যখন মন খারাপের ঢেউ এসে আঘাত করে তখন ব্যায়াম করার মতো শরীরিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার বিষয়টা সবচেয়ে শেষে হয়ত প্রাধান্য পায়।
তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে ভালো বোধ করতে ব্যায়াম জরুরি।
বিএমজে সাময়িকীতে প্রকাশিত এই পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় বলা হয়- হাঁটা, জগিং, ইয়োগা, ‘অ্যারোবিক এক্সারসাইজ’ এবং ‘স্ট্রেন্থ ট্রেইনিং’য়ের মতো ব্যায়ামগুলো বিষণ্নতা কাটাতে মনোরোগ-চিকিৎসকের কাছে গিয়ে থেরাপি নেওয়ার মতোই উপকারী প্রভাব ফেলে।
“১০ থেকে ২৫ শতাংশ মানুষের ওপর বিষণ্নতার প্রভাব পড়ে। আর ভালো থাকার ক্ষেত্রে ধার-দেনা, বিচ্ছেদ বা ডায়াবেটিসের থেকেও এটা বেশি ক্ষতিকর” সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন এই গবেষণার প্রধান অস্ট্রেলিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অফ কুইন্সল্যান্ড’য়ের ‘স্কুল অফ সাইকোলজি’র জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ডা. মাইকেল নোয়েটেল।”
ইমেইল বার্তায় তিনি আরও লেখেন, “তারপরও বিষণ্নতায় ভোগা রোগীদের মধ্যে অর্ধেকজন চিকিৎসা পায়।”
শরীরচর্চা এবং বিষণ্নতার ওপর করা ২১৮টি গবেষণার ১৪ হাজার মানুষের তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করেন গবেষকরা।
“গবেষণায় পক্ষপাতিত্বের ঝুঁকি থাকলেও, সমস্ত তথ্য সমন্বয় করে দেখা গেছে- বিষণ্নতায় সাহায্য পেতে পুরো শরীরের জন্যই ব্যায়াম উপকারী”- বলেন ডা. নোয়েটেল।
এই গবেষণার সাথে যুক্ত না থেকেও ‘ইয়েল স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের মনোরোগের সহকারী অধ্যাপক এবং নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক মানসিক সেবাদানের প্রতিষ্ঠান ‘স্প্রিং হেল্থ’য়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডা. অ্যাডাম চেকরুড বলেন, “ব্যায়ামের উপকারীতা সম্পর্কে অন্যান্য অনেক গবেষণার সাথে এই তথ্য সামঞ্জস্যপূর্ণ।”
এই অধ্যাপকের ২০১৮ সালে করা গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, ১২ লাখেরও বেশি মার্কিন নাগরিকের মধ্যে যারা ব্যায়াম করেছেন তারা জানিয়েছে যে, তাদের ভালো থাকা ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে।
চেকরুড বলেন, “দুটি গবেষণাই মানুষের মাঝে এই আস্থা দেয় যে, বিষণ্নতার চিকিৎসায় থেরাপি ও ওষুধের পাশাপাশি অন্যান্য পন্থার মতো ব্যায়ামও একটি ভালো পদ্ধতি।”
ডা. নোয়েটেল বলেন, “চিকিৎসা-পদ্ধতি হিসেবে এগুলোর কোনোটাই ‘মারণাস্ত্র’ না হলেও, বিষণ্নতায় ভোগা প্রায় সব রোগীকে ব্যায়াম ও থেরাপি দেওয়া উচিত।”
না করার চাইতে যে কোনো ব্যায়াম ভালো
গবেষণায় দেখা গেছে যত বেশি ও কঠিন শরীরচর্চা, ততই মঙ্গল। তবে ব্যায়াম শুরু করার ক্ষেত্রে পেশাদার খেলোয়াড়দের মতো প্রশিক্ষণের দরকার নেই।
