টক অব দ্য কান্ট্রি : সব পক্ষই চাপের মুখে

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি  নিয়ে উত্তপ্ত রাজনীতি

প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৩, ০৯:১৮ , অনলাইন ভার্সন
নূরুল ইসলাম : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নতুন ভিসা নীতি নিয়ে উত্তপ্ত দেশের রাজনীতি। ভোটে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কোনো বাংলাদেশিকে ভিসা দেবে না দেশটি। গত ২৪ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণার পর সরকার, বিরোধী দলসহ সারা দেশের মানুষের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বিষয়টি টক অব দ্য কান্ট্রি। বিভিন্ন দলের নেতারা ভিসা নীতির পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান তুলে ধরছেন। চলছে বাগ্্যুদ্ধ।
আগামী সাত মাস পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর মধ্যেই এল যুক্তরাষ্ট্র্রের ভিসা নীতি। এতে ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী দল, আমলা সব পক্ষই সমভাবে চাপে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মাধ্যমে প্রশাসন ও বিচার বিভাগের ওপর ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণ কমতে পারে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে সরকারকে আগের চাইতে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে। ভুয়া ভোট প্রদান, ভোটার ও নির্বাচনী এজেন্টদের বাধাদান, নির্বাচনী সমাবেশে হামলা, গায়েবি মামলা, নির্যাতন-নিপীড়ন, মতপ্রকাশে বাধাদান ইত্যাদি কাজ নির্বাচনে অনিয়ম ও হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে বলে জানান বিশ্লেষকেরা। এসব কাজে জড়িত থাকলে সরকারের সব পর্যায়ের ব্যক্তি কিংবা মন্ত্রী, আমলা, পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর যে কেউ এই ভিসা নীতির তোপে পড়তে পারেন। একইভাবে বিএনপিকেও মহাচাপ অনুভব করতে হবে, তারা যে নির্বাচন বয়কটের চিন্তা করছে এবং আন্দোলনের ছক তৈরি করছে, সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরতে হবে এবং নির্বাচনে আসার প্রস্তুতি নিতে হবে। হয়তো বিএনপিকে শেষ সময়ে এসে শেখ হাসিনার অধীনেই জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। কারণ নতুন ভিসা নীতিতে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় কোনো রকম অনিয়ম, হস্তক্ষেপ ও বাধাদান করা হলে এর সঙ্গে জড়িত যেকোনো ব্যক্তি ও তার পরিবারকে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, দুই দলের কঠোর অবস্থানের কারণে মার্কিন ভিসা নীতি যদি কার্যকর হয়, তাহলে সেটি দেশের জন্যই ক্ষতিকর হবে। এই নীতির আওতায় বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারপন্থী ও বিরোধী দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত হলে অনেকের যুক্তরাষ্ট্রে আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। অনেকেই ভিসা পাবেন না। তাদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেও এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে। ফলে তাদের অনেকের যুক্তরাষ্ট্রে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে। সব মিলিয়ে বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের জন্য নেতিবাচক অবস্থান তৈরি করতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কঠোর অবস্থান থেকে আওয়ামী লীগকে সরে এসে নমনীয় হওয়া দরকার। প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন বা বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে সমঝোতার পথ তৈরি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সামনের দিনগুলোতে দেশ রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি সহিংসতা থেকে রক্ষা পাবে।
এদিকে মার্কিন এই ঘোষণাকে আওয়ামী লীগ, রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রকাশ্যে ইতিবাচক বলে ‘স্বাগত’ জানিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিলের ঘোষণার পরদিন গাজীপুর সিটি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলও সতর্ক থেকেছে, একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের যে অগ্নিপরীক্ষা ছিল, তারাও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। প্রমাণ হয়েছে, বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে সরকার চিন্তিত নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা শুধু আওয়ামী লীগের জন্য নয়, বিএনপির জন্যও রয়েছে। এটি সবার জন্য সতর্কবার্তা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিরই প্রতিধ্বনি। বিএনপি বিশ্বাস করে, বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের অধীনে কোনোভাবেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। কেবল একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই তা সম্ভব।
মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা বাগ্্যুদ্ধে লিপ্ত হলেও এবং তাদের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ থাকলেও ক্ষমতাসীন দলসহ বড় তিন দল মার্কিন ডাকে এই ঘোষণার পরদিনই এক টেবিলে বসতে বাধ্য হয়েছে। ২৫ মে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেন। তিন দলের নেতারা প্রায় দুই ঘণ্টা তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেন। আওয়ামী লীগ বিএনপির অতীতে অগ্নি-সন্ত্রাসের চিত্র তুলে ধরে আর বিএনপি ক্ষমতাসীন দলের হস্তক্ষেপে গণতন্ত্র বিপর্যয়ের বিষয়গুলো তুলে ধরে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে মানুষ যোগ্য ব্যক্তিকে খুঁজে নিতে পারবে বলে জানায় জাতীয় পার্টি। বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিলেন দলের তথ্য ও গবেষণা-বিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ও কেন্দ্রীয় নেতা মো. এ আরাফাত। বিএনপির পক্ষে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ। আর জাতীয় পার্টির পক্ষে ছিলেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল।
সুশাসনের জন্য নাগরিকÑসুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শুধু আওয়ামী লীগ-বিএনপি নয়, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের ওপর ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণ কমতে পারে। মন্ত্রী, আমলা, নিরাপত্তা বাহিনীও এবার সতর্কতার মধ্যে থাকবে। গাজীপুরের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হওয়ার পেছনে মার্কিন ভিসা নীতির প্রভাব ছিল। এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য সতর্কবার্তা বলেও মনে করছি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, এই ভিসা নীতি নিষেধাজ্ঞার চাইতেও কঠিন হতে পারে। নিকট অতীতে কেবল উগান্ডা বা নাইজেরিয়ার মতো অত্যন্ত অনুন্নত গণতন্ত্র কিংবা স্বৈরতান্ত্রিক দেশের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে নির্বাচন-সংক্রান্ত অনিয়মকে সংজ্ঞায়িত করেছে, তার বিস্তার অনেক বেশি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ধারণা করছি অভ্যন্তরীণ ও রাজনৈতিক কারণে মার্কিন সরকার এ কাজটি করছে। নতুন এই ভিসা নীতি শুধু দ্বিপক্ষীয় নয়; মার্কিন সরকার সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতি, নির্বাচন, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দিন দিন শক্তিশালী হয়েছে বলে আমরা জানি। এই নীতিতে সরকারি, বিরোধী এবং আমলা সব পক্ষই সমভাবে চাপে থাকবে। যেহেতু বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে আগের ধারা থেকে বের হয়ে, সে ক্ষেত্রে বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ থাকবেই। তাদের নির্বাচন বয়কট করার মতো পরিস্থিতি এখন অনেকটাই কমে যেতে পারে।

 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041