আমরা আমাদের মায়ের কথায় চলি,
আমরা আমাদের মাটির কথা বলি।
আমরা আমাদের মানুষের চিন্তা রাখি,
আমরা আমাদের মানুষের পাশে থাকি।
আমরা আমাদের মা-মাটি মানুষের করে,
আমরা সবাই আমাদের নিজেদের তরে।
আমরা আমাদের বাংলা ‘মা’কে ভালোবাসি,
আমরা তাই বারবার বাংলায় ফিরে আসি ॥
আমাদের আজকের এই আলোচনায় আমরা মা, মাটি ও মানুষ নিয়ে কথা তুলে ধরব। বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ মানুষ সামাজিক মাধ্যমেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিজের মনোভাব তুলে ধরার চেষ্টা করে। তাই আপনাদের মধ্যে যারা এ বিষয় নিয়ে আগ্রহী, তারা লেখাগুলো খুব সহজেই সংগ্রহ করে নিতে পারবেন। আশা করছি, এই লেখাগুলো আপনাদের পছন্দ হবে এবং বিভিন্ন সময় স্মরণীয় ও বরণীয় করার উপযোগী হবে।
মানুষ ও মাটি একই সূত্রে গাঁথা। মাটি নিয়ে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলে গেছেন। তাদের সেই কথাগুলো আমাদের নতুন কিছু হয়তো আজ আমরা এখানে তুলে ধরতে চেষ্টা করব। যাহোক, আসুন, তাহলে দেখে নেওয়া যাক সেই কথাগুলো। কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করাটা, মাটি দিয়ে মাটির ওপরেই মাটি লেখার মতো সহজ হয়। কিন্তু সেই বন্ধুত্ব আজীবন রক্ষা করে যাওয়াটা জল দ্বারা জলের ওপর জল লেখার মতো কঠিন হয়।
পায়ের তলার যতটুকু মাটি দেখেছ, সেটুকু জায়গাতেই তোমার অধিকার আছে। এটুকুই না হয় আঁকড়ে ধরতে শেখো, না হলে হয়তো তোমার সব অহংকার ধসে যাবে। তোমাদেরকে মাটির দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে পুনরায় আবার এই মাটিতেই তোমাদেরকে মিশে যেতে হবে। আমাদের এই দেহ একদিন মাটি হবে, পুড়ে হয়ে যাবে ছাই, জগতে এই সত্যের চেয়ে আর খাঁটি কিছুই নাই।
যে ব্যক্তি মাটিতে একটি গাছ লাগায়, সে সবার জন্য নতুন একটি আশা তৈরি করে। সমস্ত পৃথিবী বলছে আমি গোলাকার, কিন্তু আমার পায়ের তলার মাটি বলছে আমি সমতল। পায়ের তলার মাটির জোর বেশি, কেননা সে যেটুকু বলে, সে একেবারে তন্ন তন্ন করে বলে।
পায়ের তলার মাটির কাছ থেকে পাই তথ্য, অর্থাৎ কেবল তথাকার খবর, বিশ্ব পৃথিবীর কাছ থেকে পাই সত্য, অর্থাৎ সমস্তটার খবর। যখনই নিজের সামর্থ্য নিয়ে সংশয় আসবে, তখন নিজের মনেই পদ্মফুলের কথা চিন্তা করবে। যদিও পদ্মফুল কাদামাটিতে জন্মায়, তবু এটি চারপাশে থাকা ময়লাকে এর বৃদ্ধি বা সৌন্দর্যকে প্রভাবিত করতে দেয় না।
ঘোলা জলে থাকা কাদামাটি এক জায়গায় স্থির হতে যেমন সময় লাগে, তেমনি দীর্ঘ সময় ধরে নিয়মিত অনুশীলন করলেই ধ্যান সঠিক ফল দেয়। আমি কাদা মাটি আর স্বপ্ন দিয়ে তৈরি এক দুর্বল, ক্ষণস্থায়ী প্রাণী। কিন্তু তাও আমি কেন যে অনুভব করি, এই মহাবিশ্বের সমস্ত শক্তি যেন আমার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। কৃষক হলেন এমন একজন জাদুকর, যিনি কাদা থেকেও অর্থ উৎপাদন করতে পারেন। আগেকার সময়ে প্রতিটি গ্রামে নজরে পড়ত মাটির বাড়ি। ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি প্রচুর গরম ও শীতে বসবাসের উপযোগী মাটির তৈরি ঐতিহ্যবাহী ঘরবাড়ি এখন আর তেমন একটা নজরে পড়ে না।
পদ্মফুল দেখতে অনেক সুন্দর, কিন্তু এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার যে এত সুন্দর ফুলটি নোংরা জল আর মাটির মধ্যে থেকেই প্রস্ফুটিত হয়। ঈগল কখনো কাকের পাশাপাশি বাস করে না। তারা কাকের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে ওড়ে না, আবার কাদামাটি থেকে খাবার সংগ্রহও করে না। কেউ যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মূল্য বুঝতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই কাদা মাটিতে নামতে হবে। তারা তোমাকে তারার কাছে টানে; কাদামাটি তোমাকে কাদা মাটিতে টানবে!
