গাঁজার নির্যাসে রয়েছে ত্বকের ক্যান্সার কোষ ধ্বংসের সম্ভাবনা 

প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১১:৫১ , অনলাইন ভার্সন
মানবদেহের সবচেয়ে ক্ষতিকর ত্বকের ক্যান্সার কোষ মেরে ফেলার ক্ষেত্রে ‘যুগান্তকারী’ সম্ভাবনা দেখিয়েছে গাঁজার গাঢ় নির্যাস। গবেষণাটি নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে কাজ চললেও এর ফলাফল প্রথমে জ্যান্ত প্রাণী ও পরবর্তীতে মানবদেহেও ব্যবহার করা যেতে পারে, যার মাধ্যমে ‘মেলানোমা’র মতো ভয়াবহ রোগের নতুন ঔষধ তৈরির সম্ভাবনা জেগেছে।

গাঁজার এই তেলটিকে ডাকা হচ্ছে ‘পিএইচইসি-৬৬’ নামে, যা তৈরি করেছে অস্ট্রেলিয়ার ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি ‘এমজিসি ফার্মাসিউটিক্যালস’।
২০২৩ সালের অক্টোবরে এ গবেষণায় অর্থায়ন করে কোম্পানিটি। এর ল্যাব পরীক্ষায় দেখা যায়, বিভিন্ন মেলানোমা কোষের উৎপাদন ঠেকিয়ে দিয়েছে ‘পিএইচইসি-৬৬’।

এ গবেষণার পরবর্তী পর্যায়ে সেইসব ফলাফলকে নির্ভুল বলে নিশ্চিত করেছেন ‘আরএমআইটি ইউনিভার্সিটি’ ও ‘চার্লস ডারউইন ইউনিভার্সিটি (সিডিইউ)’র বিজ্ঞানীরা।

এতে উল্লেখ রয়েছে, গাঁজার এ বিশেষ নির্যাস ক্যান্সার উৎপাদনকারী মেলানোমা কোষের সংখ্যাবৃদ্ধিতে বাধা দেয়, যার ফলে রোগটি নিজেই নিজেকে হত্যা করতে বাধ্য হয়।

“এটা মেলানোমা কোষকে নতুন কোষে বিভক্ত হতে কেবল বাধাই দেয় না বরং কোষের মৃত্যু ঘটাতে শুরু করে এটি, যা ‘অ্যাপোপটোসিস’ নামেও পরিচিত,” বলেছেন ‘চার্লস ডারউইন ইউনিভার্সিটি’র বায়োমেডিকাল বিজ্ঞানী নাজিম নাজার।

তবে জ্যান্ত প্রাণীর দেহে এ প্রক্রিয়া কাজ করে কি না, তা নিয়ে গবেষণা এখনও বাকি। কেননা, আজ অবধি গাঁজার তেল নিয়ে তেমন কোনও ক্লিনিকাল ট্রায়াল হয়নি। এ ছাড়া, গাঁজার বিভিন্ন উপাদানে যে ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, সে বিষয়টি নিয়েও গবেষণা হয়েছে খুব কমই।

ওষুধ হিসেবে গাঁজার ব্যবহার হাজার বছরের পুরোনো হলেও বিগত শতাব্দীতে গাঁজা নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা ব্যাপক বাধার মুখে পড়ে।

২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো ওষুধ হিসেবে গাঁজা ব্যবহারকে বৈধ করে অস্ট্রেলিয়া। এমনকি বিভিন্ন গবেষণা দলকেও অসুখ ও রোগের আধিক্যের বিরুদ্ধে চিকিৎসার ক্ষেত্রে গাঁজার বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে তৈরি ওষুধের সম্ভাব্যতা খুঁজে দেখার অনুমতি দিয়েছে দেশটি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মানবদেহের সাধারণ কোষে প্রভাব না ফেলেই নির্দিষ্ট ক্যান্সার কোষ মেরে ফেলার ক্ষেত্রে গাঁজায় প্রচুর সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছেন অস্ট্রেলীয় গবেষকরা।

