বিজ্ঞাপন দিই না।
একটি সংগঠনের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা আগে বিজ্ঞাপন দিতাম, এখন আর দিই না। কারণ একটি বিজ্ঞাপন দিতে গেলে সেখানে ২০-২১টি পত্রিকা ও মিডিয়া বিজ্ঞাপন চাওয়া শুরু করে। আর না দিলে বলে অন্য পত্রিকায় দিচ্ছেন আমাদেরকে কেন দেবেন না। আমাদের কী দোষ। আমরা কেন বিজ্ঞাপন পাব না। অনেক সময়ে কম দামে ও নামমাত্র দামেও বিজ্ঞাপন দেওয়ার অফার দিয়ে থাকে। কিন্তু আমরা কীভাবে এত প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞাপন দেব। আমাদের সংগঠনের প্রচারের জন্য ২০টি পত্রিকায় যদি ৩০০/২০০ ডলার করেও বিজ্ঞাপনের বাজেট ধরি, তাহলে আমাদেরকে পেমেন্ট করতে হবে ছয় হাজার বা চার হাজার ডলার। ১০০ ডলার করে হলে দুই হাজার ডলার। আর ৫০ ডলার করে হলেও এক হাজার ডলার। কিন্তু আমাদের এত বাজেট নেই। এক-দুটি মিডিয়ার জন্য বাজেট থাকে ১০০-২০০ ডলার, সর্বোচ্চ ৫০০ ডলার। 
আরেকটি সংগঠনের সভাপতি বলেন, আমরা ফেসবুকে আমাদের অনুষ্ঠানের ফ্লায়ার দিয়েছি। সেটি আবার কোনো কোনো মিডিয়া প্রকাশ করে। তারা একবার অনুমতির প্রয়োজনও মনে করে না, আবার বিলও চায়। এটা কি নৈতিকতার মধ্যে পড়ে?
অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট বলেন, আগে কম-বেশি সব মিডিয়াতেই আমাদের বিজ্ঞাপন যেত। পরে সব মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ করে দিই। ওই ব্যবসায়ী বলেন, আমি আর কোথাও বিজ্ঞাপন দিচ্ছি না। যখন প্রয়োজন পড়ে তখন কেবল একটি মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেব। ওই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন সব পত্রিকায় বন্ধ থাকলেও তারা মাসে নিয়মিত একটি পত্রিকাকে সহায়তা করেন। এ ব্যাপারে জানা গেছে, যে মিডিয়াকে তারা সহায়তা করেন, সেই মিডিয়াকে বিজ্ঞাপন না দিয়ে তিনি মাসে মাসে ওই মিডিয়ার খরচের একটি অংশ দেন। এটি অনুদান হিসেবেই দিয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে একটি পত্রিকার সম্পাদক বলেন, নিউইয়র্কের কমিউনিটি বেইজ পত্রিকাগুলো বছরের পর বছর এই কমিউনিটির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। যারা সত্যিকার অর্থেই কষ্ট করে দিনের পর দিন মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। বিজ্ঞাপনের কারণে একদিকে তাদের যেমন প্রসার হবে, সেই সঙ্গে পণ্যের প্রচার হবে। আর মিডিয়াকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ মিডিয়ার মাধ্যমে কমিউনিটির বিভিন্ন খবর সবার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। ব্যবসায়ী ও গণমাধ্যমের মধ্যে বিজ্ঞাপনের সম্পর্কটি দ্বিপাক্ষিক একটি সহযোগিতার বিষয়। একে অপরকে সহায়তা করতে হবে। তবে এ বিষয়ে সবাইকেই সতর্ক থাকতে হবে। কারও অনুমতি ছাড়া বিজ্ঞাপন না প্রকাশ করার নীতি সবাইকে অনুসরণ করতে হবে। বিজ্ঞাপন যত দিনের জন্য দেবেন, ঠিক তত দিনই চালাতে হবে। আর ব্যবসায়ীদের উচিত হবে বিজ্ঞাপনের বিল যথাসময়ে পরিশোধ করা। কিছু কিছু ব্যবসায়ী নামমাত্র মূল্যে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে চান। এই মনোভাব পরিহার করা জরুরি। গণমাধ্যমগুলোকেও ন্যায্যমূল্যে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে হবে। একেবারেই নামমাত্র মূল্যে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হলে আগামী দিনে মিডিয়াগুলো বাজেট সংকটে ভুগবে। এ দেশে মিডিয়াকে সচল রাখতে হলে কমিউনিটির ব্যবসায়ী, নেতৃবৃন্দসহ সবাইকেই সহযোগিতা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, কেউ কেউ আছেন বিজ্ঞাপন দিয়ে কিছুদিন বিল দেন। বিল দিয়ে একটি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করেন। এরপর দিনের পর দিন বিজ্ঞাপনের বিল পরিশোধ না করে অর্থের পরিমাণ বাড়াতে থাকেন। এক পর্যায়ে ওই বিল আর দেন না। কেউ কেউ বেশি দিন হয়ে গেলে বিল তামাদি হয়ে গেছে এমনও দাবি করেন। আবার কেউ কেউ আছেন পুরোপুরি অস্বীকার করে ফেলেন যে তিনি বিজ্ঞাপনই দেননি। এটি স্রেফ ওই অর্থ না দেওয়ার জন্য। মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিলের অর্থ পরিশোধ করছেন না এমন তালিকায় কমিউনিটির অনেক পরিচিত মুখ রয়েছে। যা জানলে এই কমিউনিটির মানুষ অবাক হবেন। তবে বেশির ভাগ বিজ্ঞাপনদাতাই চেষ্টা করেন অর্থ দিয়ে দেওয়ার। অগ্রিম বিল পেমেন্ট পরিশোধ করেন এমন অনেক গ্রাহক ও বিজ্ঞাপনদাতা রয়েছেন। 
ওই সম্পাদক আরও বলেন, কিছু ব্যবসায়ী আছেন যারা বিজ্ঞাপন প্রদানের বিষয়ে খুবই সহায়ক। তারা বিজ্ঞাপন দেন আবার সময়মতো পেমেন্টও দেন। তারা একটি পত্রিকা যে দামে বিজ্ঞাপন দেওয়ার অনুরোধ করে, সেই দামেই দেন। তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের প্রসারে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও টিকিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখছেন। 
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041