নোয়েটেল বলেন, “সময় বা সপ্তাহের হিসেবে কতটা ব্যায়াম করা হচ্ছে সেটা জরুরি না। এমনকি কতদিন ব্যায়াম চালানো হচ্ছে সেটাও কোনো বিষয় না।”
“যদিও ব্যায়ামের মাত্রার ওপর বিশাল পার্থক্য হয়, তবে সাধারণ হাঁটার মাধ্যমেও উপকার মেলে”- বলেন তিনি।
না করার চাইতে যে কোনো ব্যায়াম ভালো। তবে কিছু চ্যালেঞ্জ যুক্ত করার পরামর্শ দেন, নোয়েটেল।
তিনি বলেন, “বিষণ্নতায় ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় ‘সহজভাবে’ আগানোর কথা ভাবা হয়। তবে আমরা দেখেছি, একটু হলেও জোড়ালো মাত্রায় শরীরচর্চার প্রক্রিয়া অনেক বেশি কার্যকর।”
সমস্যা হল প্রেরণার অভাব
অনুপ্রেরণার অভাবে অনেক মানুষের ব্যায়াম করা কঠিন হয়ে যায়; আর বিষণ্নতার কারণে শুরু করাটা আরও বেশি কঠিন করে ফেলে।
গবেষণার পর্যবেক্ষণে নোয়েটেল দেখেছেন, লক্ষ্য নির্ধারণ করে কোনো লাভ হয় না।
“বরং, আমার মনে হয় সমর্থন ও জবাবদিহিতা এখানে কার্যকর”- বলেন ডা. নোয়েটেল।
সেটা হতে পারে কোনো ‘ফিটনেস গ্রুপে’ যুক্ত হওয়া, প্রশিক্ষকের কাছে যাওয়া বা আপনজনকে সাথে নিয়ে হাঁটতে বের হওয়া।
ছোট ছোট পদক্ষেপ নিলে এগিয়ে যেতে বেশি সাহায্য করে। ভারোত্তলন বা হাঁটা যেটাই হোক- সেটা হতে হবে আনন্দদায়ক।
ব্যায়াম যত আনন্দদায়ক হবে ততই শরীরচর্চা করার বাধাগুলো দৃঢ়তার সাথে টপকানো যাবে।
ডা. নোয়েটেল বলেন, “যদি কঠিন মনে হয় তবে নিজের প্রতি দয়ালু হোন। জীবনের জন্য ব্যায়ামের পথে নামাটা যে কত সহজ, সেটা আমরা ভুলে যাই। তাই এমনভাবে পরিকল্পনা করুন যাতে মনে হয় আপনার সুখ এটার ওপরেই নির্ভরশীল।”
ঠিকানা/এসআর
তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে ভালো বোধ করতে ব্যায়াম জরুরি।
বিএমজে সাময়িকীতে প্রকাশিত এই পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় বলা হয়- হাঁটা, জগিং, ইয়োগা, ‘অ্যারোবিক এক্সারসাইজ’ এবং ‘স্ট্রেন্থ ট্রেইনিং’য়ের মতো ব্যায়ামগুলো বিষণ্নতা কাটাতে মনোরোগ-চিকিৎসকের কাছে গিয়ে থেরাপি নেওয়ার মতোই উপকারী প্রভাব ফেলে।
“১০ থেকে ২৫ শতাংশ মানুষের ওপর বিষণ্নতার প্রভাব পড়ে। আর ভালো থাকার ক্ষেত্রে ধার-দেনা, বিচ্ছেদ বা ডায়াবেটিসের থেকেও এটা বেশি ক্ষতিকর” সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন এই গবেষণার প্রধান অস্ট্রেলিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অফ কুইন্সল্যান্ড’য়ের ‘স্কুল অফ সাইকোলজি’র জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ডা. মাইকেল নোয়েটেল।”
ইমেইল বার্তায় তিনি আরও লেখেন, “তারপরও বিষণ্নতায় ভোগা রোগীদের মধ্যে অর্ধেকজন চিকিৎসা পায়।”
শরীরচর্চা এবং বিষণ্নতার ওপর করা ২১৮টি গবেষণার ১৪ হাজার মানুষের তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করেন গবেষকরা।
“গবেষণায় পক্ষপাতিত্বের ঝুঁকি থাকলেও, সমস্ত তথ্য সমন্বয় করে দেখা গেছে- বিষণ্নতায় সাহায্য পেতে পুরো শরীরের জন্যই ব্যায়াম উপকারী”- বলেন ডা. নোয়েটেল।