উদাহরণ হিসেবে, ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার এক বায়োটেক কোম্পানি জানায়, ল্যাবে লিউকেমিয়া কোষের মৃত্যু ঘটানোর নজির দেখিয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাঁজা।

২০১৫ সালে মার্কিন বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, যখন মেলানোমাবিহীন ত্বকের ক্যান্সার কোষে থাকা ‘ক্যানাবিনয়েড রিসেপ্টর’কে লক্ষ্যবস্তু করা হয়, তখন কোষগুলো অক্সিডেটিভ নামের এক ধরনের চাপে ভুগতে শুরু করে। ফলে, সেইসব ক্ষতিকারক কোষের মৃত্যু ঘটে।

গাঁজার নির্যাসে রয়েছে ত্বকের ক্যান্সার কোষ ধ্বংসের সম্ভাবনা
কয়েক বছর আগে ইতালির গবেষকদের গবেষণায় উঠে আসে, অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একই ধরনের ফলাফল দেখিয়েছিল গাঁজার কিছু উপাদান।

এবার সে তালিকায় যোগ হল মেলানোমা।

“গবেষণার এক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র গাঁজা। বিশেষ করে গাঁজার নির্যাস সম্পর্কে যতটা সম্ভব জানতে ও বুঝতে হবে আমাদের। কারণ এর ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করার সম্ভাবনা আছে,” যুক্তি দেখিয়েছেন নাজার।

“আমরা যদি জানতে পারি যে, গাঁজা ক্যান্সার কোষ কীভাবে কাজ করে, বিশেষ করে এ কোষের মৃত্যুর কারণ কী, তাহলে আমরা আরও নির্দিষ্ট, সক্রিয় ও কার্যকর চিকিৎসার কৌশলে পৌঁছাতে পারব।”

বর্তমান গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, ‘পিএইচইসি-৬৬’ মানবদেহের কোষের ‘ডিএনএ ফ্র্যাগমেন্টেশন’কে প্ররোচিত করে বিভাজনের মাধ্যমে কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করে। পাশাপাশি ‘রিঅ্যাক্টিভ অক্সিজেন স্পিশিজ (আরওএস)’-এর মাত্রাকে ‘যথেষ্ট উন্নত’ করে প্রোগ্রাম করা কোষের মৃত্যু ঘটায়।

গবেষণায়, ‘পিএইচইসি-৬৬’ ‘ক্যানাবিনয়েড রিসেপ্টর’কে লক্ষ্য করে কোষের মধ্যে ‘আরওএস’ একত্রে করার অনুমতি দিয়ে মেলানোমা কোষের উৎপাদনের ‘অ্যাপোপটোসিস’ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

তবে জীবন্ত দেহের ক্যান্সার কোষে এ ফলাফল কাজ করবে কি না, তা দেখতে প্রাণীদের উপর আরও গবেষণা করা প্রয়োজন। কারণ, গবেষকদের এখনও কীভাবে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে এবং কী ডোজে দিতে হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। তারপর মানুষের উপর এর ক্লিনিকাল ট্রায়াল বিবেচনা করা যেতে পারে।

বর্তমানে বেশিরভাগ গাঁজার উপাদানের উপর গবেষণা এখনও ল্যাবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যা প্রাথমিক পরীক্ষায় কিছু ‘ক্যানাবিনয়েড’ কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দিতে পারে এবং কোষের মৃত্যু ঘটাতে পারে বলে মনে করা হয়। আবার অন্য গবেষকরা ধারণা করেন, এটা আসলে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে বাড়িয়ে দেয়।

গাঁজা গাছে শত শত ‘ক্যানাবিনয়েড’ যৌগ রয়েছে এবং গবেষকরা শুধু গাঁজার ঔষধি সম্ভাবনার দিকগুলোই খুঁজে দেখছেন।

গাঁজা গাছটি ভবিষ্যতে ক্যান্সারের চিকিৎসায় সাহায্য করবে কিনা তা এখনই বলা খুব মুশকিল। তবে মেলানোমার মতো যখন কঠিন চিকিৎসা করা রোগের কথা আসে, তখন এই চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘সেলস’ জার্নালে।

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078