
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ফেব্রুয়ারি আমাদের অস্তিত্বকে নাড়া দেওয়ার মাস। আমাদের মননে অনুভবের মাস। ফেব্রুয়ারি আমাদের রচিত ইতিহাসের সোনালি ধারাপাত। আমাদের স্বাধীনতার আঁতুড়ঘর। বাঙালির গৌরবের ধারক সূর্যসন্তানদের রক্তে রঞ্জিত আত্মপরিচয়ের বীজ বপনের মাস। বাঙালি জাতির একক লড়াইয়ে মাতৃভাষার অধিকার অর্জনের, জ্ঞানচক্ষু উন্মিলিত করার মাস এই ফেব্রুয়ারি।
প্রকৃতির নিয়মে আবারও ফিরে এসেছে স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস। এই ফেব্রুয়ারির জাগরণের দীপ্যতায় আমরা উপনীত হই জাতি হিসেবে। তাই তো বোধের তেজোদীপ্ত দীপাবলিতে উচ্চারিত হয়Ñআমরা বীর প্রদীপ্ত তোমাদের উত্তরসূরি। আমরা সচেতন হই সংকল্পবদ্ধ হয়ে। স্মরণ করি সংগ্রামী ভাষাসৈনিক শহীদ রফিক, শফিক, সালাম, বরকতকে। সেই সঙ্গে স্মরণ করি ১৯৬১ সালের ১৯ মে আসামে ভাষা আন্দোলনে নিহত ১৬ বছর বয়সী কিশোরী কমলা ভট্টাচার্যসহ ১১ জনকে। ওই বাংলা ভাষা সংগ্রামে নিহত ১১ জনের বীরত্বগাথা ইতিহাস প্রচারের দায়িত্ব বর্তায় আমাদেরই ওপর। আমরা উচ্চকণ্ঠে সমান ভালোবাসায় পৃথিবীকে জানান দিতে চাই- 98jভাষার জন্য নিবেদিতপ্রাণ উৎসর্গকারী সব বাঙালির জন্যই আমাদের বুকে গভীর ভালোবাসা।
প্রশ্ন জাগতে পারে, ভাষা অর্থাৎ মাতৃভাষা কাকে বলে? মানুষের মনের প্রকাশিত ভাষা হচ্ছে হৃদয়ের ভাষা মাতৃভাষা। এই ভাষা বহুমুখী মানুষকে করে বৈচিত্র্যময়, সংকল্পিত ও একতাবদ্ধ।
গবেষকদের মতে, পৃথিবীতে ভাষাসংখ্যা প্রায় সাত হাজার। ভাবতে অবাক লাগে, এর মধ্যে ছয়শর মতো ভাষা সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। আর প্রায় প্রতি ১৪ দিনে একটি করে ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের জানামতে বর্তমানে পৃথিবীতে উপভাষা প্রায় ৮ হাজার এবং আরও কিছু ভাষা আছে, যা এখনো অলিখিত। এই অলিখিত ভাষার একটি ধারক ৫ থেকে ১০ জন করে। তাদের মৃত্যুকালে সেই ভাষার মৃত্যু।

পৃথিবীতে হাজারো ভাষার মধ্যে আমাদের মাতৃভাষা বাংলার অবস্থান হচ্ছে পঞ্চম। বাংলাদেশে বাঙালি আর নিজ নিজ ভাষা তথা বাংলা ভাষা নিয়ে আমরা গর্বিত। আমরা জানি, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। আমরা স্মরণ করি ভাষাযোদ্ধাদের, যারা এখনো অস্বীকৃত কিংবা পর্দার আড়ালে। আজ শুধু বাংলা ভাষা নয়, বিশ্বের সব ভাষার জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। কানাডা-প্রবাসী সালাম, রফিকের সক্রিয় উদ্যোগ ও তৎপরতায় বিশ্বমানবের কাছে তারা অনুসরণীয়। তারা বিশ্বাস করেছেন, ভাষার আগ্রাসন সভ্যতার ওপর আগ্রাসন। সে কারণে ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার উপায় নিয়ে গবেষণা আবশ্যকীয় ও জরুরি। আমাদের প্রতিজ্ঞা হবে কোনো ভাষার আগ্রাসনে যেন এ বিশ্বে একটি ভাষাও হারিয়ে না যায়। ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস এবং গুরুত্ব ও তা রক্ষার্থে করণীয় বিষয়ে গবেষণা অতীব জরুরি। বিশেষ করে, সব ভাষার সমান গুরুত্ব। আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বলতে চাই-বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ভাষার পাশাপাশি সব উপভাষাকেও মূল্যায়ন করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সব উপভাষায় পাঠদান আবশ্যক। সরকারিভাবে অফিস-আদালতে প্রয়োজনে কথা বলার জন্য উপভাষা ব্যবহারের আইন ও অনুমতি প্রবর্তন ও অনুসরণ করতে হবে।
আজ স্বদেশভূমের বহুদূরে দাঁড়িয়ে মহাসাগরের বালুকাবেলায় ‘নদীজল’ স্পর্শ করে সকলের প্রতি, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের তরুণদের কাছে আকুতি করে বলতে চাই, আজ ভাষার মাসে আমাদের প্রার্থনা হোক মাতৃভাষা, মা ও মাটির প্রতি ভালোবাসায় আমরা হব আন্তরিক। এ বিশ্ব সবার জন্য। এখানে ছোটর ওপর বড় ও শক্তিমানের কোনো প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকবে না। আমাদের স্মরণে রাখতে হবে, বিশ্বের কাছে স্বীকৃত আমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে। ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসার প্রকাশ হচ্ছে আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ ভাষায় শুদ্ধ করে লেখা ও শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলার চেষ্টা। আমাদের অবস্থান বিশ্বের যেখানেই হোক, আমরা যেন শিকড়কে ভুলে না যাই। আর ভাষাকে জীবিত রাখতে পাঠের কোনো বিকল্প নেই।
পাঠাভ্যাস আমাদের মনকে পরিশীলিত করে। তাই আসুন, আমরা পাঠাভ্যাস অটুট রাখি। বই পড়ি ও পত্রিকা পড়ি। পাঠাভ্যাসের জন্য সংবাদপত্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দুঃখিনী মায়ের ভালোবাসা, পিদিমজ্বলা কুঁড়েঘর সকাল-সন্ধ্যা আমায় ডাকে। এ যে আমার একান্ত ঠিকানা। স্বদেশের সীমানা পেরিয়ে সারা বিশ্বে বাঙালি তার ঐতিহ্য স্পর্শ করছে। আমার দুঃখিনী মায়ের আঁচল ছেড়ে মহাসাগরের এপারেও বাঙালি সংস্কৃতিচর্চা দেখে মনে আমার আলো ফেলে। বাঙালির শিকড় পতিত হয়ে আমাদের ঠিকানা গড়ে ওঠে মহাসাগরের পাড়ে। আমাদের ঠিকানার বিস্তৃতি বাঙালির অহংকার সাগরপাড়ে গড়ে ওঠা ঠিকানা বাঙালির আস্তানা। ঠিকানা তার বাঙালি স্বকীয়তা ও আদর্শ বজায় রেখে স্থায়ী হয়ে উঠবে- আমাদের আশ্রয়ের নিরাপদ আশ্রমে। ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের ঠিকানার জন্মদিন। এ শুভলগ্নে ঠিকানা পরিবারের সবার জন্য অভিনন্দন। ঠিকানার অগ্রযাত্রায় আমাদের শুভকামনা। ঠিকানা হোক প্রবাসে আমাদের নিজের ঠিকানা। ঠিকানা স্বদেশ প্রবাসের অসীম ভালবাসা নিয়ে আগামীতে মানবকল্যাণে ও সভ্যতার অগ্রগতিতে তার আজকের ভূমিকা ও অবদান প্রবলভাবে সহায়ক হোক- এই প্রার্থনা। জয়তু ঠিকানা।