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর সময়ের পরিবর্তনে গ্রাম-বাংলা থেকে ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি বাড়ি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আজ যে মাটি তোমার পায়ের নিচে, কাল হয়তো সেই মাটি তোমার ওপরে থাকবে। একটু ভাবো তো, তুমি কী নিয়ে এত গর্ব করো? তোমার কিসের এত অহংকার?
বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি জেনে নিক দুর্বৃত্তরা।
চৈত্রে দিয়া মাটি বৈশাখে কর পরিপাটি।
আমরা মাটির ওপরের জীবন নিয়ে যতটা সচেতন, মাটির নিচের জীবন নিয়ে ততটাই বেখেয়াল।
মাটির জিনিস ফিরে যায় মাটিতে, ধ্যানের রূপ রয়ে যায় আমার ধ্যানে। বর দিলেম, হারা রূপ ধরা দেবে, কায়ামুক্ত ছায়া আসবে আলোর বাহু ধরে তোমার দৃষ্টির উৎসবে। রূপ এল ফিরে দেহহীন ছবিতে, উঠল শঙ্খধ্বনি। ছুটে এল চারদিক থেকে রূপের প্রেমিক। মধুর চেয়েও আছে মধুর সে, এই আমার দেশের মাটি, আমার দেশের পথের ধুলা, খাঁটি সোনার চাইতে খাঁটি।
মাটির নিঃশেষ সত্য দিয়ে গড়া হয়েছিল মানুষের শরীরের ধুলো। তবু হৃদয় তার অধিক গভীরভাবে হতে চায় সৎ। ভাষা তার জ্ঞান চায়, জ্ঞান তার প্রেম। ঢের সমুদ্রের বালি পাতালের কালি ঝেড়ে হয়ে পড়ে বিষণ্ন ও মহৎ। নানান চেহারা ছবি নানান ভঙ্গি এক টুকরো মাটির পর্বে।
একেক আলোর নিয়মে একেক ঘটনা ঘটায়।
অজ্ঞান হতে হতে মানুষেরা বিস্মিত হতে পারে
তবু, মাটি ধরে রাখে আকাশের নিচের সকল ঘটনা। কত বৃক্ষ, ফুল, ফল ফলে এ মাটিতে
আমরা মানুষ করি সেই বন উজাড়। ভরে দিই তার পিঠ কত শত ক্ষতে তবু নেই উচ্চবাচ্য, মাটি নির্বিকার।
সোঁদা মাটির গন্ধ পেয়ে বাতাস যদি ওঠে মেতে, সময় তবে থমকে গিয়ে আলাপ করে মাটি ছুঁয়ে। বৃষ্টি যদি আসে ধেয়ে অঝোর ধারা হয়ে, মনের বাঁধন ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে আসে।
দেশ আমার মাটি আমার এই বাংলাদেশ মহান দেশ,
মাটিতে ফলে সোনার ফসল দেখতে লাগে বেশ।
প্রভাত হাওয়া ঢেউ খেলে যায় সবুজ ধানখেতে,
ফুলের গন্ধে চিত্ত ভরে, মোর পরাণ ওঠে মেতে।
সকাল হলে সূর্যি ওঠে পাখি ডাকে গাছে গাছে,
লেজটি তুলে ফিঙে শালিক তরুর শাখায় নাচে।
