
জানা গেল, চেলোম গ্রামটি শাসিত হতো গ্রামটির প্রধান মুরব্বি এবং বয়স্ক মুরব্বিদের মাধ্যমে। এদের সবাই ছিলেন নির্বোধ লোক। প্রধান মুরব্বির নাম ছিল গ্রোনাম অক্স। অন্য মুরব্বিরা হলেন ডপি লেকিশ, জাইনভেল নিনি, ট্রাইটেল ফুল, সেন্ডার ডাঙ্কি, ইশমেনড্রিক নামস্কাল ও ফিভেল থিকউইট। গ্রোনাম অক্স ছিলেন সবার বয়োজ্যেষ্ঠ। তার ছিল কোঁকড়ানো লম্বা সাদা দাড়ি, স্ফীত কপাল।
যেহেতু গ্রোনামের বাড়িটি ছিল সবচেয়ে বিশাল, তাই সাধারণত সেখানেই মুরব্বিরা মিলিত হতেন। কখনো কখনো প্রতিবার গ্রোনামের জ্যেষ্ঠা স্ত্রী জেনেনদেল তাদের সতেজ রাখার জন্য পরিবেশন করতেন চা, কেক এবং জ্যাম (ফলের চাটনি-বিশেষ)।
এই সত্যটি না ঘটলে গ্রোনাম একজন সুখী মানুষ হতেন। কী সেই সত্য? প্রতিটি সভা শেষে মুরব্বিরা চলে গেলে জেনেনদেল তাকে ফালতু কথা বলার জন্য তিরস্কার করতেন। তার মতে, তার অত্যন্ত সম্মানিত স্বামী আসলে একজন, বিশেষত সহজে ঠকে যায় এমন, বোকা মানুষ।
একবার, এমনি এক ঝগড়ার পর, গ্রোনাম তার স্ত্রীকে বললেন, ‘মুরব্বিরা চলে যাওয়ার পরে আমাকে বকা দিয়ে ত্যক্ত করার মানে কী? ভবিষ্যতে যখনই আমাকে ফালতু কথা বলতে শুনবে, সভাকক্ষে এসে তখনই আমাকে জানাবে, এতে দ্রুত আমি বিষয়টি পরিবর্তন করে নেব।’
‘কিন্তু মুরব্বিদের সামনে আমি কীভাবে বলব যে, আপনি ফালতু কথা বলছেন? যদি তারা জেনে যান যে আপনি একজন নির্বোধ, তাহলে যে আপনি আপনার সমাজের প্রধান মুরব্বির তকমা হারাবেন।’
‘তুমি যদি এত চালাক হও, তাহলে একটা উপায় বের করো’, গ্রোনাম জবাব দিলেন।
জেনেনদেল একমুহূর্ত ভাবলেন এবং হঠাৎ করেই চিৎকার করলেন, ‘আমার কাছে উপায় আছে।’
‘আচ্ছা?’
‘আপনি যখন বোকার মতো কিছু বলবেন, আমি তখন এসে আপনাকে আমাদের সিন্দুকের চাবিটি দেব। তাহলে আপনি বুঝবেন যে, আপনি বোকার মতো ফালতু কথা বলেছেন।’
গ্রোনাম তার স্ত্রীর পরিকল্পনায় এতটাই আনন্দিত হয়েছিলেন যে তিনি হাততালি দিয়ে বললেন, ‘আমার কাছে তুমিও চতুরা বনেছ।’
কিছুদিন পর গ্রোনামের গ্রামের বাড়িতে মুরব্বিরা মিলিত হলেন। আলোচনার বিষয় ছিল-আসন্ন পেন্টেকস্ট (ইহুদিদের একটি বিশেষ পর্ব), একটি ছুটির দিন, যখন ব্লিন্টজেসের (সবজি রোল বা চিকেন রোল-জাতীয় খাবার) সঙ্গে খেতে প্রয়োজন হয় প্রচুর টক ননির। সে বছর টক ননির অভাব ছিল। কারণ শুষ্ক শরৎ মৌসুমের জন্য সেবার গাভিরা সামান্য দুধ দিতে পেরেছিল।
মুরব্বিরা তাদের নিজেদের দাড়ি টানছিলেন আর কপাল ঘষছিলেন! ভাবটা এমন যে, তাদের ঘিলু কঠিন পরিশ্রমে নিয়োজিত। কিন্তু ছুটির দিনটির জন্য তারা কীভাবে পর্যাপ্ত ননি পাবেন, কেউই তা বের করতে পারেননি।
