ছোটবেলায় বছরে দু-একবার গ্রামে বেড়াতে যেতাম। চৈত্র সংক্রন্তির দিন অনেক মহিলা দল বেঁধে আসতেন। এমন একটি গানের সুর তুলতেনÑবারবার শুনতে মন চাইত : ‘আল্লাহ মেঘ দে-পানি দে-ছায়া দেরে তুই আল্লাহ মেঘ দে’। সে সময় জমিন ফাটা, পানির তেষ্টা। একসময় মেঘের দেখা মিলত, ছায়াও চলে আসত, অঝোর ধারায় বৃষ্টিও নেমে আসত।
একটি স্কুলে শিশুদের অঙ্কন প্রতিযোগিতা। যেমন খুশি আঁকো। ছোট শিশু সুন্দর একটি শহরের ছবি আঁকে। প্রতিযোগিতা শেষ। শিশুটিকে জিজ্ঞেস করা হয়Ñএটা কিসের ছবি?
-একটি নতুন শহরের।
-আচ্ছা। এসব কী?
-বড় একটা বন।
-কেন? বনের ছবি কেন? পশু-পাখি কোথায় থাকবে?
চিড়িয়াখানা দেখোনি? শিশুটির অর্থবহ প্রশ্ন?
-আর সারি সারি দু’পাশে গাছ। এত গাছ কেন?
-শোনো! আমি আর মা প্রতিদিন রিকশায় করে বাড়ি ফিরি।
-তারপর।
-রিকশাওয়ালা বেচারার তেষ্টা পায়।
-তারপর।
-গাছের নিচে বিশ্রাম নেয়, পানির পিপাসা মেটায়।
আরও প্রশ্ন চলে আসে।
-বাবু, এই ছোট লোকটি কেন?
-বোঝো না কেন? বৃষ্টির পানি কোথায় যাবে!
শিশুটির বয়স ৯-১০ বছর। সর্বাধিক নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে। এই শিশুকে কি আমরা পরিবেশবিজ্ঞানী বলতে পারি না?
দুবাই নগরীÑদুবাই রানি। কর্মব্যস্ত নগরীÑপ্রাণচাঞ্চল্য নগরী। পর্যটকের নগরীÑব্যবসা-বাণিজ্যের নগরী। সে নগরী কখনোই ঘুমিয়ে থাকে না। সে নগরীর গগণচুম্বী দৃষ্টিনন্দন অট্টালিকা বিস্ময়কর। দুবাই রানি স্বপ্ন দেখেন। প্রশংসিত চাকচিক্যের নগরী।
মরুর বুকে পাখির কিচিরমিচির, কাকডাকা ভোর আর বসন্তের কোকিলÑএসব চিহ্নবিহীন। কিন্তু মানুষের কর্মব্যস্ততায় তন্দ্রা ভেঙে যায়। প্রচণ্ড খরা, খাঁ খাঁ রোদ, গভীর তেষ্টার এই ছবি দেখেই আমরা অভ্যস্ত। সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া দুর্যোগ। টিভির পর্দায় এই নগরীর ছবি দেখে মনে হয় তৃতীয় বিশ্বের একটি ছবি।
অসীম অনুপ্রেরণা, গভীর আগ্রহ আর খুব যত্নে গড়া এই নগরী। আজ হিসাব মেলাতে পারছে না। কেন অতল জল? কেনই-বা জলাবদ্ধতা? এই জটিল সমীকরণ একদিনে মিলবে না। জলবায়ুর পরিবর্তন, না কৃত্রিম বৃষ্টি। কার দায় বেশি। ঝড়ের জন্য আমরা কেউ বসে থাকি না। ঝড় শেষ হয়ে যাওয়ার পর কারণ খুঁজি। দুবাইয়ের অবস্থাও ঠিক তা-ই। নগরায়ণ প্রসারণ অর্থনীতির চাকা চাঙা করবে, সন্দেহ নেই। পাশাপাশি পূর্বশর্ত বনায়ন। জীবনের অস্তিত্বের প্রয়োজনেই বিশ্বব্যাপী আজ এই প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। মরুর বুকে সারি সারি গাছ-বনায়ন-পরিবেশবিদেরা ভালো জানবেন। এসব এখন সম্ভব হতে চলেছে। নগরায়ণ তখনই আকর্ষিত হবে, যখন সেখানে পরিবেশের ভারসাম্য হবে। পাশাপাশি এমন অনেক পরিকল্পনার বাধ্যবাধকতা থাকবে, যখন প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগকে হুমকি মনে হবে না।
এ লেখার শেষে আবারও সেই গানের কথা মনে করতে চাই। আল্লাহ মেঘ দেবে-পানিও দেবেÑছায়াও দেবে। রহমতের বর্ষণ আসবে। বৈশ্বিক শান্তি ঘিরে থাকবে।
ছোট শিশুটি খুদে পরিবেশবিদ। আমি তাকে স্যালুট জানাই। এই শিশুর জ্ঞানভান্ডার অসীম। প্রেরণা পাই। শিশুটির নিজ হাতে আঁকা নতুন শহর। স্লোগান ছিল-চাই বনায়ন-চাই পরিবেশের ভারসাম্য-চাই বসবাসযোগ্য সুন্দর এক পৃথিবী। এই খুদে বৈজ্ঞানিকের পরিকল্পনা দেশ হতে দেশান্তরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সার্থক হোক।
লেখক : সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ।
একটি স্কুলে শিশুদের অঙ্কন প্রতিযোগিতা। যেমন খুশি আঁকো। ছোট শিশু সুন্দর একটি শহরের ছবি আঁকে। প্রতিযোগিতা শেষ। শিশুটিকে জিজ্ঞেস করা হয়Ñএটা কিসের ছবি?
