মঈনুদ্দীন নাসের
সত্যের উৎসবে শ্রেষ্ঠ বলিদানের এক অন্যান্য উদারহণের সাক্ষী হয়ে কোরবানী ইব্রাহীম (আ.)-এর গৌরবকে বহন করে আসছে। এক ঈশ্বরের অস্তিত্বকে স্বীকার করে নিজকে দানের অহঙ্কার থেকে মুক্ত করে ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর করতে কুরবানীর উদাহরণ এক বিশ্বাসের ঝলক।
দানের গড়িমা আছে, অহঙ্কার আছে, দান বাধ্যবাধকতার নিয়ম-কানুনের মধ্যে হয় না। মনের উদারতায় উপর নির্ভর করে। আয় যেখানে কমে উঠে অহঙ্কারের অর্গল, অন্যদিকে ত্যাগের মহিমায় থাকে ‘সত্য স্বয়ং প্রকাশ’, আর তা স্বর্গীয় মহিমায় উজ্জ্বল, বরং তা অহঙ্কার-ঘাতী।
মন্দির-মসজিদের দানের বাক্সের মধ্যে যেখানে দিনের পর দিন মানুষের অহঙ্কারকে পুঞ্জীভূত করে পুরোহিত-খাদেমদের কাছে নিজেকে উত্থাপনের সুযোগ রয়েছে, তেমনি ত্যাগের কর্মকান্ডে সে সুযোগকে রুদ্ধ করা হয়েছে। কুরবানী তারই একটা অঙ্গীকার। কুরবানী ত্যাগের, আর দান অহঙ্কারের।
ইসলাম, খৃস্টান ও ইহুদিÑ এই তিন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পিতা হিসেবে ইব্রাহীম (আ.)-কে নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। মুসলিমরা তো প্রত্যেক নামাজের পরতে পরতে তাঁর উপর দরুদ বর্ষণ করে। কিন্তু আজ এই তিন সম্প্রদায়ের মধ্যে যে উম্মাদনা, রক্তের হোলিখেলা, অধর্মের বিস্তার, তা গোটা মানবজাতিকে রক্তাক্ত করে চলেছে।
শুধু তাই নয়, আজ দেশে দেশে চলছে হানাহানী, সম্প্রদায়ের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চক্রান্তে চলছে পরস্পরের মধ্যে নির্মম আঘাত। বৈষম্য, অহঙ্কার ও গোঁড়ামীর মধ্যে ঢকে পড়েছে ক্ষমতার দর্প। ত্যাগের মহিমা এখানে আয় কীর্তন করে না। এখানে ক্ষমতায় লিপ্সা, শয়তানের কামুকতা ও শক্তির উন্মত্ততা নিয়ত গ্রাস করছে সমাজের শ্রী-চেহারাকে। উৎপাটিত করছে ত্যাগের মহিমাকে, প্রবঞ্চিত করছে সুকুমার বৃত্তিগুলিকে। এখানে কি কুরবানীর মহিমায় কিছু করণীয় রয়েছে।
বছরে একদিন ফিরে আসে এই উৎসবÑ যার অগ্রভাগে থাকে ত্যাগের ডালি, আর পশ্চাতে থাকে অহঙ্কার বলিদানের মহোৎসবের বরমাল্যÑ তা আর দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে না। যিনি হবেন সব মানুষের উপাস্য, যার মুখাপেক্ষী হয়ে থেমে আছে মানুষ। তিনি আজ মন্দির, মসজিদ বা গির্জায় চৌহদ্দীতে বন্দী নন, তিনি বন্দী হয়ে রযেছেন, খুনী, মাস্তান, গুন্ডা ও বদমাসদের পাহারায়।
বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে আজ অসহিষ্ণুতা বাসা বেঁধেছে। লক্ষ-কোটি পশু নিধনের মধ্যেও এই অসহিষ্ণু পরিবেশকে জলাঞ্জলি দেয়া যাবে না। কারণ পশু এখন আর বাংলাদেশে কোরবানী হয় না। পশু গণহারে নিধন হয়। কোরবানীর চেয়ে পশুর মাংস ভক্ষণই মুখ্য উদ্দেশ্য। অনেকে পেতে বসে মদের আসর, মদ্যপদের আড্ডা, সেখানে চলতে থাকে ষড়যন্ত্রের পালাবদলের নাটকের দৃশ্যহীন পট পরিবর্তন। চলে ‘অত্যাচারীর সত্যপীড়ন’। পিতার উপর একের পর এক দায়িত্বহীন অবমাননা চলতে থাকে।
