মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রজেক্ট বানিয়ে বাংলাদেশি  বংশোদ্ভূত দুই মার্কিন কিশোরীর স্বর্ণপদক জয় 

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪, ১৩:২১ , অনলাইন ভার্সন
অর্চিতা শ্বেতার জন্ম সিঙ্গাপুরে। রিফাইয়া ফয়সালের যুক্তরাষ্ট্রে। জন্ম দুই দেশে হলেও দুজনের মধ্যে একটা মিল আছে। তা হলো, তাদের মা-বাবা বাংলাদেশি। বর্তমানে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের কারমেল হাইস্কুলের নবম গ্রেডের শিক্ষার্থী। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণসহ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রকল্প (প্রজেক্ট) বানিয়ে সম্প্রতি অর্চিতা ও রিফাইয়া স্বর্ণপদক জয় করেছে। 

‘দ্য ফরগটেন জেনোসাইড, ফ্রিডম বারিড আন্ডার ব্লাড: দ্য বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার’ শিরোনামের এ প্রকল্পে ভাস্কর্যের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধের নানা দিক উপস্থাপন করে অর্চিতা ও রিফাইয়া। প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিল ইন্ডিয়ানা হিস্ট্রিক্যাল সোসাইটি। 

অর্চিতার বাবা চন্দ্রনাথ গণমাধ্যমকে বলেন, আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক পেয়েছে তাঁর মেয়ে এবং রিফাইয়া। এরপর অঙ্গরাজ্যসহ বিভিন্ন ধাপে স্বর্ণপদক পেলে তারা জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে।

অর্চিতা ও রিফাইয়া জানায়, ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি প্রজেক্ট হিসেবে দলীয়ভাবে ‘টার্নিং পয়েন্ট ইন হিস্ট্রি’, অর্থাৎ বিশেষ কারণে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে বিশ্বের ইতিহাস নতুন মোড় নিয়েছে—এমন কিছু পরিকল্পনা করতে বলেছিলেন তাদের শ্রেণিশিক্ষক (২০২৩-২৪ স্কুল ইয়ার)। পরে প্রকল্পটি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হিস্ট্রি ডের প্রতিযোগিতায় উপস্থাপন করে তারা। বিচারকদের ৮টি ভিন্ন প্রশ্নের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ‘উদাহরণযোগ্য’ প্রকল্প হিসেবে স্বীকৃতি পায় এটি। প্রতিযোগিতায় অন্তত ৩০০টি প্রকল্প উপস্থাপিত হয়।

পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে অর্চিতার বয়স যখন দেড় বছর, তখন সিঙ্গাপুর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে থিতু হন চন্দ্রনাথ। আর রিফাইয়ার বাবা আবু নাসের ফয়সাল যুক্তরাষ্ট্রে যান গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুতে।

বাংলাদেশে জন্ম না নিলেও মা–বাবার সূত্রে এই দুই কিশোরীর শিকড় বাংলাদেশে। ঘরে তারা বাংলায় কথা বলে। মা-বাবার কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে তারা বড় হয়েছে।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই দুই কিশোরীর প্রকল্পে ব্রিটিশ শাসনের পরপর ভারত-পাকিস্তান সৃষ্টির ধারণা ছাড়াও আছে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের চিন্তাভাবনার ভিন্নতা, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর নির্বাচন, দশক ধরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গণমানুষের অধিকার—বিভিন্ন দাবিদাওয়া, ছেষট্টির ছয় দফা, উনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধের নানা দিক।

অর্চিতা ও রিফাইয়া হোয়াটসঅ্যাপে জানিয়েছে, এই প্রকল্পে কারমেল হাইস্কুলের লাইব্রেরিসহ শহরের পাবলিক লাইব্রেরিতে থাকা বিভিন্ন বই, সংবাদপত্রে ছাপা হওয়া মুক্তিযুদ্ধের খবর, ফটোসাংবাদিক রশিদ তালুকদারের বিভিন্ন ছবিসহ প্রায় ২০টি রেফারেন্স ঘেঁটেছে তারা। পাশের শহর ফিশার্সে বসবাস করা বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেইন এম আনোয়ারের সরাসরি সাক্ষাৎকার নিয়েছে। নিউইয়র্কে বাস করা বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমামের সাক্ষাৎকার নিয়েছে মেসেঞ্জারে। গত ডিসেম্বর থেকে টানা প্রায় চার মাস কাজ শেষে তারা প্রথমে ক্লাসে জমা দেয় প্রকল্প। পরে পাবলিক লাইব্রেরিতে প্রদর্শন এবং প্রতিযোগিতার রিজিওনাল স্কেলে (আঞ্চলিক পর্যায়ে) বিচারকদের সামনে প্রকল্পটি তুলে ধরে তারা।
 
এই দুই কিশোরী জানিয়েছে, তারা এ কাজ করতে গিয়ে প্রকল্প উপস্থাপনের পর বিচারকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিস্তারিত জানার সুযোগ পায় এই কাজ করতে গিয়ে, যা তাদের মনের মধ্যে গেঁথে গেছে। জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় যাওয়ার ব্যাপারে তারা আশাবাদী।

মেয়ের সাফল্যে বাবার অনুভূতি জানতে চাইলে চন্দ্রনাথ প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নবপ্রজন্ম হিসেবে মেয়ের জন্য এটি অনেক বড় অর্জন। বিশেষ করে যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তাদের ভূমিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস উপস্থাপন করে স্বর্ণপদক পাওয়া অনেক বড় একটা স্বীকৃতি।

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078