প্রাক্তন অধ্যপক,
নটরডেম কলেজ, ঢাকা।
প্রকৃতির নিয়মে আবারও ফিরে এসেছে স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস। এই ফেব্রুয়ারির জাগরণের দীপ্যতায় আমরা উপনীত হই জাতি হিসেবে। তাই তো বোধের তেজোদীপ্ত দীপাবলিতে উচ্চারিত হয়Ñআমরা বীর প্রদীপ্ত তোমাদের উত্তরসূরি। আমরা সচেতন হই সংকল্পবদ্ধ হয়ে। স্মরণ করি সংগ্রামী ভাষাসৈনিক শহীদ রফিক, শফিক, সালাম, বরকতকে। সেই সঙ্গে স্মরণ করি ১৯৬১ সালের ১৯ মে আসামে ভাষা আন্দোলনে নিহত ১৬ বছর বয়সী কিশোরী কমলা ভট্টাচার্যসহ ১১ জনকে। ওই বাংলা ভাষা সংগ্রামে নিহত ১১ জনের বীরত্বগাথা ইতিহাস প্রচারের দায়িত্ব বর্তায় আমাদেরই ওপর। আমরা উচ্চকণ্ঠে সমান ভালোবাসায় পৃথিবীকে জানান দিতে চাই- 98jভাষার জন্য নিবেদিতপ্রাণ উৎসর্গকারী সব বাঙালির জন্যই আমাদের বুকে গভীর ভালোবাসা।
প্রশ্ন জাগতে পারে, ভাষা অর্থাৎ মাতৃভাষা কাকে বলে? মানুষের মনের প্রকাশিত ভাষা হচ্ছে হৃদয়ের ভাষা মাতৃভাষা। এই ভাষা বহুমুখী মানুষকে করে বৈচিত্র্যময়, সংকল্পিত ও একতাবদ্ধ।
গবেষকদের মতে, পৃথিবীতে ভাষাসংখ্যা প্রায় সাত হাজার। ভাবতে অবাক লাগে, এর মধ্যে ছয়শর মতো ভাষা সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। আর প্রায় প্রতি ১৪ দিনে একটি করে ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের জানামতে বর্তমানে পৃথিবীতে উপভাষা প্রায় ৮ হাজার এবং আরও কিছু ভাষা আছে, যা এখনো অলিখিত। এই অলিখিত ভাষার একটি ধারক ৫ থেকে ১০ জন করে। তাদের মৃত্যুকালে সেই ভাষার মৃত্যু।

পৃথিবীতে হাজারো ভাষার মধ্যে আমাদের মাতৃভাষা বাংলার অবস্থান হচ্ছে পঞ্চম। বাংলাদেশে বাঙালি আর নিজ নিজ ভাষা তথা বাংলা ভাষা নিয়ে আমরা গর্বিত। আমরা জানি, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। আমরা স্মরণ করি ভাষাযোদ্ধাদের, যারা এখনো অস্বীকৃত কিংবা পর্দার আড়ালে। আজ শুধু বাংলা ভাষা নয়, বিশ্বের সব ভাষার জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। কানাডা-প্রবাসী সালাম, রফিকের সক্রিয় উদ্যোগ ও তৎপরতায় বিশ্বমানবের কাছে তারা অনুসরণীয়। তারা বিশ্বাস করেছেন, ভাষার আগ্রাসন সভ্যতার ওপর আগ্রাসন। সে কারণে ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার উপায় নিয়ে গবেষণা আবশ্যকীয় ও জরুরি। আমাদের প্রতিজ্ঞা হবে কোনো ভাষার আগ্রাসনে যেন এ বিশ্বে একটি ভাষাও হারিয়ে না যায়। ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস এবং গুরুত্ব ও তা রক্ষার্থে করণীয় বিষয়ে গবেষণা অতীব জরুরি। বিশেষ করে, সব ভাষার সমান গুরুত্ব। আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বলতে চাই-বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ভাষার পাশাপাশি সব উপভাষাকেও মূল্যায়ন করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সব উপভাষায় পাঠদান আবশ্যক। সরকারিভাবে অফিস-আদালতে প্রয়োজনে কথা বলার জন্য উপভাষা ব্যবহারের আইন ও অনুমতি প্রবর্তন ও অনুসরণ করতে হবে।
আজ স্বদেশভূমের বহুদূরে দাঁড়িয়ে মহাসাগরের বালুকাবেলায় ‘নদীজল’ স্পর্শ করে সকলের প্রতি, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের তরুণদের কাছে আকুতি করে বলতে চাই, আজ ভাষার মাসে আমাদের প্রার্থনা হোক মাতৃভাষা, মা ও মাটির প্রতি ভালোবাসায় আমরা হব আন্তরিক। এ বিশ্ব সবার জন্য। এখানে ছোটর ওপর বড় ও শক্তিমানের কোনো প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকবে না। আমাদের স্মরণে রাখতে হবে, বিশ্বের কাছে স্বীকৃত আমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে। ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসার প্রকাশ হচ্ছে আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ ভাষায় শুদ্ধ করে লেখা ও শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলার চেষ্টা। আমাদের অবস্থান বিশ্বের যেখানেই হোক, আমরা যেন শিকড়কে ভুলে না যাই। আর ভাষাকে জীবিত রাখতে পাঠের কোনো বিকল্প নেই।
পাঠাভ্যাস আমাদের মনকে পরিশীলিত করে। তাই আসুন, আমরা পাঠাভ্যাস অটুট রাখি। বই পড়ি ও পত্রিকা পড়ি। পাঠাভ্যাসের জন্য সংবাদপত্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দুঃখিনী মায়ের ভালোবাসা, পিদিমজ্বলা কুঁড়েঘর সকাল-সন্ধ্যা আমায় ডাকে। এ যে আমার একান্ত ঠিকানা। স্বদেশের সীমানা পেরিয়ে সারা বিশ্বে বাঙালি তার ঐতিহ্য স্পর্শ করছে। আমার দুঃখিনী মায়ের আঁচল ছেড়ে মহাসাগরের এপারেও বাঙালি সংস্কৃতিচর্চা দেখে মনে আমার আলো ফেলে। বাঙালির শিকড় পতিত হয়ে আমাদের ঠিকানা গড়ে ওঠে মহাসাগরের পাড়ে। আমাদের ঠিকানার বিস্তৃতি বাঙালির অহংকার সাগরপাড়ে গড়ে ওঠা ঠিকানা বাঙালির আস্তানা। ঠিকানা তার বাঙালি স্বকীয়তা ও আদর্শ বজায় রেখে স্থায়ী হয়ে উঠবে- আমাদের আশ্রয়ের নিরাপদ আশ্রমে। ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের ঠিকানার জন্মদিন। এ শুভলগ্নে ঠিকানা পরিবারের সবার জন্য অভিনন্দন। ঠিকানার অগ্রযাত্রায় আমাদের শুভকামনা। ঠিকানা হোক প্রবাসে আমাদের নিজের ঠিকানা। ঠিকানা স্বদেশ প্রবাসের অসীম ভালবাসা নিয়ে আগামীতে মানবকল্যাণে ও সভ্যতার অগ্রগতিতে তার আজকের ভূমিকা ও অবদান প্রবলভাবে সহায়ক হোক- এই প্রার্থনা। জয়তু ঠিকানা।
প্রাক্তন অধ্যপক,
নটরডেম কলেজ, ঢাকা।