দেশ আমার মাটি আমার, মানুষ আমার আপন,
দিঘিতে ফোটে সোনার কমল খুশিতে ভরে মন।
মনে হয় বাড়ি ফিরছি। চারপাশে পায়ের তলায় মাটির মতন কিছু অগোছালো। মাটি টানলে মাটি সরে যায়, আমি সোজা গর্তে, অনেকটা নিচে, মাটির তলায়। চাপা পড়ে যাই, সামনে খোলা দরজা আমার বাড়ি।
যে জাতি তার মাটিকে ধ্বংস করে, সে নিজেকে ধ্বংস করে। আমরা জমি থেকে যত দূরে যাব, আমাদের নিরাপত্তা তত বেশি হারাব। জমি নিছক মাটি নয়, এটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে প্রবাহিত শক্তির ঝরনা। একজন সফল কৃষক হতে হলে প্রথমে মাটির প্রকৃতি বুঝতে হবে। কীভাবে পৃথিবী খনন করতে হয় এবং মাটির যত্ন নিতে হয়, তা ভুলে যাওয়া মানে নিজেদের ভুলে যাওয়া।
জীবন মাটির ওপর নির্ভর করে, কারণ মাটি এবং জীবন এক অপরের পরিপূরক। সমস্ত কিছু পৃথিবী থেকে আসে এবং সমস্ত কিছু মাটি হয়ে শেষ হয়। দেশীয় মাটির আলাদা আকর্ষণ থাকে, যার আলাদাই মাধুর্য থাকে। যেখানে মাটি, সেখানে মানুষ জন্মায়, আগাছা হোক বা ফুল হোক। সবচেয়ে দামি মাটিতেও যদি চাষাবাদ না করা হয়, তবে তা সবচেয়ে বেশি আগাছা তৈরি করবে। মাটির উর্বরতাই সভ্যতার ভবিষ্যৎ। প্রত্যেক মাটির নিজস্ব ইতিহাস আছে।
চলো আমরা সবাই মাটি হতে শিখি,
দাঁড়াই পাশে, হিংসা ক্রোধ বশে রাখি।
দুঃখ কষ্টে জর্জরিত যারা ভাগ্যহত,
হই সে ঐ মাটি, বিনম্র নত সতত।
মা মাটি ও মানুষের আমি গাই গান,
মা আমার মাটি আমার স্বর্গের সমান।
মা, মাটি আর মানুষ, আমার আপন,
মাটি আমি ভালোবাসি, মায়ের মতন।
গাঁয়ে ছায়া আছে, আছে মাটির সুঘ্রাণ,
মাটি ভালোবাসো, হবে জাতির কল্যাণ।
মায়ের ভালবাসার নাই যে তুলনা,
মা-মাটি আর মানুষ, জীবন সাধনা।
একদিন মাটির ভিতরে হবে ঘর রে মন আমার,
কেন বান্ধো দালান-ঘর। আমরা মাটির সন্তান।
এই মাটিতে জন্ম মোদের, মরণ মাটির কোলে,
ঘাম ঝরিয়ে মাটির বুকে সোনার ফসল ফলে।
মোদের রক্তে মিশেছে মাটি দেহে মাটির ঘ্রাণ,
এ’ মাটি আমার বাঁচিয়ে রেখেছে দেহ মন প্রাণ।
মাটির ঘরে শান্তির ঠিকানা বাঁধে প্রীতির বাসা,
মাটির ঘর স্বর্গের সমান মনে জাগে নব আশা।
মাটির ঘরে স্বর্গসুখ এমন সুখ কোথা গেলে পাই?