এই গবেষণার সাথে যুক্ত না থেকেও ‘ইয়েল স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের মনোরোগের সহকারী অধ্যাপক এবং নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক মানসিক সেবাদানের প্রতিষ্ঠান ‘স্প্রিং হেল্থ’য়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডা. অ্যাডাম চেকরুড বলেন, “ব্যায়ামের উপকারীতা সম্পর্কে অন্যান্য অনেক গবেষণার সাথে এই তথ্য সামঞ্জস্যপূর্ণ।”
এই অধ্যাপকের ২০১৮ সালে করা গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, ১২ লাখেরও বেশি মার্কিন নাগরিকের মধ্যে যারা ব্যায়াম করেছেন তারা জানিয়েছে যে, তাদের ভালো থাকা ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে।
চেকরুড বলেন, “দুটি গবেষণাই মানুষের মাঝে এই আস্থা দেয় যে, বিষণ্নতার চিকিৎসায় থেরাপি ও ওষুধের পাশাপাশি অন্যান্য পন্থার মতো ব্যায়ামও একটি ভালো পদ্ধতি।”
ডা. নোয়েটেল বলেন, “চিকিৎসা-পদ্ধতি হিসেবে এগুলোর কোনোটাই ‘মারণাস্ত্র’ না হলেও, বিষণ্নতায় ভোগা প্রায় সব রোগীকে ব্যায়াম ও থেরাপি দেওয়া উচিত।”
না করার চাইতে যে কোনো ব্যায়াম ভালো
গবেষণায় দেখা গেছে যত বেশি ও কঠিন শরীরচর্চা, ততই মঙ্গল। তবে ব্যায়াম শুরু করার ক্ষেত্রে পেশাদার খেলোয়াড়দের মতো প্রশিক্ষণের দরকার নেই।
নোয়েটেল বলেন, “সময় বা সপ্তাহের হিসেবে কতটা ব্যায়াম করা হচ্ছে সেটা জরুরি না। এমনকি কতদিন ব্যায়াম চালানো হচ্ছে সেটাও কোনো বিষয় না।”
“যদিও ব্যায়ামের মাত্রার ওপর বিশাল পার্থক্য হয়, তবে সাধারণ হাঁটার মাধ্যমেও উপকার মেলে”- বলেন তিনি।
না করার চাইতে যে কোনো ব্যায়াম ভালো। তবে কিছু চ্যালেঞ্জ যুক্ত করার পরামর্শ দেন, নোয়েটেল।
তিনি বলেন, “বিষণ্নতায় ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় ‘সহজভাবে’ আগানোর কথা ভাবা হয়। তবে আমরা দেখেছি, একটু হলেও জোড়ালো মাত্রায় শরীরচর্চার প্রক্রিয়া অনেক বেশি কার্যকর।”
সমস্যা হল প্রেরণার অভাব
অনুপ্রেরণার অভাবে অনেক মানুষের ব্যায়াম করা কঠিন হয়ে যায়; আর বিষণ্নতার কারণে শুরু করাটা আরও বেশি কঠিন করে ফেলে।
গবেষণার পর্যবেক্ষণে নোয়েটেল দেখেছেন, লক্ষ্য নির্ধারণ করে কোনো লাভ হয় না।
“বরং, আমার মনে হয় সমর্থন ও জবাবদিহিতা এখানে কার্যকর”- বলেন ডা. নোয়েটেল।
সেটা হতে পারে কোনো ‘ফিটনেস গ্রুপে’ যুক্ত হওয়া, প্রশিক্ষকের কাছে যাওয়া বা আপনজনকে সাথে নিয়ে হাঁটতে বের হওয়া।
ছোট ছোট পদক্ষেপ নিলে এগিয়ে যেতে বেশি সাহায্য করে। ভারোত্তলন বা হাঁটা যেটাই হোক- সেটা হতে হবে আনন্দদায়ক।
ব্যায়াম যত আনন্দদায়ক হবে ততই শরীরচর্চা করার বাধাগুলো দৃঢ়তার সাথে টপকানো যাবে।
ডা. নোয়েটেল বলেন, “যদি কঠিন মনে হয় তবে নিজের প্রতি দয়ালু হোন। জীবনের জন্য ব্যায়ামের পথে নামাটা যে কত সহজ, সেটা আমরা ভুলে যাই। তাই এমনভাবে পরিকল্পনা করুন যাতে মনে হয় আপনার সুখ এটার ওপরেই নির্ভরশীল।”
ঠিকানা/এসআর