আমি এখানে উপসংহার টানতে চাই। যাদের বর্তমান ভালো নয়, তাদের অতীত কিংবা ভবিষ্যৎও ভালো হতে পারে না। বর্তমানইতো তিনকালের অবিসংবাদিত সত্য। প্রবাসে আজ বাংলাদেশিরা স্বদেশ নিয়ে মেতে থাকে। আর এই মেতে থাকার বিষয়টি চলে পরম্পরা। আমেরিকায় বাংলদেশিদের উপস্থিতির আজ প্রায় আড়াইশ’ বছর। যদিও এর কোন সত্য উপাত্ত নেই। তারপরও বিভিন্ন সূত্র এই প্রকাশকে সমর্থন করে। এতক্ষণ যা বললাম, তার সাথে কুরবানীর কোন যোগ-সাজশ থাকতে পারে না। তবে আমেরিকায় বাংলাদেশিদের উপস্থিতি নয়, বরং আমেরিকায় বসে বাংলাদেশিরা আজ যে নিজেদের পরিচয়কে স্বাতন্ত্র্য রূপ দিতে পারছে, তার অবদানের গোড়ায় কিন্তু রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
এই স্বাধীনতার রয়েছে আত্মবলিদানের অমোঘ নিদান। যার উদ্দীপনা যোগাড় করতে কুরবানীর ভূমিকা কোন অংশেই গৌণ নয়। আত্মত্যাগের এই মহিমা হাজার বছরের বাঙালি জাতির ইতিহাস থেকে উৎসারিত। যে ইতিহাসের বেদীমূলে রয়েছে এই কোরবানীর ধারক মুসলিম পীর, মুর্শিদ ও সুফী সাধকদের অবদান। যারা বাংলাদেশের মানুষকে শক্তি দিয়েছে, শাসনের উপকরণ দিয়েছে এবং ইতিহাসের প্রাচুর্য্য এনে দিয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষ যদি তা বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তা হবে চরম ব্যর্থতা। যেমন মুসলমানেরা যদি কুরবানীর আত্মত্যাগের শিক্ষাকে গ্রহণ করে নিজ জীবনে তা প্রয়োগ করতে না পারে, তা হবে তাদের জন্য চরম উৎপীড়নের চাইতেও দুঃখের।
সত্যের উৎসবে শ্রেষ্ঠ বলিদানের এক অন্যান্য উদারহণের সাক্ষী হয়ে কোরবানী ইব্রাহীম (আ.)-এর গৌরবকে বহন করে আসছে। এক ঈশ্বরের অস্তিত্বকে স্বীকার করে নিজকে দানের অহঙ্কার থেকে মুক্ত করে ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর করতে কুরবানীর উদাহরণ এক বিশ্বাসের ঝলক।
দানের গড়িমা আছে, অহঙ্কার আছে, দান বাধ্যবাধকতার নিয়ম-কানুনের মধ্যে হয় না। মনের উদারতায় উপর নির্ভর করে। আয় যেখানে কমে উঠে অহঙ্কারের অর্গল, অন্যদিকে ত্যাগের মহিমায় থাকে ‘সত্য স্বয়ং প্রকাশ’, আর তা স্বর্গীয় মহিমায় উজ্জ্বল, বরং তা অহঙ্কার-ঘাতী।
মন্দির-মসজিদের দানের বাক্সের মধ্যে যেখানে দিনের পর দিন মানুষের অহঙ্কারকে পুঞ্জীভূত করে পুরোহিত-খাদেমদের কাছে নিজেকে উত্থাপনের সুযোগ রয়েছে, তেমনি ত্যাগের কর্মকান্ডে সে সুযোগকে রুদ্ধ করা হয়েছে। কুরবানী তারই একটা অঙ্গীকার। কুরবানী ত্যাগের, আর দান অহঙ্কারের।
ইসলাম, খৃস্টান ও ইহুদিÑ এই তিন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পিতা হিসেবে ইব্রাহীম (আ.)-কে নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। মুসলিমরা তো প্রত্যেক নামাজের পরতে পরতে তাঁর উপর দরুদ বর্ষণ করে। কিন্তু আজ এই তিন সম্প্রদায়ের মধ্যে যে উম্মাদনা, রক্তের হোলিখেলা, অধর্মের বিস্তার, তা গোটা মানবজাতিকে রক্তাক্ত করে চলেছে।
