ঢাকার পরিবেশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা

প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১১:৫৩ , অনলাইন ভার্সন
পরিবেশ নিয়ে কথাবার্তা নতুন নয়। বিশ্ব পরিবেশ দিবস সাড়ম্বরে প্রতিবছর উদ্্যাপিত হতে দেখা যায়। বিশ্বের পরিবেশবাদী সব দেশ এবং বাঘা বাঘা সব পরিবেশবিদ সেসব আন্তর্জাতিক সমাবেশে যোগ দেন। অতীত কর্ম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিচার-বিশ্লেষণ ও পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ভবিষ্যতের পরিকল্পনার মধ্যে কিছু কিছু অসমাপ্ত থাকলে পরিকল্পনা সম্পন্ন করার চেষ্টা করে নতুন উদ্যোগের পাশাপাশি। আসলে কিছু কিছু মানুষ আছেন, বিশ্ববাসীকে একটি সুন্দর বিশ্ব উপহার দেওয়ার তাগিদে ঘুম হারাম করে কাজ করে যান। দুঃখজনক হলেও এ কথা আরও সত্য, তার চেয়ে শত শত, লক্ষ লক্ষ গুণ বেশি মানুষের দ্বারা পরিবেশ দূষণ ঘটে, বিশ্বটা মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা। পরিবেশদূষণে ঢাকা শহর বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। সবচেয়ে বড় দূষণ মানুষের দূষণ। সারা দেশের মানুষ মনে করে, রাজধানী ঢাকায় কাজের খনি আছে। সেখানে গেলেই সামান্য হলেও কিছুটা অন্তত কাজের ভাগ মিলবে। তাই বাংলাদেশের মানুষের স্লোগান : ‘চলো চলো ঢাকা চলো’। এবং এই ঢাকা চলতে চলতেই ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নেই/ ছোট সে তরী/ আমারই সোনার ধানে গিয়েছে ভরি’। মানুষে মানুষে আজ ঢাকা নগরী নামের ছোট্ট নৌকাটির ডুবুডুবু অবস্থা।

এখন জনভারে বিপর্যস্ত ঢাকাবাসী। বলা হচ্ছে, এখন আর কেজিতে নয়, এখন এক গ্রাম ওজনও ঢাকা বইতে পারবে না। যদিও প্রতীকে বলা হচ্ছে, এখন তিলোত্তমা ঢাকা আর একটি ইটও বইতে পারবে না। ভেঙে পড়বে! খুব সহজেই জানা যে বর্তমান বিশ্বে মনুষ্য সমাজ আর বনবাসী হতে চায় না। মানুষ এখন গৃহবাসী। তাদের বসতির জন্য চাই বসতবাড়ি। আর বসতবাড়ির প্রধান উপকরণ আর কিছু নয়, কেবলই ইট। সেই সঙ্গে সিমেন্ট আর বালি। আর নগরীর মানুষের বসতবাড়ির চাহিদা মেটাতে ঢাকা আজ ইটের শহরে পরিণত হতে হতে এখন বলা হচ্ছে, ‘আর একটি ইটের ভার নেওয়ারও ক্ষমতা নেই ঢাকার।’
ভার বইতে বইতে আজ বহনক্ষমতার বাইরে চলে গেছে ঢাকা। রাজধানী ঢাকার উপরপানে চাইলে ‘নীলাকাশ’ বলে যে বাঙালি কবি-সাহিত্যিক, এমনকি সাধারণ মানুষের মনে একটি কাব্যিক ভাবনা জেগে ওঠে, এখন সে ভাবনা উদয় হবে না। সে ভাবনা উদয় হবে কি, আকাশ দেখা গেলে তো নীলাকাশ, না মেঘলা আকাশ দেখা যাবে? সেখানে ইটের জটলা ছাড়া আর কিছুই দৃষ্টিসীমার মধ্যে দেখা যাবে না। গত সপ্তাহে ঠিকানায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কোনো দ্বিধা, কোনো ভূমিকা না রেখেই বলা হয়েছে, ‘রাজধানী ঢাকার বুকে দিন দিন জায়গা করে নিচ্ছে সুউচ্চ ভবন। এসব ভবনের ভার নিতে নিতে এখন অনেকটাই ভারসাম্যহীন অবস্থা রাজধানী শহরের। জনসংখ্যা যেমন ভারসাম্যহীন, তেমনি অবকাঠামো যেসব গড়ে উঠেছে, সেসবও ভারসাম্যহীন। ঢাকা শহরে মানুষকে যেমন চলতে হয় গা ঘেঁষাঘেঁষি করে, সব অবকাঠামোর অবস্থাও সে রকম। প্রতিটা বিল্ডিংও গড়ে উঠছে যেন সেভাবেই। আকাশ দেখার আকাক্সক্ষা আর মিটবে না।

গবেষণায় জানা যায়, যেকোনো সময় এলাকায় কংক্রিটের শতকরা হারের পরিমাণ হওয়ার উচিত ৪০ শতাংশ। সর্বোচ্চ এই হার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। রাজধানী ঢাকা শহরে কংক্রিটের হার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। অনেক জায়গায় ৯০ শতাংশও ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় ঢাকাকে বাঁচাতে নগর পরিকল্পনাবিদেরা নতুন করে ভাবতে বলেছেন। পাশাপাশি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টাটা বাঁধবে কে?
কথায় বলা হয়, এক বিপদ আরেক বিপদ ডেকে আনে। আমরা সবাই জানি, ঢাকা শহরের দূষণ কী পরিমাণ। পানিদূষণ, বায়ুদূষণ, পয়োনিষ্কাশন সংকটে মানুষের জীবন রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকায় বেড়েছে ভূমিকম্পের আশঙ্কা। এর আগে ছোটখাটো ভূমিকম্প হলেও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু ভবিষ্যতে হবে নাÑসে কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায় না। এ ছাড়া ঢাকা শহরে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা সরকারের আছে বলেও মনে করেন না বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের মানুষেরা। রাস্তাঘাটের অবস্থা বিবেচনায় রেখে এ কথাও বলা যায়, দুর্যোগের পর যত তাড়াতাড়ি উদ্ধারকাজ পরিচলনা করা দরকার, সেটাও সম্ভব হবে না।

এসব দুর্যোগ-আশঙ্কা নিয়ে সরকারকে গভীরভাবে ভাবতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধারকাজে নিয়োজিত হয়ে যত অধিক সংখ্যক মানুষকে বাঁচানো যায়। ২০১৯ সালে সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) ও জাইকার এক যৌথ জরিপে জানা যায়, ঢাকায় ৭ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে শহরের ৭ হাজার ভবন ভেঙে পড়বে এবং ১ লাখ ৩৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জমবে ৭ কোটি টন কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপ। সে অবস্থায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, কে জানে!
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041