‘যখন গিয়াছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হলো তার সাধ’
সেদিন, ১৩ মার্চ, সন্ধ্যার আকাশে পঞ্চমীর চাঁদ উঠেছিল কি না, জানি না। কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যায় প্রথম রোজার ইফতারি শেষে নিজের রুমে তানপুরায় সুর তুলেছিলেন বরেণ্য সংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদ। তারপর রুমের দরজা বন্ধ করে দেন। গাঢ় বেদনার ভার যেন আর সইতে না হয়, তাই স্বেচ্ছামৃত্যুকে বরণ করে নেন প্রিয় তানপুরার তার পেঁচিয়েই। তার এই মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তার পরিবার, অগণিত ভক্ত, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ। কী এত দুঃখ, অভিমান মনের মাঝে পুষেছিলেন তিনি? সবার মাঝে থেকেও তিনি কি ছিলেন একাকী? জীবনের এই প্রান্তে এসে একাকিত্ব কি তাকে গ্রাস করেছিল? চাওয়া না পাওয়ার হিসাবগুলো কি অজান্তেই তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করত। মা-অন্তঃপ্রাণ এই মানুষটি মাকে হারিয়ে কি বিষণ্নতায় ভুগছিলেন? সবকিছু মিলে মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে ছিলেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তার মানসিক বেদনার সঠিক পরিচর্যা যদি হতো, তবে এমনটি হতো না।
একান্তই শিশুসুলভ এবং সাদামনের মানুষ রবীন্দ্রসংগীতের এই উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব সাদি মহম্মদ, আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ, সাদি ভাই। তার এই স্বেচ্ছামৃত্যু আমাদের সবারই মনে কিছু প্রশ্ন দাঁড় করিয়েছে। তা হলোÑআমরা শারীরিক সুস্থতার ব্যাপারে যতটা উদ্বিগ্ন-যত্নশীল, মানসিক সুস্থতার ব্যাপারে ততটা যত্নশীল হই কি?
আমরা নিজেরা কি বুঝতে পারি যে মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। শারীরিক আঘাত দেখা যায়, কিন্তু মনের আঘাত দেখা যায় না, তাই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করি না। অনেক সময় দেখা যায়, শিক্ষিত সচেতন পরিবার হয়েও মনোরোগ বুঝতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে পরিবার বুঝতে পারলেও রোগী মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে চায় না কিংবা গেলেও সবকিছু পরিষ্কার করে খুলে বলে না। সবকিছু থেকে গুটিয়ে নিতে নিতে একসময় নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে পৃথিবী থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নেয়। এমনটি কারও জন্য কাম্য নয়। শিল্পী সাদি মহম্মদ, আজন্ম যিনি যুদ্ধ করেছেন, পজিটিভ থেকেছেন। কৈশোরে, ১৯৭১ সালে, খুব কাছ থেকে শহীদ পিতার মৃত্যুও দেখেছেন। বাবার রক্তের উষ্ণতা যিনি নিজ হাতে নিয়েছেন, এমন যোদ্ধার জন্য তো নয়ই, সাদি ভাই আপনার স্বেচ্ছামৃত্যু মানতে পারছি না। কিছুতেই নয়। শিল্পীরা একটু অভিমানী হয়। অভিমানী হওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয়? আমরা সবাই আপনার জন্য প্রার্থনা করছি। জীবনে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন, এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর কী হতে পারে?