শুধু তাই নয়, আজ দেশে দেশে চলছে হানাহানী, সম্প্রদায়ের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চক্রান্তে চলছে পরস্পরের মধ্যে নির্মম আঘাত। বৈষম্য, অহঙ্কার ও গোঁড়ামীর মধ্যে ঢকে পড়েছে ক্ষমতার দর্প। ত্যাগের মহিমা এখানে আয় কীর্তন করে না। এখানে ক্ষমতায় লিপ্সা, শয়তানের কামুকতা ও শক্তির উন্মত্ততা নিয়ত গ্রাস করছে সমাজের শ্রী-চেহারাকে। উৎপাটিত করছে ত্যাগের মহিমাকে, প্রবঞ্চিত করছে সুকুমার বৃত্তিগুলিকে। এখানে কি কুরবানীর মহিমায় কিছু করণীয় রয়েছে।
বছরে একদিন ফিরে আসে এই উৎসবÑ যার অগ্রভাগে থাকে ত্যাগের ডালি, আর পশ্চাতে থাকে অহঙ্কার বলিদানের মহোৎসবের বরমাল্যÑ তা আর দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে না। যিনি হবেন সব মানুষের উপাস্য, যার মুখাপেক্ষী হয়ে থেমে আছে মানুষ। তিনি আজ মন্দির, মসজিদ বা গির্জায় চৌহদ্দীতে বন্দী নন, তিনি বন্দী হয়ে রযেছেন, খুনী, মাস্তান, গুন্ডা ও বদমাসদের পাহারায়।
বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে আজ অসহিষ্ণুতা বাসা বেঁধেছে। লক্ষ-কোটি পশু নিধনের মধ্যেও এই অসহিষ্ণু পরিবেশকে জলাঞ্জলি দেয়া যাবে না। কারণ পশু এখন আর বাংলাদেশে কোরবানী হয় না। পশু গণহারে নিধন হয়। কোরবানীর চেয়ে পশুর মাংস ভক্ষণই মুখ্য উদ্দেশ্য। অনেকে পেতে বসে মদের আসর, মদ্যপদের আড্ডা, সেখানে চলতে থাকে ষড়যন্ত্রের পালাবদলের নাটকের দৃশ্যহীন পট পরিবর্তন। চলে ‘অত্যাচারীর সত্যপীড়ন’। পিতার উপর একের পর এক দায়িত্বহীন অবমাননা চলতে থাকে।
আমি এখানে উপসংহার টানতে চাই। যাদের বর্তমান ভালো নয়, তাদের অতীত কিংবা ভবিষ্যৎও ভালো হতে পারে না। বর্তমানইতো তিনকালের অবিসংবাদিত সত্য। প্রবাসে আজ বাংলাদেশিরা স্বদেশ নিয়ে মেতে থাকে। আর এই মেতে থাকার বিষয়টি চলে পরম্পরা। আমেরিকায় বাংলদেশিদের উপস্থিতির আজ প্রায় আড়াইশ’ বছর। যদিও এর কোন সত্য উপাত্ত নেই। তারপরও বিভিন্ন সূত্র এই প্রকাশকে সমর্থন করে। এতক্ষণ যা বললাম, তার সাথে কুরবানীর কোন যোগ-সাজশ থাকতে পারে না। তবে আমেরিকায় বাংলাদেশিদের উপস্থিতি নয়, বরং আমেরিকায় বসে বাংলাদেশিরা আজ যে নিজেদের পরিচয়কে স্বাতন্ত্র্য রূপ দিতে পারছে, তার অবদানের গোড়ায় কিন্তু রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
এই স্বাধীনতার রয়েছে আত্মবলিদানের অমোঘ নিদান। যার উদ্দীপনা যোগাড় করতে কুরবানীর ভূমিকা কোন অংশেই গৌণ নয়। আত্মত্যাগের এই মহিমা হাজার বছরের বাঙালি জাতির ইতিহাস থেকে উৎসারিত। যে ইতিহাসের বেদীমূলে রয়েছে এই কোরবানীর ধারক মুসলিম পীর, মুর্শিদ ও সুফী সাধকদের অবদান। যারা বাংলাদেশের মানুষকে শক্তি দিয়েছে, শাসনের উপকরণ দিয়েছে এবং ইতিহাসের প্রাচুর্য্য এনে দিয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষ যদি তা বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তা হবে চরম ব্যর্থতা। যেমন মুসলমানেরা যদি কুরবানীর আত্মত্যাগের শিক্ষাকে গ্রহণ করে নিজ জীবনে তা প্রয়োগ করতে না পারে, তা হবে তাদের জন্য চরম উৎপীড়নের চাইতেও দুঃখের।