
সাংবাদিকতার নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতার প্রতীক হিসেবে সাপ্তাহিক ‘ঠিকানা’ পত্রিকাটির ভূমিকা অনন্য। ১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনায় শহীদ দিবসে নিউইয়র্ক থেকে এর যাত্রা শুরু হয়। এটি কেবল একটি সংবাদপত্র নয়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতীয় পরিচয়ের ধারক-বাহক হিসেবে গড়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ‘ঠিকানা’ প্রবাসে বাংলার শিকড়কে সজীব রাখার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে, যা একই সঙ্গে সাংবাদিকতার আদর্শ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মেলবন্ধন তৈরি করেছে।
প্রবাসে বাংলা সংবাদপত্রের অভাব পূরণে ‘ঠিকানা’ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ১৯৯০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটির সম্প্রসারণ ঘটলেও স্থানীয় সংবাদ, সংস্কৃতি ও সামাজিক বিষয়গুলো পশ্চিমা মিডিয়ায় উপেক্ষিত হতো। এই শূন্যতা পূরণ করতে ‘ঠিকানা’ প্রবাসীদের জন্য একটি আস্থার মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়। পত্রিকাটির মূলনীতি হলো সত্যের প্রতি নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন। রাজনৈতিক প্রভাব, বাণিজ্যিক চাপ এবং ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও ‘ঠিকানা’ তার নীতিতে অনড় থেকেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি বা কোভিড-১৯ মহামারিতে প্রবাসীদের দুর্দশার প্রতিবেদনে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও তথ্যনির্ভরতা বজায় রেখেছে।
প্রবাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষার ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায় ‘ঠিকানা’ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের রূপ নেয়। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ এবং সাহিত্যিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে এটি প্রবাসী লেখক-শিল্পীদের জন্য একটি মঞ্চ তৈরি করেছে। পহেলা বৈশাখ, বিজয় দিবস বা বইমেলার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা সংস্কৃতির চেতনাকে জাগ্রত রাখে। শিশুদের বাংলা শেখার জন্য বিশেষ কার্যক্রম ও কলাম প্রকাশ করে ভাষার মর্যাদা রক্ষায় ভূমিকা রাখে। নিউইয়র্ক, টরন্টো বা লন্ডনের মতো শহরে এই পত্রিকা কেবল সংবাদ নয়, একটি সামাজিক আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। তরুণ প্রজন্ম এটির মাধ্যমে বাংলা সিনেমা, সংগীত ও সাহিত্যের সঙ্গে পুনঃসংযুক্ত হচ্ছে।

ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘ঠিকানা’ প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়েছে। ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া এবং মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সংবাদ আপডেট, ভিডিও রিপোর্ট ও ইন্টারেক্টিভ উপাদান প্রদান করা হয়। পডকাস্ট, ডকুমেন্টারি ও লাইভ আলোচনার মাধ্যমে পাঠকদের সম্পৃক্ত রাখা হয়। তবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ভুয়া খবর ও ক্লিকবেইট সংবাদের প্রলোভন এড়িয়ে সূত্রনির্ভর প্রতিবেদন ও ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের মাধ্যমে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ভবিষ্যতে ‘ঠিকানা’র দায়িত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে ডিজিটাল কনটেন্ট, ইনফোগ্রাফিক্স ও গেমিফিকেশনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং তাদের সমস্যাগুলো আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরা এই পত্রিকার অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত। রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক চাপের মুখে সাংবাদিকতার নৈতিকতা রক্ষা করে নিরপেক্ষতা বজায় রাখাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। ‘ঠিকানা’ কেবল একটি পত্রিকা নয়, এটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের আবেগ, সংগ্রাম ও স্বপ্নের আয়না। বাংলা সাংবাদিকতার ইতিহাসে এর অবদান চিরস্মরণীয় হলেও ডিজিটাল যুগের গতিশীলতায় পাঠকের আস্থা ধরে রাখতে আদর্শিক ভিত্তি থেকে বিচ্যুত না হওয়া জরুরি। সত্যের প্রতি নিষ্ঠাই সাংবাদিকতার চূড়ান্ত মূল্যবোধ এবং এই মূল্যবোধের প্রতি আস্থা রেখেই ‘ঠিকানা’ ভবিষ্যতেও পথিকৃতের ভূমিকা পালন করবে।
অনেকেই ভাবতে পারেন, টরন্টোয় বসে ‘ঠিকানা নিয়ে আমার এত উচ্ছ্বাস কেন? ‘ঠিকানা’র সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি এম এম শাহীন ভাই আমার পছন্দের একজন মানুষ। কেবল একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে নন, প্রবাসীদের মুখপাত্র হিসেবে সব সময় উচ্চকিত ছিলেন বিভিন্ন ফোরামে। তার বিনয়, সারল্য এবং বাংলা ভাষা ও দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা মুগ্ধ করে আমাকে। প্রবাসে বাংলা সংবাদপত্রের বিকাশ ও ইতিহাসে এম এম শাহীন এক গৌরবোজ্জ্বল নাম। তাঁর পথ ধরেই টরন্টো থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল সাপ্তাহিক বাংলামেইল ও এনআরবি টিভির। ১৩ বছরের পথচলায় আমরা অনুধাবন করি, ৩৫ বছরের ‘ঠিকানা’ কতটা সংগ্রামী এক যাত্রার নাম। সময়ের স্রোতে ভেসে না গিয়ে আদর্শের ঝান্ডা উঁচু রাখা যে কত বড় সাধনা, তা আমরা জানি।
