এক রাতে নাই হয়ে গেল গোটা পরিবার

প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারী ২০২৪, ২৩:০১ , অনলাইন ভার্সন
সিরাজগঞ্জের তাড়াশের বারোয়ারি বটতলা, ৩০ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) সকালে কয়েক নারী একটি কক্ষে আহাজারি করছিলেন। এখানেই তিন তলা ভবনের তৃতীয় তলার তালাবদ্ধ ঘর থেকে সোমবার রাতে উদ্ধার করা হয়েছে মা-বাবা ও মেয়ের রক্তাক্ত লাশ। বিকাশ কুমার সরকার (৪৫), তাঁর স্ত্রী স্বর্ণা সরকার (৩৮) ও একমাত্র মেয়ে পারমিতা সরকার তুষির (১৫) হত্যাকাণ্ডে স্বজনরা স্তম্ভিত। এক আত্মীয়ের হাহাকার– ‘আহ! এক রাতে একটি পরিবারকে নাই করে দিল।’ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানান আরেক স্বজন।

বিকাশ বারোয়ারি বটতলার কালীচরণ সরকারের ছোট ছেলে। নিজেদের ভবনের তৃতীয় তলায় স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। ওই ভবনের আরেক পাশে পরিবার নিয়ে থাকেন তাঁর বড় ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রকাশ কুমার সরকার। মা শান্তি রানী (৯২) ছেলেদের সঙ্গেই থাকেন। এ ঘটনায় পুলিশ প্রকাশ কুমার ও তাঁর ছেলে অঙ্কুর কুমারকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

পুলিশ, স্বজন ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শনিবার রাতে বিকাশকে বাজারে দেখা যায়। এরপর থেকে পরিবারটির কাউকে মোবাইল ফোনে পাচ্ছিলেন না স্বজনরা। পরে সোমবার রাতে বাড়িতে এসে ফ্ল্যাট তালাবদ্ধ পান। রাত আড়াইটার দিকে তারা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে তালা ভেঙে ঘরের বিছানায় মেয়ে এবং মেঝেতে স্বামী-স্ত্রীর গলাকাটা লাশ পায়।

বিকাশ এক সময় ওষুধের ব্যবসা করতেন। পরে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া প্রায় ৭০-৮০ বিঘার পুকুর ও ফসলি জমির উপার্জনে সংসার চালাতেন তিনি। মেয়ে তুষি তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

বিকাশের আত্মীয় কলেজ শিক্ষক রমন বিশ্বাস বলেছেন, ‘এ হত্যাকাণ্ড কেন ঘটল, তা বুঝতে পারছি না। আমরা সবাই স্তম্ভিত হয়ে পড়েছি।’ 

বিকাশের ভাগনে মিঠুন সরকার বলেন, ‘ওষুধের ব্যবসা ছাড়ার পর মামা পুকুর ও আবাদি জমি নিয়েই ছিলেন। সঙ্গে মন্দিরের বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকতেন।’

তুষির বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলী আহসান বলেন, গত বার্ষিক পরীক্ষায় তুষি জিপিএ ৫ পেয়েছিল। ক্লাসে ১১০ জনের মধ্যে তার রোল নম্বর ছিল ১২। কেন এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হলো তাকে, তা খুঁজে বের করার আহ্বান জানান তিনি।

সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সামিউল ইসলাম জানিয়েছেন, একটি পরিবারের তিন সদস্যকে একইভাবে হত্যা করা তারা মনে করছেন, এতে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় থাকতে পারে। আলামত বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত করার কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

আজ রাত পর্যন্ত এ হত্যাকাণ্ডের কিনারা করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। সন্ধ্যায় তাড়াশ থানায় অজ্ঞাতদের নামে মামলা করেছেন বিকাশের শ্যালক বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বরইগ্রামের সুকোমল চন্দ্র সাহা।

বিকাশের আরেক আত্মীয় তাড়াশের স্টুডিও ব্যবসায়ী দীপক কুমার বলেছেন, প্রকাশ ও বিকাশ পরিবার নিয়ে পাশাপাশি বাস করলেও মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিল বলে জেনেছি। পৈতৃক সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। একাধিকবার বিচার সালিশ ছাড়াও মামলা-মোকদ্দমা হয়েছে।

নিহত বিকাশের বোন আরতী রানী সাহা জানিয়েছেন, তারা পাঁচ বোন ও দুই ভাই। বড় বোন আঙ্গুরী ভারতে থাকেন। খবর পেয়ে বাকি চার বোন– প্রমীলা, মিনা, সেবিকা ও আরতী রানী তাড়াশে ছুটে এসেছেন। কীভাবে কী হলো, কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না তারা।

তাড়াশ থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেছেন, প্রকাশ ও বিকাশের মধ্যে সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। শনিবার গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা তিনজনকে খুন করল, পাশেই বসবাস করলেও আরেকটি পরিবার কিছুই টের পেল না, বিষয়টি সত্যিই রহস্যজনক। নিহতের বড় ভাই এবং তাঁর ছেলেকে থানায় ‌এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ঘরে ডাকাতি বা অন্য কোনো অপরাধের আলামত এখনও পাওয়া যায়নি। বিকাশের পরনে ছিল প্যান্ট-শার্ট, হাতে চাবির রিং। তাঁর স্ত্রীর পোশাক, স্যান্ডেল স্বাভাবিক ছিল। এসব দেখে ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনায় জড়িতরা তাদের পরিচিত, বাসায় যাতায়াত ছিল।

পিবিআইয়ের এসপি রেজাউল ইসলাম জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের পেছনে আপাতত জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আরও যেসব বিষয় সামনে আসছে, সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

ঠিকানা/ছালিক 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078