প্রীতিপ্রেমের পুণ্য বাঁধনে মিলেমিশে থাকি সবাই।
বাংলার মাটি, বাংলার জল,
বাংলার বায়ু, বাংলার ফল,
পুণ্য হউক আমার এই সত্তা;
বাংলার ঘর, বাংলার হাট,
বাংলার বন, বাংলার মাঠ,
পূর্ণ হউক হে সৃষ্টিকর্তা।
লেখক : সাহিত্যিক, কলামিস্ট ও সমাজসেবক।
আমরা আমাদের মাটির কথা বলি।
আমরা আমাদের মানুষের চিন্তা রাখি,
আমরা আমাদের মানুষের পাশে থাকি।
আমরা আমাদের মা-মাটি মানুষের করে,
আমরা সবাই আমাদের নিজেদের তরে।
আমরা আমাদের বাংলা ‘মা’কে ভালোবাসি,
আমরা তাই বারবার বাংলায় ফিরে আসি ॥
আমাদের আজকের এই আলোচনায় আমরা মা, মাটি ও মানুষ নিয়ে কথা তুলে ধরব। বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ মানুষ সামাজিক মাধ্যমেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিজের মনোভাব তুলে ধরার চেষ্টা করে। তাই আপনাদের মধ্যে যারা এ বিষয় নিয়ে আগ্রহী, তারা লেখাগুলো খুব সহজেই সংগ্রহ করে নিতে পারবেন। আশা করছি, এই লেখাগুলো আপনাদের পছন্দ হবে এবং বিভিন্ন সময় স্মরণীয় ও বরণীয় করার উপযোগী হবে।
মানুষ ও মাটি একই সূত্রে গাঁথা। মাটি নিয়ে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলে গেছেন। তাদের সেই কথাগুলো আমাদের নতুন কিছু হয়তো আজ আমরা এখানে তুলে ধরতে চেষ্টা করব। যাহোক, আসুন, তাহলে দেখে নেওয়া যাক সেই কথাগুলো। কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করাটা, মাটি দিয়ে মাটির ওপরেই মাটি লেখার মতো সহজ হয়। কিন্তু সেই বন্ধুত্ব আজীবন রক্ষা করে যাওয়াটা জল দ্বারা জলের ওপর জল লেখার মতো কঠিন হয়।
পায়ের তলার যতটুকু মাটি দেখেছ, সেটুকু জায়গাতেই তোমার অধিকার আছে। এটুকুই না হয় আঁকড়ে ধরতে শেখো, না হলে হয়তো তোমার সব অহংকার ধসে যাবে। তোমাদেরকে মাটির দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে পুনরায় আবার এই মাটিতেই তোমাদেরকে মিশে যেতে হবে। আমাদের এই দেহ একদিন মাটি হবে, পুড়ে হয়ে যাবে ছাই, জগতে এই সত্যের চেয়ে আর খাঁটি কিছুই নাই।
যে ব্যক্তি মাটিতে একটি গাছ লাগায়, সে সবার জন্য নতুন একটি আশা তৈরি করে। সমস্ত পৃথিবী বলছে আমি গোলাকার, কিন্তু আমার পায়ের তলার মাটি বলছে আমি সমতল। পায়ের তলার মাটির জোর বেশি, কেননা সে যেটুকু বলে, সে একেবারে তন্ন তন্ন করে বলে।
পায়ের তলার মাটির কাছ থেকে পাই তথ্য, অর্থাৎ কেবল তথাকার খবর, বিশ্ব পৃথিবীর কাছ থেকে পাই সত্য, অর্থাৎ সমস্তটার খবর। যখনই নিজের সামর্থ্য নিয়ে সংশয় আসবে, তখন নিজের মনেই পদ্মফুলের কথা চিন্তা করবে। যদিও পদ্মফুল কাদামাটিতে জন্মায়, তবু এটি চারপাশে থাকা ময়লাকে এর বৃদ্ধি বা সৌন্দর্যকে প্রভাবিত করতে দেয় না।
ঘোলা জলে থাকা কাদামাটি এক জায়গায় স্থির হতে যেমন সময় লাগে, তেমনি দীর্ঘ সময় ধরে নিয়মিত অনুশীলন করলেই ধ্যান সঠিক ফল দেয়। আমি কাদা মাটি আর স্বপ্ন দিয়ে তৈরি এক দুর্বল, ক্ষণস্থায়ী প্রাণী। কিন্তু তাও আমি কেন যে অনুভব করি, এই মহাবিশ্বের সমস্ত শক্তি যেন আমার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। কৃষক হলেন এমন একজন জাদুকর, যিনি কাদা থেকেও অর্থ উৎপাদন করতে পারেন। আগেকার সময়ে প্রতিটি গ্রামে নজরে পড়ত মাটির বাড়ি। ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি প্রচুর গরম ও শীতে বসবাসের উপযোগী মাটির তৈরি ঐতিহ্যবাহী ঘরবাড়ি এখন আর তেমন একটা নজরে পড়ে না।
পদ্মফুল দেখতে অনেক সুন্দর, কিন্তু এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার যে এত সুন্দর ফুলটি নোংরা জল আর মাটির মধ্যে থেকেই প্রস্ফুটিত হয়। ঈগল কখনো কাকের পাশাপাশি বাস করে না। তারা কাকের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে ওড়ে না, আবার কাদামাটি থেকে খাবার সংগ্রহও করে না। কেউ যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মূল্য বুঝতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই কাদা মাটিতে নামতে হবে। তারা তোমাকে তারার কাছে টানে; কাদামাটি তোমাকে কাদা মাটিতে টানবে!