‘ঠিকানা’ শতায়ু হোক-বাংলামেইল ও এনআরবি টিভি পরিবারের এই কামনাই আজ। বাংলা সাংবাদিকতার এই দীপশিখা যেন জ্বলে থাকে অনন্তকাল।
লেখক : সম্পাদক, সাপ্তাহিক বাংলামেইল; সিইও, এনআরবি টিভি
প্রবাসে বাংলা সংবাদপত্রের অভাব পূরণে ‘ঠিকানা’ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ১৯৯০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটির সম্প্রসারণ ঘটলেও স্থানীয় সংবাদ, সংস্কৃতি ও সামাজিক বিষয়গুলো পশ্চিমা মিডিয়ায় উপেক্ষিত হতো। এই শূন্যতা পূরণ করতে ‘ঠিকানা’ প্রবাসীদের জন্য একটি আস্থার মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়। পত্রিকাটির মূলনীতি হলো সত্যের প্রতি নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন। রাজনৈতিক প্রভাব, বাণিজ্যিক চাপ এবং ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও ‘ঠিকানা’ তার নীতিতে অনড় থেকেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি বা কোভিড-১৯ মহামারিতে প্রবাসীদের দুর্দশার প্রতিবেদনে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও তথ্যনির্ভরতা বজায় রেখেছে।
প্রবাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষার ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায় ‘ঠিকানা’ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের রূপ নেয়। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ এবং সাহিত্যিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে এটি প্রবাসী লেখক-শিল্পীদের জন্য একটি মঞ্চ তৈরি করেছে। পহেলা বৈশাখ, বিজয় দিবস বা বইমেলার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা সংস্কৃতির চেতনাকে জাগ্রত রাখে। শিশুদের বাংলা শেখার জন্য বিশেষ কার্যক্রম ও কলাম প্রকাশ করে ভাষার মর্যাদা রক্ষায় ভূমিকা রাখে। নিউইয়র্ক, টরন্টো বা লন্ডনের মতো শহরে এই পত্রিকা কেবল সংবাদ নয়, একটি সামাজিক আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। তরুণ প্রজন্ম এটির মাধ্যমে বাংলা সিনেমা, সংগীত ও সাহিত্যের সঙ্গে পুনঃসংযুক্ত হচ্ছে।

ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘ঠিকানা’ প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়েছে। ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া এবং মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সংবাদ আপডেট, ভিডিও রিপোর্ট ও ইন্টারেক্টিভ উপাদান প্রদান করা হয়। পডকাস্ট, ডকুমেন্টারি ও লাইভ আলোচনার মাধ্যমে পাঠকদের সম্পৃক্ত রাখা হয়। তবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ভুয়া খবর ও ক্লিকবেইট সংবাদের প্রলোভন এড়িয়ে সূত্রনির্ভর প্রতিবেদন ও ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের মাধ্যমে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ভবিষ্যতে ‘ঠিকানা’র দায়িত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে ডিজিটাল কনটেন্ট, ইনফোগ্রাফিক্স ও গেমিফিকেশনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং তাদের সমস্যাগুলো আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরা এই পত্রিকার অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত। রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক চাপের মুখে সাংবাদিকতার নৈতিকতা রক্ষা করে নিরপেক্ষতা বজায় রাখাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। ‘ঠিকানা’ কেবল একটি পত্রিকা নয়, এটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের আবেগ, সংগ্রাম ও স্বপ্নের আয়না। বাংলা সাংবাদিকতার ইতিহাসে এর অবদান চিরস্মরণীয় হলেও ডিজিটাল যুগের গতিশীলতায় পাঠকের আস্থা ধরে রাখতে আদর্শিক ভিত্তি থেকে বিচ্যুত না হওয়া জরুরি। সত্যের প্রতি নিষ্ঠাই সাংবাদিকতার চূড়ান্ত মূল্যবোধ এবং এই মূল্যবোধের প্রতি আস্থা রেখেই ‘ঠিকানা’ ভবিষ্যতেও পথিকৃতের ভূমিকা পালন করবে।
অনেকেই ভাবতে পারেন, টরন্টোয় বসে ‘ঠিকানা নিয়ে আমার এত উচ্ছ্বাস কেন? ‘ঠিকানা’র সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি এম এম শাহীন ভাই আমার পছন্দের একজন মানুষ। কেবল একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে নন, প্রবাসীদের মুখপাত্র হিসেবে সব সময় উচ্চকিত ছিলেন বিভিন্ন ফোরামে। তার বিনয়, সারল্য এবং বাংলা ভাষা ও দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা মুগ্ধ করে আমাকে। প্রবাসে বাংলা সংবাদপত্রের বিকাশ ও ইতিহাসে এম এম শাহীন এক গৌরবোজ্জ্বল নাম। তাঁর পথ ধরেই টরন্টো থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল সাপ্তাহিক বাংলামেইল ও এনআরবি টিভির। ১৩ বছরের পথচলায় আমরা অনুধাবন করি, ৩৫ বছরের ‘ঠিকানা’ কতটা সংগ্রামী এক যাত্রার নাম। সময়ের স্রোতে ভেসে না গিয়ে আদর্শের ঝান্ডা উঁচু রাখা যে কত বড় সাধনা, তা আমরা জানি।
‘ঠিকানা’ শতায়ু হোক-বাংলামেইল ও এনআরবি টিভি পরিবারের এই কামনাই আজ। বাংলা সাংবাদিকতার এই দীপশিখা যেন জ্বলে থাকে অনন্তকাল।
লেখক : সম্পাদক, সাপ্তাহিক বাংলামেইল; সিইও, এনআরবি টিভি