হঠাৎ গ্রোনাম টেবিলের ওপর হাত চাপড়ে বলে উঠলেন, ‘আমার কাছে উপায় আছে।’ ‘কী সেটা?’ ‘আসুন, আমরা একটি আইন তৈরি করি, যাতে পানিকে টক ননি আর টক ননিকে পানি বলা উচিত। যেহেতু চেলোমের কূপে প্রচুর পানি রয়েছে, তাই প্রত্যেক গৃহিণীর কাছে টক ননি-পূর্ণ একটি পিপা থাকবে।’ ‘বাহ! কী চমৎকার ধারণা,’ প্রায় কেঁদে বললেন সেন্ডার ডাঙ্কি। ‘প্রতিভার এক ধাক্কা’, জাইনভেল নিনি চিৎকার করে উঠলেন।
‘শুধু গ্রোনাম অক্স এত উজ্জ্বল কিছু ভাবতে পারেন’, ডপি লেকিশ ঘোষণা করছিলেন। ট্রাইটেল ফুল, ইশমেনড্রিক নামস্কাল ও ফিভেল থিকউইট, সম্প্রদায়টির লেখক কলম ও পাচম্যান্ট (মেষ বা ছাগলের চামড়ার কাগজ) বের করে নতুন আইন প্রণয়ন করলেন। সেদিন থেকে পানিকে টক ননি আর টক ননিকে পানি বলা হবে।
যথারীতি তারা যখন সমাজের কাজটি সম্পন্ন করছিলেন, তখন মুরব্বিরা আরও কিছু সাধারণ বিষয়ের দিকে মনোনিবেশ করছিলেন। গ্রোনাম বললেন, ‘গ্রীষ্মকালে কেন গরম লাগে, এটা ভেবে গত রাতে একপলকও ঘুমাতে পারিনি। অবশেষে আমার কাছে এর জবাব এল।’
‘কী এল?’ মুরব্বিরা সমবেতভাবে জিজ্ঞেস করলেন। ‘কারণ সমস্ত শীতকালে চুলাগুলো উত্তপ্ত থাকে এবং এই তাপ চেলোমে থাকে, আর গ্রীষ্মকে গরম করে তোলে।’ ডপি লেকিশ ছাড়া সব মুরব্বি মাথা নাড়লেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাহলে শীতে ঠান্ডা লাগে কেন?’
‘কেন, সেটা স্পষ্ট।’ গ্রোনাম জবাব দিলেন। ‘গ্রীষ্মে চুলা গরম হয় না, তাই শীতের জন্য কোনো তাপ অবশিষ্ট থাকে না।’ মুরব্বিরা গ্রোনামের মহান জ্ঞান সম্পর্কে উৎসাহী ছিলেন। এ ধরনের মানসিক প্রচেষ্টার পরে তারা রান্নাঘরের দিকে তাকাতে শুরু করেন, আশা করেন যে জেনেনদেল চা, কেক ও জ্যাম নিয়ে হাজির হবেন। জেনেনদেল ভেতরে এসেছিলেন কিন্তু ট্রের পরিবর্তে নিয়ে এলেন তিনি একটি চাবি, যা তার স্বামীকে দিয়ে বললেন, ‘গ্রোনাম, এখানে সিন্দুকের চাবি।’
গ্রোনামের আত্মবিশ্বাস ছিল, আজ সমস্ত দিনের মধ্যে তার মুখে কেবল চতুর শব্দ উচ্চারিত হয়েছিল। কিন্তু জেনেনদেল তার হাতে চাবি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, এটি একটি নিশ্চিত লক্ষণ, তিনি নির্বোধের মতো ফালতু কথা বলেছিলেন। তিনি এতটাই রেগে গেলেন যে মুরব্বিদের দিকে ফিরে তাকিয়ে বললেন, ‘বলুন, আমি কী এমন বোকামি করেছি যে আমার স্ত্রী আমার জন্য আমাদের সিন্দুকের চাবি এনেছেন?’
মুরব্বিরা এ প্রশ্নে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন এবং জেনেনদেলের সঙ্গে তার চুক্তির ব্যাখ্যা করছিলেন, তিনি যখন বোকার মতো ফালতু কথা বলবেন, তখন তাকে চাবিটি দেওয়া হবে এভাবে। ‘কিন্তু আজ আমি কি উচ্চমার্গীয় জ্ঞানগর্ভের কথা বলিনি? তোমরা বিচারক হয়ে এর বিচার করো?’
মুরব্বিরা এমনিতেই জেনেনদেলের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। ফিভেল থিকউইট বলেন, ‘আমরা চেলোমের মুরব্বি এবং আমরা সবকিছুই বুঝি। কোনো মহিলা আমাদের বলতে পারবে না-কোনটা জ্ঞান আর কোনটা ফালতু।’
তারা তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেন এবং একটি নতুন আইন তৈরি করলেন : যখনই জেনেনদেল বিশ্বাস করবেন যে তার স্বামী বোকার মতো ফালতু কথা বলছেন, তখন তাকে সভাকক্ষে এসে মুরব্বিদের কাছে সিন্দুকের চাবি দিতে হবে। সম্মত হলে তারা গ্রোনাম অক্সকে বলবেন, বিষয় পরিবর্তন করে কথা বলতে। যদি তারা সম্মত না হন, তবে তাকে চা, কেক ও জ্যামের দ্বিগুণ অংশ এবং প্রত্যেক মুরব্বির জন্য তিনটি করে ব্লিন্টজেস আনতে হবে।
ফিডেল থিকউইট অবিলম্বে পাচমেন্টের ওপর নতুন আইনটি লিপিবদ্ধ করলেন এবং এটিকে চেলোমের সিলমোহর দিয়ে স্ট্যাম্প করে দিলেন, যা ছিল ছয়টি শিংবিশিষ্ট একটি বলদের চিহ্ন।
যেহেতু জেনেনদেল খুবই কৃপণ ছিলেন, সেদিন থেকে গ্রোনাম সভা-সমাবেশে নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারতেন। তিনি চাননি চেলোমের মুরব্বিরা তার প্রিয় ব্লিন্টজেসের সঙ্গে নিজেদের গুলিয়ে ফেলুক।
সেই পেন্টেকস্টে চেলোমে ‘টক ননি’র অভাব ছিল না। তবে কিছু গৃহিণী অভিযোগ করেছিলেন, ‘পানি’র অভাব ছিল। তবে এটি একটি সম্পূর্ণ নতুন সমস্যা ছিল, ছুটির পরে এটার মীমাংসা করা হবে।
গ্রোনাম অক্স সারা বিশ্বে বিখ্যাত হয়েছিলেন সেই মুরব্বি হিসেবে- যিনি একটি আইন পাস করে চেলোমকে টক ননিতে পূর্ণ একটি পুরো নদী এবং অনেক কূপ দিয়েছিলেন।
(‘চেলোমের মুরব্বিগণ এবং জেনেনদেলের চাবি’ গল্পটি বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে মূল লেখকের ‘দি এলডার্স অব চেলোম অ্যান্ড জেনেনদেল’স কী’ ইংরেজি অনুবাদ থেকে।
মূল : আইজাক বাশেভিস সিঙ্গার
অনুবাদক: টারুপা ড. খান
যেহেতু গ্রোনামের বাড়িটি ছিল সবচেয়ে বিশাল, তাই সাধারণত সেখানেই মুরব্বিরা মিলিত হতেন। কখনো কখনো প্রতিবার গ্রোনামের জ্যেষ্ঠা স্ত্রী জেনেনদেল তাদের সতেজ রাখার জন্য পরিবেশন করতেন চা, কেক এবং জ্যাম (ফলের চাটনি-বিশেষ)।
এই সত্যটি না ঘটলে গ্রোনাম একজন সুখী মানুষ হতেন। কী সেই সত্য? প্রতিটি সভা শেষে মুরব্বিরা চলে গেলে জেনেনদেল তাকে ফালতু কথা বলার জন্য তিরস্কার করতেন। তার মতে, তার অত্যন্ত সম্মানিত স্বামী আসলে একজন, বিশেষত সহজে ঠকে যায় এমন, বোকা মানুষ।
একবার, এমনি এক ঝগড়ার পর, গ্রোনাম তার স্ত্রীকে বললেন, ‘মুরব্বিরা চলে যাওয়ার পরে আমাকে বকা দিয়ে ত্যক্ত করার মানে কী? ভবিষ্যতে যখনই আমাকে ফালতু কথা বলতে শুনবে, সভাকক্ষে এসে তখনই আমাকে জানাবে, এতে দ্রুত আমি বিষয়টি পরিবর্তন করে নেব।’
‘কিন্তু মুরব্বিদের সামনে আমি কীভাবে বলব যে, আপনি ফালতু কথা বলছেন? যদি তারা জেনে যান যে আপনি একজন নির্বোধ, তাহলে যে আপনি আপনার সমাজের প্রধান মুরব্বির তকমা হারাবেন।’
‘তুমি যদি এত চালাক হও, তাহলে একটা উপায় বের করো’, গ্রোনাম জবাব দিলেন।
জেনেনদেল একমুহূর্ত ভাবলেন এবং হঠাৎ করেই চিৎকার করলেন, ‘আমার কাছে উপায় আছে।’
‘আচ্ছা?’
‘আপনি যখন বোকার মতো কিছু বলবেন, আমি তখন এসে আপনাকে আমাদের সিন্দুকের চাবিটি দেব। তাহলে আপনি বুঝবেন যে, আপনি বোকার মতো ফালতু কথা বলেছেন।’
গ্রোনাম তার স্ত্রীর পরিকল্পনায় এতটাই আনন্দিত হয়েছিলেন যে তিনি হাততালি দিয়ে বললেন, ‘আমার কাছে তুমিও চতুরা বনেছ।’
কিছুদিন পর গ্রোনামের গ্রামের বাড়িতে মুরব্বিরা মিলিত হলেন। আলোচনার বিষয় ছিল-আসন্ন পেন্টেকস্ট (ইহুদিদের একটি বিশেষ পর্ব), একটি ছুটির দিন, যখন ব্লিন্টজেসের (সবজি রোল বা চিকেন রোল-জাতীয় খাবার) সঙ্গে খেতে প্রয়োজন হয় প্রচুর টক ননির। সে বছর টক ননির অভাব ছিল। কারণ শুষ্ক শরৎ মৌসুমের জন্য সেবার গাভিরা সামান্য দুধ দিতে পেরেছিল।
মুরব্বিরা তাদের নিজেদের দাড়ি টানছিলেন আর কপাল ঘষছিলেন! ভাবটা এমন যে, তাদের ঘিলু কঠিন পরিশ্রমে নিয়োজিত। কিন্তু ছুটির দিনটির জন্য তারা কীভাবে পর্যাপ্ত ননি পাবেন, কেউই তা বের করতে পারেননি।
হঠাৎ গ্রোনাম টেবিলের ওপর হাত চাপড়ে বলে উঠলেন, ‘আমার কাছে উপায় আছে।’ ‘কী সেটা?’ ‘আসুন, আমরা একটি আইন তৈরি করি, যাতে পানিকে টক ননি আর টক ননিকে পানি বলা উচিত। যেহেতু চেলোমের কূপে প্রচুর পানি রয়েছে, তাই প্রত্যেক গৃহিণীর কাছে টক ননি-পূর্ণ একটি পিপা থাকবে।’ ‘বাহ! কী চমৎকার ধারণা,’ প্রায় কেঁদে বললেন সেন্ডার ডাঙ্কি। ‘প্রতিভার এক ধাক্কা’, জাইনভেল নিনি চিৎকার করে উঠলেন।
‘শুধু গ্রোনাম অক্স এত উজ্জ্বল কিছু ভাবতে পারেন’, ডপি লেকিশ ঘোষণা করছিলেন। ট্রাইটেল ফুল, ইশমেনড্রিক নামস্কাল ও ফিভেল থিকউইট, সম্প্রদায়টির লেখক কলম ও পাচম্যান্ট (মেষ বা ছাগলের চামড়ার কাগজ) বের করে নতুন আইন প্রণয়ন করলেন। সেদিন থেকে পানিকে টক ননি আর টক ননিকে পানি বলা হবে।
যথারীতি তারা যখন সমাজের কাজটি সম্পন্ন করছিলেন, তখন মুরব্বিরা আরও কিছু সাধারণ বিষয়ের দিকে মনোনিবেশ করছিলেন। গ্রোনাম বললেন, ‘গ্রীষ্মকালে কেন গরম লাগে, এটা ভেবে গত রাতে একপলকও ঘুমাতে পারিনি। অবশেষে আমার কাছে এর জবাব এল।’
‘কী এল?’ মুরব্বিরা সমবেতভাবে জিজ্ঞেস করলেন। ‘কারণ সমস্ত শীতকালে চুলাগুলো উত্তপ্ত থাকে এবং এই তাপ চেলোমে থাকে, আর গ্রীষ্মকে গরম করে তোলে।’ ডপি লেকিশ ছাড়া সব মুরব্বি মাথা নাড়লেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাহলে শীতে ঠান্ডা লাগে কেন?’
‘কেন, সেটা স্পষ্ট।’ গ্রোনাম জবাব দিলেন। ‘গ্রীষ্মে চুলা গরম হয় না, তাই শীতের জন্য কোনো তাপ অবশিষ্ট থাকে না।’ মুরব্বিরা গ্রোনামের মহান জ্ঞান সম্পর্কে উৎসাহী ছিলেন। এ ধরনের মানসিক প্রচেষ্টার পরে তারা রান্নাঘরের দিকে তাকাতে শুরু করেন, আশা করেন যে জেনেনদেল চা, কেক ও জ্যাম নিয়ে হাজির হবেন। জেনেনদেল ভেতরে এসেছিলেন কিন্তু ট্রের পরিবর্তে নিয়ে এলেন তিনি একটি চাবি, যা তার স্বামীকে দিয়ে বললেন, ‘গ্রোনাম, এখানে সিন্দুকের চাবি।’
গ্রোনামের আত্মবিশ্বাস ছিল, আজ সমস্ত দিনের মধ্যে তার মুখে কেবল চতুর শব্দ উচ্চারিত হয়েছিল। কিন্তু জেনেনদেল তার হাতে চাবি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, এটি একটি নিশ্চিত লক্ষণ, তিনি নির্বোধের মতো ফালতু কথা বলেছিলেন। তিনি এতটাই রেগে গেলেন যে মুরব্বিদের দিকে ফিরে তাকিয়ে বললেন, ‘বলুন, আমি কী এমন বোকামি করেছি যে আমার স্ত্রী আমার জন্য আমাদের সিন্দুকের চাবি এনেছেন?’
মুরব্বিরা এ প্রশ্নে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন এবং জেনেনদেলের সঙ্গে তার চুক্তির ব্যাখ্যা করছিলেন, তিনি যখন বোকার মতো ফালতু কথা বলবেন, তখন তাকে চাবিটি দেওয়া হবে এভাবে। ‘কিন্তু আজ আমি কি উচ্চমার্গীয় জ্ঞানগর্ভের কথা বলিনি? তোমরা বিচারক হয়ে এর বিচার করো?’
মুরব্বিরা এমনিতেই জেনেনদেলের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। ফিভেল থিকউইট বলেন, ‘আমরা চেলোমের মুরব্বি এবং আমরা সবকিছুই বুঝি। কোনো মহিলা আমাদের বলতে পারবে না-কোনটা জ্ঞান আর কোনটা ফালতু।’
তারা তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেন এবং একটি নতুন আইন তৈরি করলেন : যখনই জেনেনদেল বিশ্বাস করবেন যে তার স্বামী বোকার মতো ফালতু কথা বলছেন, তখন তাকে সভাকক্ষে এসে মুরব্বিদের কাছে সিন্দুকের চাবি দিতে হবে। সম্মত হলে তারা গ্রোনাম অক্সকে বলবেন, বিষয় পরিবর্তন করে কথা বলতে। যদি তারা সম্মত না হন, তবে তাকে চা, কেক ও জ্যামের দ্বিগুণ অংশ এবং প্রত্যেক মুরব্বির জন্য তিনটি করে ব্লিন্টজেস আনতে হবে।
ফিডেল থিকউইট অবিলম্বে পাচমেন্টের ওপর নতুন আইনটি লিপিবদ্ধ করলেন এবং এটিকে চেলোমের সিলমোহর দিয়ে স্ট্যাম্প করে দিলেন, যা ছিল ছয়টি শিংবিশিষ্ট একটি বলদের চিহ্ন।
যেহেতু জেনেনদেল খুবই কৃপণ ছিলেন, সেদিন থেকে গ্রোনাম সভা-সমাবেশে নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারতেন। তিনি চাননি চেলোমের মুরব্বিরা তার প্রিয় ব্লিন্টজেসের সঙ্গে নিজেদের গুলিয়ে ফেলুক।
সেই পেন্টেকস্টে চেলোমে ‘টক ননি’র অভাব ছিল না। তবে কিছু গৃহিণী অভিযোগ করেছিলেন, ‘পানি’র অভাব ছিল। তবে এটি একটি সম্পূর্ণ নতুন সমস্যা ছিল, ছুটির পরে এটার মীমাংসা করা হবে।
গ্রোনাম অক্স সারা বিশ্বে বিখ্যাত হয়েছিলেন সেই মুরব্বি হিসেবে- যিনি একটি আইন পাস করে চেলোমকে টক ননিতে পূর্ণ একটি পুরো নদী এবং অনেক কূপ দিয়েছিলেন।
(‘চেলোমের মুরব্বিগণ এবং জেনেনদেলের চাবি’ গল্পটি বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে মূল লেখকের ‘দি এলডার্স অব চেলোম অ্যান্ড জেনেনদেল’স কী’ ইংরেজি অনুবাদ থেকে।
মূল : আইজাক বাশেভিস সিঙ্গার
অনুবাদক: টারুপা ড. খান