মালদ্বীপে মইজ্জু ঢেউ : মার্কিন বাতাসে ভারতে পুলক

মোদি-ট্রাম্প হিডেন কেমিস্ট্রি

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪২ , অনলাইন ভার্সন
ভারতের চলমান নির্বাচনী তাপের মাঝে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, চীনসহ আশপাশের দেশগুলো কম-বেশি হট স্ট্রেট। বাংলাদেশে কিঞ্চিৎ সাম্প্রদায়িক টোকা। ফরিদপুরের মন্দিরে আগুন লাগার ঘটনায় কেবল সন্দেহের বশে দুজন শ্রমিককে পিটিয়ে মেরে ফেলা নিতান্ত কাকতালীয় না কোনো জের- এ প্রশ্নের চক্কর ঘুরছে। এর মাঝেই রাজস্থানে নির্বাচনী সমাবেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুসলিম-বিদ্বেষী মন্তব্য। মুসলিমদের বহিরাগত বলে কটাক্ষ করেন। বলেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ভারতের সব অর্থ-সম্পদ মুসলিমদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন জানিয়েছে বিরোধী দল কংগ্রেস। এতে পাত্তা না দিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আরেক আপত্তিকর মন্তব্য ছুড়ে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মোদি। এর রেশ না কাটতেই আলিগড়ে জনসভা থেকে কটাক্ষ করে এর জবাব দেন মোদি। বলেন, জনগণের আয় ও সম্পদের ওপর নজর পড়েছে কংগ্রেসের। কংগ্রেসের ইশতেহারের সমালোচনা করতে গিয়ে মোদি বলেন, বিরোধী দল ক্ষমতায় এলে ঘরের নারীদের স্বর্ণালংকারও ছিনিয়ে নেবে। নির্বাচন সামনে রেখে মোদি নিজ দেশে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে একটা সাম্প্রদায়িক ভেজাল বাধানোর গুটি চালছেন বলে ধারণাসহ গুঞ্জন আছে। নিকট প্রতিবেশী বাংলাদেশে এ সময়ে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক চাঙা করার পেছনেও কারসাজির ইঙ্গিত রয়েছে। ভারতের আরেক প্রতিবেশী মালদ্বীপের নির্বাচনে ভূমিধস জয় হয়েছে তুমুল ভারতবিরোধী ও চীনপন্থী রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুইজ্জুর পিএনসি পার্টির। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর এ জয় ঐতিহ্যগত মিত্র ভারত থেকে দেশটির সরে যাওয়াকে ত্বরান্বিত করার যাবতীয় আলামত দেখা যাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মালদ্বীপের মুইজ্জু সরকার দেশটির ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ নীতির অবসান ঘটিয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে নির্ভরতার সম্পর্কের অবসানের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। মালদ্বীপের পিপলস মজলিশ (পার্লামেন্ট নির্বাচনে) বিশাল জয়ের পর চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সহযোগিতায় এগোনোর পথে মুইজ্জুর পরিকল্পনার জন্য ভোটটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে দেখা হয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার জটিল ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মুইজ্জু শেষতক কতটা সফল হবেন- এ প্রশ্ন থাকলেও আপাতত ভারতের জন্য ছোট একটি থ্রেট হয়ে উঠেছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বাংলাদেশসহ আশপাশের ভারতনির্ভরদের কী দশা হবে- মালদ্বীপ তার উদাহরণ। মইজ্জু তার দেশের আমজনতার পালস বুঝেছেন। অন্যরা পালস বুঝেছেন আরেক বাস্তবতায়। তারা তাদের মতো সফল। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর এই অভিযাত্রায় আটলান্টিকের ওপারের যুক্তরাষ্ট্রও প্রাসঙ্গিক। ট্রাম্পের ফেরার সম্ভাবনা ভাবনায় চীন উদ্বিগ্ন। ভারত উৎফুল্ল।
চলতি বছরের দুই আলোচিত ইস্যু ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। ভারতেরটি চলছে। যুক্তরাষ্ট্রেরটি সামনে, আরও পাঁচ-ছয় মাস বাকি। এ দুটি নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর নজর। আর এ অঞ্চলের কারও জন্য আশীর্বাদের, কারও জন্য অভিশাপের। আবার নির্বাচন দুটিকে ঘিরে নিজ নিজ দেশে অন্তহীন সমীকরণ। ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক ভাবাদর্শের বাইরেও ব্যক্তিগত সম্পর্ক এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য হয়ে উঠছে। ২০২০ সালের আমেরিকান নির্বাচনেও এবারের মতো বাইডেন-ট্রাম্প ছিলেন দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। আর সেবার নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী ভারতীয়দের সমাবেশে ট্রাম্প সরকারের আবারও দরকার বলে মন্তব্য করেছেন। মোদির জন্য দৃশ্যত বেমানান এই পক্ষপাতপূর্ণ অবস্থান বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর দুই দেশের সম্পর্কে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থা তৈরি করে। প্রথম প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ট্রাম্পের সঙ্গে মোদি দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। জাতীয়তাবাদী সার্টিফিকেট উভয়েরই ট্রাম্পকার্ড বা পুঁজি। একজন শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ আর অন্যজন হিন্দুত্ববাদকে কাজে লাগান। ট্রাম্প ও মোদি উভয়েই ক্ষমতায় গেলে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী হওয়ার ধারণা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগেই ভারতের ক্ষমতায় কারা যাবে, তা নিশ্চিত হয়ে যাবে। ভারতে চলতে থাকা নির্বাচন শেষ হবে পহেলা জুন। এ পর্যন্ত ভাবনমুনায় বোধগম্য, ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে নরেন্দ্র মোদি আবার ক্ষমতা নিয়ে ছাড়বেন। প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের কোনো দাওয়াই-ই ব্যবহারের বাইরে রাখছেন না তিনি। মার্কিন নির্বাচন নিয়ে ওই ধরনের কোনো আভাস-আলামত খোলাসা নয়।বাইডেন আমলে চীন-মার্কিন সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। ট্রাম্পের চীনবিরোধী বাড়তি শুল্ক আরোপ বাইডেন তার প্রেসিডেন্সি জুড়ে অব্যাহত রেখেছেন। আগেভাগেই ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি ফের নির্বাচিত হলে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। ট্রাম্প তার প্রথম প্রেসিডেন্টের সময় মার্কিন নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করতে পারে এমন চীনা কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করতে মার্কিন সংস্থাগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। ধারণা করা হয়, ফের ক্ষমতা পেলে চীন প্রশ্নে তিনি আগের পথেই হাঁটবেন। চীনের জন্য এটি উদ্বেগের। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ও আগামী সরকার পুরো বৈশ্বিক রাজনীতির জন্য একটি ঘটনাই নয়, বাঁকবদলের সন্ধিক্ষণও। যার বিশেষ এবং বড় রকমের প্রভাব পড়বে দক্ষিণ এশিয়ায়। তার ওপর ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধ আর রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ আগে থেকেই বিশ্ব পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে রেখেছে। সামনে আরও বিস্ফোরণ ঘটবে, নাকি চলমান ধারা আরও বেগবান হয়ে পরিণতির দিকে যাবে- সেই জিজ্ঞাসা ঘুরছে দেশে দেশে, দলে দলে।

 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041