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর সময়ের পরিবর্তনে গ্রাম-বাংলা থেকে ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি বাড়ি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আজ যে মাটি তোমার পায়ের নিচে, কাল হয়তো সেই মাটি তোমার ওপরে থাকবে। একটু ভাবো তো, তুমি কী নিয়ে এত গর্ব করো? তোমার কিসের এত অহংকার?
বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি জেনে নিক দুর্বৃত্তরা।
চৈত্রে দিয়া মাটি বৈশাখে কর পরিপাটি।
আমরা মাটির ওপরের জীবন নিয়ে যতটা সচেতন, মাটির নিচের জীবন নিয়ে ততটাই বেখেয়াল।
মাটির জিনিস ফিরে যায় মাটিতে, ধ্যানের রূপ রয়ে যায় আমার ধ্যানে। বর দিলেম, হারা রূপ ধরা দেবে, কায়ামুক্ত ছায়া আসবে আলোর বাহু ধরে তোমার দৃষ্টির উৎসবে। রূপ এল ফিরে দেহহীন ছবিতে, উঠল শঙ্খধ্বনি। ছুটে এল চারদিক থেকে রূপের প্রেমিক। মধুর চেয়েও আছে মধুর সে, এই আমার দেশের মাটি, আমার দেশের পথের ধুলা, খাঁটি সোনার চাইতে খাঁটি।
মাটির নিঃশেষ সত্য দিয়ে গড়া হয়েছিল মানুষের শরীরের ধুলো। তবু হৃদয় তার অধিক গভীরভাবে হতে চায় সৎ। ভাষা তার জ্ঞান চায়, জ্ঞান তার প্রেম। ঢের সমুদ্রের বালি পাতালের কালি ঝেড়ে হয়ে পড়ে বিষণ্ন ও মহৎ। নানান চেহারা ছবি নানান ভঙ্গি এক টুকরো মাটির পর্বে।
একেক আলোর নিয়মে একেক ঘটনা ঘটায়।
অজ্ঞান হতে হতে মানুষেরা বিস্মিত হতে পারে
তবু, মাটি ধরে রাখে আকাশের নিচের সকল ঘটনা। কত বৃক্ষ, ফুল, ফল ফলে এ মাটিতে
আমরা মানুষ করি সেই বন উজাড়। ভরে দিই তার পিঠ কত শত ক্ষতে তবু নেই উচ্চবাচ্য, মাটি নির্বিকার।
সোঁদা মাটির গন্ধ পেয়ে বাতাস যদি ওঠে মেতে, সময় তবে থমকে গিয়ে আলাপ করে মাটি ছুঁয়ে। বৃষ্টি যদি আসে ধেয়ে অঝোর ধারা হয়ে, মনের বাঁধন ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে আসে।
দেশ আমার মাটি আমার এই বাংলাদেশ মহান দেশ,
মাটিতে ফলে সোনার ফসল দেখতে লাগে বেশ।
প্রভাত হাওয়া ঢেউ খেলে যায় সবুজ ধানখেতে,
ফুলের গন্ধে চিত্ত ভরে, মোর পরাণ ওঠে মেতে।
সকাল হলে সূর্যি ওঠে পাখি ডাকে গাছে গাছে,
লেজটি তুলে ফিঙে শালিক তরুর শাখায় নাচে।
দেশ আমার মাটি আমার, মানুষ আমার আপন,
দিঘিতে ফোটে সোনার কমল খুশিতে ভরে মন।
