দুর্দশা লাঘবে ত্যাগ ও ভোগের সংমিশ্রণ অনস্বীকার্য (পর্ব-৮)

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৪, ১১:৪৪ , অনলাইন ভার্সন
সম্পর্ক অতি সংবেদনশীল একটি বিষয়। সম্পর্ক নির্ভর করে পরস্পরের একে অপরের প্রতি শুরুর আচার-আচরণ, বিশ্বাসযোগ্যতা, পরস্পরকে বোঝা; হৃষ্টচিত্তে একে অপরের চাহিদার প্রতি গুরুত্ব আরোপ ও চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে আস্থার নিশ্চয়তা সর্বোপরি দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়া। সম্পর্ক কখনোই শুরুতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে তৈরি হয় না। কোনো লতাজাতীয় বৃক্ষ যেমন শক্ত কিছুকে অবলম্বন করে বেড়ে ওঠে, সম্পর্কও তেমনি সাধারণ থেকে অসাধারণ পর্যায়ে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি সহজবোধ্য করা যেতে পারে। ধরা যাক, কোনো লোক অপরিচিত কোনো এক জায়গায় বিশিষ্ট কোনো ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করা বা কাজের জন্য গমন করেছেন কিন্তু তিনি তার পূর্বপরিচিত নন বা তিনি তার অবস্থান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। সে ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত ব্যক্তির নিকট পৌঁছানোর জন্য অন্য কোনো উপস্থিত লোকের নিকট থেকে তার অবস্থান জানার পরই কেবল তার সঙ্গে দেখা বা যোগাযোগ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক তথ্য প্রদানকারী ব্যক্তি লতার বেড়ে ওঠার জন্য শক্ত অবলম্বনের শামিল। পরিচয়ের পরে উভয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তৈরি হলেও প্রথম অবস্থায় কিন্তু তা সম্ভব ছিল না। সুতরাং সম্পর্ক তৈরি বা উন্নয়নের জন্য তৃতীয় পক্ষীয় সংযোগ বা সহায়তা কোনোভাবেই উপেক্ষার বিষয় নয়। এ ক্ষেত্রে সম্পর্ক স্থাপনের পরে তা উন্নয়নের জন্য দ্বিপাক্ষিক প্রচেষ্টা আবশ্যক। অন্যথায় তার স্থায়ী রূপলাভ সম্ভব নয়। সুতরাং পৃথিবীর সব সম্পর্কই দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক। একপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো সম্পর্কই স্থায়ী হয় না। কারণ পরস্পর লেগে থাকার জন্য আঠাযুক্ত যে টান, সেখানে তা অনুভব হয় না।

নিরঙ্কুশ শব্দটির নিরপেক্ষতা নির্ণয় খুবই সংবেদনশীল বিষয়। কারণ নিরঙ্কুশ বিবেচনা নিজের বা তার পক্ষ কিংবা বিপক্ষ কর্তৃক সিদ্ধান্তের নিরিখে নেওয়া হলে তা পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার যথেষ্ট যৌক্তিক বিবেচিত হওয়া কোনো প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয় নয়। কারণ পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানপূর্বক বিবেচনা বা সিদ্ধান্ত নিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে যৌক্তিক না হয়ে বরং ভালোবাসা, আবেগ, স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত হওয়াই স্বাভাবিক। তাই নিরঙ্কুশের সঠিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ জনমত গ্রহণযোগ্য হিসেবে নিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে অধিকতর যৌক্তিক বলে বিবেচনা করা সংগত। অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তি নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সার্বক্ষণিক সঠিক বলে বিবেচনায় অটল থাকেন অথচ জ্ঞান এমন এক বস্তু, যার সঠিকতা নিরূপণে শুধু নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকার অর্থ এই নয় যে তার চেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি অন্য কেউ হতে পারে না। বরং নিজের সিদ্ধান্তে অতিরিক্ত বিশ্বাস যৌক্তিক ভুলকে সঠিক বলে বিবেচনার মাধ্যমে সত্য গ্রহণ না করে ভুলকে আঁকড়ে ধরা, যা নিজেকে শুদ্ধ করা থেকে বিরত রাখার শামিল। এরূপ ব্যক্তি যদি নেতৃস্থানীয় হয়, তবে তার অধস্তন বা সমসাময়িকগণ তাকে সঠিক পরামর্শ দেওয়া থেকে সংগত কারণে নিজেদের বিরত রাখবেন। ফলে তিনি ক্রমান্বয়ে নিজের ওপর এমন আস্থাশীল হয়ে পড়বেন যে একসময় তিনি পাহাড়সম ভুলের মধ্যে হাবুডুবু খেলেও নিকটজনেরা এগিয়ে আসবেন না। ফলে কোনো না কোনো সময় তিনি নেতৃস্থানীয় ও ঊর্ধ্বতন এমন কারও নিকট চরমভাবে লজ্জিত হওয়ার দিকে নিজের অজান্তেই এগিয়ে যাবেন। তাই সব সময় নিজেকে সবজান্তা শমশের ভাবার এবং অন্যদের বিবেচনাকে খাটো করার মানসিকতা কখনো সম্মানজনক হয় না। আকার নিয়ে যাদের বিকার, তাদের সুস্থ ভাবার কোনো কারণ নেই। মান নির্ণয়ের জন্য আকার কোনো বিবেচ্য বিষয় হতে পারে না। কেউ লম্বাকে প্রাধান্য দেয় আবার কেউ খাটোকে। গ্রিনিচ মান রেকর্ড অনুযায়ী লম্বা-খাটো উভয়ই কিন্তু স্থান করে নিয়েছে। সুতরাং মান বিবেচনায় বস্তুগত গুণাগুণই প্রধান। তবে ব্যক্তিগত বিবেচনা ভিন্ন হতে পারে। তার অর্থ এই নয় যে যিনি যা ভালো বিবেচনা করবেন, সকলকেই তা মেনে নিতে হবে বরং সার্বিক বিবেচনায় মানসম্পন্ন বস্তুকেই ভালো বিবেচনা করা যৌক্তিক, যদিও তাতে কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। তবে ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ বা গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজে বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে একটি পেশার মানুষ যদি অন্য পেশার মানুষ অপেক্ষা নিজ বা নিজ পেশাকে বেশি প্রাধান্য দেন, তা সার্বিক বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য নয়। আবার একই পেশার সমসাময়িকদের মধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জ্ঞান সামান্য হেরফের থাকলেও সমকালীন সমাজে সমান বিবেচনা করা সত্ত্বেও একজন যদি নিজেকে অনেক বেশি যোগ্য বিবেচনা করে আস্ফালন করেন, তবে তা সমাজের চোখে গৌরবের না হয়ে নিন্দাযোগ্য বিবেচিত হওয়ার যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ রয়েছে। তবে কিছু লোক আছে, যারা যুক্তি-তর্কের ঊর্ধ্বে গলাবাজি করে নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণের চেষ্টা করে কিন্তু সামাজিকভাবে তা গ্রহণযোগ্য না হলে ব্যর্থ চেষ্টায় পর্যবসিত হয়। অপরপক্ষে অযৌক্তিক আস্ফালনের জন্য সময়, মেধা ও গ্রহণযোগ্যতা সবই হারাতে হয়। তাই প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যৌক্তিক সর্বজনগ্রহণযোগ্য ও নির্মোহ আচরণ ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধির সহায়ক। নিজের ত্যাগের কারণে অন্যের ভোগের ক্ষেত্রে যেমন সহায়ক, তেমনি অন্যের ত্যাগের কারণে নিজের ভোগের বিষয়টিও নিশ্চয়তা লাভ করে। তাই সমাজের সকল স্তরের মানুষের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সমাজে সহাবস্থান নিশ্চিত করা নিজের ও অন্যের জন্য অতীব জরুরি। এই মূলমন্ত্রের মাধ্যমে সমাজ পরিচালিত হলে তবেই সমাজ হবে শান্তিময়।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট ও গবেষক। কুইন্স ভিলেজ, নিউইয়র্ক
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078