আপনার মতো নিবেদিতপ্রাণ শিল্পী কোনো পুরস্কারের জন্য লালায়িত নয়, সেটা আমরা সবাই জানি। আপনি আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি, সমাজ-রাষ্ট্রকে অনেক কিছু দিয়েছেন, কিন্তু আপনার মতো শিল্পীকে আমরা যথাযথ সম্মান দিতে পারিনি। এটি আমাদের চরম ব্যর্থতা, আজ আর তা বলতে দ্বিধা নেই।
সুপ্রিয় পাঠক, আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করেনÑআপনার দেখা শ্রেষ্ঠ বিনয়ী ব্যক্তিত্ব কে? আমি অকপটে, কোনো ভাবনা-চিন্তা ছাড়াই বলে দেবÑশিল্পী সাদি মহম্মদ। কিছু কিছু বিষয় থাকে, যা হয়তো আপাতদৃষ্টিতে ছোট, সাধারণ ঘটনা, কিন্তু যখন সেগুলো পরপর সাজাই, তখনই বুঝতে পারি মানুষটি মনের দিক থেকে কতটা বড়, মহান। এই স্বল্পপরিসরে আমি হয়তো তা তুলে ধরতে পারব না।
কিছু স্মৃতি মনের অজান্তেই ভেসে আসে। ঝরায় শ্রাবণ।
সাদি ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা আশির দশকে। চট্টগ্রামের বিজয়মেলায়। রবীন্দ্রসংগীতের এই শিল্পী তখন তুমুল জনপ্রিয়। রবীন্দ্রসংগীতের পুরোনো গায়কীকে ভেঙে নতুন ধারা নিয়ে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে আসন পেতে বসেছেন। তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত আবৃত্তিকার প্রয়াত কামরুল হাসান মঞ্জু, নাট্যকার মামুনুর রশীদ প্রমুখ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন অঙ্গনের হয়ে আমাদের পরিবেশনা ছিল বিজয়মেলার বিজয় মঞ্চে। অনুষ্ঠান শেষে সবার সঙ্গে পরিচিত হলাম। শিল্পী সাদি মহম্মদকে আমার তখনই অন্যদের তুলনায় একান্তই আলাদা মনে হয়েছিল। একান্তই ভার্সিটির ডিপার্টমেন্টের বড় ভাইয়ের মতোই সাধারণ মনে হয়েছিল তাকে। এরপর আবার দেখা আমার বউভাতে। সাদি ভাই আমাকে তার আশীর্বাদের সঙ্গে একটি উপহার দিয়েছিলেনÑলাল টুকটুকে তাঁতের শাড়ি। ভেবেছিলাম এমন প্রিয়জনের উপহার তুলে রাখব যত্ন করে। কিন্তু এমন লাল টুকটুকে শাড়ি কি আর তুলে রাখা যায়!
পড়ালেখার পাট চুকিয়ে অজান্তে বেড়ে ওঠা চবি ক্যাম্পাসকে ছেড়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসতি গড়েছি। সহধর্মী মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন আর শিল্পী সাদি মহম্মদের সম্পর্ক বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ। মাঝেমধ্যেই তাদের সন্ধ্যাকালীন আড্ডা হতো। যাব-যাচ্ছি করে আমার আর তাদের বাসায় যাওয়া হয়ে ওঠেনি। ঢাকার জীবন পেছনে ফেলে চলে এসেছি নিউইয়র্কে। এস্টোরিয়ার ৩০ অ্যাভিনিউতে আমাদের বাসা। শুনলাম চঝ-২৩৪-এ সাদি ভাই গান গাইবেন। সাদি ভাই সব ব্যস্ততা রেখে পরদিনই আমাদের বাসায় এলেন। সেদিন আমি কিছুটা অসুস্থ ছিলাম, গলার স্বর ছিল ভাঙা। ভাঙা গলা নিয়েই এই ধ্যানী শিল্পীর সঙ্গে দুপুর গড়িয়ে রাত অবধি আড্ডা-শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।
মংপুতে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তিনি যে কাজ করেছেন, সেটি আমার অনেক ভালো লেগেছেÑজানাতে ভুললাম না। রাত বাড়ছে, সাদি ভাইয়ের সঙ্গে যিনি এসেছেন, তার যাওয়ার তাড়া আছে। কিন্তু সাদি ভাইয়ের যাওয়ার কোনো তাড়া নেই। একান্তই কথা দিয়েছেন, তাই যেতে হবে, তাও জানালেন। আমাদের নিমন্ত্রণ করে তিনি উঠলেন। যাবার বেলায় আমার মাথায় আশীর্বাদের হাত রাখলেন। বড় ভাইয়ের মতো বেশ কিছু কথা বললেন, যা আজও আমার কানে বাজে। বলেছিলেন, আপনি শিক্ষক, তাই অনেক কিছু বোঝেন। আপনি আমাকে ‘লক্ষ্মী মেয়ে’ বলেছিলেন, অতটা লক্ষ্মী না হলেও আপনার সাধারণ নির্মোহ জীবনযাপন, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহমর্মিতা, মানবিকতায় আপনাকে আদর্শ মানি।
‘মনে কি দ্বিধা রেখে গেলে চলে’, ‘আমি কান পেতে রই’-সাদি ভাই আপনি দ্বিধা রেখে চলে গেলেও আমরা কান পেতে আছি, কান পেতে থাকব, আপনার গানের জন্য।
লেখক : সাংবাদিক
মরিবার হলো তার সাধ’
সেদিন, ১৩ মার্চ, সন্ধ্যার আকাশে পঞ্চমীর চাঁদ উঠেছিল কি না, জানি না। কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যায় প্রথম রোজার ইফতারি শেষে নিজের রুমে তানপুরায় সুর তুলেছিলেন বরেণ্য সংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদ। তারপর রুমের দরজা বন্ধ করে দেন। গাঢ় বেদনার ভার যেন আর সইতে না হয়, তাই স্বেচ্ছামৃত্যুকে বরণ করে নেন প্রিয় তানপুরার তার পেঁচিয়েই। তার এই মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তার পরিবার, অগণিত ভক্ত, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ। কী এত দুঃখ, অভিমান মনের মাঝে পুষেছিলেন তিনি? সবার মাঝে থেকেও তিনি কি ছিলেন একাকী? জীবনের এই প্রান্তে এসে একাকিত্ব কি তাকে গ্রাস করেছিল? চাওয়া না পাওয়ার হিসাবগুলো কি অজান্তেই তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করত। মা-অন্তঃপ্রাণ এই মানুষটি মাকে হারিয়ে কি বিষণ্নতায় ভুগছিলেন? সবকিছু মিলে মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে ছিলেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তার মানসিক বেদনার সঠিক পরিচর্যা যদি হতো, তবে এমনটি হতো না।
একান্তই শিশুসুলভ এবং সাদামনের মানুষ রবীন্দ্রসংগীতের এই উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব সাদি মহম্মদ, আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ, সাদি ভাই। তার এই স্বেচ্ছামৃত্যু আমাদের সবারই মনে কিছু প্রশ্ন দাঁড় করিয়েছে। তা হলোÑআমরা শারীরিক সুস্থতার ব্যাপারে যতটা উদ্বিগ্ন-যত্নশীল, মানসিক সুস্থতার ব্যাপারে ততটা যত্নশীল হই কি?
আমরা নিজেরা কি বুঝতে পারি যে মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। শারীরিক আঘাত দেখা যায়, কিন্তু মনের আঘাত দেখা যায় না, তাই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করি না। অনেক সময় দেখা যায়, শিক্ষিত সচেতন পরিবার হয়েও মনোরোগ বুঝতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে পরিবার বুঝতে পারলেও রোগী মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে চায় না কিংবা গেলেও সবকিছু পরিষ্কার করে খুলে বলে না। সবকিছু থেকে গুটিয়ে নিতে নিতে একসময় নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে পৃথিবী থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নেয়। এমনটি কারও জন্য কাম্য নয়। শিল্পী সাদি মহম্মদ, আজন্ম যিনি যুদ্ধ করেছেন, পজিটিভ থেকেছেন। কৈশোরে, ১৯৭১ সালে, খুব কাছ থেকে শহীদ পিতার মৃত্যুও দেখেছেন। বাবার রক্তের উষ্ণতা যিনি নিজ হাতে নিয়েছেন, এমন যোদ্ধার জন্য তো নয়ই, সাদি ভাই আপনার স্বেচ্ছামৃত্যু মানতে পারছি না। কিছুতেই নয়। শিল্পীরা একটু অভিমানী হয়। অভিমানী হওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয়? আমরা সবাই আপনার জন্য প্রার্থনা করছি। জীবনে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন, এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর কী হতে পারে?