মনে হয় বাড়ি ফিরছি। চারপাশে পায়ের তলায় মাটির মতন কিছু অগোছালো। মাটি টানলে মাটি সরে যায়, আমি সোজা গর্তে, অনেকটা নিচে, মাটির তলায়। চাপা পড়ে যাই, সামনে খোলা দরজা আমার বাড়ি।
যে জাতি তার মাটিকে ধ্বংস করে, সে নিজেকে ধ্বংস করে। আমরা জমি থেকে যত দূরে যাব, আমাদের নিরাপত্তা তত বেশি হারাব। জমি নিছক মাটি নয়, এটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে প্রবাহিত শক্তির ঝরনা। একজন সফল কৃষক হতে হলে প্রথমে মাটির প্রকৃতি বুঝতে হবে। কীভাবে পৃথিবী খনন করতে হয় এবং মাটির যত্ন নিতে হয়, তা ভুলে যাওয়া মানে নিজেদের ভুলে যাওয়া।
জীবন মাটির ওপর নির্ভর করে, কারণ মাটি এবং জীবন এক অপরের পরিপূরক। সমস্ত কিছু পৃথিবী থেকে আসে এবং সমস্ত কিছু মাটি হয়ে শেষ হয়। দেশীয় মাটির আলাদা আকর্ষণ থাকে, যার আলাদাই মাধুর্য থাকে। যেখানে মাটি, সেখানে মানুষ জন্মায়, আগাছা হোক বা ফুল হোক। সবচেয়ে দামি মাটিতেও যদি চাষাবাদ না করা হয়, তবে তা সবচেয়ে বেশি আগাছা তৈরি করবে। মাটির উর্বরতাই সভ্যতার ভবিষ্যৎ। প্রত্যেক মাটির নিজস্ব ইতিহাস আছে।
চলো আমরা সবাই মাটি হতে শিখি,
দাঁড়াই পাশে, হিংসা ক্রোধ বশে রাখি।
দুঃখ কষ্টে জর্জরিত যারা ভাগ্যহত,
হই সে ঐ মাটি, বিনম্র নত সতত।
মা মাটি ও মানুষের আমি গাই গান,
মা আমার মাটি আমার স্বর্গের সমান।
মা, মাটি আর মানুষ, আমার আপন,
মাটি আমি ভালোবাসি, মায়ের মতন।
গাঁয়ে ছায়া আছে, আছে মাটির সুঘ্রাণ,
মাটি ভালোবাসো, হবে জাতির কল্যাণ।
মায়ের ভালবাসার নাই যে তুলনা,
মা-মাটি আর মানুষ, জীবন সাধনা।
একদিন মাটির ভিতরে হবে ঘর রে মন আমার,
কেন বান্ধো দালান-ঘর। আমরা মাটির সন্তান।
এই মাটিতে জন্ম মোদের, মরণ মাটির কোলে,
ঘাম ঝরিয়ে মাটির বুকে সোনার ফসল ফলে।
মোদের রক্তে মিশেছে মাটি দেহে মাটির ঘ্রাণ,
এ’ মাটি আমার বাঁচিয়ে রেখেছে দেহ মন প্রাণ।
মাটির ঘরে শান্তির ঠিকানা বাঁধে প্রীতির বাসা,
মাটির ঘর স্বর্গের সমান মনে জাগে নব আশা।
মাটির ঘরে স্বর্গসুখ এমন সুখ কোথা গেলে পাই?
প্রীতিপ্রেমের পুণ্য বাঁধনে মিলেমিশে থাকি সবাই।
বাংলার মাটি, বাংলার জল,
বাংলার বায়ু, বাংলার ফল,
পুণ্য হউক আমার এই সত্তা;
বাংলার ঘর, বাংলার হাট,
বাংলার বন, বাংলার মাঠ,
পূর্ণ হউক হে সৃষ্টিকর্তা।
লেখক : সাহিত্যিক, কলামিস্ট ও সমাজসেবক।