-একটি নতুন শহরের।
-আচ্ছা। এসব কী?
-বড় একটা বন।
-কেন? বনের ছবি কেন? পশু-পাখি কোথায় থাকবে?
চিড়িয়াখানা দেখোনি? শিশুটির অর্থবহ প্রশ্ন?
-আর সারি সারি দু’পাশে গাছ। এত গাছ কেন?
-শোনো! আমি আর মা প্রতিদিন রিকশায় করে বাড়ি ফিরি।
-তারপর।
-রিকশাওয়ালা বেচারার তেষ্টা পায়।
-তারপর।
-গাছের নিচে বিশ্রাম নেয়, পানির পিপাসা মেটায়।
আরও প্রশ্ন চলে আসে।
-বাবু, এই ছোট লোকটি কেন?
-বোঝো না কেন? বৃষ্টির পানি কোথায় যাবে!
শিশুটির বয়স ৯-১০ বছর। সর্বাধিক নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে। এই শিশুকে কি আমরা পরিবেশবিজ্ঞানী বলতে পারি না?
দুবাই নগরীÑদুবাই রানি। কর্মব্যস্ত নগরীÑপ্রাণচাঞ্চল্য নগরী। পর্যটকের নগরীÑব্যবসা-বাণিজ্যের নগরী। সে নগরী কখনোই ঘুমিয়ে থাকে না। সে নগরীর গগণচুম্বী দৃষ্টিনন্দন অট্টালিকা বিস্ময়কর। দুবাই রানি স্বপ্ন দেখেন। প্রশংসিত চাকচিক্যের নগরী।
মরুর বুকে পাখির কিচিরমিচির, কাকডাকা ভোর আর বসন্তের কোকিলÑএসব চিহ্নবিহীন। কিন্তু মানুষের কর্মব্যস্ততায় তন্দ্রা ভেঙে যায়। প্রচণ্ড খরা, খাঁ খাঁ রোদ, গভীর তেষ্টার এই ছবি দেখেই আমরা অভ্যস্ত। সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া দুর্যোগ। টিভির পর্দায় এই নগরীর ছবি দেখে মনে হয় তৃতীয় বিশ্বের একটি ছবি।
অসীম অনুপ্রেরণা, গভীর আগ্রহ আর খুব যত্নে গড়া এই নগরী। আজ হিসাব মেলাতে পারছে না। কেন অতল জল? কেনই-বা জলাবদ্ধতা? এই জটিল সমীকরণ একদিনে মিলবে না। জলবায়ুর পরিবর্তন, না কৃত্রিম বৃষ্টি। কার দায় বেশি। ঝড়ের জন্য আমরা কেউ বসে থাকি না। ঝড় শেষ হয়ে যাওয়ার পর কারণ খুঁজি। দুবাইয়ের অবস্থাও ঠিক তা-ই। নগরায়ণ প্রসারণ অর্থনীতির চাকা চাঙা করবে, সন্দেহ নেই। পাশাপাশি পূর্বশর্ত বনায়ন। জীবনের অস্তিত্বের প্রয়োজনেই বিশ্বব্যাপী আজ এই প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। মরুর বুকে সারি সারি গাছ-বনায়ন-পরিবেশবিদেরা ভালো জানবেন। এসব এখন সম্ভব হতে চলেছে। নগরায়ণ তখনই আকর্ষিত হবে, যখন সেখানে পরিবেশের ভারসাম্য হবে। পাশাপাশি এমন অনেক পরিকল্পনার বাধ্যবাধকতা থাকবে, যখন প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগকে হুমকি মনে হবে না।
এ লেখার শেষে আবারও সেই গানের কথা মনে করতে চাই। আল্লাহ মেঘ দেবে-পানিও দেবেÑছায়াও দেবে। রহমতের বর্ষণ আসবে। বৈশ্বিক শান্তি ঘিরে থাকবে।
ছোট শিশুটি খুদে পরিবেশবিদ। আমি তাকে স্যালুট জানাই। এই শিশুর জ্ঞানভান্ডার অসীম। প্রেরণা পাই। শিশুটির নিজ হাতে আঁকা নতুন শহর। স্লোগান ছিল-চাই বনায়ন-চাই পরিবেশের ভারসাম্য-চাই বসবাসযোগ্য সুন্দর এক পৃথিবী। এই খুদে বৈজ্ঞানিকের পরিকল্পনা দেশ হতে দেশান্তরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সার্থক হোক।
লেখক : সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ।