যুক্তরাষ্ট্রের ‘অবৈধ’ কর্মকাণ্ড

কিউবায় নতুন করে বাড়ছে পুরোনো উত্তেজনা

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৩, ১১:০৬ , অনলাইন ভার্সন
ক্যারিবিয়ান সাগরের গুয়ান্তানামো বে-তে অবস্থিত মার্কিন নৌঘাঁটিতে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন মোতায়েনের নিন্দা জানিয়েছে কিউবা। দেশটির সরকার বিষয়টিকে ‘উস্কানিমূলক উত্তেজনা’ বলে অভিহিত করেছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ক্যারিবিয়ান দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাবমেরিনটি আজ ১২ জুলাই (বুধবার) গুয়ান্তানামো বেতে স্থানান্তর করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বের এই শান্তিপূর্ণ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ডুবোজাহাজ মোতায়েনের পদক্ষেপের পেছনে সামরিক কারণ কী, এটি কী লক্ষ্য এবং কী কৌশলগত উদ্দেশ্য করা করছে- তা নিয়ে বিস্মিত কিউবা।

ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে পারমাণবিক সাবমেরিনের উপস্থিতি ও চলাচলের ফলে সৃষ্ট ‘বিপদ’ সম্পর্কেও সতর্ক করেছে কিউবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতিকে ‘লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান জনগণের সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থের জন্য হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার আল-জাজিরাকে বলেন, আমরা মার্কিন সামরিক সম্পদের গতিবিধি নিয়ে আলোচনা করি না। পেন্টাগনের কাছেও এ বিষয়ে আল-জাজিরা প্রশ্ন করলে সংবাদ প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

কিউবার এই নিন্দা এমন এক সময়ে এসেছে যখন দ্বীপরাষ্ট্রটি আবারও বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। গত জুনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হাভানা দ্বীপে সম্ভাব্য যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করছে কিউবা। পত্রিকাটি কিউবাভিত্তিক চীনের কথিত গুপ্তচরবৃত্তির বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্র এমন পদক্ষেপ নেয়।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, চীন কয়েক বছর ধরে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে কিউবায় প্রভাব বিস্তার করছে। যদিও হাভানা ও বেইজিং উভয়ই এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

এদিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা কিউবা ও রাশিয়া গত জুনে ঘোষণা দিয়েছে, তারা আরও ঘনিষ্ঠ ‘কারিগরি-সামরিক’ সহযোগিতা কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।

১৯৬২ সালে কিউবার দ্বীপে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। এরপর থেকেই দীর্ঘকাল ধরে মার্কিন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছে কিউবা। সোভিয়েতের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন তৎকালীন সময়ে একটি পূর্ণমাত্রার সংঘাতের হুমকি সৃষ্টি করেছিল। পরে অবশ্য অস্ত্রগুলো প্রত্যাহার করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ সামরিক দখলদারিত্ব

মঙ্গলবারের বিবৃতিতে কিউবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্বীপটির দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত গুয়ান্তানামো বে'তে মার্কিন ‘অবৈধ সামরিক দখলদারিত্বের’ নিন্দা জানিয়েছে।

১৮৯৮ সালে স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের পর থেকে কিউবার দক্ষিণ-পূর্বে ক্যারিবীয় সাগরে গুয়ানতানামো উপসাগর বরাবর প্রায় ১১৭ বর্গ কিলোমিটার (৪৫ বর্গ মাইল) জমি দখল করে নেয় মার্কিন বাহিনী। ১৯০৩ সালে সেখানে একটি নৌঘাঁটি স্থাপন করা হয়। ২০০২ সালে দুই দশকের দীর্ঘ সময় চলা কথিত 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের' সময় মার্কিনিরা প্রতিপক্ষ যোদ্ধাদের রাখার জন্য দখলকৃত স্থানে সামরিক কারাগার খোলে।

গুয়ানতানামো কারাগারটি অমানুষিক নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত। এই কারাগারে বন্দীদের বিনা বিচারে আটকে রাখা হয় এবং তথ্য আদায়ের লক্ষ্যে যৌন অত্যাচার, ওয়াটার বোর্ডিং-সহ নানাভাবা আইনবহির্ভূত উপায়ে নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের প্রকার ও মাত্রা এতই বেশি যে এই কারাগারকে ‘মর্ত্যের নরক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

মঙ্গলবারের মন্তব্যে কিউবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গুয়ান্তানামোতে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি কিউবার সার্বভৌম অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিভিন্ন দেশের কয়েক ডজন নাগরিককে আটক, নির্যাতন এবং নিয়মতান্ত্রিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের কেন্দ্র হিসাবে স্থানটি ব্যবহার করা হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বারবার গুয়ানতানামো বে কারাগারটি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। বন্দীদের অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক রাখা এবং এর অমানবিক অবস্থার জন্য ব্যাপক সমালোচনাও করছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

গত জুনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ফিওনুয়ালা নি আওলাইন বলেন, গুয়ানতানামো কারাগারে এখনও ৩০ বন্দির সঙ্গে নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অবমাননাকর আচরণ করা হচ্ছে।

২০২১ সালে করোনা মহামারীর কারণে খারাপ হয়ে যায় বাণিজ্যিক নিসেধাজ্ঞায় থাকা কিউবার অর্থনৈতিক অবস্থা। এর ফলে বিরল এক সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সম্মুখীন হয় দেশটির সরকার। ১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রোর কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর কিউবায় সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ এটি।

এদিকে, চলমান মেয়াদের দুই বছর পূর্তির সময়ে সরকারের কিউবা থেকে সর্বশেষ কড়া ভাষায় এমন বিবৃতি এলো। সম্প্রতি কিউবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, ২০২১ সালে তাদের দেশে জনঅস্থিরতা উস্কে দেওয়ার জন্য ওয়াশিংটন সরাসরি দায়ী।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা ও রয়টার্স

এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041