আপনার মতো নিবেদিতপ্রাণ শিল্পী কোনো পুরস্কারের জন্য লালায়িত নয়, সেটা আমরা সবাই জানি। আপনি আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি, সমাজ-রাষ্ট্রকে অনেক কিছু দিয়েছেন, কিন্তু আপনার মতো শিল্পীকে আমরা যথাযথ সম্মান দিতে পারিনি। এটি আমাদের চরম ব্যর্থতা, আজ আর তা বলতে দ্বিধা নেই।
সুপ্রিয় পাঠক, আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করেনÑআপনার দেখা শ্রেষ্ঠ বিনয়ী ব্যক্তিত্ব কে? আমি অকপটে, কোনো ভাবনা-চিন্তা ছাড়াই বলে দেবÑশিল্পী সাদি মহম্মদ। কিছু কিছু বিষয় থাকে, যা হয়তো আপাতদৃষ্টিতে ছোট, সাধারণ ঘটনা, কিন্তু যখন সেগুলো পরপর সাজাই, তখনই বুঝতে পারি মানুষটি মনের দিক থেকে কতটা বড়, মহান। এই স্বল্পপরিসরে আমি হয়তো তা তুলে ধরতে পারব না।
কিছু স্মৃতি মনের অজান্তেই ভেসে আসে। ঝরায় শ্রাবণ।
সাদি ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা আশির দশকে। চট্টগ্রামের বিজয়মেলায়। রবীন্দ্রসংগীতের এই শিল্পী তখন তুমুল জনপ্রিয়। রবীন্দ্রসংগীতের পুরোনো গায়কীকে ভেঙে নতুন ধারা নিয়ে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে আসন পেতে বসেছেন। তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত আবৃত্তিকার প্রয়াত কামরুল হাসান মঞ্জু, নাট্যকার মামুনুর রশীদ প্রমুখ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন অঙ্গনের হয়ে আমাদের পরিবেশনা ছিল বিজয়মেলার বিজয় মঞ্চে। অনুষ্ঠান শেষে সবার সঙ্গে পরিচিত হলাম। শিল্পী সাদি মহম্মদকে আমার তখনই অন্যদের তুলনায় একান্তই আলাদা মনে হয়েছিল। একান্তই ভার্সিটির ডিপার্টমেন্টের বড় ভাইয়ের মতোই সাধারণ মনে হয়েছিল তাকে। এরপর আবার দেখা আমার বউভাতে। সাদি ভাই আমাকে তার আশীর্বাদের সঙ্গে একটি উপহার দিয়েছিলেনÑলাল টুকটুকে তাঁতের শাড়ি। ভেবেছিলাম এমন প্রিয়জনের উপহার তুলে রাখব যত্ন করে। কিন্তু এমন লাল টুকটুকে শাড়ি কি আর তুলে রাখা যায়!
পড়ালেখার পাট চুকিয়ে অজান্তে বেড়ে ওঠা চবি ক্যাম্পাসকে ছেড়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসতি গড়েছি। সহধর্মী মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন আর শিল্পী সাদি মহম্মদের সম্পর্ক বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ। মাঝেমধ্যেই তাদের সন্ধ্যাকালীন আড্ডা হতো। যাব-যাচ্ছি করে আমার আর তাদের বাসায় যাওয়া হয়ে ওঠেনি। ঢাকার জীবন পেছনে ফেলে চলে এসেছি নিউইয়র্কে। এস্টোরিয়ার ৩০ অ্যাভিনিউতে আমাদের বাসা। শুনলাম চঝ-২৩৪-এ সাদি ভাই গান গাইবেন। সাদি ভাই সব ব্যস্ততা রেখে পরদিনই আমাদের বাসায় এলেন। সেদিন আমি কিছুটা অসুস্থ ছিলাম, গলার স্বর ছিল ভাঙা। ভাঙা গলা নিয়েই এই ধ্যানী শিল্পীর সঙ্গে দুপুর গড়িয়ে রাত অবধি আড্ডা-শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।
মংপুতে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তিনি যে কাজ করেছেন, সেটি আমার অনেক ভালো লেগেছেÑজানাতে ভুললাম না। রাত বাড়ছে, সাদি ভাইয়ের সঙ্গে যিনি এসেছেন, তার যাওয়ার তাড়া আছে। কিন্তু সাদি ভাইয়ের যাওয়ার কোনো তাড়া নেই। একান্তই কথা দিয়েছেন, তাই যেতে হবে, তাও জানালেন। আমাদের নিমন্ত্রণ করে তিনি উঠলেন। যাবার বেলায় আমার মাথায় আশীর্বাদের হাত রাখলেন। বড় ভাইয়ের মতো বেশ কিছু কথা বললেন, যা আজও আমার কানে বাজে। বলেছিলেন, আপনি শিক্ষক, তাই অনেক কিছু বোঝেন। আপনি আমাকে ‘লক্ষ্মী মেয়ে’ বলেছিলেন, অতটা লক্ষ্মী না হলেও আপনার সাধারণ নির্মোহ জীবনযাপন, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহমর্মিতা, মানবিকতায় আপনাকে আদর্শ মানি।
‘মনে কি দ্বিধা রেখে গেলে চলে’, ‘আমি কান পেতে রই’-সাদি ভাই আপনি দ্বিধা রেখে চলে গেলেও আমরা কান পেতে আছি, কান পেতে থাকব, আপনার গানের জন্য।
লেখক : সাংবাদিক