পঁয়ত্রিশে ঠিকানা

প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ২১:৩৭ , অনলাইন ভার্সন
অনাবাসী বাংলাদেশিদের ৩৬৫ দিনের এবং ৫২ সপ্তাহের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার নিত্যসঙ্গী ঠিকানা ৩৪ বছর পার করে পঁয়ত্রিশে পা রাখল ২১ ফেব্রুয়ারি। কেবল ৩৪ বছর পেছনে ফেলে এল, তা নয়। পেছনে রেখে এল ৩৪ বছরের ইতিহাস। একুশে ফেব্রুয়ারি সব মানুষের কত ইতিহাসের সাক্ষী। একুশকে ভালোবেসে কত নামে ডাকি। একুশ আমাদের দিশারি। একুশ আমাদের সাহস এবং ভরসার আধার। একুশ আমাদের স্বাধীনতার প্রথম সিঁড়ি। একটি দিন একটি জাতিকে সাহসী করে ইতিহাস গড়ার দিন। ২১ ফেব্রুয়ারি এমন একটি দিন, যে দিনটির সূত্রপাত ঘটেছিল ছাত্রদের মাধ্যমে, আর সমাপ্তি ঘটে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে।
১৯৫২ সালে ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে পথে নেমেছিল বাংলার মানুষ। তারা রক্ত দেবে, তবু ভাষার মর্যাদা হারিয়ে ঘরে ফিরবে না। ফেরেওনি। বরকত, রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার রক্তস্রোত দিয়ে বাঙালির প্রিয় মাতৃভাষার অধিকার এনে দিয়েছিল। এই জীবনদান এতটাই বিস্তৃত যে এ অধিকার শুধু বাংলাদেশের একটি নির্দিষ্ট সীমায় বন্দী না থেকে প্লাবিত করেছিল পৃথিবীর সব কোনায়, বাঙালির হৃদয়-মন, বোধ-বুদ্ধি-চেতনাকে। সব বাঙালি জনপদকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল একুশের চেতনা। আর সেই চেতনা বুকে নিয়ে জন্ম নেয় ঠিকানাহীন কমিউনিটির ঠিকানা। প্রবাস কমিউনিটি পায় একটি বিশ্বস্ত দিকনির্দেশক। ১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কোনো এক বুধবারের পুণ্য সকালে প্রবাসীদের অনিশ্চিত জীবনে আশার আলো জ্বালিয়ে জন্ম নেয় ঠিকানা। এরপর ঝড়-বৃষ্টি-তুষারপাতকে তুচ্ছ করে প্রতি বুধবার প্রকাশিত হয়ে আসছে ঠিকানা।
জন্মলগ্ন থেকেই ঠিকানা জয় করে নেয় প্রবাসী বাঙালির মন। সেই থেকেই বাঙালি সাহসী হয়ে উঠতে থাকে। তখনো বাঙালির বাঙালি পরিচয় গড়ে ওঠেনি। তখনো বাঙালি হাঁটতে শেখেনি। হামাগুড়ি দিয়ে কম্পমান পদে চলে। সেই কমিউনিটিকে শক্ত পায়ে দাঁড়ানোর শক্তির উৎস হয়ে, প্রবাসে ব্যবসা-বাণিজ্যে, শিক্ষা-দীক্ষায় নিজেদের বিজয়ের পতাকা ওড়ানোর দুঃসাহস দেখাতে আলো, ভরসা, সাহসের বাতিঘর হয়ে আত্মপ্রত্যয়, আত্মমর্যাদা নিয়ে চলার ভরসা, সঠিক দিকনির্দেশনা জোগাতে জন্ম নেয় সাপ্তাহিক ‘ঠিকানা’। যার সেনাপতি এম এম শাহীন। সঙ্গী কয়েকজন অদম্য, অপরাজেয় টগবগে তরুণ সাঈদ-উর-রবসহ আরও কয়েকজন যুবক। যাদের সবার বুকের মধ্যে জয়ের নেশা। বদ্ধ ঘরের আগল ভেঙে বেরিয়ে আসা এই সব যুবক সব বাধাবিঘ্ন হাতে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে জয় করতে থাকে প্রথমে নিউইয়র্ক, তারপর একে একে আমেরিকার ৫০টি রাজ্য।
কোনো রক্তচক্ষুকে ভয় না করে মায়ের মুখের ভাষা বাংলা ভাষাকে বিশ্বের বুকে মর্যাদার আসনে বসাতে জীবনবাজি রেখে সব অপশক্তি, দানব-দখলদার ঔপনিবেশিক শক্তির বুলেট-বন্দুককে তোয়াক্কা না করে রাজপথে নামে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দিয়ে। কিন্তু শুধু রাজপথে মিছিল দিয়ে দানব শক্তির মন গলে না। রাজপথ রাঙিয়ে দেন বাংলার মেধাবী ছাত্র, সাহসী মানুষÑশহীদ রফিক, সালাম, জব্বার, বরকতসহ হাজারো নাম না-জানা সাহসী বাঙালি।
তাদের রক্ত বৃথা যায় না। তাদের রক্ত মায়ের যেমন মান বাঁচিয়েছে, তেমনি মাতৃভাষার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও ছিনিয়ে এনেছে। বিশ্বব্যাপী আজ মহা গরীমায় উদ্্যাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি। ‘যারা স্বর্গগত তারা এখনো জানে, স্বর্গের চেয়ে দামি জন্মভূমি’Ñবাঙালিরা তা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছে।
এ শুধু বাঙালির একুশে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস নয়, এটা ঠিকানার যুদ্ধজয়েরও ইতিহাস। ঠিকানাকে আজকের অবস্থানে আসতে কত যে বাধা পার হতে হয়েছে। ঠিকানার এ সাফল্য অর্জনের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রয়েছে প্রবাসী বাঙালি সমাজের। তাদের সহযোগিতা, সাহস, পাঠকসমাজের উদার ভালোবাসা, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, কর্মীদের নিরলস শ্রম না হলে ঠিকানার আজকের এই অবস্থানে আসা কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। কত মানুষের হিংসা-পরশ্রীকাতরতা আজও ঠিকানার পিছু ছাড়েনি। ঠিকানাকে ধ্বংস করে দেওয়ার কত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। কতবার ঠিকানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঠিকানার প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত কতবার মোকাবিলা করতে হয়েছে। মামলা, হামলা সবকিছুই সইতে হয়েছে। কিন্তু কেউ সফল হয়নি, কেবল ঠিকানার সঙ্গে পাঠকেরা ছিল বলে।
ঠিকানার কাছে পাঠকই প্রধান বিচারক। পাঠকই বড় শক্তি। ঠিকানার জবাবদিহি কেবলই পাঠকের কাছে। একুশের ইতিহাস আসলে সব বাঙালিরই জানা। পাকিস্তানের বিশ্বাসঘাতকতা, দ্বৈত নীতি এবং ভেতরে ভেতরে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে প্রতিপদে লড়তে হয়েছে। এ কথা ঠিক, প্রবাসে একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা নিয়ে পত্রিকা প্রকাশের কথা যখন কারও পক্ষে ভাবাও সম্ভব ছিল না, সে সময় ঠিকানার প্রতিষ্ঠাতা এম এম শাহীন তাঁর সব পুঁজি বিনিয়োগ করে দুঃসাহস দেখান প্রবাস বাঙালিকে পথ দেখাতেÑতা সত্যি যেমন সাহসের, তেমনি প্রশংসার। ঠিকানা প্রকাশের ক্ষেত্রে এ কথা ঠিক, কাউকে আত্মদান, রক্তদান কিছু করতে হয়নি। তবে শ্রম ও মেধা ব্যয় করতে হয়েছে। বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে হয়েছে প্রচণ্ড। সদ্য বিকাশমান কমিউনিটির পাশে সবার বাতিঘর হয়ে অন্ধকার পথে আলো জ্বেলে দেওয়ায় ঠিকানার কাছে আমাদের সবারই মনে হয় কিছু ঋণ আছে। আজও দেশ থেকে আসা নতুন অভিবাসীদের জন্য বাড়িভাড়া নেওয়াসহ নানা সুযোগ-সুবিধা লাভের জন্য ঠিকানার সাহায্য-সহযোগিতা অপরিহার্য।
এমন এক সময়ে এম এম শাহীন ঠিকানা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন, যখন নিউইয়র্কে পত্রিকা প্রকাশ কেন, যেকোনো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাঙালির জন্য চরম অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ। সেই সময়ে স্বদেশ ও প্রবাসের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনার তীব্র বাসনা নিয়ে কোনো ঝুঁকিকে পাত্তা না দিয়ে ঠিকানা প্রকাশ করেন। এবং সেই ঝুঁকি প্রবাস কমিউনিটির জন্য সুফলই বয়ে আনে।
কমিউনিটি ঠিকানাকে তাদের সর্বাত্মক ভালোবাসা দিয়ে গ্রহণ করে। এ কথা ঠিকানা প্রমাণ করতে পেরেছে, কেউ যদি নিখাদ ভালোবাসা নিয়ে কোনো কিছু করার প্রয়াস নেন, তা ব্যর্থ হয় না। তার সেই প্রয়াস সফল করে তুলতে সবাই এগিয়ে আসেন। প্রবাস কমিউনিটি এবং ঠিকানার ক্ষেত্রে তা-ই ঘটেছে। শেষ কথা, প্রবাস কমিউনিটির ভালোবাসা নিয়ে ঠিকানার আরও বিকাশ ঘটুক। ঠিকানার মধ্য দিয়ে প্রবাস কমিউনিটির স্বপ্ন সফল হোক। কোনো দুর্যোগ, অন্ধকারের কোনো অপশক্তি যেন ঠিকানার এগিয়ে চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে। এই চলার পথে প্রবাসী, স্বদেশবাসী, সব শ্রেণির মানুষ হাত ধরাধরি করে থাক। সবাই ভালো থাক। সভ্যতা নিরাপদ থাকুক। আমাদের প্রজন্ম যেন থাকে দুধে-ভাতে। ঠিকানার সব সহকর্মী, পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ীদের জানাই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উষ্ণ শুভেচ্ছা।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041