বিভক্তি মানেই হিংসা বিদ্বেষ শক্তিক্ষয়

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৩, ১৪:৪৯ , অনলাইন ভার্সন
‘অন্যদের সঙ্গে কিছুতে পেরে উঠি বা না উঠি, নিজেদের মধ্যে বাদ-বিবাদে আমরা ভালোই পটু’Ñএ কথা অনেকেই বলে থাকেন। অনেকে বলেন, আমরা বাঙালিরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে হিংসা-হিংস্রতা, মারামারি, ফাটাফাটি, বিভক্তিতে উন্মাদ। আমরা অনেক কিছু পারি, অন্য জাতি-সম্প্রদায়ের প্রশংসাও কুড়াই। কিন্তু সহনশীলতায় অনেক পিছিয়ে। কোনো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার নকল করে আরেকটি অনুকরণীয় কিছু করে অন্যকে তাক লাগিয়ে দিতে চাই না। আমরা যখন হোটেল দিই, তখন দেখাদেখি হোটেল-রেস্টুরেন্টই দিতে থাকি। কেউ একজন গ্রোসারি ব্যবসা শুরু করলে একটার পর একটা গ্রোসারি প্রতিষ্ঠা করে যাই।

সম্পাদকীয়টিতে বলার চেষ্টা করা হচ্ছে এটাই যে, বাঙালিরা যে পারছে না, সেটা এক ব্র্যাকেটে বলা হচ্ছে না। যারা পারছেন, তাদের সঙ্গে মূল বাঙালির সমাজের ওঠাবসা খুবই কম। এবং সেই বিশিষ্টজনদের মধ্যে প্রথম প্রজন্মের সংখ্যা হাতে গোনা। প্রথম প্রজন্ম না পারলেও দ্বিতীয় প্রজন্মের অনেকেই পারছেন। চারদিকে অনেক আশাপ্রদ ও আনন্দদায়ক সংবাদ পাওয়া যায়। হয়তো প্রথম যারা, তাদের সামনে অনেক বাধা ছিল, প্রবাসজীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে লড়াই-সংগ্রামে কেটে যায় দীর্ঘ সময়। তাই মেধা কাজে লাগিয়ে দেশ ও প্রবাস কমিউনিটির সুনাম বৃদ্ধি করে, বাংলাদেশের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, তেমন সংবাদ খুব কমই পাওয়া যায়।

তবে একটা বিষয়ে আমরা সবচেয়ে বেশি পারি। সেটা ভাঙাভাঙিতে। একটি সংগঠন আমরা ভেঙে দুটি, তিনটি-অর্থাৎ একাধিক খণ্ডে বিভক্ত করে ফেলতে পারি। এবং সে নিয়ে আমরা কোর্ট-কাছারি, আইন-আদালত করতেও পিছপা হই না। এক প্রবাসী ভাইয়ের মাথায় আরেক প্রবাসী ভাই লাঠি ভাঙতেও দ্বিধা করেন না। প্রবাসে আমাদের মধ্যে ভাঙনের খেলা দেখে শৈশবের একটা স্মৃতি মনে পড়ে খুব। বেদের বহর। এখন নদ-নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় তেমন দেখা যায় না। আমাদের শৈশবে খুব দেখা যেত। নৌকায় জীবন ছিল ওদের। নৌকাতেই জন্ম, নৌকাতেই বেড়ে ওঠা, নৌকাতেই বিয়ে-শাদি, মৃত্যু। ওরা দাঁতের পোকা (?) তুলত। নানা তাবিজ-কবচ বিক্রি করত। ওদের জীবন নিয়ে অনেক সিনেমাও হয়েছে।

তবে ছোট ছোট বাচ্চাদের তাক লাগিয়ে দিত একটা জাদুর খেলা দেখিয়ে। সেটা হচ্ছে এক টাকা থেকে দুই টাকা। দুই টাকা থেকে চার টাকা বানানো। সেসব জাদুর টাকা অবশ্য বাজারে চলত না। আমরা সেই রকম জাদু এখন দেখতে পাচ্ছি। এক সংগঠন ভেঙে দুই খণ্ড, তিন খণ্ড, চার খণ্ড করতেও দেখা যাচ্ছে। ঘরে বাচ্চারা একটা কিছু ভাঙলে বা নষ্ট করলে কত না নোংরামি, চেঁচামেচি। অথচ আমরা ধেড়ে শিশুরা দেশ ভাঙছি, সংগঠন ভাঙছি। বন্ধুর মাথা ভাঙছি। অন্নদাশংকর রায়ের বিখ্যাত সেই কবিতার মতো, ‘তেলের শিশি ভাঙলো বলে খুকুর পরে যায় করো/ তোমরা যে সব বুড়ো খোকা ভারত ভেঙে ভাগ করো! তার বেলা?’

এ প্রসঙ্গে সবচেয়ে ভালো এবং প্রাসঙ্গিক দৃষ্টান্ত হচ্ছে ‘ফোবানা’ (ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা)। খবরটি বের হয়েছে প্রবাসে সর্ববৃহৎ বাংলা পত্রিকা ঠিকানার ২৪ মে তারিখের সংখ্যার প্রথম পাতায়। সংবাদে বলা হয়েছে, ‘প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির ঐক্য ও সংহতির প্রতিষ্ঠান ছিল ফোবানা। কিন্তু এখন ফোবানা মানেই ভাঙন। নেতৃত্বের কোন্দলে ভাঙতে ভাঙতে কথিত ঐক্যের আহ্বানে গড়া ফোবানা এখন পাঁচ ভাগ হয়ে গেছে। সর্বশেষ ভাগ হয়েছে গত ২০ মে সন্ধ্যায়, নিউইয়র্কে এক রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে...’। এক নেতা বলেছেন, এই ভাঙনের জন্য কমিউনিটির কিছু ‘ব্যাড এলিমেন্ট’ দায়ী। ৩৬তম ফোবানা সম্মেলন সামনে রেখে এই সম্মেলন। কে জানে আগামীতে সম্মেলনগুলো সামনে রেখে আর কত কী হয়। যা ছিল ঐক্যের প্রতীক, তা এখন ভাঙনের প্রতীক। যা ছিল সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে প্রতীক, তা এখন সংঘর্ষ এবং হিংসা-বিদ্বেষের প্রতীক।

আমরা যারা এসব সংগঠন করি, নেতৃত্ব দিই, সবাই কমিউনিটির সেবা ও কল্যাণের কথা বলি। এই কি সেবার লক্ষণ?
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041