দীর্ঘ এক মাস সিয়াম বা সংযম পালনের পর মুসলিম উম্মাহর কাছে ঈদুল ফিতর এসেছে। পবিত্র এই দিনটিতে ধনী-গরিব সবার আনন্দেই কাটানোর কথা, কিন্তু বাস্তব চিত্র মোটেও সে রকম নয়। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি ধনী দেশের কথা বাদ দিলে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই মুসলিম উম্মাহ বেশ সংকটেই দিন কাটাচ্ছে। ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, মিসর, চীনের উইঘুর, লেবানন, ইরাক, সিরিয়া, কুর্দ, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, ভারত, বাংলাদেশ ইত্যাদি দেশে মুসলমানরা ভালো নেই; যদিও একেক অঞ্চলের সমস্যা একেক রকম। সব সমস্যা এই পরিসরে আলোচনা করতে না পারলেও আমাদের সাংস্কৃতিক বলয়ের আশপাশে মুসলমানদের অস্বস্তিগুলো একটু আলোচনা করা যেতে পারে।
ফিলিস্তিন আমাদের সাংস্কৃতিক বলয়ের বাইরে হলেও আমাদের ধর্মীয় অনুভূতি এবং উত্তর আমেরিকায় বসবাস করার সুবাদে ওদের প্রতি যে অন্যায়, বর্বরতা এবং দ্বৈত চরিত্রতা দেখানো হচ্ছে, তা সরাসরি আমাদের প্রাণে বিঁধে। প্রতিদিন রাতে তারাবির নামাজ শেষে এবং প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে ইমাম সাহেবরা ফিলিস্তিনিদের জন্য দোয়া করলে মুসল্লিদের যে প্রকাশ্য কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়, তা আমাদের কষ্টেরই বহিঃপ্রকাশ। ফিলিস্তিনের গাজায় প্রায় ৩৩ হাজার নারী, শিশু ও পুরুষকে নির্বিচারে হত্যা করলেও বিশ্ববিবেক জাগ্রত হয়নি। গাজায় দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি চলছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও এসেছে, রোজাধারীরা সবুজ ঘাস সেদ্ধ করে বসে আছে, তা দিয়ে ইফতার করার জন্য।
ভূমধ্যসাগরের পারের এই গাজা ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলিদের বড় লোভ। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইহুদি জামাই জেরেট কুশনার একটি পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, The waterfront lands of Gaza will be very lucrative real estate. বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে লম্বা লম্বা কথা বলে অথচ গাঁজার নৃশংসতা নিয়ে মানবাধিকার তো দূরের কথা; উল্টো অর্থ, সামরিক এবং জাতিসংঘে ভেটো দিয়ে ইসরায়েলিদের সহায়তা দিচ্ছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে মুসলমানদের ভোট, বিশেষ করে মিশিগান রাজ্যে বাইডেন হেরে যেতে পারেন, এ রকম আভাস পেয়ে একটু কৃত্রিম দূরত্ব তৈরি করার জন্য জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ভোট দেয়। অথচ গত ২৮ মার্চ ওয়াশিংটন পোস্ট এবং রয়টার্স খবর ছেপেছে, বাইডেন প্রশাসন তলে তলে ইসরায়েলে প্রচুর অর্থ ও অস্ত্র পাঠাচ্ছে। রয়টার্সের খবর : ÔThe U.S. in recent days authorized the transfer of billions of dollars worth of bombs and fighter jets to Israel, two sources familiar with the effort said on Friday, even as Washington publicly expresses concerns about an anticipated Israeli military offensive in Rafah. The new arms packages include more than 1,800 MK84 2,000-pound bombs and 500 MK82 500-pound bombs, said the sources, who confirmed a report in the Washington Post.তবে একটু স্বস্তির খবর হলো, আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্ট ইসরায়েলকে গাজায় দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে নির্দেশ দেওয়ার পর নেতানিয়াহু একটু নরম হয়েছেন। সারা মুসলিম বিশ্ব প্রত্যাশা করছে, ফিলিস্তিনিদের জন্য বিষাদ থেকে হরিষে ঈদ হোক।
উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারী উপমহাদেশীয় মুসলমান এবং তাদের নিজ নিজ দেশে ঈদ কেমন হবে? রাজনৈতিক, আর্থিক বা সামাজিক প্রতিকূলতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একটা ধর্মীয় সংঘাত। দুঃখজনক হলেও সত্য, হাদিস-কোরআনের ব্যাখ্যা নিয়ে মুসলমান সম্প্রদায় বিভক্ত হয়ে একই দিনে ঈদ বা রোজা পালন করতে পারে না। এবারের রোজার সময় চাঁদ দেখা নিয়ে বিভক্ত হয়ে গেল এবং একই দিনে ঈদ পালন করতে পারবে কি না, সেটা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। তবে সাধারণ জ্ঞানে বলে, সৃষ্টিকর্তা তাঁর বান্দাদের দু’রকম নির্দেশ দিতে পারেন না, অর্থাৎ তিনি বলতে পারেন না অমুক এলাকার মানুষ রোজা করো, তমুক এলাকার মানুষ এক দিন পরে রোজা শুরু করো। যেখানেই চাঁদ দেখা যায়, সেদিন থেকেই উম্মাহর সবার রোজা শুরু করা অত্যাবশ্যক, কারণ পৃথিবী একটি এবং সৃষ্টিকর্তাও একজন। হাদিসের বিষয়টি ১৪০০ বছর আগে যোগাযোগ এবং প্রযুক্তির অভাবে ওই সময়ের জন্য হয়তো সঠিক ছিল। সবচেয়ে ভয়ানক দিক হলো, বিভক্তিকারী মুফতি/ইমামদের কারণে কোনো কোনো ধর্মপ্রাণ মুসলমান ঈদের দিনেও রোজা পালন করতে বাধ্য হন, যা হারাম বা একটি রোজা কম পালন করতে হয়।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ঈদ কেমন হব? যাদের দৈনন্দিন আহার জোগাতেই ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, তাদের কী করে ঈদের আনন্দ হবে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা রিপোর্ট করেছে, বাংলাদেশে চার কোটি মানুষ ঋণ করে চলে। বাংলাদেশের ৪৮টি ব্যাংকে হলুদ বাতি জ্বলছে। অবশ্য ক্ষমতাসীনদের কথা আলাদা, তারা তো বেহেশতে আছে, যা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন।
ভারতের মুসলিম সম্প্রদায় একটি হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক চাপে রয়েছে। সেখানে বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির হয়েছে, জ্ঞানপাপী মসজিদের চত্বরে আদালতের অনুমতি নিয়ে পূজা করা হচ্ছে, মসজিদের বাইরে নামাজ পড়ায় পুলিশের লাথি খেতে হয়, কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ে নামাজ পড়তে বারণ করা হয়, গরুর মাংস খেলে বা বিক্রি করলে মৃত্যুর কবলে পড়তে হয় এবং সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) আইনি মুলা দেখিয়ে নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার জোর প্রচারণা চলছে, যার মূল লক্ষ্য মুসলমান বিরোধিতা। এই অবস্থায় সেখানকার সংখ্যালঘু মুসলমানরা কতটুকু আনন্দে ঈদ করতে পারবেন, সেটা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন।
মুসলিম উম্মাহর ওপর এই সর্বমুখী চাপ সহ্য করে এগিয়ে যেতে হবে এবং সৃষ্টিকর্তা যেন সবাইকে সবর করার তৌফিক দেন।
-নিউইয়র্ক, ১ এপ্রিল ২০২৪
ফিলিস্তিন আমাদের সাংস্কৃতিক বলয়ের বাইরে হলেও আমাদের ধর্মীয় অনুভূতি এবং উত্তর আমেরিকায় বসবাস করার সুবাদে ওদের প্রতি যে অন্যায়, বর্বরতা এবং দ্বৈত চরিত্রতা দেখানো হচ্ছে, তা সরাসরি আমাদের প্রাণে বিঁধে। প্রতিদিন রাতে তারাবির নামাজ শেষে এবং প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে ইমাম সাহেবরা ফিলিস্তিনিদের জন্য দোয়া করলে মুসল্লিদের যে প্রকাশ্য কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়, তা আমাদের কষ্টেরই বহিঃপ্রকাশ। ফিলিস্তিনের গাজায় প্রায় ৩৩ হাজার নারী, শিশু ও পুরুষকে নির্বিচারে হত্যা করলেও বিশ্ববিবেক জাগ্রত হয়নি। গাজায় দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি চলছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও এসেছে, রোজাধারীরা সবুজ ঘাস সেদ্ধ করে বসে আছে, তা দিয়ে ইফতার করার জন্য।
ভূমধ্যসাগরের পারের এই গাজা ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলিদের বড় লোভ। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইহুদি জামাই জেরেট কুশনার একটি পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, The waterfront lands of Gaza will be very lucrative real estate. বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে লম্বা লম্বা কথা বলে অথচ গাঁজার নৃশংসতা নিয়ে মানবাধিকার তো দূরের কথা; উল্টো অর্থ, সামরিক এবং জাতিসংঘে ভেটো দিয়ে ইসরায়েলিদের সহায়তা দিচ্ছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে মুসলমানদের ভোট, বিশেষ করে মিশিগান রাজ্যে বাইডেন হেরে যেতে পারেন, এ রকম আভাস পেয়ে একটু কৃত্রিম দূরত্ব তৈরি করার জন্য জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ভোট দেয়। অথচ গত ২৮ মার্চ ওয়াশিংটন পোস্ট এবং রয়টার্স খবর ছেপেছে, বাইডেন প্রশাসন তলে তলে ইসরায়েলে প্রচুর অর্থ ও অস্ত্র পাঠাচ্ছে। রয়টার্সের খবর : ÔThe U.S. in recent days authorized the transfer of billions of dollars worth of bombs and fighter jets to Israel, two sources familiar with the effort said on Friday, even as Washington publicly expresses concerns about an anticipated Israeli military offensive in Rafah. The new arms packages include more than 1,800 MK84 2,000-pound bombs and 500 MK82 500-pound bombs, said the sources, who confirmed a report in the Washington Post.তবে একটু স্বস্তির খবর হলো, আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্ট ইসরায়েলকে গাজায় দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে নির্দেশ দেওয়ার পর নেতানিয়াহু একটু নরম হয়েছেন। সারা মুসলিম বিশ্ব প্রত্যাশা করছে, ফিলিস্তিনিদের জন্য বিষাদ থেকে হরিষে ঈদ হোক।
উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারী উপমহাদেশীয় মুসলমান এবং তাদের নিজ নিজ দেশে ঈদ কেমন হবে? রাজনৈতিক, আর্থিক বা সামাজিক প্রতিকূলতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একটা ধর্মীয় সংঘাত। দুঃখজনক হলেও সত্য, হাদিস-কোরআনের ব্যাখ্যা নিয়ে মুসলমান সম্প্রদায় বিভক্ত হয়ে একই দিনে ঈদ বা রোজা পালন করতে পারে না। এবারের রোজার সময় চাঁদ দেখা নিয়ে বিভক্ত হয়ে গেল এবং একই দিনে ঈদ পালন করতে পারবে কি না, সেটা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। তবে সাধারণ জ্ঞানে বলে, সৃষ্টিকর্তা তাঁর বান্দাদের দু’রকম নির্দেশ দিতে পারেন না, অর্থাৎ তিনি বলতে পারেন না অমুক এলাকার মানুষ রোজা করো, তমুক এলাকার মানুষ এক দিন পরে রোজা শুরু করো। যেখানেই চাঁদ দেখা যায়, সেদিন থেকেই উম্মাহর সবার রোজা শুরু করা অত্যাবশ্যক, কারণ পৃথিবী একটি এবং সৃষ্টিকর্তাও একজন। হাদিসের বিষয়টি ১৪০০ বছর আগে যোগাযোগ এবং প্রযুক্তির অভাবে ওই সময়ের জন্য হয়তো সঠিক ছিল। সবচেয়ে ভয়ানক দিক হলো, বিভক্তিকারী মুফতি/ইমামদের কারণে কোনো কোনো ধর্মপ্রাণ মুসলমান ঈদের দিনেও রোজা পালন করতে বাধ্য হন, যা হারাম বা একটি রোজা কম পালন করতে হয়।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ঈদ কেমন হব? যাদের দৈনন্দিন আহার জোগাতেই ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, তাদের কী করে ঈদের আনন্দ হবে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা রিপোর্ট করেছে, বাংলাদেশে চার কোটি মানুষ ঋণ করে চলে। বাংলাদেশের ৪৮টি ব্যাংকে হলুদ বাতি জ্বলছে। অবশ্য ক্ষমতাসীনদের কথা আলাদা, তারা তো বেহেশতে আছে, যা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন।
ভারতের মুসলিম সম্প্রদায় একটি হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক চাপে রয়েছে। সেখানে বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির হয়েছে, জ্ঞানপাপী মসজিদের চত্বরে আদালতের অনুমতি নিয়ে পূজা করা হচ্ছে, মসজিদের বাইরে নামাজ পড়ায় পুলিশের লাথি খেতে হয়, কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ে নামাজ পড়তে বারণ করা হয়, গরুর মাংস খেলে বা বিক্রি করলে মৃত্যুর কবলে পড়তে হয় এবং সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) আইনি মুলা দেখিয়ে নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার জোর প্রচারণা চলছে, যার মূল লক্ষ্য মুসলমান বিরোধিতা। এই অবস্থায় সেখানকার সংখ্যালঘু মুসলমানরা কতটুকু আনন্দে ঈদ করতে পারবেন, সেটা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন।
মুসলিম উম্মাহর ওপর এই সর্বমুখী চাপ সহ্য করে এগিয়ে যেতে হবে এবং সৃষ্টিকর্তা যেন সবাইকে সবর করার তৌফিক দেন।
-নিউইয়র্ক, ১ এপ্রিল ২০২৪